• প্রত্নতত্ত্বের মাধ্যমে শক্তিশালী তথ্য পাওয়া গেছে যা বাইবেলের সত্যতা প্রমাণ করে। ২৫ হাজারেরও বেশি স্থান পাওয়া গেছে যা বাইবেলের বর্ণনার সাথে মিল আছে। অনেক প্রাচীন স্থান প্রত্নতত্ত্ববিদরা কেবল মাত্র খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছেন কারণ বাইবেলে এই স্থানগুলির উল্লেখ বা বর্ণনা দেওয়া আছে।
  • পুরাতন নিয়মে ৩৬জন ব্যাক্তি উল্লেখ করা হয়েছে যাদের নাম ও বার্ণনা বাইবেলের বাইরে অন্যান্য প্রাচীন লেখাগুলি বা ঐতিহাসিক নথিপত্রেও পাওয়া গেছে। আরো ২২জন ব্যক্তি উল্লেখ করা হয়েছে যাদের নাম ও বর্ণনা সম্ভবত অন্যান্য প্রাচীন লেখাগুলিতে পাওয়া গেছে, কিন্তু তা সম্পূর্ণ নিশ্চয়তার সঙ্গে বলা যায় না।

পুরাতন নিয়মের ঐতিহাসিক প্রমাণ      আদিপস্তক

সৃষ্টি                                           আদি ১-২
  • বর্তমান যুগের জেনেটিক গবেষণা মনে করে যে বর্তমান মানুষের জীনের উৎস ছিল মেসোপটেমিয়ার একজন পুরুষ এবং পূর্ব আফ্রিকার একজন মহিলা।
মানব জাতির পতন                              আদি ৩
  • প্লাবনের আগে আদিম যুগে ৭জন প্রজ্ঞাবান লোক ছিল, তাদের মধ্যে একজন হলেন আদাপা (Story of Adapa)। তার কাহিনীতে খাবার নিয়ে মরণশীলতার একটি পরীক্ষা উল্লেখ আছে যা এদোন বাগানে আদম ও হবার কাহিনীর সাথে মিল আছে।
  • প্রাচীন চীন ভাষার প্রতীকগুলিতে আদিপুস্তকের কাহিনীর সাথে কিছু মিল পাওয়া যায়। যেমন: যে প্রতীক প্লাবন বুঝায় তার ছবি হল ‘জাহাজে ৮জন মানুষ’। যে প্রতীক ‘শয়তান’ বুঝায় তার ছবি হল ‘বাগানে মন্দ একজন’।
নোহের প্লাবন                                    আদি ৬-৯
  •  বাবিলের বেশ কিছু লেখাগুলো আবিষ্কৃত হয় যাতে সৃষ্টি ও প্লাবনের বর্ণনা পাওয়া যায়, যেমন: গিল্গামেশ কাহিনী (Gilgamesh Epic), আত্রা-হাসিস্ মাটির ট্যাব্লেটে লিখিত গল্প (Atra-Hasis tablets), এনূমা এলিস (Enuma Elis), এরিদুর সৃষ্টির গল্প (Eridu Genesis) এবং বার্টন বেলনে (Barton Cylinder) লিখিত গল্প। 
  • যেহেতু নোহের প্লাবন এত বিশেষ যে তা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে শোনানো হয়েছে, তাই বাইবেলের পাশাপাশি এই ধরণের লেখাগুলি পাওয়া অস্বাভাবিক নয়, যদিও গল্পগুলি কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে।
  • গিল্গামেশ কাহিনীর (Gilgamesh Epic)এর ১১ নং মাটির পাথরে প্লাবনের গল্পে উল্লেখ আছে: একটি জাহাজ, জাহাজে পশু নেওয়া হয়, জাহাজ থেকে পাখি পাঠানো হয়, জাহাজ একটি পাহাড়ের গায়ে আটকায় এবং পরে একটি উৎসর্গ দেওয়া হয়। এই গল্পের প্রধান যে নায়ক, তার নাম উৎনাপিষ্টিম (Utnapishtim), যার অর্থ ‘যিনি জীবন খুঁজে পেয়েছেন’।
  • বামের ছবিটি হল গিল্গামেশ কাহিনীতে ঝড় থেমে যাওয়ার বর্ণনা। ডানের ছবি হল গিল্গামেশ কাহিনীর আর একটি টুকরা।
  • প্রাচীন মাটির পাথরগুলিতে সুমেরীয় রাজাদের তালিকা (Sumerian kings Tablet): রাজাদের এই তালিকার ১৬টিরও বেশি খণ্ড পাওয়া গেছে, যেমন ইরাকের নিপ্পুর (Nippur) ল্যাইব্রেরীতে, যার আবিষ্কার ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত।
  • একটি সম্পূর্ণ পাথরও পাওয়া গেছে যার নাম ওয়েল্ড-ব্লান্ডেল প্রিস্ম্ (Weld-Blundell Prism), যা বর্তমানে যুক্ত রাজ্যে অক্সফোর্ড শহরের আশ্মোলিয়ান (Ashmolean) জাদুঘরে আছে। ডানের ছবিগুলো।
  • এই তালিকার শুরুদিকে উল্লিখিত রাজাদের রাজত্বের মেয়াদ অনেক লম্বা। পরে একটি প্লাবন উল্লেখ। প্লাবনের পরের রাজাদের রাজত্বের মেয়াদ আগের তুলনায় কমে গেছে। 
  • এই একই ধরণ বাইবেলেও পাওয়া যায়: প্লাবনের আগে মানুষের জীবনের মেয়াদ ছিল অনেক লম্বা, কিন্তু প্লাবনের পরে তা কমে।
নিম্রোদ দ্বারা স্থাপিত শহর
  • আদি ১০:১০-১২ পদে নিম্রোদ নামে একজন শক্তিশালী রাজা উল্লেখ যিনি কয়েকটি শহর স্থাপন করেন: বাবিল, এরক এবং অক্কদ শিনিয়র এলাকায় এবং পরে নীনবী, রহবোৎ-পুরী, কেলহ এবং রেষন আসিরিয়া এলাকায়। বাইবেল অনুসারে এইগুলি হল পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন শহর।
  • ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে এই শহরগুলি আবিষ্কার, চিহ্নিত ও খনন করা হয়।
বাবিলের উচু উদ্দ্যান
  • সুমেরীয় মাটির ট্যাব্লেট আদি ১১ অধ্যায়ে ভাষার গোলমালের মত একই রকম গল্প পাওয়া যায়: একটি স্বর্ণযুগ ছিল যখন সব লোকেরা একই ভাষায় কথা বলত।
  • কিন্তু পরবর্তীতে এন্কি নামে একজন প্রজ্ঞার দেবতা লোকদের ভাষা গোলমাল করিয়ে দেন।
  • বাবিলীয়দের একই ধরণের একটি গল্প আছে যেখানে দেবতারা মানুষদের মন্দিরের একটি উচু দালান ধ্বংস করে দেন এবং লোকদের “ছড়িয়ে দিল এবং তাদের ভাষা ভিন্ন করে দিল।”
  • আদি ১১:১ পদ বলে যে পৃথিবীর সব মানুষ একটি ভাষাতে কথা বলত। বিবর্তন অনুসারে এমন হওয়া উচিত নয় বরং বিভিন্ন ভাষা বিভিন্ন স্থানে উন্নত হওয়ার কথা। কিন্তু আধুনিক ভাষাবিদ, তাদের মধ্যে আল্গ্রেডো ট্রম্বিট্টিস নামে (Algredo Trombettis) একজন, বলেন যে সমস্ত ভাষা একটি সাধারণ ভাষা থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং কোন ভাষা থেকে কোন ভাষা সৃষ্টি হয়েছে, তা খুঁজে বের করা সম্ভব।
  • বামের ছবি: জিগ্গুরাট (Ziggurat) নামক দালানের একটি মডেল। বাবিল এলাকেয় কয়েজটি জিগ্গুরাটের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। হয়তো বাবিলের উঁচু গৃহ এই আকারে বানানো ছিল।

অব্রাম বা অব্রাহাম

অব্রামের নাম                         Name ‘Abram’

  • বাবিলে ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বে নানা ধরণের প্রাচীন হাতের তৈরি বস্তু বা লেখায় সে যুগের অনেক লোকদের নাম পাওয়া যায়, যার মধ্যে ‘অব্রাম’ একটি ব্যক্তিগত নাম।
  • বাইবেলে উল্লিখিত বিভিন্ন স্থানের নাম ঐসময়ের অন্যান্য প্রাচীন লেখাতেও পাওয়া যায়, যেমন ‘সিনাই’। 
  • ২২৮০ খ্রিষ্টপূর্বের দিকের খোদাই করা একটি লেখা, যার নাম ওয়েনির আত্ম-কাহিনী (Autobiography of Weni), তাতেও সিনাই স্থানের উল্লেখ পাওয়া যায়।
  • এই খোদাইটি মিসরীয় অক্ষরে লেখা (Hieroglyphs) সিনাই এবং পশ্চিম ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চলে মিসরীয়দের একটি সামরিক অভিযানের বর্ণনা।
  • এখানেই সিনাই এবং অন্যান্য অঞ্চলের সর্বপ্রাচীন উল্লেখ পাওয়া যায়। খোদাইটি ১৮৮০ খ্রিষ্টপূর্বে মিসেরর আবিদস্ (Abydos) শহরে আবিষ্কৃত। বর্তমানে কাইরো যাদুঘরে দেখা যায়।
  • আদি ১৪:১-৩ পদে উল্লিখিত যে অব্রাহাম কয়েকটি শহরের রাজাদের পরাজিত করেন।
  • শহরগুলো হল সদোম, ঘমোরা, অদমা, সবোয়িম এবং সোয়র। এই শহরগুলির উল্লেখ অন্য কোথাও পাওয়া যায় নি বলে অনেকে বলত যে এই শহরগুলি কাল্পনিক।
  • কিন্তু ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সিরিয়ার এব্লা শহরে তেল মার্দিক (Tel Mardikh) নামে একটি জায়গায় পাওলো মাথিয়ে (Paolo Matthiae) নামে একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ এব্লা রাজ্যের মাটির পাথরের একটি বিরাট লাইব্রেরী আবিষ্কার করেন, যাতে ১৮০০ সম্পূর্ণ পাথর এবং আর ৪৭০০ পাথরের খণ্ডও পাওয়া যায়।
  • ধারণা করা হয় মাটির পাথরের লেখার সময়কাল ২৫০০-২২৫০ খ্রিঃপূঃ
  • মাটির পাথরে সেই একই ৪টি শহরের নাম একই সিরিয়ালে উল্লেখ পাওয়া যায় (ঘমোরা, অদমা, সবোয়িম এবং সোয়র)। ডানের ছবি।

শিখিমে অব্রাহাম                         আদি ৩৩:১৮-৩৪:৩১

  • আদি ৩৩৩৪ অধ্যায়ে অব্রাহাম শিখিমের কাছে বসবাস করেন।
  • শিখিমের লোকদের সাথে গন্ডগোল হয়।
  • শিখিম নামে এত আগে একটি শহর ছিল তার প্রমান একটি মিসরীয় ফলকে পাওয়া যায়।
  • ১৮৬০ খ্রিষ্টপূর্বের সেবেক্-খূ ফলক (Sebek-khu stele) নামে সেই ফলক বা স্টেলে মিসরীয় অক্ষরে একটি মিসরীয় সামরিক অভিযানের বর্ণনা পাওয়া যায়, যার মধ্যে ‘শিকমেম’ (Sekmem) নামে একটি শহর উল্লেখ। ধারণা করা হয় যে এইটা হল আদিপুস্তকের সেই শিখিম। ফলকটি মিসরের আবিদস শহরে আবিষ্কৃত।
  • বর্তমানে যুক্ত রাজ্যের ম্যানচেষ্টার যাদুঘরে দেখা যায়। বামের ছবি।

অব্রাহাম ও যাকোবের মিসরে যাত্রা                     আদি ১২:১০, ৪৭:৫-৬

  • কনান ও পশ্চিম ভুমধ্য সাগরীয় এলাকার চাষ বৃষ্টির উপরে নির্ভর করে কিন্তু মিসরের চাষ নীল নদের উপর নির্ভরশীল।
  • নীল নদের পানি কখনও বন্ধ হয় না যেহেতু তার মাথা মাঝের আফ্রিকার মৌসুমী জলবায়ূপূর্ণ দেশে।
  • এমন কি ২০০০ খ্রিঃপূঃ থেকে বৃষ্টির অভাবে দুর্ভিক্ষ হলে কনান দেশ এবং চারিদিকের এলাকা থেকে লোকেরা মিসরে চলে আসত, তার প্রমাণ মিসরের বিভিন্ন প্রতীক বা ছবিতে পাওয়া যায়।
  • আদিপুস্তকেও তার উল্লেখ: আদি ১২:১০ পদে অব্রাহাম দুর্ভিক্ষের কারণে মিসরে যান।
  • আদি ২৬:২ ঈশ্বর ইসহাককে পরিচালনা দেন মিসরে না যেতে (অবশ্যই সেখানে যাওয়া তার চিন্তা ছিল)।
  • আদি ৪২৪৩ অধ্যায়ে যাকোবের ছেলেরা শস্য আনতে মিসরে যায়। আদি ৪৭:৫-৬ ফরৌণ ও যোষেফের নিমন্ত্রণ পেয়ে যাকোবের সম্পূর্ণ পরিবার মিসরের গোশনে যায়।

ইস্রায়েলীয়রা মিসরে                        আদি ৪৭-৫০, যাত্রা ১

  • যেহেতু অব্রাহামের জাতি যাযাবর, তাই তারা মিসরে থাকার সময়ে বেশি স্থায়ী ঘর নির্মান করতেন না।
  • তারপরেও নীল নদের ব-দ্বীপের গোশন এলাকায় একসময় ইস্রায়েল বাস করত তার প্রমান পাওয়া যায়।
  • ১৯৬৬ খ্রিঃ থেকে আধুনিক কান্টীর (Kantir) শহরে তেল-এল-ডাবা (Tel-el-Daba) নামে একটি জায়গায় মান্ফেড বীটাক (Manfred Bietak) নামে একজন অষ্ট্রীয়ান প্রত্নতত্ত্ববিদ একটি প্রাচীন গ্রামের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন।
  • ঘরের নির্মাণের ধরণ এবং নির্মাণে ব্যবহৃত বস্তুগুলি মিসরীয় নির্মাণের মত নয় বরং কনান ও চারিদিকের এলাকার নির্মাণের মত।
  • ঘরের নির্মাণের ধরণ হল একটি উঠানের ৩দিকে ঘর। ঠিক একই নির্মাণের ধরণ পরের শতাব্দীতে ইস্রায়েলে দেখা যায়। বামের ছবি: মডেল। ডানের ছবি: খনন
  • সেই একই কনন স্থানে (তোল-এল-ডাবা) ৯টি রাজকীয় আংটির শীলমোহর পাওয়া গেল যাতে লেখা আছে ‘yakov’ যার অর্থ ‘যাকোব’, যোষেফের পিতা। ডানের ছবি দেখুন।
  • বিভিন্ন যুগের মিসরীয় রাজকীয় সীলমোহরের মধ্যে শুধুমাত্র এই আংটিতে ইব্রীয় নাম পাওয়া গেছে।
  • তা আদি ৪১:৩৭-৪৯ পদের সাথে মিল আছে যেখানে যাকোবের ছেলে যোষেফকে ফরৌণের ডান হাত হিসাবে অধিকার দেওয়া হয়।
  • ১৭০০ খ্রিষ্টপূর্বের মিসরে বেনি হাসানের কবরের দেওয়ালের চিত্র (Beni Hasan tomb paintings) পাওয়া যায় যাতে শেমীয় লোকেরা, যারা দাঁড়ি ও রঙ্গীন কাপড় পড়ে তাদের পরিবার ও পশুপাল নিয়ে মিসরে চলে আসে।
  • বামে প্রথম ছবি: বেনি হাসান কবরের বাইরের দৃশ্য। 
  • বামে মাঝের ছবি: বেনি হাসান কবরের দেওয়ালে আঁকা ছবি। 
  • বামে তৃতীয় ছবি: উপরের ফটোর ভিত্তিতে আঁকা ছবি। ছবিগুলো দেখায় শেমীয় লোকেরা (রঙ্গিন কাপড় পড়া, দাড়িওাল্লা), যারা যাযাবর হিসাবে (সাথে আছে পশু) মিসরে চলে আসে।
  • ডানের উপরে ও মাঝের ছবি: তা হল বামের ছবির ২য় সারির একটি অংশ বড় করে দেখানো। এখানে একজন লোক একটি লেখা ধরে দেখায়। লেখায় এই লোকদের পরিচয়ের ক্ষেত্রে বলা হয় যে তারাই হল ‘আমো’, যার অর্থ হল ‘ঈশ্বরের লোকেরা’

পুরাতন নিয়মের ঐতিহাসিক প্রমাণ যাত্রাপুস্তক

হিক্সস জাতিকে তাড়ানো যাত্রাপুস্তক

  • মিসরীয় নথি অনুসারে হিক্সস নামে একটি জাতি ১৮০০-১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বে মিসরে রাজত্ব করত। ‘হিক্সস’ মানে ‘বিদেশী শাসনকর্তা’। আরো বলে যে হিক্সসরা ছিল নোহের ছেলে শেম থেকে আসা একটি জাতি। নথি বলে যে মিসরের ১২ নং রাজবংশের (12th Dynasty) শেষ দিকে (১৮০০ খ্রিঃপূঃ) কনান থেকে লোকসংখ্যা মিসরে উপস্থিত হয় এবং ১৭২০ খ্রিষ্টপূর্বের মধ্যে তারা নীল ব-দ্বীপে একটি রাজ্য স্থাপন করে। মিসরীয়দের ১৩ থেকে ১৭ নং রাজবংশ বেশি শক্তিশালী ছিল না বলে হিক্সসরা ও মিসরীয়রা সমান্তরালভাবে মিসরে বাস করে এবং নিজেরা নিজদের রাজত্ব করে। ১৭ নং রাজবংশের শেষ রাজা সেকেনেন্রে টাও (Seqenenre Tao) এবং ১৮ নং রাজবংশের শক্তিশালী ১ম রাজা আহমোশি (Ahmose I) হিক্সসদের মোটামুটি ১৫৫০ খ্রিষ্টপূর্বে মিসর থেকে তাড়ান।
  • এই ঐতিহাসিক বর্ণনা এবং যাত্রা ১ অধ্যায়ের বেশ মিল পাওয়া যায়। হতেও পারে ‘হিক্সস’ বা ‘বিদেশী শাসনকর্তা’ হল ইস্রায়েলের জন্য মিসরীয় বর্ণনা। ইস্রায়েলীয়রা ঠিকই কনান থেকে শেমীয় জাতি, যারা মিসরে চলে আসে, বাস করে ও মিসরীয় সরকারের উপর প্রভাব বিস্তার করে (যোষেফ)। তারা মিসরে বৃদ্ধি পেয়ে আস্তে-আস্তে নিজেদের মিসরের সরকারের শত্রু হিসাবে খুঁজে পায়, অত্যাচারিত হয় এবং অবশেষে মিসর ছেড়ে চলে যায় (যাত্রা ১২)। ইস্রায়েলের প্রস্থান বাইবেলে ঈশ্বরের জয় ও মিসরের পরাজয় হিসাবে দেখানো হয়; মিসরীয় ইতিহাসে তা দেখানো হয় যে মিসরীয়রা হিক্সসদের তাড়াতে সক্ষম হয়।

মিসরে দাসত্ব যাত্রাপুস্তক ১-১২

  • মিসরীয় ১৮ নং রাজবংশের যুগে (18th dynasty, ১৫৫০-১৩০০ খ্রিঃপূঃ) কবরের দেওয়ালের বেশ কিছুটা চিত্র (Tomb wall paintings) পাওয়া যায় যা দেখায় দাসরা কিভাবে খড় ও কাদা থেকে ইট তৈরি করে। মিসরীয় ক্রীতদাস চালকদের হাতে চাবুক আছে ও চিত্রের লেখা বলে: ‘আমার হাতে চাবুক আছে, অলস হয়ো না!’বামে উপরের দু’টি ছবি
  • নো-আমোন (Thebes) শহরে লূক্সর (Luxor) জায়গায় ১৪৮০-১৪২০ খ্রিঃপূঃ থেকে রেখমীরে (Rekhmire) নামে মিসরীয় একজন মন্ত্রীর কবরের (tomb TT100) দেওয়ালে চিত্রগুলো পাওয়া গেছে যাতে দেখা যায় ক্রীতদাসরা কিভাবে কাদা থেকে ইট বানায়। ঐ যুগের কিছু প্রাচীন ইটের দেওয়াল আজ পর্যন্ত নীল ব-দ্বীপে দেখা যায়: বামে তৃতীয় ছবি।
  • মিসরীয় ১৫ নং রাজবংশের যুগে (15th dynasty) কবরের দেওয়ালের চিত্রে দেখায় কনানীয় ক্রীতদাস যারা গোশনে মনিবদের জন্য কৃষিকাজ করে (আঙ্গুর ক্ষেতে কাজ)। ডানে মাঝের ছবি।
  • ১৭০০ খ্রিষ্টপূর্বে ফরৌণ সোবেকহোটেপ ৩ (Sobekhotep III)-এর সময়ে একটি প্রাচীন প্যাপিরাস কাগজ (Papyrus) আবিষ্কৃত হয়েছে যা দাস ক্রয়-বিক্রয়ের একটি নথি। কাগজে বিক্রী করা দাসদের নামের তালিকা উল্লিখিত: নামগুলির মধ্যে অর্ধেক নাম ইব্রীয়, এমন নাম যা শুধুমাত্র ইস্রায়েলে ব্যবহৃত। নামগুলির মধ্যে একটি নাম শিফ্রা। শিফ্রা নামে একজন ধাত্রী যাত্রা ১:১৫-২১ পদে উল্লেখ যিনি ফরৌণের আদেশের বিরুদ্ধে ইস্রায়েলীয় ছেলেদের রক্ষা করেন। তাই বুঝা যায় যে শিফ্রা ছিল সে সময়ের একটি প্রচলিত ইব্রীয় নাম। কাগজটি (Papyrus 35.1446) আমেরিকায় ব্রুকলিন জাদুঘরে দেখা যায়। ডানে উপরের ছবি
  • সিনাই উপদ্বীপে গোশেন থেকে ৪০০ কি:মি: দক্ষিণে সেরাবিট-এল-খাদিম (Serabit-el-Khadim) নামে একটি জায়গায় প্রাচীন মিসরীয় ফিরোজা পাথরের খনি আছে। ঐ যুগের ক্রীতদাসরা যারা খনিতে শ্রম দিত তাদের থেকে দেওয়ালে খোদাই করে লেখা দেখা যায়। মিসরীয়রা হায়ারোগ্লিফ দিয়ে লিখত কিন্তু ইস্রায়েলীয়রা অক্ষর দিয়ে লিখত, একটি বর্ণমালা যা থেকে বেশ কিছু আধুনিক বর্ণমালা সৃষ্টি হয়েছে। খনিতে একটি অক্ষর দিয়ে লিখিত খোদাই পাওয়া গেল যা বলে: ‘এল, আমাকে রক্ষা কর!’। ‘এল’ হল ইব্রীয় ভাষায় ঈশ্বরের একটি টাইটেল। এই দাস অক্ষর জানত। বামে নিচের ছবি
  • ১৮ নং রাজবংশের এবানার (Ebana) ছেলে ফরৌণ আহমোশি ১ (Ahmose I) ও ফরৌণ আহমোশি পেন-ন্খেবেটের (Ahmose Pen-Nkhebet) কবরে নথি পাওয়া গেল যা প্রমান করে যে মিসর ঐ সময় সিনাই উপদ্বীপ নিয়ন্ত্রণ করত।

মিসরে ঈশ্বরের ১০টি আঘাত                        যাত্রা ৭-১২

  • আহমোশি ১ (Ahmose I)-এর বাবা ফরৌণ সেনেন্রে টাও-২ (Seqenenre Tao II) হতে পারে ছিলেন ইস্রায়েলকে অত্যাচারী ফরৌণ।
  • তার মমির (সুগন্ধি বস্তু দিয়ে রক্ষা করা লাশ) খুলি কুড়াল দিয়ে আঘাত প্রাপ্ত।
  • ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে এ. সেভালিয়ে (A.Chevalier) নামে একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ দ্বারা ১৫০০ খ্রিঃপূঃ থেকে ফরৌণ আহমোশি ১-এর একটি খোদাই করা ফলক (Ahmose I Stele) আবিষ্কৃত হয়েছে যাতে মিসরীয় হায়ারোগ্লিফ দিয়ে লেখা আছে যে মিসরে একটি ‘ভয়ংকর ও বিশাল ঝড়’ হল, ‘সারা মিসর দেশ অন্ধকার দিয়ে ঢাকা হল’ এবং এর কারণ হল যে ‘প্রভু (god, একবচন!) তাঁর ক্ষমতা প্রমাণ করলেন’। মিসরীয়দের অনেক দেব-দেবতা ছিল, তাই লেখায় একবচন উল্লেখ আছে, তা খুব বিশেষ। ডানের ছবি: ফলকের মডেল-
  • মিসরে ইপুয়ার প্যাপিরাস’ (Ipuwer Papyrus) নামে একটি প্রাচীন কাগজ পাওয়া গেল যাতে বর্ণনা আছে মিসর কিভাবে নানা ধরণের দুর্যোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে দেশ খুব দুরাবস্থায় পড়ে।
  • এতে লেখাগুলি বলে: ‘গরীবরা ধনী হয়ে উঠেছে, ধনীরা গরীব হয়ে পড়েছে, সবখানে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও মৃত্যু ঘটচ্ছে’ … ‘দাসরা আর শ্রম দিতে রাজী না বরং দাসত্ব ছেড়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে’
  • মিসরীয়দের দৃষ্টিতে ইস্রায়েলের মুক্তি ও প্রস্থান অবশ্যই এইভাবে দেখা দিল।
  • এই কাগজে আরো উল্লেখ আছে যে ‘নদীটি রক্ত হয়ে গেছে’ যাতে যাত্রা ৭:২০ পদের ১ম আঘাতের সাথে মিল এবং ‘শক্তিশালী শিলা বৃষ্টি, যাতে বরফ ও আগুন উভয় ছিল’ যাতে যাত্রা ৭:২৪ পদের ৭ম আঘাতের সাথে মিল।
  • আজকের যুগের যিহূদী পণ্ডিত খাইম সাক্নভিছ্ (Rabbi Chaim Sacknovitz) বলেন যে ইব্রীয় ভাষায় ‘আগুন ও বরফ’ এমনভাবে ব্যবহৃত হয়েছে যে তা আক্ষুরিক অর্থে বুঝতে হচ্ছে।
  • সেই ইপুয়ার প্যাপিরাসের তারিখ নিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদের অমত আছে, কেউ কেউ প্যাপিরাসের তারিখ হিক্সসদের যুগে দেয় (১৮৫০-১৫৫০ খ্রিঃপূঃ) ও মনে করে উল্লিখিত দুরাবস্থা হল হিক্সসদের কারণে , কেউ কেউ তার তারিখ দেয় ১৩০০-১২০০ খ্রিষ্টপূর্বে
  • ৯ম আঘাতে মিসরকে যে অন্ধকারে ঢাকা হয়, তার হয়তো ঐযুগের অন্য একটি দুর্যোগের সাথে মিল আছে: গ্রীক দ্বীপ সান্টরিনির আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত (Santorini Volcano Eruption)।
  • ইতিহাসে উল্লিখিত অগ্ন্যুৎপাত সান্টরিনিরটা ছিল সবচেয়ে শক্তিশালীদের মধ্যে একটি। ছাই ৪০ কি:মি: পর্যন্ত বায়ূমণ্ডলে উঠেছিল ও অগ্ন্যুৎপাতের শব্দ এমন শক্তিশালী ছিল যে ১০ থেকে ১২ বার পৃথিবীর চারিদিকে শোনা গিয়েছিল।
  • ঘটনার তারিখ ১৬০০-১৫০০ খ্রিঃপূঃ মনে করা হয়।
  • আগ্নেয়গিরি থেকে ছায়ের পাশাপাশি হাল্কা ঝামাপাথরও (pumice) পাওয়া যায়। প্রত্যেক অগ্ন্যুৎপাতের ছাই ও ঝামাপাথর মাইক্রোস্কপে ভিন্নভাবে দেখা দেয়, তাই কোথাও ছাই বা ঝামাপাথর আবিষ্কৃত হলে পরীক্ষা করে বের করা যায়, কোন অগ্ন্যুৎপাত থেকে তা আসল।
  • মিসরে নীল নদের ব-দ্বীপে গোশেন এলাকা বিভিন্ন জায়গায় সান্টরিনি থেকে ছাই ও ঝামাপাথর পাওয়া যায়।
  • গোশেনের ঐযুগের প্রধান শহর, আভারিস্ (Avaris), যার ধ্বংসাবশেষ অষ্টীয়ান প্রত্বতত্ত্ববিদ মানফ্রেড বীটাক (Manfred Bietak) দিয়ে খনন হয় সান্টরিনির ছাই ও পামিস ঠিক হিক্সসদের ও মিসরীয় ১৮ম রাজবংমের যুগে পাওয়া গেল।
  • তাই মনে করা হয় যে সান্টরিনির অগ্ন্যুৎপাত, হিক্সসরা ও ১৮ম মিসরীয় রাজবংশের ফরৌণ আহমোশি ১ সমসাময়িক এবং তা হতেও পারে ঠিক সে ঘটনা যা যাত্রা ৭-১২ অধ্যায়ে উল্লেখ। ডানের ছবি: মাইক্রোস্কপে সান্টরিরির ছাই।
  • যাত্রা ১২:২৯ পদে ১০ম আঘাতের বর্ণনা করা হয়েছে: প্রথম জাতের মৃত্যু। দেখা যায় যে ফরৌণ আহমোশি ১-এর ছেলে সাপাইর (Sapair), যার মমি ও লিপিখাচিত পাথরের শবধার (sarcophagus) আবিষ্কৃত হল, যুবক হিসাবে ১২ বছর বয়সে মারা গেলেন। ডানের ছবি
  • নীল নদীর ব-দ্বীপে গোশেন এলাকার রাজধানী আভারিস (Avaris)-এ ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বের গণকবর আবিষ্কৃত যাতে তাড়াতাড়ি যেকোনো ভাবে ফেলে দেওয়া পুরুষ কঙ্কাল পাওয়া গেছে। হতেও পারে গণকবরটি হল ১০ম আঘাতের প্রথম জাত ছেলেদের কবর। বামের ছবি

 মিসর থেকে প্রস্থান                           যাত্রাপুস্তক ১২-১৪

  • যেহেতু মিসরের কনানের দিকে পূর্ব-উত্তরদিকের সীমানা ছিল প্রাকৃতিক দিকে সবচেয়ে কম সুরক্ষিত সীমানা, মিসরীয়রা তা অনেক দুর্গ ও সৈন্য দিয়ে সুরক্ষিত রাখত। পূর্ব-উত্তরদিক দিয়ে বেচা-কেনাও হত, কিন্তু মিসরকে আক্রমন করলে সে দিক দিয়েও আক্রমন আসত। এই বিষয়ের সাথে মিল পাওয়া যায় যাত্রা ৩:১৭-১৮ পদে যেখানে ইস্রায়েল যুদ্ধ ও হতাশার ভয়ে এই রাস্তা দিয়ে যায় না।
  • কিছু লোক আপত্তি উঠায় যে মিসরীয়দের আরো নথিপত্র পাওয়ার কথা যাতে ইস্রায়েলের প্রস্থান উল্লেখ করা হয়েছে।
  • ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ কেনেথ এ. কিছেন (Kenneth A. Kitchen) বলেন: ‘মিসরের বন্যা-প্রাপ্ত নীল ব-দ্বীপে গুদাম করে প্যাপিরাস কাগজে লেখা নথিগুলি সহজেই নষ্ট হয়। যেহেতু খ্রিষ্টপূর্বের ১৩ম শতাব্দী থেকে কোনো নথিই আর নেই, তাই ইস্রায়েলের প্রস্থান উল্লেখ করার মত নথিও নেই।’
  • তা ছাড়া প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্য জাতিগুলি সাধারণত তাদের জয়ের গল্পের স্মৃতি স্তম্ভ, দেওয়ালে চিত্র ও খোদাই করে লিখে রাখত, কিন্তু তাদের পরাজয়গুলি একইভাবে রেকর্ড করে রাখত না। স্মৃতিগুলির উদ্দেশ্য ছিল জয়ের উৎযাপন, শত্রুদের ভয় দেখানো ও দেব-দেবতাদের খুশি করানো, তাই ফরৌণের সম্পূর্ণ সৈন্য লোহিত সাগরে ডুবে গেল, এই ঘটনার চিত্র বা বর্ণনা পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
  • উদাহরণ: বামের ছবিতে মিসরীয় কার্নাকে (Karnak) আমুন মন্দিরে (Amun temple) ফরৌণ থুটমোশি ৩ (Thutmosis III) -এর জয়ের স্মৃতি চিত্র, যেখানে তিনি অনেক পরাজিত দাসদের চুল ধরে চাবুক মারেন।
  • মিসরে ইস্মাইলি আঞ্চলিক যাদুঘরে এল-আরিশ (El-Arish) নামে একটি খোদাই করা লেখা দেখা য়ায়। মনে করা হয় লেখাটি হল প্রস্থানের গল্প কিন্তু মিসরের দৃষ্টি থেকে ।
    • মোশিকে ‘মরুভূমির রাজপুত্র’ বলা হয়।
    • ইস্রায়েলীয়দের ‘মন্দরা’ বলা হয়।
    • কিন্তু লেখাটি উল্লেখ করে যে একটি সাগর ভাগ করা হয়েছে: একটি হায়ারোগ্লিফ (যার ছবি হল ৩টি ঢেউয়ের লাইন) মানে ‘সাগর’ বা ‘নদী’
    • পরের হায়ারোগ্লিফ (যার ছবি ২টি ছুরি) মানে ‘ভাগ করা’ বা ‘কেটে দেওয়া’
  • কেউ কেউ আপত্তি উঠায় যে ইস্রায়েল কনানের পথে যেখানে তাম্বু ফেলত ঐযুগের ভাঙ্গা চীনামাটির টুকরা আজকেও পাওয়ার কথা, কিন্তু বিছুই পাওয়া যায় না।
    • এতে বলা যায় যে গরীব যাযাবর জাতি হিসাবে যারা অনেক সময় ধরে মরুভূমিতে আছে, প্রত্যেক বস্তু মূল্যবান বলে যত্নের সঙ্গে রক্ষা করা হত।
    • তা ছাড়া ৩৪০০ বছর আগের একটি অস্থায়ী ছাউনি ফেলা থেকে আজকে বেশি কিছু খুঁজে পাওয়ার আশা নেই।
    • ইয়েল (Yale) বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক মিলার বারাওস (Millar Burrows) এই কথা বলেন: ‘ইস্রায়েলের মরুভূমিতে যাত্রা থেকে এত বছর পরে কোন প্রত্নতত্ত্বের বস্তু পাওয়ার আশা নেই বললেই চলে। তারা ঠিক কোন পথে গেছে, তাও প্রত্নতত্ত্ববিদরা উত্তর দিতে পারবে না।’
    • যাত্রা ১২:৩৩৩৯ বলে যে, ইস্রায়েলীয়রা তাড়াতাড়ি করে মিসর থেকে বের হয়েছিল, এত তাড়াতাড়ি যে, তারা ময়দার সঙ্গে খামি মেশানোর বা পথের জন্য অন্য খাবার তৈরি করার সময় পায় নি। তাদের চিন্তা ছিল না যে অবাধ্যতার কারণে তারা ৪০ বছর মরুভূমিতে থাকবে, বরং তারা মনে করত যে মোটামুটি তাড়াতাড়ি প্রতিজ্ঞাত দেশে পৌঁছাবে, তাই ভারী চীনামাটির জিনিস-পত্র নিয়ে যাওয়ার কোন চিন্তা ছিল না।
  • যাত্রা ১৪:৫-৭ পদ বলে যে, ইস্রায়েলের প্রস্থানের পরে ফরৌণ আফসোস করে তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য ৬০০ রথ তাদের পিছনে পাঠালেন। কেউ কেউ বলে যে মিসরের সে যুগে ৬০০ রথ ছিল না।
    • কিন্তু নীল নদের ব-দ্বীপে ইস্রায়েলীয়দের হাত দিয়ে তৈরি রামিষেষ শহরে জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রাচীন একটি ঘোড়শালের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করলেন যাতে কম পক্ষে ৫০০ ঘোড়া ও রথ রাখার জায়গা ছিল।
    • উভয় ছবি: মিসরীয় রথ।
  • বাইবেলে নানা ঘটনা উল্লেখ আছে যাতে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায়। আবারও অনেক ঘটনা আছে যাতে কোন প্রমান পাওয়া যায় নি। প্রত্নতত্ত্ব এগিয়ে গেলে আরো অনেক প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু কিছু ঘটনা এমন যা প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়ার মত না, ঘটনা কিন্তু সত্যি ঘটেছিল। বাইবেলের বিরুদ্ধে অনেক আপত্তি উঠানো হয়েছে যা পরে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণের ফলে টিকতে পারে নি।

পুরাতন নিয়মের ঐতিহাসিক প্রমাণ আইন-কানুন

  • ১৪৪৫-১৪০৫ খ্রিষ্টপূর্বে মোশি দিয়ে লিখিত আইন-কানুন হল পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন বড় ও বিস্তারিত আইনবিধি। তার কারণে কেউ কেউ আপত্তি করেছেন যে, মোশির পুস্তকগুলি কয়েক শতাব্দী পরে আর একজন দ্বারা লেখা হয়েছিল। কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব মধ্যপ্রাচ্য দেশে মোশির চেয়ে আরো প্রাচীন আইনবিধি আবিষ্কার করেছেন, যেমন: ১৭৭২ খ্রিঃপূঃ হাম্মুরাবীর আইন-বিধি (Harmmurabi Law Code)
  • তা ছাড়া: 
    • ২০৫০ খ্রিঃপূঃ ঊর শহরের রাজা ঊর-নাম্মুর আইন-বিধি (Code of Ur-Nammu)
    • ১৯৩০ খ্রিঃপূঃ এসুন্নার নিয়মগুলি (Laws of Eshunna) 
    • এবং ১৮৭০ খ্রিঃপূঃ ইসিনের লিপিট-ইষ্টারের (Lipit-Ishtar of Isin Codex)
  • মোশির আইন-কানুনের পরে লিখিত আইনবিধি হল ন্সিলিমের আইন-বিধি (Codex of the Nsilim), তা ছাড়া হিত্তীয় ও আসিরিয়ান আইনবিধি।
  • বামের ছবি: হাম্মুরাবীর আই-বিধির একটি উদাহরণ। ডানের ছবি ঊর-নম্মুর আইন-বিধি।

দ্বিতীয় বিবরণের কাঠামো

  • অনেক বছর ধরে বাইবেল পণ্ডিতরা দ্বিতীয় বিবরণের কাঠামো বুঝতে পারেন নি।
  • যখন ১৪০০ খ্রিষ্টপূর্বের কিছুটা ফলক আবিষ্কৃত হয়েছে, যাতে লেখা দ্বিতীয় বিবরণের মত কাঠামো ছিল: হিত্তীয় একটি অধিরাজ-সামন্ত চুক্তির নথি
  • লেখাটি এইভাবে সাজানো:
    • ১ম চুক্তির অধিরাজ ও সমান্ত
    • ২য় চুক্তির ইতিহাস
    • ৩য় চুক্তির নিয়ম
    • ৪র্থ চুক্তি মান্য বা অমান্য করার ফলাফল
    • ৫ম চুক্তির স্মরণ
    • ৬ম চুক্তির সাক্ষী।

হিত্তীয়রা

  • বাইবেলে ৪৭ বার ‘হিত্তীয়’ নামে একটি জাতি উল্লেখ আছে। যেহেতু বহুদিন ধরে হিত্তীয়দের অস্থিত্বের অন্য কোন প্রমান বা উল্লেখ পাওয়া যায় নি অনেকে মনে করত যে বাইবেলে ভুল আছে ও জাতিটি কাল্পনিক মাত্র।
  • কিন্তু পরে তূর্কী দেশের আঙ্কারা (Ankara) শহরের কাছাকাছি হিত্তীয়দের প্রাচীন রাজধানী আবিষ্কার ও খনন করা হয়েছে।
  • ১৭০০-১৬০০ খ্রিঃপূঃ থেকে নানা ধরণের হিত্তীয় লেখাগুলিও আবিষ্কৃত হয়েছে।

ইস্রায়েলের মরুভুমি থেকে ইদোম ও মোয়াবে যাওয়ার পথ                গণনা ৩৩, যিহোশূয় ১৫

  • গণনা পুস্তকে মোশি ইস্রায়েলের যাত্রার বর্ণনায় বেশ কিছু শহর উল্লেখ করেন, যেমন ইয়ী-অবারীম, দীবোন-গাদ, আবেল-শিটীম, যর্দন (গণনা ৩৩:৪৫-৫০)।
  • মিসরের কয়েজ ফরৌণদের সামরিক অনুসন্ধানের বর্ণনায় সে একই ৪টি জায়গার একই ধারাবাহিকতায় উল্লেখ আছে: থুটমোশি-৩ (১২৭৯ খ্রিঃপূঃ), আমেনোফিস-৩ (১৩৮৭ খ্রিঃপূঃ) ও রামেসেস-২ (১২৭৯ খ্রিঃপূঃ)।
  • প্রত্নতত্ত্ববিদ চার্স খ্রামাল্কভ্ (Charles Krahmalkov) মন্তব্য করেন: ‘বাইবেলে (গণনা ৩৩:৫০) উল্লিখিত ইস্রায়েলের যাত্রা পথ (যখন প্যালেষ্টাইনের দখল করতে যাচ্ছিল) হল একটি ঐতিহাসিক বাস্তব বর্ণনা: ব্রোঞ্জ যুগের শেষের দিক থেকে এই পথ ছিল বেশি ব্যবহৃত, আন্তর্জাতিক মহাসড়ক।’
  • যিহোশূয় ১৫ অধ্যায়ে যিহূদা বংশের জমির বর্ণনায় দক্ষিণ এলাকার অনেক শহর বা গ্রাম উল্লিখিত যার উল্লেখ মিসরীয় সরকারী নথিতেও পাওয়া যায়।

বিয়োরের ছেলে বিলিয়ম                  গণনা ২২-২৪, ৩১

  • আধুনিক যর্দন দেশের দেইর আল্লা (Deir Alla) নামে একটি জায়গায় (যা বাইবেলের ‘পথোর’ মনে করা হয়) একটি লিখিত কথা পাওয়া গাছে, যাতে লেখা আছে: ‘বিয়োরের ছেলে বিলিয়ম, দেব-দেবতাদের দর্শক’
  • গণনা ২২ থেকে ২৪ অধ্যায়ে মোয়াব রাজা বালাক ও মিদিয়োনীয় প্রাচীনদের গল্প বলা হয়েছে যারা হাত মিলিয়ে ইস্রায়েলকে অভিশাপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিয়োরের ছেলে বিলিয়মকে ডেকে আনেন কিন্তু বিলিয়ম অভিশাপ দিতে সক্ষম হন নি।
  • বিলিয়ম ব্যর্থ হলেন বলে তিনি মোয়াবীয় ও মিদিয়োনীয় নেতাদের পরামর্শ দেন ইস্রায়েলীয়দের পাপে প্রলোভিত করার জন্য। তারা তাই করেন এবং ফলে বাল-পিয়োরে ইস্রায়েলীয়দের অনেক ক্ষতি হয় (গণনা ২৫)।
  • ইস্রায়েল প্রতিশোধ হিসাবে মিদিয়নকে আক্রামণ করে (গণনা ৩১:১৫)।
  • ডানের ছবি: দিইর আল্লার লেখা।

পুরাতন নিয়মের ঐতিহাসিক প্রমাণ যিহোশূয়

ইস্রায়েল কনান দেশকে দখল করে                           যিহোশূয় ১-১২

  • যিহো ৩:১৪-১৭ পদে বর্ণনা করা আছে কিভাবে ঈশ্বর যর্দন নদীর স্রোত থেমে দিলেন এবং এতে ‘অনেক দূরে সর্তন শহরের কাছাকাছি আদম গ্রামের কাছে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে গেল’। ফলে ইস্রায়েলীয়েরা শুকনা পায়ে যর্দন নদী পার হতে সক্ষম হল।
  • এখানে আদম গ্রামের উল্লেখ সত্যের বর্ণনা হিসাবে বুঝা যায় কারণ এই গ্রামের অন্য কোনো ক্ষেত্রে বা গল্পে গুরুত্ব আছে, তা নয়।
  • এই গ্রাম মাত্র এই ঘটনায় উল্লিখিত। গল্প যদি বানিয়ে বলা হত তবে ঘটনা ‘সবার চোখের সামনে’ এবং ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়’ ঘটেছে দাবি করা হত।
  • আসলে আদম গ্রামের এলাকায় মাটিধ্বসের কারণে যর্দন নদীর জল কিছুক্ষণ ধরে বন্ধ হয়ে যায়, তার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঐতিহাসিকভাবে উল্লিখিত: ১১৬০, ১২৬৭, ১৫৪৬, ১৮৩৪, ১৯০৬ এবং ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে তা ঘটল। তাই তা সাধারণ কোনো ঘটনা নয়, কিন্তু একেবারে অসাধারণ ঘটনাও নয়।
  • ১৯৩০-১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে গার্স্তাং (Garstang) নামে একজন প্রত্বতত্ত্ববিদ যিরীহো শহর খনন করে।
  • এতে দেখা গেল যে, যিরীহোর দেওয়াল এমনভাবে বাইরে দিকে পড়েছিল যে আক্রমণকারী সহজে তা অতিক্রম করে শহরে ঢুকতে পারল।
  • যিহো ৬:২০ পদে ঠিক একই বর্ণনা পাওয়া যায় ও অধিকাংশ পণ্ডিতরা তা মনে করেন। যিরীহোর ধ্বংস ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বে মনে করে হয়।
  • যেহেতু কিছু পণ্ডিতরা মিসর থেকে ইস্রায়েলীয়দের প্রস্থান ১২০০ খ্রিষ্টপূর্বের দিকে মনে করেন, সেহেতু তারা এই উপসংহারে আসেন যে, যিরীহো ধ্বংস হয়েছিল কিন্তু যিহোশূয়ের দ্বারা নয়।
  • কিন্তু প্রস্থানের ১৪৪৬ খ্রিষ্টপূর্ব ঘটল, তার জন্য ঐতিহাসিক প্রমাণ বেশি।
  • মিসরে ‘টেল আমার্ণা’ নামে একটি জায়গায় বেশ কয়েকটি কুনেইফর্ম মাটির ট্যাব্লেট (Tel Amarna, cuneiform tablets, একটি বর্ণমালার নাম) খুঁজে পাওয়া গেল যা লেখার তারিখ ১৪০০ খ্রিঃপূঃ ধরা হয়।
  • ট্যাব্লেট হল কনানীয় রাজাদের কয়েকটি চিঠি যাতে তারা হাত ধরে মিসরের ফরৌণকে (আখেন আটেন, Achen Aten) অনুরোধ করেন যেন তিনি জরুরীভাবে তাদের সাহায্য করার জন্য সৈন্য পাঠান।
  • তারা আরো বলে যে, তা না হলে ‘সব কনান হারাতে হবে’ (যিহো ১২:৯-২৪)।
  • চিঠিতে তারা আক্রমণকারীদের ‘আপিরু’ (‘apiru’) বলেন, যার অর্থ হল: ‘জাতিহীন’, ‘আরম্বরহীন’, এমন লোক যাদের দেশ নেই। এই বর্ণনা ইস্রায়েল সম্বন্ধীয় অবশ্যই উপযুক্ত।
  • বামের ছবিগুলো: কয়েকটি টেল আমার্ণা মাটির ট্যাব্লেট।
  • ১২১০ খ্রিঃপূঃ ফরৌণ মের্নেপ্টা (Mernepta) কানন দেশে একটি সামরিক অনুসন্ধান করেন।
  • তার অনুসন্ধান ও জয়ের বর্ণনা একটি ফলকে পাওয়া যায় যাতে তিনি গর্ব করে বলেন যে তিনি ‘সব ইস্রায়েল ধ্বংস করে’ ফেলেছেন।
  • মের্নেপ্টা ফলক হল বাইবেলের বাইরে সর্বপ্রাচীণ প্রমাণ যে, সে সময় ইস্রায়েলীয়েরা ঠিকই কনানে বাস করত, আর তাই ইস্রায়েলীয়েরা ঠিকই মিসর থেকে কনানে পৌঁছিয়ে গিয়েছিল।
  • ফলকটি মিসরের নো-আম্মোন (Thebes) শহরে ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে আবিষ্কার করা হয়েছে কিন্তু এখন এটা কায়রো জাদুঘরে দেখা যায়।
  • ডানের ছবি: মের্নেপ্টা ফলক।
  • যিহো ১১:১৩ পদে লেখা আছে যে হাৎসোর শহর ছিল টিলার উপরে তৈরি।
  • টেল হাৎসোরে খননের দ্বারা তাই দেখা গেল। পরবর্তী পৃষ্ঠার ছবি: টিলার উপরে হাৎসোর।
  • টেল হাৎসোরের খননে (Excavations at Tel Hazor) প্রমাণ পাওয়া গেল যে শহরটি প্রায় ১৪০০ খ্রিষ্টপূর্বে দুইবার দখল ও ধ্বংস করা হয়েছে (যিহো ১১:১০-১১)।
  • হাৎসোর রাজাবাড়ীতে কনানীয় ও মিসরীয় দেবতার মূর্তি পাওয়া গেল যাদের মাথা ও হাত ইচ্ছাকৃতভাবে বিছিন্ন করা হয়েছে।
  • প্রত্নতত্ত্ববিদ আম্নোন বেন টোর (Amon Ben-Thor), যিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে হাৎসোরের খনন করেছেন তিনি বলেন যে আক্রামকারীরা অবশ্যই ইস্রায়েলীয়েরা ছিল কারণ কনানীয় বা মিসরীয়েরা কখনও নিজের দেবতাদের মূর্তি নষ্ট করত না।
  • কিন্তু অন্যদিকে ইস্রায়েলিয়দের আদেশ দেওয়া হয়েছিল সব প্রতিমূর্তিগুলো ধ্বংস করে ফেলতে (দ্বি বি ৭:৫)।
  • পরবর্তী পৃষ্ঠার ছবি: মাথা, হাত ও পা কাটা মূর্তি।

কনান দেশে ইস্রায়েল যিহোশূয়

  • ফরৌণ আমেনহোটেপ (Pharaoh Amenhotep, ১৩৯৬-১৩৫৮ খ্রিঃপূঃ)-এর কবরে খোদাই করা একটি লেখা আবিষ্কার হল যা বলে ‘ইয়াহ্ওয়ের দেশের শাশুরা’ (‘the Shashu of Yahweh’s land’)।
  • তা হল বাইবেলের বাইরে ইয়াহ্ওয়ে (যাত্রা ৩:১৪ পদে ঈশ্বর এই নামে নিজের বর্ণনা দেন) নামের সর্বপ্রাচীণ উল্লেখ, এমন একটি সময়ে যখন যিহোশূয় এখনও জীবিত আছেন।
  • একই কথা ‘ইয়াহ্ওয়ে’ ফরৌণ রামেসেস্ (Rameses)এর সময়ের একটি লেখায়ও পাওয়া যায় (১৩০৪-১২৩৭ খ্রিঃপূঃ)। বামের ছবি।
  • ফীলো (Philo) নামে একজন লেখক (যার কথা খ্রিষ্টান ইতিহাসবিদ ইউসেবিয়াস উল্লেখ করেন) কনানীয় ধর্ম সম্বন্ধে যা লিখেছিলেন, তার সত্য প্রমাণিত হল যখন ১৪০০-১২০০ খ্রিঃপূঃ থেকে উগারিটীয় ধর্মীয় লেখাগুলি পাওয়া গেল।
  • এইসব কথা বাইবেলে কনানীয় ধর্ম নিয়ে যা বলে (আদি ১৫:১৬, লেবীয় ১৮:২৪-৩১, দ্বি বি ৯:৪-৫, ১৬:২১-১৭:১, …), তার সাথেও মিলে।

পুরাতন নিয়মের ঐতিহাসিক প্রমাণ বিচারকর্ত্তৃগণ

  • ১৩৫০ খ্রিষ্টপূর্বে মিসরে ‘বের্লিন মূর্তি’ (Berlin Statue)-র গায়ে একটি খোদাই করা ছবি পাওয়া গেল যাতে বেশ কয়েকটি এলাকা উল্লিখিত। তার মধ্যে একটি হল ‘ইস্রায়েল’
  • এই খোদাই করা লেখা হল বাইবেলের বাইরে ইস্রায়েলের সর্বপ্রাচীন উল্লেখ (মের্নেপ্টা ফলকের চেয়েও প্রাচীন), এমন একটি সময় থেকে যখন ওৎনীয়েল ইস্রায়েলের বিচারক ছিলেন (বিচার ৩:৭-১১)।
  • নিচের ছবি: হায়ারোগ্লিফে লেখা ও তার বর্ণনা।
  • মিসরে টেল আমার্ণা নামে একটি জায়গায় ১২০০-১৩০০ খ্রিঃপূঃ থেকে বেশ কয়েকটি মাটির ট্যাব্লেট (Tel Amarna Tablets আবিষ্কার হয়েছে, যাতে বুঝা যায় যে মিসর ও কয়েকটি কনানীয় কর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ হত।
  • ১২০০-১৩০০ খ্রিঃপূঃ থেকে মিদিয়োনীয় মৃতশিল্প আবিষ্কৃত হল। মিদিয়োন বাইবেলে নানা বার উল্লিখিত: মোশি মিদিয়োনে পালিয়ে যান ও ৪০ বছর যেখানে বাস করেন। তিনি মিদিয়োনীয় পুরোহিত যিথ্রোর কন্যা সিপ্পোরাকে বিয়ে করেন (যাত্রা ২:১৫-২২)।
  • আরেক বার: ১২১০ খ্রিষ্টপূর্বের ফৌরণ মের্নেপ্টা (Mernepta) কনান দেশে একটি সামরিক অনুসন্ধান করেন।
  • তার অনুসন্ধান ও জয়ের বর্ণনা একটি ফলকে পাওয়া যায় যাতে তিনি গর্ব করে বলেন যে তিনি ‘সব ইস্রায়েল ধ্বংস করে’ ফেলেছেন।
  • মের্নেপ্টা ফলক হল বাইবেলের বাইরে ইস্রায়েলের ও কনান দেশে ইস্রায়েলের উপস্থিতির সর্বপ্রাচীণ উল্লেখ।
  • বামের ছবি: মের্নেপ্টা ফলক। ডানের ছবি : ইস্রায়েল সম্বন্ধীয় কথা।
  • বিচারক ৪:১-২ পদে উল্লিখিত আছে যে, ইস্রায়েল যাবীন (Jabin) নামে একজন কনানীয় রাজার দ্বারা অত্যাচারিত হচ্ছে যিনি ইস্রায়েল থেকে দখল করা হাৎসোর শহর থেকে রাজত্ব করেন।
  • মহিলা-বিচারক দবোরা ও সেনাপতি বারক প্রায় ১২০০ খ্রিষ্টপূর্বে রাজা যাবীনের সেনাপ্রধান সীষরার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।
  • বাইবেলে উল্লিখিত শব্দ যাবীন (অথবা তার লিপ্যন্তার ‘ইব্নী’) হাৎসোর ও মারী শহরগুলোতে আবিষ্কৃত ১৭০০ খ্রিঃপূঃ থেকে একটি মাটির ট্যাব্লেটেও পাওয়া যায়।
  • আসলে ‘যাবীন’ ছিল সে রাজবংশের রাজকীয় টাইটেল (যেমন মিসরে ‘ফরৌণ’)।
  • এই রাজবংশ প্রায় ৫০০ বছর ধরে রাজত্ব করত।
  • বামের ছবি: মাটির ট্যাব্লেট। ডানের ছবি হাৎসোর থেকে যাবীনের একটি মূর্তি।
  • মিসরে মেডিনেট হাবূ (Medinet Habu) মন্দিরের উত্তরের দেওয়ালে এবং ‘হারিস’ নামে একটি কাগজে (Harris Papyrus, ১১৫০ খ্রিঃপূঃ) দেখায় কিভাবে ফরৌণ রামেসেস ৩ কনানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন (যেমন ডিযাহীতে যুদ্ধ, Battle of Djahy)। তা বিচারকদের সময়ে ইস্রায়েলের দুর্বলতা দেখায়।

পুরাতন নিয়মের ঐতিহাসিক প্রমাণ শমূয়েল (শৌল, দায়ূদ,শলোমন)

  • ইস্রায়েলের রাজা শলোমন অনেক কিছু নির্মাণ করতেন (যেমন যিরূশালেমের মন্দির ও নানা রাজবাড়ী)। তিনি অনেক শহরগুলি দুর্গ বানিয়েছিলেন (যেমন গেষর, ১ রাজা ৯:১৫)গেষর শহর খনন করে সে দুর্গের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেল।
  • বাইবেলের বাইরে শৌল, দায়ূদ ও শলোমনের সময়ের ছবি, বস্তু, লেখা বা সরাসরি কিছু উল্লেখ পাওয়া যায় নি।
  • কিন্তু হাৎসোর যিনি খনন করেছেন (প্রত্নতত্ত্ববিদ আম্নোন বিন থর Amnon Ben-Thor, ১৯৯৯ খ্রিঃ) এবং গেষর শহর যারা খনন করেছেন (প্রত্নতত্ত্ববিদ উইলিয়াম ডেভর ও ব্যান্ক্স William Dever & Shanks, ১৯৯৭ খ্রিঃপূঃ) তারা বলেন যে শলোমোনের যুগ সম্বন্ধীয় প্রমাণ পাওয়া যায়।
  • বামের ছবি: গেষরের ফটকের ধ্বংসাবশেষ। ডানের ছবি: শলোমনের দ্বারা নির্মিত বিভিন্ন শহরের ফটকের দুর্গের মধ্যে মিল দেখা যায়।
  • যে প্রত্বতত্ত্ববিদ মগিদ্দো শহর খনন করেছেন, ফিন্কেলষ্টাইন (Finkelstein) যদিও মনে করেন যে দায়ূদ বা শলোমনের সময় থেকে কোনো প্রমাণ নেই, প্রত্নতত্ত্ববিদ হ্যারিসেন (Harrison, ২০০৩ খ্রিঃ) ও মাজার (Mazar, ২০০৩ খ্রিঃ) তা বিশ্বাস করেন।
  • প্রত্নতত্ত্ববিদ জেন কাহিল (Jane Cahill, ২০০৪ খ্রিঃ), যিনি যিরূশালেমে দায়ূদ নগর খনন করেছেন, তিনি বলেন প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বের সময়ে যিরূশালেম ছিল একটি শক্তিশালী দুর্গ, যাতে দুইটি উন্নত মাণের খাল দিয়ে পানির সরবরাহ ছিল।
  • বিভিন্ন শ্রেণী লোকদের বাড়ী পাওয়া গেল ও কম পক্ষে দুইটি নতুন আবাসিক এলাকা সে সময় তৈরি হয়েছিল, একটি দেওয়ালের ভিতরে এবং একটি দেওয়ালের বাইরে।

ঐতিহাসিক প্রমাণ রাজাবলি ও বংশাবলি

  • মিসরের নো-আমোন শহরে কার্নাকের আমুন মন্দিরে (Temple of Amun, Karnak, Thebes) ‘বুবাষ্টাইট্ ফটক’এ (Bubastite Portal) একটি খোদাই করা ছবিতে ফরৌণ শশেন্ক (Shoshenq)-এর ৯২৬ খ্রিষ্টপূর্বের একটি সামরিক অনুসন্ধানের বর্ণনা পাওয়া যায়।
  • লেখায় মিসরের অক্ষর (hieroglyphs) ব্যবহৃত। লেখার তৈরি সাল ৯২৫ খ্রিঃপূঃ মনে করা হয়। লেখাটি ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে আবিষ্কৃত হয়।
  • ফরৌণ শশেন্ককে বাইবেলে ফরৌণ শীশক বলা হয় ও তার সামরিক অনুসন্ধান ১ রাজা ১৪:২৫-২৬ পদে বর্ণনা করা হয়েছে।
  • তিনি যিহূদা রাজা রহবিয়ামের সময়ে (৯৩১-৯১৪ খ্রিঃপূঃ) ইস্রায়েল ও যিহূদাকে আক্রমণ করেন ও বিশেষভাবে যিরূশালেমের মন্দির লুটপাত করেন।
  • খোদাই করা ছবি দেখাই যে তিনি ১৮৭টি শহর দখল করেছিলেন।
  • ডানের ছবির মধ্যে মাত্র ৩টি দেখানো হচ্ছে: বৈৎ-শান, শূনেম ও গিবিয়োন।
  • ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে আজকের যর্দন দেশের ধীবানে (Dhiban, Jordan) মেশা স্টেলে (Mesha Stele) নামে একটি কালো পাথর আবিষ্কার করা হয়।
  • ৮৫০ খ্রিঃপূর্বের এই পাথরে লেখা আছে মোয়াবীয় রাজা মেশা কিভাবে ‘অম্রির বংশের উপরে’ (মানে ইস্রায়েলের উপরে) জয় করেছিলেন।
  • মোয়াব রাজা মেশা ইস্রায়েলের যিহোরাম রাজার (৮৫২-৮৪১ খ্রিঃপূঃ) বিরুদ্ধে কিভাবে বিদ্রোহ করতে সক্ষম হয়েছেন, তা ২ রাজা ১:১ ও ৩:৪-২৭ পদেও বর্ণনা করা হয়েছে।
  • স্টেলেতে তা ছাড়া ঈশ্বরের টাইটেল ‘ইয়াহওয়ে’ (Yahweh, যাত্রা ৩:১৪) উল্লিখিত এবং ইস্রায়েল ‘বেৎসর’ শহর (Bezer)।
  • আজকে স্টেলেটি ফ্র্যান্সের পারিস শহরে লূভ্র্ (Louvre, Paris) জাদুঘরে দেখা যায়।
  • ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে আজকের উসটেপে, বিস্মিলে (Uctepe, Bismil) ৮৫০ খ্রিঃপূঃ থেকে খুর্খ্ নামে একটি একপ্রস্তরস্তম্ভ (Kurkh Monolith) আবিষ্কৃত হয় যাতে আসিরিয়ার অক্ষরে (Assyrian cuneiform script) ইস্রায়েলের আহাব রাজা (৮৭৪-৮৫৩ খ্রিঃপূঃ) উল্লিখিত।
  • বাইবেলে রাজা আহাবের রাজত্বের বর্ণনা ১ রাজা ১৬-২২ অধ্যায়ে পাওয়া যায়। খুর্খ একজ্রস্তরস্তমভ আজকে ব্রিটিশ জাদুঘরে দেখা যায় (ডানের ছবি)।
  • ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে আজকের সিরিয়ার আলেপ্পো শহরের কাছাকাছি ৮০০ খ্রিঃপূঃ থেকে জাক্কুর নামে একটি অগ্রিয়গিরিজাত শিলা (Basalt Stele of Zakkur) আবিষ্কৃত হয়েছে যাতে অরাম (সিরিয়া) রাজা হসয়েলকে উল্লিখিত।
  • বাইবেলে রাজা হসয়েলের বেশ কয়েকটি ঘটনা উল্লিখিত আছে: নবী ইলীশাইয় তাকে বাণী দেন যে তিনি অরামের রাজা হয়ে যাবেন (১ রাজা ১৯:১৫)।
  • ফলে তিনি তার রাজা বিন-হদদ ১-কে খুন করে অরামের সিংহাসন দখল করেন (২ রাজা ৮:১৩)।
  • তা ছাড়া তিনি ইস্রায়েল রাজা যিহোরামকে (২ বংশা ২২:৫-৭) ও যিহূদা রাজা অহসিয়কে মেরে ফেলেন (২ রাজা ৮:২৮)।
  • ইস্রায়েলের টেল-দানে একটি স্টেলে আবিষ্কৃত হয়েছে যা হসয়েলের জয়ের স্টেলে বলা হয় (Hazael’s victory Stele, Tel Dan)।
  • তাতে ‘দায়ূদের বংশ’ উল্লেখ, যা হতে পারে বাইবেলের বাইরে দায়ূদের প্রাচীনতম উল্লেখ।
  • ডানের ছবিগুলো
  • ৮২৫ খ্রিঃপূঃ থেকে আসিরিয়া রাজা সলমনেষর ৩-এর একটি কালো স্মারকস্তম্ভ (Black Obelisk of King Shalmaneser III) আবিষ্কৃতি হয়েছে যাতে ইস্রায়েলের যেহূ রাজার (৮৪১-৮১৪ খ্রিঃপূঃ) বা তার একটি রাষ্টদূতের ছবি দেখা যায়, কিভাবে তিনি সলমনেষরের সামনে উবুর হয়ে কর দেন।
  • খোদাই করা লেখায় ‘অম্রির ছেলে যেহূ’ উল্লেখ আছে। স্মারকস্তম্ভ ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দে নিমরুদ (Nimrud) শহরে আবিষ্কৃত হল এবং তা এখন লন্ডনের ব্রিটিশ জাদুঘরে দেখা যায় (ডানের ছবিগুলো)।
  • সাবা স্টেলে (Saba’a Stele) নামে একটি ফলক ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে আবিষ্কৃত হয় যাতে আসিরিয়ার অক্ষরে (Assyrian cuneiform) আসিরিয়া রাজা আদাদ-নিরারী ৩-এর প্যালেস্টাইনে সামরিক অনুসন্ধানের বর্ণনা পাওয়া যায়।
  • স্টেলেটি ৮০০ খ্রিষ্টপূর্বে তৈরি হয়েছে মনে করা হয় এবং আজকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের প্রত্নতত্ত্বের জাদুঘর দেখা যায়।
  • ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে আজকের ইরাক দেশে নিম্রোদ নামে একটি জায়গায় একটি ফলক (Nimrud Slab) আবিষ্কৃত হয়, যা ৮০০ খ্রিঃপূঃ তৈরি হয়েছে, মনে করা হয়।
  • তাতে আক্কাদীয় অক্ষরে আসিরিয়া রাজা আদাদ-নিরারী ৩-এর একটি সামরিক অনুসন্ধানের বর্ণনা থাকে।
  • ফলকে লেখা আছে যে আদাদ-নিরারী প্যালেষ্টাইন, সোর, সিদোন, ইদেম ও ‘হুম্রি’কে দখল করেছেন।
  • ‘হুম্রি’ মানে ‘অম্রি’, তা ইস্রায়েলকে বুঝায় (বামের ছবি)।
  • যিহূদা রাজা আহসের (৭৩৫-৭১৫ খ্রিঃপূঃ) শীলের একটি মাটির ছাপ আবিষ্কৃত হল।
  • শীলে লেখা আছে: ‘যোথামের ছেলে আহস, যিহূদা রাজার শীল’
  • মন্দ রাজা আহসের বর্ণনা বাইবেলে ২ রাজা ১৬যিশাইয় ৭ অধ্যায়ে পাওয়া যায়। বামের ছবি।
  • নিম্রোদ ট্যাব্লেট (The Nimrud Tablet K3751) হল ৭৩৩ খ্রিঃপূঃ থেকে একটি লেখা যাতে আক্কাদীয় অক্ষরে (Akkadian cuneiform) তিগ্লৎ-পিলেষর ৩ (Tiglath-Pileser III, ৭৪৫-৭২৭ খ্রিঃপূঃ)-এর একটি সামরিক অনুসন্ধানের বর্ণনা পাওয়া যায়, যা বাইবেলে ২ রাজা ১৫:২৯ পদেও পাওয়া যায়।
  • এই ট্যাব্লেটে ‘যিহূদা’ উল্লিখিত। তা হল বাইবেলের বাইরে ‘যিহূদার’ প্রাচীনতম উল্লেখ।
  • ট্যাব্লেটটি আসিরিয়া রাজা অশূর-বনিপলের ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে আবিষ্কৃত লাইব্রেরীতে পাওয়া যায়।
  • আজকে লন্ডলে ব্রিটিশ জাদুঘরে দেখা যায়। ডানের ছবি।
  • একটি শীল আবিষ্কৃত হলে যাতে লেখা আছে ‘শেম্মা, যারবিয়ামের দাস’
  • হতে পারে তা হল ইস্রায়েল রাজা যারবিয়াম-২এর একটি কর্মীর শীল।
  • যারবিয়াম (৭৯৩-৭৫৩ খ্রিঃপূঃ)-এর রাজত্বের বর্ণনা বাইবেলে ২ রাজা ১৪:২৩-২৯ পদে পাওয়া যায়। ডানের ছবি।
  • ৭১০ খ্রিঃপূঃ থেকে আসিরিয়া রাজা সোর্গনের ২-এর একটি প্রিজম্ (King Sargon II’s Prism) নীনবীতে আসিরিয়া রাজা অশূর-বনিপলের লাইব্রেরীতে (Library of Ashurbanipal at Nineveh) ১৮৪৭১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে আবিষ্কৃত।
  • তাতে আক্কাদী অক্ষরে (Akkadian cuneiform) লেখা আছে কিভাবে সোর্গন-২ (৭২২-৭০৫ খ্রিঃপূঃ) ইস্রায়েলের রাজধানী শমরিয়া ৭২২ খ্রিষ্টপূর্বে দখল করেন ।
  • তার বর্ণনা বাইবেলেও পাওয়া যায়: ২ রাজা ১৭:৩-৬, ২৪, ১৮:৯-১১যিশাইয় ৩৬:১৮-২০
  • সোর্গন ইস্রায়েলের পাশাপাশি প্যালেষ্টাইন, যিহূদা, ইদোম ও মোয়াবও পরাজিত করেন।
  • নীনবীতে সোর্গনের রাজবাড়ীর দেওয়ালে খোদাই করা ছবিতেও তা পাওয়া যায়। সোর্গন প্রিজমের আজকে লন্ডণের ব্রিটিশ জাদুঘরে দেখা যায়। বামের ছবি।
  • সোর্গন ২-এর প্রিজম ‘বি’ (Sargon II’s Prism B), যা আর ক্যাম্পেল থম্সন (R. Campbell Thompson), তাতে অন্যান্য অনেক বিষয়ের পাশাপাশি ‘যিহূদা রাজা মনশি’ উল্লেখ আছেন, যার বর্ণনা বাইবেলে ২ রাজা ২১ অধ্যায়ে পাওয়া যায়।
  • তা ছাড়া সোর্গন কিভাবে অসদোদ শহর দখল করেছেন, তা নীনবী রাজবাড়ীর দেওয়ালে উল্লিখিত আছে।
  • বাইবেলে তার বর্ণনা যিশাইয় ২০:১ পদে পাওয়া যায়।
  • ২ বংশাবলি ৩২:৩০ পদে উল্লেখ আছে যে আসিরিয়া যিহূদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার কারণে যিহূদা রাজা হিষ্কিয় (৭১৫-৬৮৬ খ্রিঃপূঃ) যিরূশালেমে ঘেড়াও হলে পানির সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য পাথরে একটি পানির খাল কাটেন যাতে একটি ফোয়ারার পানি যিরূশালেমে আনা হয়। মাঝের মানচিত্র দেখুন।
  • এই খাল ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে আবিষ্কৃত হয় কিন্তু এখন এটিকে শীলোহ সুড়ঙ্গ (Siloam Tunnel) বলা হয়। ডানের ছবি
  • সাথে যিরূশালেমে শীলোহে ৭০১ খ্রিঃপূঃ থেকে একটি প্রত্ন ইব্রীয় বা ফৈনীকীয় অক্ষরে খোদাই করা একটি লেখা আবিষ্কৃত হয়েছে যাতে হিষ্কিয় রাজার এই সুড়ঙ্গের নির্মাণ উল্লেখ আছে। লেখাটি এখন ইস্তাম্বুল প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘরে দেখা যায়। নিচের ছবি
  • ১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দে নীনবীর খননের সময়ে ৭০০ খ্রিঃপূঃ থেকে বড় একটি দেওয়ালে আঁকা ও খোদাই করা ছবি আবিষ্কৃত হয় যাকে সনহেরীব ছবি (Sennacherib relief) বলা হয়।
  • তার একটি অংশ, যাকে লাখীশ ছবি বলা হয় (Lachish relief) দেখায় কিভাবে আসিরিয়া রাজা সনহেরীব যিহূদার লাখীশ শহর ঘেড়াও ও দখল করার পরে তা থেকে অনেক বন্দি লোক নির্বাসনে নিয়ে যায়।
  • এই যুদ্ধ ৭০১ খ্রিষ্টপূর্বে ঘটে ও তার বর্ণনা বাইবেলে ২ রাজা ১৮:১৪,১৭ পদেও পাওয়া যায়। ছবিতে লেখাগুলি হল আসিরিয়ার অক্ষর (Assyrian cuneiform) দিয়ে লিখিত।
  • ছবিটি এখন লন্ডনে ব্রিটিশ জাদুঘরে দেখা যায়। বামে: লাখীশের ছবি এবং পাশে সাদা রঙ্গে তার পুনরায় আঁকা
  • ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে নীবনী খনন করার সময়ে আসিরিয়া রাজা অশূর-বনিপলের লাইব্রেরীতে একটি ৭০০ খ্রিঃপূঃ থেকে একটি খোদাই করা লেখা আবিষ্কার হয়েছে যিকে অসেকা খোদাই করা লেখা (Azekah Inscription) বলা হয়।
  • তাতে আক্কাদীয় অক্ষরে (Akkadian cuneiform) আসিরিয়া রাজা সনহেরীবের যিহূদা রাজা হিষ্কিয়ের বিরুদ্ধে একটি সামরিক অনুসন্ধানের বর্ণনা দেওয়া আছে এবং যিহূদার অসেকা শহরের দখলও উল্লেখ করা আছে।
  • তার বর্ণনা ২ রাজা ১৮:১৩-১৯:১৭ পদেও পাওয়া যায়।
  • আজকে লেখাটি লন্ডনে ব্রিটিশ জাদুঘরে দেখা যায়। বামের ছবি।
  • ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে নীনবীর খননে ‘টেলর প্রিজম্’ (Taylor Prism) নামে একটি মাটির প্রিজম্ আবিষ্কৃত হয় যাতে আসিরিয়া অক্ষরে (Assyrian cuneiform) আসিরিয়া রাজা সনহেরীবের জীবনের ঘটনাগুলি (King Sennacherib’s Annals) উল্লিখিত।
  • তাতে বর্ণনা করা আছে কিভাবে সনহেরীব অনেক জাতিদের আক্রমণ করেছেন, তার মধ্যে ৭০১ খ্রিঃপূঃ যিরূশালেমের ঘেড়া ও যিহূদা রাজা হিষ্কিয়ের (৭১৫-৬৮৬ খ্রিঃপূঃ) বিরুদ্ধে তার যুদ্ধও উল্লেখ, যার বর্ণনা বাইবেলে ২ রাজা ১৮:১৩-১৯:৩৭ পদে দেওয়া আছে।
  • আজকে টেলর প্রিজম লন্ডনে ব্রিটিশ জাদুঘরে, আমেরিকায় শিকাগো প্রাচ্য প্রতিষ্ঠানে (Oriental Institute of Chicago) ও ইস্রায়েল জাদুঘরে দেখা যায়।
  • বামের ছবি প্রিজ্ম। ডানের ছবি প্রিজমে লেখা।
  • আসিরিয়া রাজা এসর-হোদ্দনের জীবনের কাহিনীতে (Esar-haddon’s Annals) তার বাবা রাজা সনহেরীবের খুনের গল্প পাওয়া যায়।
  • সনহেরীবের দুইটি ছেলে তাকে ৬৮১ খ্রিঃপূঃ খুন করেন, যেমন বাইবেলে ২ রাজা ১৯:৩৭ পদেও উল্লেখ আছে।
  • খুন করার পরে তৃতীয় ভাই এসর-হোদ্দন ক্ষমতা ধরেন ও ৬৮১-৬৬৯ খ্রিঃপূঃ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
  • স্টেলেটি একজন বড় করে আকা এসর-হোদ্দন দেখায় যার সামনে ছোট করে আকা তার দুইটি ভাই ক্ষমার অনুরোধ করেন।
  • আসিরিয়া রাজা এসর-হোদ্দনের নাম আর একটি জায়গায় পাওয়া যায়: ৬৭৫ খ্রিঃপূঃ থেকে এসর-হোদ্দনের সোর রাজা বা’আল (Ba’al of Tyre)-এর সাথে পলেষ্টীয়ার বিষয়ে একটি চুক্তিতে (Esar-haddon’s Treaty)। লেখাটি ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে নীনবীর রাজা অশূর-বনিপলের লাইব্রেরীতে আবিষ্কৃত হয় ও আজকে লন্ডনে ব্রিটিশ জাদুঘরে দেখা যায়।
  • মিসরে নো-অমোনে কার্নাকে আমুন মন্দিরে (Karnak Amun Temple) দেওয়ালে একটি খোদাই করা ছবিতে ফরৌন তির্হকঃ (Pharaoh Tirhakah) উল্লিখিত, যার নাম বাইবেলে ২ রাজা ১৯:৯যিশাইয় ৩৭:৯ পদেও পাওয়া যায়।
  • ফরৌন তির্হকঃ আসিরিয়া রাজা সনহেরীবকে আক্রমণ করেন যার ফলে সনহেরীব যিরূশালেমের ঘেড়াও বন্ধ করে সৈন্য দল অন্যদিকে পাঠান। 
  • বাইবেলের নহূম ও সফনিয় ভাববাদী আসিরিয়ার রাজধানী নীনবীর ধ্বংসের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী দেন (নহূম ২:১৮, ৩:৭ সফনিয়ে ২:১৩-৫)। তা ৬১২ খ্রিষ্টপূর্বে পূর্ণ হয় এবং তার বর্ণনা বাবিল রাজা নাবো-পলাসরের ট্যাব্লেটে (Nabopolasar Tablet) বর্ণনা করা আছে।
  • তাতে লেখা আছে: ‘খীয়াখারেস (Cyaxares, মাদীয়-পারস্য রাজা) … তিন মাস ধরে (নীনবী) শহরকে ঘেড়াও করেছিলেন… তারা একটি মহাজাতি সম্পূর্ণ পরাজিত করতে সক্ষম হল। সে সময় আসিরিয়া রাজা সিনসারিস্কুন (Sinsariskun) মারা গেলেন। তারা শহর থেকে অনেক বড় পরিমাণে লুটপাট করে এবং শহর ও মন্দির সম্পূর্ণ ধ্বংস করে’
  • বাইবেলে আসিরিয়ার রাজধানী নীনবীকে (Nineveh) বেশ কয়েক বার উল্লিখিত আছে: যোনা ৩-৪ অধ্যায়ে, যখন যোনা নীনবীতে প্রচার করতে যান এবং পরে নহূম ও সফনিয় ভাববাদীর ধ্বংসাবাণীতে।
  • নীনবীর অব্স্থান আর জানা ছিল না বলে শতাব্দীর পর শতাব্দী অনেকে মনে করত যে নীনবী কাল্পনিক একটি শহর মাত্র, তাই বাইবেলের কথা ভুল।
  • কিন্তু ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে বোট্টা নামে একজন ফ্রেঞ্চ রাজদূত ও সেনাপ্রধান (General Botta) নীনবীর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন।
  • তিনি আজকের ইরাক দেশে খোর্সাবাদ (Khorsabad)-এর একটি গিরিতে খনন শুরু করে আসিরিয়া রাজা সোর্গন ২-এর রাজবাড়ী, রাজা সনহেরীব রাজবাড়ী এবং রাজা অশূর-বনিপলের সে বিখ্যাত লাইব্রেরী (library of Ashurbanipal) আবিষ্কার করেন।
  • লাইব্রেরীটিতে ২২’০০০ আসিরিয়া অক্ষরে লিখিত মাটির ট্যাব্লেট (cuneiform clay tablets) পাওয়া যায় ।
  • সেগুলি আজকে বেশিরভাগ লন্ডনে ব্রিটিশ জাদুঘরে দেখা যায়।
  • ৬০০ খ্রিষ্টপূর্বের একটি রূপার গোটানো লেখা (silver scroll) আবিষ্কৃত হল যাতে দ্বিতীয় বিবরণ ৬:২২-২৭ এর পদগুলি হুবহু লেখা আছে।
  • তাতে প্রমাণিত হল যিহূদীরা কত যত্নের সঙ্গে ইব্রীয় শাস্ত্রের লেখাগুলি কপি করে কারণ আগের যুগের ও পরের যুগের লেখায় সম্পূর্ণ মিল।
  • বাবিল রাজা নবূখদনিৎসরের একটি বেলন (Nebuchadnezzar’s Cylinder) আবিষ্কৃত হল যাতে তার বিভিন্ন ধরণের নির্মাণ নিয়ে প্রশংসার কথা উল্লেখ। নবূখদনিৎসর হল বাইবেলে উল্লিখিত অন্য জাতির রাজাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লিখিত রাজা (৯১বার, যেমন ২ রাজা ২৪:১ পদে)।
  • রাজা নবূখদনিৎসর যিহূদা ও যিরূশালেম তিন বার পরাজিত করেন ও যিরূশালেম ধ্বংস করে লোকসংখ্যা নির্বাসনে নিয়ে যান।
  • যিরূশালেমের খননে বেশ কয়েকটি বাবিলীয় তীরের মাথা (Babylonian Arrowheads) পাওয়া গেল।
  • নবূখদনিৎসর রাজা তিন বার যিরূশালেমে ঘেড়াও করেন, ৬০৫, ৫৯৭৫৮৬ খ্রিষ্টপূর্বে
  • তার বর্ণনা বাইবেলে ২ রাজা ২৪-২৫, ২ বংশা ৩৬যিরমিয় ৩৯ অধ্যায়ে পাওয়া যায়।
  • বাবিল রাজা নবূখদনিৎসর কিভাবে যিরূশালেম ঘেড়াও ও দখল করেন, তা বাইবেলে যেমন ২ রাজা ২৪:১০-১৪ পদে বর্ণনা করা আছে, তা ৫৫০-৪০০ খ্রিঃপূঃ লিখিত ‘বাবিল ইতিহাস’ (Babylonian Chronicles) নামে একটি লেখার সাথে মিলে ।
  • একটি উদ্ধৃতি: ‘সপ্তম বছরে (নবূখদনিৎসরের সপ্তম বছর, ৫৯৯ খ্রিঃপূঃ) খিস্লেভ মাসে (নভেম্বর-ডিসেম্বর) বাবিল রাজা তার সৈন্য জড়ো করে হাট্টি দেশ (Hatti, অরাম বা প্যালেষ্টাইন) আক্রমণ করার পরে তিনি যিহূদা দেশ আক্রমণ করেন ও যিহূদার শহর (যিরূশালেম) ঘেড়াও করেন। আদার মাসের দ্বিতীয় দিন (১৬ মার্চ ৫৯৭ খ্রিঃপূঃ) তিনি শহরটি দখল করে তার রাজাকে বন্দি করে নেন (যিহোয়াকিম, ৫৯৮-৫৯৭ খ্রিঃপূঃ)। তিনি তার পরিবর্তে নিজের পছন্দের মত একজন রাজা ঠিক করেন (সিদিকিয়, ৫৯৭-৫৮৬ খ্রিঃপূঃ)। অনেক কর আদায় করার পরে তিনি বাবিলে ফেরেন’
  • ‘বাবিল ইতিহাস’ লেখা ১৯ম শতাব্দীতে ব্রিটিশদের দ্বারা আবিষ্কৃত। আজকে লন্ডনে ব্রিটিশ জাদুঘরে দেখা যায়।
  • ৫৯২-৫৯১ খ্রিঃপূঃ থেকে নতুন বাবিলীয় অক্ষর (neo-Babylonian cuneiform) দিয়ে লিখিত খাবার বিতরণের মাটির ট্যাব্লেটগুলো (Babylonian Ration Records) আবিষ্কৃত হয়েছে যাতে রেকর্ড করা আছে রাজকীয় খাবারের ভান্ডার থেকে কে কত পরিমানে খাবার পাচ্ছে।
  • ২ রাজা ২৪:১৫-১৬, ২৫:২৭-৩০, ২ বংশা ৩৬:৯-১০ যিরমিয় ২২:২৪-২৬, ২৯:২ ও ৫২:৩১-৩৪ পদে উল্লেখ আছে যে রাজা নবূখদনিৎসর যিহূদা রাজা যিহোয়াখীন যখন বাবিলে বন্দি হিসাবে নিয়ে যান, তিনি কিছু বছরের পরে তার জন্য নিয়মিত খাবারের যোগান নিশ্চিত করেন।
  • ট্যাব্লেটগুলোর মধ্যে ৪টি ট্যাব্লেট পাওয়া গেল যাতে যিহোয়াখীনের জন্য খাবারের ব্যবস্থা উল্লিখিত: ‘যিহোয়াখীন, যিহূদা দেশের রাজা’
  • তার জন্য, অন্য গুরুত্বপূর্ণ অফিসার ও যিহোয়াখীনের ৫টি ছেলের জন্য ট্যাব্লেটে উল্লেখ পাওয়া গেছে।
  • ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে কলদীয় উর শহরে ৫৫০ খ্রিঃপূঃ থেকে নবনীদসের বেলন (Cylinder of Nabonidus) আবিষ্কৃত হল যাতে আক্কাদীয় অক্ষরে লেখা আছে যে নবনীদস হল বাবিল রাজা বেলশৎসর ( Belshazzar)এর বড় ছেলে।
  • বাইবেলে দানিয়েল ৩:১৬ পদে অসরাসরিভাবে উল্লেখ আছে যে বেলশৎসর হল নবনীদসের সহ-রাজত্বকারী: বেলশৎসর দানিয়েলকে ‘মাত্র’ রাজ্যের তৃতীয় স্থান দিতে পারেন কারণ তিনি নিজেই মাত্র দ্বিতীয়।
  • এখন তা লন্ডনে ব্রিটিশ জাদুঘরে ও পের্গামন জাদুঘরে দেখা যায়।
  • ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে এই ৫৩০ খ্রিঃপূঃ থেকে কোরসের বেলন (Cylinder of Cyrus) বাবিলে আবিষ্কৃত হয়, যাতে আক্কাদীয় অক্ষরে (Akkadian cuneiform) লেখা আছে কিভাবে মাদিয়-পারস্য রাজা কোরস বাবিলের উপরে জয় লাভ করেন (যেমন দানিয়েল ৫:৩০-৩১ পদে উল্লিখিত), ধর্মের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেন ও বাবিলের বন্দিদের মুক্ত করেন (যেমন ইষ্রা ১:১-৪, ৬:৩-৪ পদে উল্লিখিত)।
  • উদ্ধৃতি: ‘আমি কোরস, মহাবিশ্বের রাজা, যেহেতু বিভিন্ন জাতির দেবতাদের উদ্দেশ্যে মন্দিরগুলো ধ্বংসের অবস্থায় পড়ে রয়েছে, আমি জাতিদের নিজের দেশে ফিরিয়ে দিয়েছি এবং পুনরায় নির্মাণের জন্য যোগান দিয়েছি’
  • আজতে লন্ডনে ব্রিটিশ জাদুঘরে দেখা যায়।
  • ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে বাবিলের সিপ্পার (Sippar)এ ২৫০ খ্রিঃপূঃ থেকে নবনীদস কাহিনী (Nabonidus Chronicles) আবিষ্কৃত হয়, যাতে আক্কাদীয় অক্ষরে (Akkadian cuneiform) লেখা আছে কিভাবে মাদিয়-পারস্য রাজা কোরস মহান বাবিল রাজ্য দখল করেন।
  • কোরস বাইবেলে অনেক বার উল্লিখিত (যেমন ২ বংশা ৩৬:২২, ইষ্রা ১:১, দানিয়েল ১০:১, যিশাইয় ৪৪:১৮, ৪৫:১ ইত্যাদি) বাবিলের উপরে তার জয় দানিয়েল ৫:৩০ পদে অসরাসরিভাবে উল্লিখিত।

আজকে লন্ডনে ব্রিটিশ জাদুঘরে দেখা যায়।

  • আজের ইরান দেশে, পের্সেপলিস (Persepolis) শহরে ৫০০ খ্রিঃপূঃ থেকে মাদিয়-পারস্য রাজা দারিয়াবসের মান ওজন (King Darius’ Standard weight) আবিষ্কৃত হয়, যাতে লেখা আছে ‘আমি দারিয়াবস, মহান রাজা’
  • রাজা দারিয়াবস ৫২২-৪৮৬ খ্রিঃপূঃ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
  • তিনি যিহূদীদের মন্দির নির্মাণ করতে থাকার অনুমতি দেন (ইষ্রা ৪:৫)।
  • মাদিয়-পারস্য রাজা অহশ্বেরশ নাম খোদাই করে তেলস্পটিক (Xerxes’ Alabaster jar) আবিষ্কৃত হয়।
  • অহশ্বেরশ ৪৮৬-৪৬৫ খ্রিঃপূঃ পর্যন্ত রাজত্ব করেন ও বষ্টীর পরে যিহূদী ইষ্টেরকে বিয়ে করেন (ইষ্টের ২)। 
  • মাদিয়-পারস্য রাজা অর্তক্ষস্তের একটি রূপার মদ খাওয়ার বাটি (King Artaxerxes’ Silver Bowl) আবিষ্কৃত হয়।
  • অর্তক্ষস্ত হল অহশ্বেরশের ছেলে ও তিনি ৪৬৫-৪২৪ খ্রিঃপূঃ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
  • নহিমিয় এই রাজার পানপত্র-বাহক হিসাবে কাজ করেছিলেন ও তার থেকে যিহূদার শাসনকর্তা হওয়ার অধিকার পান (নহিমিয় ১-২, ৪৪৪-৪৩২ খ্রিঃপূঃ) যেন তিনি যিরূশালেমের দেওয়াল পুনরায় নির্মাণ করতে পারেন।

আরো ঐতিহাসিক প্রমাণ

১০ম শতাব্দী খ্রিষ্টপূর্বে

  • গেষরের চাষী পঞ্জিকা (৯২৫ খ্রিঃপূঃ)।

৮ম শতাব্দী খ্রিষ্টপূর্বে

  • সেফীরে স্টেলে (Sefire stele)। ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বাইবেলের পাশাপাশি পশ্চিম সেমিটিক ঐতিহ্যগুলি বা চুক্তির আশীর্বাদ ও অভিশাপ সম্বন্ধীয় জানার জন্য সবচেয়ে ভাল উৎস।
  • শিবন চৌকাটে লেখা (Shebna’s lintel inscription)। ৮ম বা ৭ম শতাব্দীর একটি কবরের উপরের চৌকাটে একটি লেখা পাওয়া যায় যা যিহূদা রাজা হিষ্কিয়ের ইতিহাস লেখক শিবনের কবর মনে করা হয়।
  • ৭৩০ খ্রিঃপূঃ থেকে তিগ্লৎ-পিলেসর ৩এর জীবনের কাহিনীতে (Annals of Tiglath Pileser III) লেখা আছে যে তিনি অনেক রাজাদের থেকে কর আদায় করতেন: ইস্রায়েল রাজা মনহেম, পেকহ ও হোশেয় এবং যিহূদা রাজা ‘আহস’ ‘অহসিয়’ (‘উষিয়’) উল্লিখিত।

৭ম শতাব্দী খ্রিষ্টপূর্বে

  • শাফনের শীল (৬০৯-৫৯৮ খ্রিঃপূঃ)। শাফনের নামে একটি শীল আবিষ্কৃত হল যা হয়তো যিহূদা রাজা যিহোয়াকীমের একজন অফিসারের ছিল (২ রাজা ২২)।
  • খীর্বেট বেইট লেই (Khirbet Beit Lei) হল ৭ম শতাব্দী খ্রিষ্টপূর্বের একটি লেখা যাতে ‘যিরূশালেম’ উল্লেখ। তা হল বাইবেলের বাইরে যিরূশালেম শহরের প্রাচীনতম উল্লেখ। এই লেখা থেকে একটি উদ্ধৃতি: ‘আমি সদাপ্রভুই (Yahweh) তোমার ঈশ্বর। আমি যিহূদার শহরগুলো গ্রহণ করব ও যিরূশালেমকে উদ্ধার করব’… ‘হে দয়াময় ঈশ্বর, আমাদের ক্ষমা কর! সদাপ্রভু (Yahweh), আমাদের ক্ষমা কর!’
  • মেসাদ হাসায়াভু ওষ্ট্রাখন (Mesad Hashavyahu Ostracon) হল ৭ম শতাব্দী খ্রিষ্টপূর্বের পুরাতন ইব্রীয় ভাষায় একটি মাটির পাত্রের টুকরা যাতে বিশ্রাম পালনের বাইবেলের বাইরে প্রাচীনতম উল্লেখ।

৬ম শতাব্দী খ্রিষ্টপূর্বে

  • কেটেফ হিম্মন পুরোহিতের আশীর্বাদ (Ketef Hinnom priestly blessing, ৬০০ খ্রিঃপূঃ)। গণনা পুস্তক থেকে উদ্ধৃতি করা লেখা। পুরাতন নিয়মের প্রাচীনতম আবিষ্কৃত লেখা।
  • লাখীশ চিঠিগুলো (Lachish letters), ৫৮৮ খ্রিঃপূঃ। যিহূদা রাজার সিদিকিয়ের শেষ বছরে যিরূশালেমের কাছে উপস্থিত হোশাইয়া নামে একজন সেনাপতি লাখীশের সেনাপ্রধানকে চিঠি লিখেন। লাখীশ শহর কিছুদিন পরে বাবিলীয়দের হাতে পড়ে ও ২ বছরের মধ্যে যিরূশালেমও তাদের হাতে পরে (নহিমিয় ১২:৩২, যির ৪২:১, ৪৩:২ দেখুন)।
  • সদাপ্রভুর ঘরের ওষ্ট্রাখন (House of Yahweh Ostracon) হল টেল-আরাদে (Tel Arad) আবিষ্কৃত একটি মাটির পাত্রের টুকরা যা হতে পারে যিরূশালেমের মন্দিরের বিষয়ে কথা বলে: ‘সদাপ্রভুর (Yahweh) ঘর’

৫ম শতাব্দ খ্রিষ্টপূর্বে

  • এলেফান্টাইন পাপীরী (Elephantine papyri)৫ম শতাব্দী খ্রিষ্টপূর্ব থেকে একটি প্রাচীন যিহূদী কাগজ যাতে তিনজন উল্লেখ যারা নহিমিয় পুস্তকেও উল্লেখ (নহিমিয় ৪:১, ১২:২২): দারিয়াবস-২, সনবল্লট ও মহা পরোহিত যোহানন।

ব্যবহৃত উৎসগুলি

ওয়েবসাইট

  • www.biblearcheology.org .
  • www.4truth.net
  • www.biblicalarcheology.org
  • www.bibleandarcheology.blogspot.com
  • www.christiananswers.org
  • www.interbible.org
  • www.bible.ca
  • www.christianevidences.org
  • www.visualbilblealive.com
  • www.josh.org

 

বই

  • Josh McDowell, Evidence that demands a verdict. Volume I and II
  • Randall Price’s, The Stones Cry Out: What Archaeology Reveals About the Truth of the Bible (Harvest House, 1997)
  • Kenneth A. Kitchen, On the Reliability of the Old Testament,(Grand Rapids: Eerdmans, 2003), 167.
  • Jeffery Sheler, Is The Bible True?
  • Millar Burrows, What Mean These Stones? 63.
  • “The Antediluvian Patriarchs and the Sumerian King List,” by Raul Lopez, in CEN Technical Journal 12 (3) 1998
  • Ian Wilson, The Bible Is History (Washington, DC: Regnery, 1999),
  • Charles Krahmalkov, “Exodus Itinerary Confirmed by Egyptian Evidence,” Biblical Archaeological Review, Sep/Oct 1994, 58.
  • Michael D. Lemonick, “Are the Bible’s Stories True?”  Time, Dec. 18, 1995
  • Francis Hitching, The Mysterious World: An Atlas of the Unexplained (New York: Holt, Rinehart and Winston, 1979),
  • Colin J. Humphreys, The Miracles of Exodus: (San Francisco: Harper San Francisco, 2003)