দবোরার সময়ে ইস্রায়েলের অবস্থা
বিচার ৪:১-৩ “এহূদ মারা যাবার পরে ইস্রায়েলীয়েরা আবার সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতে লাগল। ২ কাজেই সদাপ্র্রভু যাবীন নামে একজন কনানীয় রাজার হাতে তাদের তুলে দিলেন। যাবীন হাৎসোরে থেকে রাজত্ব করতেন। তাঁর সেনাপতির নাম ছিল সীষরা। তিনি হরোশৎ-হগোয়িম নামে একটা জায়গায় বাস করতেন। ৩ যাবীনের ন’শো লোহার রথ ছিল এবং তিনি বিশ বছর ধরে ইস্রায়েলীয়দের উপর ভীষণভাবে অত্যাচার করে আসছিলেন। সেইজন্য ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর কাছে সাহায্যের জন্য কান্নাকাটি করতে লাগল।”
- বিচারকর্ত্তৃগণের পুস্তকে আমরা ইস্রায়েলের পতনের দুঃজনক একটি চক্র ঘুরতে দেখি:
- ইস্রায়েল জাতি ঈশ্বরকে ত্যাগ করে দেবতাপূজা শুরু করে
- > সঙ্গে সামাজিক আইন-শৃঙ্ক্ষলা ভেঙ্গে যায
- > ঈশ্বর ইস্রায়েলকে দুরাবস্থায পড়তে দেন, অর্থাৎ অন্য জাতিদের দ্বারা অত্যাচার
- > ইস্রায়েল অনুতপ্ত হয়ে ঈশ্বরকে ডাকে
- > ঈশ্বর একজন বিচারক উঠিয়ে ইস্রায়েলকে উদ্ধার করেন
- > ইস্রায়েলে কিছু বছর ধরে শান্তি ও সুঅবস্থা বিরাজ করে … এবং চক্র আবার শুরু হয়।
- দেখা যায় যে, চক্রে যত ঘুরছে ইস্রায়েলীয়দের হৃদয় তত কঠিন হযে যাচ্ছে।
- প্রথম চক্রে ঈশ্বর অৎনীয়েলকে এবং দ্বিতীয় চক্রে এহূদকে উঠিয়ে ইস্রায়েলকে উদ্ধার করেন। তৃতীয় চক্রে তিনি দবোরা এবং সঙ্গে বারাককে উঠিয়ে ইস্রায়েলকে উদ্ধার করেন।
- দবোরার সময়ে অত্যাচারী জাতি হল কনানীয়েরা, অর্থাৎ হাৎসোর শহরের রাজা যাবীন এবং সঙ্গে তার লোহার রথের সেনাপতি সীষরা।
- এই ভৌগলিক তথ্য গুরুত্বপূর্ণ: যিহোশূয় শক্তিশালী হাৎসোর শহর দখল করেছিলেন (যিহোশূয় ১১:১-১৫) এবং হাৎসোরের এলাকা হওয়ার কথা ইস্রায়েলের নপ্তলী গোষ্ঠির জমি। দুঃখের বিষয় এই যে, যা নপ্তলী গোষ্ঠির উত্তরাধিকার হওয়ার কথা ছিল, তা এখন হয়ে গেছে একজন কনানীয় রাজার কেল্লা। সীষরার শহর হরোশৎ-হগোয়িম হল যিষ্রিয়েল উপতক্যায় একটি ছোট শহর। যিষ্রিয়েল উপত্যকা হওয়ার কথা ছিল আশের, ইষাখর ও সবূলূন গোষ্ঠির এলাকা। ভৌগলিক তথ্যটি আমাদের দেখায়, ইস্রায়েল উত্তরদিকে কত জমি হারিয়েছে!
- দবোরা পরবর্তীতে অবীনোয়মের ছেলে বারককে ডাকবেন, যার শহর হল নপ্তলী এলাকার কেদশ, হাৎসোর থেকেও আরো উত্তর দিকে। বারাক নপ্তলী গোষ্ঠির, অর্থাৎ যে গোষ্ঠি যা কনানীয়দের দ্বারা সবচেয়ে বেশি অত্যাচারিত।

বিচারক হিসাবে দবোরা
বিচার ৪:৪-৫ “সেই সময় লপ্পীদোতের স্ত্রী দবোরা একজন মহিলা-নবী ছিলেন। তিনিই তখন ইস্রায়েলীয়দের শাসন করতেন। ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকার রামা ও বৈথেলের মাঝামাঝি একটা জায়গায় দবোরা তাঁর খেজুর গাছের তলায় বসতেন, আর ইস্রায়েলীয়েরা নিজেদের ঝগড়া-বিবাদ মীমাংসার জন্য তাঁর কাছে আসত।”
- বিচারকর্ত্তৃগণ পুস্তকে ঈশ্বর দ্বারা উঠিয়ে নিয়ে আসা সেই সামরিক উদ্ধারকর্তাদের ‘বিচারক’ বলে, কিন্তু শুধুমাত্র দবোরার ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে তিনি নিয়মিত লোকদের প্রয়োজন অনুসারে ন্যায় বিচার করতেন।
- দেখা যায় যে, দবোরা ইতিমধ্যে এই বিচারক ভূমিকার কারণে খ্যাতি ও সুনাম আছে, যখন ঈশ্বর তাকে একটি ভাববাণীমূলক কথা দ্বারা ইস্রায়েলকে সামরিকভাবে উদ্ধার করার জন্য ব্যবহার করেন।
- দবোরা হলেন ইফ্রায়িম গোষ্ঠির একজন মহিলা। তিনি বৈথেল ও রামা শহরের মাঝাখানে বাস করেন। লক্ষণীয় বিষয় যে অনেক বছর পরে বিচারক শমূয়েল ঠিক একই এলাকায় ইস্রায়েলের জন্য ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা করেবেন: “এর পর শমূয়েল যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন ইস্রায়েলীয়দের শাসন করেছিলেন। ১৬ তিনি প্রত্যেক বছর বৈথেল, গিল্গল ও মিসপাতে গিয়ে ইস্রায়েলীয়দের শাসন করতেন। ১৭ তারপর তিনি রামায় তাঁর বাড়ীতে ফিরে যেতেন। তিনি সেখানেও ইস্রায়েলীয়দের শাসন করতেন।” (১ শমূয়ের ৭:১৫-১৭)। দেখা যায়, দবোরার একটি নির্দিষ্ট খেজুর গাছের তলায় বসে লোকদের ঝগড়া-বিবাদ শুনতেন, অভিযোগ করা ও সাক্ষীদের সাক্ষাৎ শুনতেন এবং তদন্ত করে ন্যায় বিচার করতেন।
- দবোরার স্বামীর নাম লপ্পীদোত, তিনি তাই একজন স্ত্রী এবং হতে পারে একজন মাও ছিলেন। তার স্বামী কোন বিশেষ ভূমিকা পালন করেন, এর কোন উল্লেখ নেই, কিন্তু দেখা যায় যে, তিনি তার স্ত্রীর নেতৃত্ব সমর্থন করে (অথবা কম পক্ষে বাধা দেন না), উভয় বিচারক হিসাবে এবং সামরিক অভিযানের জন্য ভাববাদীমূলক রব হিসাবে।
- কে দবোরাকে বিচারক হিসাবে নিযুক্ত করেছিল? তারা কি ঐসময দ্বিতীয় বিবরণ ১:১৩-১৮ এবং দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৮-২০ অনুসারে তাকে নিযুক্ত করেছিল? তাই যদি হয় তবে দেখা যায় যে, মহিলাদেরও বিচারক হিসাবে নিযুক্ত করা হত।
- অথবা দবোরা কি এমনি একজন বিচারক ও নেতা হিসাবে উঠে এসেছিলেন, এমন একজন যার কাছে লোকেরা যায়, যদিও তাকে হয়তো প্রকাশ্যে নিযুক্ত করা হয় নি? এমন একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি যার লোকদের চোখে এমনি এমনি সম্মান ও বিশ্বাসযোগ্যতা ছিল, যার কাছে মানুষ স্বেচ্ছায় আসত? প্রকৃতপক্ষে বলা যায় যে, বাইবেলে সব সরকারি নেতৃত্ব এভাবে উঠে আসার কথা ছিল, লোকেরা কিছু ব্যক্তিদের তাদের পূর্বের আচরণ দেখে নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত ও প্রজ্ঞাবান মনে কনে এবং তাদেরকে নিজেদের প্রতিনিধি হিসাবে চায় (দ্বিতীয় বিবরণ ১:১৩)।
- আমরা জানি না, দবোরা ঠিক কিভাবে এই বিচাকের ভূমিকায় উঠে এসেছিলেন, কিন্তু পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, লোকেরা তাকে সম্মান করত, তাকে অধিকার প্রাপ্ত প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি মনে করত এবং একারণে ঝগড়া-বিবাদ নিয়ে স্বেচ্ছায় তার কাছে আসত। বোধ হয় যে, দ্বিতীয় বিবরণ ১ অনুসারে নিযুক্ত বিচারকদেরও নিজেদের অধিকার বিস্তার করার পদ্ধতি ছিল না (তাদের হাতে কোন পুলিশ নেই বা লোকদের গ্রেফতার করে কারাগারে রাখার ক্ষমতা ছিল না। ধারণা করা যায় যে, এখানে দবোরার ক্ষেত্রেও তার অধিকার বা প্রভাব কিভাবে আসে? লোকেরা স্বেচ্ছায় তার কাছে আসে কারণ তাদের চোখে দবোরার সম্মান ও প্রজ্ঞা আছে।
- বিচারকর্ত্তৃগণে দবোরাকে “মহিলা-নবী” বলা হয়, অর্থাৎ এমন কেউ যিনি ঈশ্বরের বাক্য সত্যিকারভাবে প্রকাশ করে এবং বর্তমান অবস্থার বিষয়ে ঈশ্বরের দৃষ্টি থেকে কথা বলেন।
- ঐযুগে বিচারকেরা সবাই কি ভাববাদীমূল কথা বলতেন? অথবা ঐযুগের ভাববাদীরা কি সবাই বিচারক-উদ্ধারকর্তার ভূমিকাও পালন করতেন? সম্ভবত এমন নয়, কিন্তু কম পক্ষে ভাববাদী-বিচারক শমূয়েল (১ শমূয়েল ৩, ৭) এবং ভাববাদী নাথনের জীবনের আমরা এই ধরণের দেখি (২ শসূয়েল ১২)।
দবোনা ভাববাদী ও বিচারক-উদ্ধারকর্তা হিসাবে
বিচার ৪:৬-৭ “তিনি নপ্তালি দেশের কেদশ শহর থেকে অবীনোয়মের ছেলে বারককে ডেকে পাঠালেন এবং তাঁকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনাকে এই আদেশ দিচ্ছেন, ‘তুমি নপ্তালি আর সবূলূন-গোষ্ঠী থেকে দশ হাজার লোক সংগে নাও এবং তাবোর পাহাড়ের দিকে তাদের নিয়ে যাও। ৭ আমি যাবীনের সেনাপতি সীষরাকে তার সৈন্যদল ও রথ সুদ্ধ কীশোন নদীর কাছে নিয়ে যাব এবং তোমার হাতে তাদের তুলে দেব।”
- আমরা জানি না, দবোরা আগেও ভাববাণীমূলক কথা বলতেন কিনা। দেশের এই চরম সংকেটের মুহূর্তে ভাববাণী দেওয়া অবশ্যই ছিল দবোরার জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
- দবোরার মুখে আছে ঈশ্বরের বাণী, তিনি জানেন কাকে ডাকতে হবে এবং তাকে কি সংবাদ দিতে হবে। আমরা জানি না বারাক দবোরাকে কিভাবে চিন্তেন (অথবা তার সম্বন্ধে জানতেন) কিন্তু দেখা যায় যে, বারাক তাকে সম্মান করেন এবং তার বাণীতে বাধ্য হন।
- দবোরা বারাককে অঘ্রিম জানান যে, কনানীয় সেনাপতি সীষরা তার লোহার রথ নিয়ে ইস্রায়েলকে আক্রমণ করবেন। অথবা বারাক যখন সেনাদের জোড় করেন তখন কনানীয়রা খবর পেয়ে সৈন্য বের করে তাদের বিরুদ্ধে যাবেন (বিচার ৪:১২)। যেভাবে হোক, দবোরা এবং বারাক এখানে এড়িয়ে না গিয়ে বরং সরাসরিভাবে কনানীয়দের আক্রমণ করেন।
- যিষ্রিয়েল ছিল উর্বর ও সমতল একটি উপত্যকা, যার মধ্যে কিশোন নদী প্রবাহিত ছিল। উত্তরের দিকে তাবোর পাহাড় হল বেশ খাড়া ঢালের একটি পাহাড় (ছবি দেখুন)।
- এই ভৌগরিক তথ্য গুরুত্বপূর্ণ: তাদের লোহার রথ সর্বোচ্চ কার্যকারী হয় সমতল মাটিতে, যেখানে ঘোড়াগুলো সহজে দৌঁড়াতে পারে এবং রথের গতি বিরুদ্ধে দাঁড়ানো পদাতিক সৈন্যদের আরো সংকটে ফেলত। একারণে তো ইস্রায়েল সাগরের পাড়ে সমতল জায়গা এবং যিষ্রিয়েল উপত্যকা ধরে রাখতে সক্ষম হয় নি এবং কনানীয়রা ও পলেষ্টীয়রা এই এলাকাগুলোতে বাস করতে থাকত। ইস্রায়েলীয়রা শুধুমাত্র পাহাড়ি এলাকা সত্যিকার অর্থে ধরে রাখতে সক্ষম ছিল। তাবোর পাহাড়ের খাড়া ঢাল থেকে দৌঁড়িয়ে নামার সময় পদাতিক সেনাদের সুবিধা থাকবে, কিন্তু উপত্যকায় পৌঁড়িয়ে লোহার রথের সৈন্যের সুবিধা থাকবে।
দলীয় নেতৃত্ব ও দলীয়ভাবে কাজ করা
বিচার ৪:৮-১০ “বারক দবোরাকে বললেন, “আপনি যদি আমার সংগে যান তবেই আমি যাব, তা না হলে আমি যাব না।” ৯ দবোরা বললেন, “ঠিক আছে, আমি আপনার সংগে যাব, কিন্তু এই যুদ্ধে জয়ের গৌরব আপনি পাবেন না, কারণ সদাপ্রভু একজন স্ত্রীলোকের হাতে সীষরাকে তুলে দেবেন।” এই কথা বলে দবোরা বারকের সংগে কেদশে গেলেন। ১০ বারক সেখানে সবূলূন ও নপ্তালি-গোষ্ঠীর লোকদের ডাকলেন। তাতে দশ হাজার লোক তাঁর সংগে গেল আর দবোরাও তাঁর সংগে গেলেন।”
- বারাক ভালভাবে জানেন, কনানীয়দের চ্যালেঞ্জ করা মানে কি। খুব সম্ভবত, তিনি কেদশ শহরে জীবন-যাপন করতে করতে অনবরত অত্যাচারের সম্মুখীন হয়েছিলেন (কম পক্ষে ২০ বছর ধরে, বিচার ৪:৩)। তার সেই নপ্তলী গোষ্ঠি কনানীয়দের হাতে সবচেয়ে বেশি অত্যাচার ও কষ্ট পেয়েছিল, তাই বারাকের যথেষ্ট অনুপ্রেরণা ছিল তাদের পরাজিত করতে – কিন্তু তার বাস্তবে যথেষ্ট ভয়ও ছিল।
- বারাক দবোরাকে সম্মান ও বিশ্বাস করেন এবং তার বাণী অনুসারে আগাতে রাজি হন, কিন্তু তিনি ভালভাবে বুঝতে পারেন যে, একজন ভাববাদীর উপস্থিতি তার কত প্রয়োজন। তাই তিনি দাবি করেন যেন দবোরা তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুদ্ধের সময় উপস্থিত থাকেন। তিনি এখানে কিছুটা লাজুক বা ভিত, তবে তিনি খুব বাস্তববাদী ও সৎ। তিনি তার প্রয়োজনটা বুঝতে পারেন।
- দবোরা বারাকের সঙ্গে যুদ্ধে নামার জন্য প্রস্তুত্। তিনি এভাবে তার মধ্য দিয়ে আসা ঈশ্বরের বাণীর উপর তার বিশ্বাস প্রকাশ করেন কারণ মহিলা হিসাবে যুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রধান পরামর্শদাতা হওয়া অবশ্যই তার জন্য বড় ঝুঁকি ছিল। কিন্তু তিনি সেই ঝুঁকি নিতে রাজি, যদি তিনি তা দ্বারা বারাককের হাত আরো শক্তিশালী করে তুলতে পারেন।
- আমরা এখানে দুই ধরণের নেতাদের চমৎকার দলীয় নেতৃত্ব দেখতে পাই। দু’জনের চরিত্র ও ভূমিকা বেশ ভিন্ন: একজন হলেন মহিলা, নবী, পরামর্শদাতা, যার অধিকার ও সম্মান আছে, অন্যজন হলেন একজন পুরুষ, হতে পারে যুবক বয়সের, সামরিক নেতা, যার সাহস, ঝুঁকি নেওয়া ও সেনাদের সামনে দৌঁড়ানোর ক্ষমতা আছে। দবোরার অবদান এমন কিছু যা বারকের নেই এবং বারাকের অবদান এমন কিছু যা দবোরার নেই। বারাক এখানে নপ্তলী ও সবূলূন গোষ্ঠ থেকে এই ভয়ংকর যুদ্ধের জন্য ১০ হাজার সেনাদের অনুপ্রেরণা দিতে সক্ষম হন, তাতে দেখায় যে, বারকেরও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আছে। তিনিও লোকদের মধ্যে আশা ও অনুপ্রেরণা দান করতে সক্ষম। দেখা যায় যে, সীষরা বারাককে চেনেন, হয়তো বারাক আগেও কিছু ঘটনা ঘটিয়েছিলেন (বিচার ৪:১২)।
- তবুও দেখা দেখা যায় যে বারাকের এই ভিত মনের কারণে ঈশ্বর দবোরার মধ্য দিয়ে একটি ভবিষ্যদ্বাণীতে বলেন যে, সীষরাকে পরাজিত করার গৌরব বারাকের থাকবে না বরং একজন মহিলারই থাকবে (বিচার ৪:৯)।
- গল্পটি এগিয়ে গিয়ে দেখা যায় যে, মহিলাটি দবোরা নন, বরং কেনীয় গোষ্ঠির যায়েল, যিনি পলাতক সীষরাকে নিজের তাম্বুতে আশ্রায় দেন এবং চুপিচুপি করে তাকে মেরে ফেলেন।
- তাই শেষে শক্তিশালী সেনাপতি সীষরাকে মেরে ফেলার গৌরব দবোরা ও বারাকের চেয়ে যায়েলের হয়ে যায়, কিন্ত কি যায় আসে? মূল বিষয় হর যে, তাদের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর কনানীয়দের উপরে একটি বড় জয় দান করেছেন এবং এভাবে কনানীয়দের দ্বারা ২০ বছরের অত্যাচার শেষ হয়ে যায়।

- বারাক যখন ১০’০০০ সেনা নিযুক্ত করে তাবোর পাহাড়ের উপরে অবস্থান করেন তখন সীষরা তার ৯০০ লোহার রথ এবং অন্যান্য সেনা নিয়ে কিশোন নদী অনুসরণ করে যিষ্রিয়েল উপত্যকার পূর্ব দিকে আগান (বিচার ৪:১৩)।
- সেই মুহূর্তে দবোরা বারাককে সংকেত দেন: “আপনি এগিয়ে যান, সদাপ্রভু আজকেই সীষরাকে আপনার হাতে তুলে দিয়েছেন। সদাপ্রভু তো আপনার আগে আগে গেছেন।”
- বারাক দবোরার মধ্য দিয়ে আসা ঈশ্বরের বাণীর উপর বিশ্বাস করে সাহসের সঙ্গে তার সেনাদের নিয়ে তাবোর পাহাড় থেকে দৌড়িয়ে নেমে সীষরার সৈন্যদলের দিকে আগান।
- ঈশ্বর তাকে দুইভাবে সাহায্য করেন। ঈশ্বর বারকের সামনে “সীষরা ও তাঁর সমস্ত রথ ও সৈন্য-সামন্তকে বিশৃঙ্খল করে দিলেন”, যার ফলে সীষরা রথ থেকে নেমে পালান এবং বারাকের সেনারা রথগুলো ঘুরতে বাধ্য করে পশ্চিম দিকে তাড়িয়ে দেন। কনানীয়দের সম্পূর্ণ পরাজয় ঘটে।
- কিন্তু কেন সীষরা রথ থেকে নেমে পায়ে হেঁটে পালিয়ে গেলেন? ইস্রায়েলীয় সেনারা যখন সমতলে পৌঁছাল, কেন রথের সৈন্যদল নিজের ক্ষমতা বিস্তার করতে পারল না?
- বিচারকর্ত্তৃগণ ৫ অধ্যায়ে দবোরার জয়ের গানে আমরা কিছু তথ্য পাই (বিচার ৫:৪, ৫:২১): “হে সদাপ্রভু, তুমি যখন সেয়ীর থেকে রওনা হলে, ইদোম দেশ থেকে বেরিয়ে গেলে, তখন পৃথিবী কেঁপে উঠল আর আকাশ থেকে মেঘ জলধারা ঢেলে দিল। … সেই পুরাকালের নদীর জল, সেই কীশোন নদীর জল শত্রুদের ভাসিয়ে নিয়ে গেল। হে আমার অন্তর, শক্ত হয়ে এগিয়ে চল।”
- দেখা যায় যে, ঈশ্বর একটি শক্তিশালী বৃষ্টি পাঠিয়ে দেন, যার ফলে কিশোন নদীর স্রোত হঠাৎ করে বেড়ে যায় এবং একটি বন্যা ঘটে। বন্যার কারণে মাটি নরম হয়ে যায়, যার ফলে ভারী লোহার রথ আটকে পড়ে এবং রথের সুবিধা বা ক্ষমতা বিপরীতে পরিণত হয়। সরার সামনে সীষরা হতে পারে প্রথমে আটকে পড়েন এবং রথ কাদায় আটকে যাওয়ার কারণে তিনি পায়ে হেঁটে পালান। বাকি সেনারা রথ ঘুরিয়ে নিয়ে পশ্চিম দিকে পালায়।
- বারাক ও তার সেনারা যখন পলাতক কনানীয়দের ধ্বংস করার জন্য তাদের পিছনের এগিয়ে যান, তখন সীষরা যুদ্ধের গড়বড়ে পায়ে হেঁটে পালিয়ে কেনীয়দের তাম্বুগুলোর মধ্যে আশ্রয় নিতে চেষ্টা করেন। কেনীয়রা ছিলেন মোশির মিদিয়োনীয় শশুরের ছেলে হোববের বংশধরেরা (বিচার ৪:১১)। কেনীয়দের ও ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে সুসম্পর্কে ছিল কিন্তু কেনীয়দের মধ্যে কম পক্ষে একটি গোষ্ঠির কনানীয়দের সাথেও বন্ধুত্ব ছিল: “হাৎসোরের রাজা যাবীন এবং কেনীয় হেবরের বংশের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল” (বিচার ৪:১৭)।

- হেবরের স্ত্রী যায়েল স্বক্রিয়ভাবে সীষরাকে নিজের তাম্বুতে আশ্রয় দেয় এবং তাকে যত্ন করে খাওয়ায়। কিন্তু যখন সীষরা যুদ্ধের ক্লান্তির কারণে ঘুমিয়ে পড়েন, যায়েল তাকে তাম্বুর একটি গোঁজ মাথায় ঢুকিয়ে মেরে ফেলে (বিচার ৪:১৮-২১, ৫:২৪-২৭)।
- কেন যায়েল এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করে, যদিও তার গোষ্ঠি ও কনানীয়দের মধ্যে শান্তি ছিল এবং যদিও একটি ছোট গোষ্ঠি হিসাবে দু’টি সৈন্যদলের মাঝখানে পড়া কেনীয়দের জন্য অবশ্যই হুমকিস্বরূপ ছিল? হয়তো তিনি বছর পর বছর কনানীয়দের দ্বারা ইস্রায়েলের উপর অত্যাচার দেখেছিল? আমরা জানি না।

- দবোরার জয়ের গানে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রকাশ পায়: ইস্রায়েলের বিভিন্ন গোষ্ঠির মধ্যে সম্পর্ক। গল্পে বলা হয়েছিল যে বারাক তান নিজের গোষ্ঠি নপ্তলী ও সবূলূন গোষ্ঠি থেকে ১০ হাজার সেনা যোগাড় করেছিলেন। নপ্তলী ও সবূলূন গোষ্ঠির এলাকা উত্তরদিকে ছিল বলে তারা কনানীয়দের ক্ষমতা বিস্তার দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। দবোরা তার জয়ের গানে তাদেরকে তাদের সাহসের জন্য প্রশংসা করেন (বিচার ৫:১৮)।
- বিচার ৫:১৪-১৫ পদে দবোরা উল্লেখ করেন যে, ইফ্রায়িম, বিন্যামিন ও ইষাখর গোষ্ঠিও যুদ্ধের জন্য সেনা পাঠিয়ে দিল। গানে দবোরা বলেন যে তারা “দবোরার সঙ্গে গেলেন” এবং “উপত্যকায় নেমে গেল বারাকের পিছে পিছে”।
- কিন্তু প্রকাশ পায় যে, রূবেণ, গাদ (গিলিয়দ), দান ও আশের গোষ্ঠি দবোরা ও বারাকের ডাকে সাড়া দেন নি (বিচার ৫:১৫-১৭)।
- রূবেণ ও গিলিয়দ ছিল যর্দনের পূর্বের গোষ্ঠিগুলো (পূর্ব মনঃশির উল্লেখ নেই), তাই হয়তো দূরত্বের কারণে তারা সেনা পাঠায় নি।
- কিন্তু আশের ও দান গোষ্ঠি কাছাকাছি ছিল এবং খুব সম্ভবত তারাও কনানীয়দের অত্যচারে ভুগত। তবুও তারা দবোরা ও বারাককে সাহায্য করে নি: “দান-গোষ্ঠী কেন রয়ে গেল জাহাজের কাছে? আশের-গোষ্ঠীর লোকেরা সাগরের পারে রয়ে গেল।”
- যিহূদা ও শিমিয়োন গোষ্ঠির উল্লেখ নেই, কারণ হয়তো তারা বেশ দক্ষিণ দিকে অবস্থিত? কিন্তু বিন্যামিন সৈন্য পাঠাল যদিও তারাও দক্ষিণে অবস্থিত। ইফ্রায়িম গোষ্ঠির সরাসরি উল্লেখ নেই কিন্তু খুব সম্ভবত তারা দবোরার গোষ্ঠি বলে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করল।
- দবোরার জয়ের গানে একটি অভিশাপও পাওয়া যায়: “মেরোসকে অভিশাপ দাও, ভীষণভাবে অভিশাপ দাও সেখানকার কদের; তারা কেউ যুদ্ধে সদাপ্রভুর সংগে যোগ দেয় নি, যোগ দেয় নি শক্তিশালীদের বিরুদ্ধে’” (বিচার ৫:২৩)। মেরোস নামে এই শহরের পুরাতন নিয়মের আর কোথাও উল্লেখ নেই, তাই এই পদটির অর্থ তেমন বুঝা যায় না। হয়তো মেরোস ছিল একটি ইস্রায়েলীয় শহর যা যুদ্ধের পথে পড়লেও সাহায্য করে নি? বা বারাকের সেনাদের জন্য এমন কি বাধা সৃষ্টি করেছিল? আমরা জানি না।
- একটি বিষয় কিন্তু পরিষ্কার। দেখা যায় যে, ইস্রায়েল জাতির কোন কেন্দ্রীয় সরকার বা স্তায়ী সৈন্যদল ছিল না। এক গোষ্ঠি আর একটি গোষ্ঠিকে সেনা পাঠিয়ে সাহায্য করবে কিনা, তা গোষ্ঠির নিজের সিদ্ধান্ত এবং সম্পর্কের উপর নির্ভরশীল।
সংবাদটি কি?
বিচার ৫:৬-৮ “অনাতের ছেলে শম্গর আর যায়েলের সময়ে সদর রাস্তা ছেড়ে পথিকেরা ঘুর পথে চলত। ৭ তখন ইস্রায়েলীয়দের গ্রামে কেউ বাস করত না; যতদিন না আমি দবোরা ইস্রায়েলীয়দের মায়ের মত হলাম, ততদিন তাদের গ্রামগুলো জনশূন্য ছিল। ৮ তারা যখন নতুন দেব-দেবতার দিকে মন দিল তখন তাদের শহর-ফটকের কাছে যুদ্ধ হল। চল্লিশ হাজার ইস্রায়েলীয়ের হাতে একটা ঢালও ছিল না, একটা বর্শাও ছিল না।”
- এই পদগুলোতে প্রকাশ পায়, কনানীয়দের নিয়ে সমস্যার আসল কারণ কি। ঠিক মোশির আইন-কানুনু যেমন পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে: ইস্রায়েল যদন ঈশ্বরকে ত্যাগ করে দেবতাপূজায় লিপ্ত হয়, তখনই বিবিন্ন ধরণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দেবে। ইস্রায়েল নিজেকে সুরক্ষা করবে, এই ক্ষমতা তার আর থাকবে না “একটা ঢালও ছিল না, একটা বর্শাও ছিল না”। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বেচাকেনা, কৃষি ও অর্থনৈতিক অবস্থাও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হবে “সদর রাস্তা ছেড়ে পথিকেরা ঘুর পথে চলত … গ্রামগুলো জনশূন্য ছিল”।
- অপর পক্ষে, যখন ইস্রায়েল ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য হতে থাকে, তখন ঈশ্বর দবোরার মত ঈশ্বরীয় নেতৃত্ব উঠিয়ে সামরিক জয় ও রাজনৈতিক স্থিরতা দান করেন, যার ফলে সাধারণ লোকদেরও সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক সুঅবস্থা থাকে।