বাইবেলে দেওয়া তথ্যগুলি যে সঠিক তা প্রত্নতত্ত্বের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বাইবেলের সাথে সংযোগ পাওয়া যায় এমন ২৫’০০০ জায়গা আবিষ্কৃত হয়েছে। অনেক জায়গার অবস্থান অজানা ছিল কিন্তু বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে সেগুলি খুঁজে বের করা হয়েছে এবং সেখানে খনন করে যা যা নতুনভাবে আবিষ্কৃত হয়েছে তা বাইবেলের বর্ণনার সাথে মিল রয়েছে।

বাইবেলের বাইরে যীশুর বা মণ্ডলীর উল্লেখ ও বর্ণনা

যীশু খ্রীষ্ট
  • যীশু খ্রীষ্টের অস্তিত্ব সম্বন্ধে তথ্য দিয়েছেন: ইতিহাসবিদ যোষিফাস ফ্লাভিয়াস (Josephus Flavius), ইতিহাসবিদ সুয়েটোনিয়াস (Suetonius), শাসনকর্তা কনিষ্ঠ প্লীনি (Pliny the Younger), যিহূদীদের লেখা ‘তালমুদ’ (Talmud) এবং নাট্যকার লূসিয়ান (Lucian).
যিহূদী ইতিহাসবিদ যোষিফাস ফ্লাভিয়াস                                                   Josephus Flavius
  • ইতিহাসবিদ যোষিফাস ফ্লাভিয়াস (৩৭-১০০ খ্রিঃ) যিহুদী হিসাবে যিরুশালেমে জন্ম গ্রহণ করেন, তার পিতা একজন যাজক বংশীয় ছিলেন এবং তার মা দাবি করতেন যে তিনি একজন রাজকীয় পরিবারের। যিহুদী-রোমীয় যুদ্ধের সময় (৬৬-৭০ খ্রিঃ) তিনি রোমীয়দের বিরুদ্ধে প্রথমত যুদ্ধ করেছিলেন কিন্তু জোতাপাতা (Jotapata) শহরের পতনের পরে তিনি রোমীয় প্রধান সেনাপতি ভেস্পাসিয়ান্ (Vespasian)এর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
  • তিনি ভেস্পাসিয়ানকে বলেছিলেন মশীহের ভাববাণীর ভুল ব্যাখ্যার কারণে এই যুদ্ধ হয়েছিল এবং তিনি ভাববাণী করেন যে ভেস্পাসিয়ান সম্রাট হয়ে যাবেন। ভেস্পাসিয়ান তাকে জিম্মি ও অনুবাদক হিসেবে রেখেছিলেন। যখন ভেস্পাসিয়ান আসলে সম্রাট হয়ে যান (৬৯ খ্রিঃ) তখন তিনি যোষিফাসকে মুক্ত করেন এবং তাকে রোমীয় নাগরিকত্ব দান করেন। যোষিফাস পুরোপুরি রোমীয়পন্থী হয়ে যান এবং যিরুশালেম অবরোধ, ধ্বংস ও জয় করার সময় ভেস্পাসিয়ানের ছেলে তীত (Titus)এর পরামর্শদাতা হন।
  • রোমীয়দের চোখে যিহূদীদের আরো গ্রহণযোগ্য ও তাদের তোষামোদ করার জন্য তিনি দুইটি বই লিখেছিলেন: ‘যিহূদীদের ইতিহাস’ (‘Antiquities of the Jews’) এবং ‘যিহূদী যুদ্ধ’ (‘The Jewish War’)।
 
বাপ্তিস্মদাতা যোহনের বিষয়ে যেষিফাস্ ফ্লাভিয়াসের কথা
  • যোষিফাস ‘Antiquities of the Jews, Book18, Chapter 5:2’ বইয়ে লেখেন: ‘এখন যিহূদীদের কিছু লোক মনে করল যে হেরোদ এর সেনাবাহিনীর ধ্বংস ছিল ঈশ্বরের কাছ থেকে এবং তা খুব ন্যায্য কারণ তিনি যোহনের বিরুদ্ধে – যাকে বাপ্তিস্মদাতা বলা হত – তাকে হত্যা করেছিল যদিও তার কোন দোষ ছিল না। যোহনকে নিয়ে হেরোদের ভয় ছিল কারণ লোকদের উপর তার অনেক প্রভাব ছিল। হেরোদের ভয় ছিল যে যোহনের প্রভাবে একটি বিদ্রোহ উৎপন্ন হতে পারে। হেরোদের সন্দেহের কারণে যোহনকে বন্দী হিসেবে মাখাইরাস (Machaerus) দূর্গে (যা উপরে উল্লিখিত করা হয়েছে) পাঠানো হয় এবং সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়’। যোষিফাসের এই কথাগুলির সাথে মথি ১৪:৪মার্ক ৬:১৮ পদের মিল রয়েছে।
  • তাই যোষিফাস বলেন যে হেরোদ যোহন বাপ্তিস্মদাতাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেন। তিনি আরো বলেন যে তার কারণে ৩৬ খ্রিষ্টাব্দে নাবাতীয় আরিতা চতুর্থের সঙ্গে হেরোদ আন্তিপাসের সংঘাতে তিনি পরাজিত হন।
    যীশুর ভাই যাকোবের মৃত্যুর বিষয়ে যোষিফাস ফ্লাভিয়াসের কথা
  • যোষিফাস তার ‘Antiquities of the Jews, Book 20, Chapter 9:1’ বইয়ে লেখেন: ‘এবং এখন কৈসর শাসনকর্তা ফীষ্টের মৃত্যুর কথা শুনে তিনি আলবিনাস (Albinus)কে রোমীয় শাসনকর্তা হিসেবে যিহুদায় পাঠান। কিন্তু রাজা যোষেফকে মহাযাজকত্ব থেকে বঞ্চিত করেন; এবং তার পরিবর্তে মহাযাজকত্ব আনানাস এর পুত্রকে দেন (যার নামও আনানাস ছিল)। ফীষ্ট মারা গেছেন এবং আলবিনাস এখনও পৌঁছান নি (এখ্নও পথে); তাই রাজা যিহূদী পরিষদের (Sanhedrin) যাজকদের একত্র করলেন এবং তাদের সামনে যীশুর (যাকে খ্রীষ্ট বলা হত) ভাই যাকোব ও অন্যদের নিয়ে আসলেন। তিনি তাদের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের অভিযোগ আনলেন এবং তাদের পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দিলেন।’
  • তাই যোষিফাস যীশু খ্রীষ্টকে (এবং তার ভাই যাকোবকে) সরাসরি উল্লেখ করেন।
গ্রীক ইতিহাসবিদ থালাস                                                           Thallus
  • থালাস (Thallus) ভূমধ্যসাগরের দেশগুলি নিয়ে ‘কোয়নি গ্রীক’ (Koine Greek) ভাষায় একটি ইতিহাস লেখেন (ত্রোয়ার যুদ্ধ থেকে ১৬৭-তম অলিম্পিয়াড পর্যন্ত)। তিনি ৫২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বলেন যে জগতের উপরে অন্ধকার আসল। তিনি ঘটনাটি চন্দ্র বা সূর্য গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেন।
  • কেউ কেউ মনে করে যে এটা যীশুর মারা যাওয়ার সময়ের সে অন্ধকারের একটি বর্ণনা, কিন্তু তা নিশ্চয়তার সঙ্গে বলা যায় না। যে কোনো ভাবে যীশুর মৃত্যুর সময়ের অন্ধকার একটি চন্দ্র গ্রহণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না কারণ যীশু দিনের বেলা মারা যান এবং চন্দ্রগ্রহণ দিনের বেলায় সম্ভব নয়। সূর্য গ্রহণের জন্য অমাবস্যা দরকার, এবং নিস্তার পর্ব কখনও অমাবস্যার সময়ে হয় না।
কনিষ্ঠ প্লীনি খ্রিষ্টানদের অত্যাচার                                                       Pliny the Younger
  • কনিষ্ঠ প্লীনি (৬১-১১২ খ্রিঃ) একজন আইন-জীবি ও লেখক ছিলেন যিনি সম্রাট ত্রায়ান (Trajan)এর অধীনে বিথুনিয়া ও পন্ত প্রদেশের শাসনকর্তা ও বিচারকও ছিলেন (৯৮-১১৭ খ্রিঃ)। প্লীনি ও সম্রাট ত্রায়ানের চিঠিগুলি থেকে রাজ্য সরকার ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে কি রকম সম্পর্ক ছিল তা বুঝা যায়।
  • প্লীনি রীতিমত খ্রিষ্টানদের বিচার, তদন্ত ও অত্যাচার করতেন। তিনি এই ব্যাপারে সম্রাট ত্রায়ানের পরামর্শ চেয়েছিলেন।
  • সম্রাট ত্রায়ানের কাছে লেখা চিঠির মধ্যে ১১২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি খ্রিষ্টানদের বিষয়ে বলেন:
    ‘তারা ভোর হওয়ার আগে খ্রীষ্ট দেবতার কাছে একটা প্রার্থনা সঙ্গীত গায় এবং তারা একটি নির্দিষ্ট দিনে মিলিত হতে অভ্যস্ত হয়। তারা পাপ বা খারাপ কাজ না করার জন্য শপথ করে। তারা শপথ করে যে কোন ঠকানো, চুরি, ব্যভিচার বা প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গবে না এবং চাপেও যীশুকে অস্বীকার করবে না। এই অনুষ্ঠানের পরে তারা একত্রিত হয় এবং একসাথে খাবার খায়, কিন্তু খাবারটি হল সাধারণ ও নির্দোষ খাবার। এই একত্রিত হওয়ার অভ্যাস তারা বাদ দিল যখন আমি আপনার আদেশ অনুসারে রাজনৈতিক সমিতি নিষিদ্ধ করলাম। আমি মনে করলাম ব্যাপারটি আরো তদন্ত করা দরকার। তাই আমি তাদের মধ্য থেকে দুইজন মহিলাকে গ্রেফতার করলাম যাদের ‘পরিচালিকা’ (deaconess) বলা হত। তাদের যন্ত্রণা ও নির্যাতনও করলাম। কিন্তু তাদের সেই কুসংস্কার ছাড়া আর কোন দোষ খুঁজে পাই নি।’
    ‘আপনার থেকে আরো দিক-নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত আমি এইভাবে করতে থাকব: যখন অন্যরা খ্রিষ্টানদের ধরিয়ে দেয় আমি অভিযুক্ত খ্রিষ্টানদের জিজ্ঞাসা করি তারা খ্রিষ্টান কিনা। যদি তারা স্বীকার করে বলে ‘হ্যাঁ’ তবে আমি তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার হুমকি দেই এবং আরো দুইবার জিজ্ঞাসা করে তাদের অস্বীকার করার সুযোগ দেই। যদি তিন বার জিজ্ঞাসা করার পরেও তারা যীশুকে অস্বীকার করে না তবে আমি তাদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেই। তারা অন্য কোনো অপরাধ না করলেও এবং তাদের খারাপ মতবাদ না থাকলেও আমি মনে করি যে, তাদের সে জেদী মনোভাব শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই আমি অন্যান্য লোকদের মধ্য থেকে খ্রিষ্টানদের এভাবে বের করে মৃত্যুদণ্ড দেই। যারা রোমীয় নাগরিক এবং খ্রিষ্টানদের সে মূর্খ বিশ্বাসে পড়েছে, আমি তাদের রোমীয় আদালতে হস্তান্তর করি।’
  • প্লীনির এই চিঠিটি হল বাইবেলের বাইরে প্রথমদিকের খ্রিষ্টানদের প্রসঙ্গে সবচেয়ে প্রাচীনতম নথিপত্র। প্রথমদিকের খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস, অভ্যাস, রোমীয়রা তাদের কিভাবে দেখত এবং তাদের নিয়ে কি করত, তারও প্রাচীনতম নথিপত্র। রোমীয়রা খ্রিষ্টানদের তিন বার যীশুকে অস্বীকার করার সুযোগ দিত, কিন্তু অস্বীকার না করলে তাদের মৃত্যুদণ্ড দিত। প্লীনির চিঠিটি ও সম্রাট ত্রায়ানের চিঠির উত্তর দেখায় যে, সে সময় খ্রিষ্টানদের অত্যাচার করার কোন প্রশাসনিক আদেশ বা নিয়ম ছিল না। কিন্তু সাম্রাজ্যব্যাপী যদি খ্রিষ্টিয়ানরা অত্যাচারিত হত তবে তাদের কোনো প্রশাসনিক সুরক্ষা দেওয়া হত না। কিছু শাসনকর্তারা ইচ্ছাকৃত খ্রিষ্টানদের অত্যাচার করতেন।
রোমীয় ইতিহাসবিদ সুয়েটনিয়াস                                 Roman Historian Suetonius
  • সুয়েটনিয়াস (৬৯-১২২ খ্রিঃ) ১২জন রোমীয় সম্রাটদের জীবন কাহিনী (আগস্ত থেকে ডোমিটিয়ান পর্যন্ত) লিখেছিলেন যার নাম ‘De Vitae Caesarum’।
  • সম্রাট ক্লৌদিয়ের (Claudius) জীবনী বর্ণনায় তিনি উল্লেখ করেন যে সম্রাট ক্লৌদিয় ৪৯ খ্রিষ্টাব্দে যিহূদীদের রোম (ইটালী) থেকে চলে যাওয়ার আদেশ দেন (২৫.৪): ‘(রোম শহরের) যিহূদীরা ‘খ্রেষ্টস’ নামে একজনের কারণে বার বার আন্দোলন করার জন্য সম্রাট ক্লৌদিয় তাদের রোম থেকে বিতাড়িত করলেন’‘খ্রেষ্টস’ মানে খ্রীষ্ট। এই ঐতিহাসিক ঘটনা প্রেরিত ১৮:১-২ পদেও উল্লিখিত রয়েছে।
  • সুয়েটনিয়াস বিথুনিয়া ও পন্ত প্রদেশের শাসনকর্তা প্লীনির (১১০-১১২ খ্রিঃ) সুপারিশে সম্রাট ত্রায়ানের (Trajan) সাথে পরিচিত হন। তিনি সম্রাট ত্রায়ানের সময়ে (৯৮-১১৭ খ্রিঃ) ‘শিক্ষা সচিব’ এবং সম্রাট হাদ্রিয়ানের (Hadrian) সময়ে (১১৭-১৩৮ খ্রিঃ) প্রধান সচিব ছিলেন।
গ্রীক নাট্যকার লুসিয়ান                                       Greek Playwright Lucian
  • সামোসাটা শহরের লূসিয়ান ছিলেন গ্রীক ভাষার নাট্যকার, ব্যঙ্গ-রচনা লেখক ও বিখ্যাত বক্তা, যিনি সিরিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন (১২৫-১৮০ খ্রিঃ)। তিনি তার একটি ব্যঙ্গ-রচনায় ‘পেরেগ্রিনাসের মৃত্যু’ (the Passing of Peregrinus) খ্রিষ্টানদের এবং তাদের অতিথিসেবা ও উদারতার বিষয়ে টিটকারী দেন। নাটকের প্রধান ব্যক্তি ‘পেরেগ্রিনাস’ একজন দার্শনিক যিনি খ্রিষ্টানদের অথিতিসেবা ও দানশীলতার অপব্যবহার করেন এবং পরে ১৬৫ খ্রিষ্টাব্দে অলিম্পিকে আত্ম-হত্যা করেন।
  • নাটক থেকে একটি উদ্ধৃতি: ‘তোমরা কি জান, খ্রিষ্টানরা একজন বিখ্যাত ব্যক্তিকে – একজন কাঠ মিস্ত্রিকে! – পূজা করে, যিনি এমন ধর্মকর্ম স্থাপন করেছিলেন যে তাকে ক্রুশে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল। সেই প্রতারিত খ্রিষ্টানরা একটি বড় মিথ্যা বিশ্বাস করে: তারা মনে করে তারা অনন্তকাল পর্যন্ত জীবিত থাকবে। ফলে তারা মৃত্যুকে তুচ্ছ করে ও স্বেচ্ছায় আত্ম-ত্যাগী জীবন করে। যে মুহূর্ত থেকে তারা বিশ্বাসী হয়ে যায়, তারা তাদের আইন-দাতার মত গ্রীক দেবতা অস্বীকার করে। বরং তারা তাদের ক্রুশীয় মৃত্যু প্রাপ্ত গুরুকে পূজা করে এবং তার আইন অনুসারে জীবন যাপন করে। এই সব তারা সরলভাবে বিশ্বাস করে। তারা ধন অস্বীকার করে এবং তাদের সম্পত্তি সর্বজনীন সম্পত্তি হিসাবে দেখে।’
  • তিনি খ্রিষ্টান্দের হাস্যকর বানাতে চেয়েছেন কিন্তু এভাবে তিনি যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যুর একজন সাক্ষী হয়েছেন!
  • বামের ছবি (কাল্পনিক): লুসিয়ান।
 যিহূদী টালমুদ                      Jewish Talmud
  • টালমুদের ২টি অংশ আছে: ‘মিশ্না’ (২০০ খ্রিঃ) মৌখিক আইন এবং ‘গেমারা’ (৫০০ খ্রিঃ) আইনের ব্যাখ্যা। যদিও এইগুলি যীশুর পরে লিখিত রাখা হয়েছিল, টালমুদ ফরীশী ধরণের চিন্তা অনুসারে লেখা। তাই টালমুদ যীশুকে প্রতারক ও প্রতারিত মনে করে। তারপরেও টালমুদে যীশু সম্বন্ধে একটি চিত্র পাওয়া যায়। টালমুদ যীশু সম্বন্ধে বলে:
    • যীশু মরিয়মের ছেলে। (Shab 104b, Sanh 67a)
    • যীশু ছিলেন একজন যাদুকর। তাঁর শিষ্য ছিল। (b Sanh 43a-b)
    • যীশু অনেককে সুস্থ্ করেছেন। (Hul 2:22f; AZ 2:22/12; y Shab 124:4/13; QohR 1:8; b AZ 27b)
    • যীশু আইনের বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। (b AZ 17a; Hul 2:24; QohR 1:8)
    • যীশু ছিলেন একজন শিষ্য যিনি প্রতারনায় পড়েছেন। (Sanh 193a/b; Ber 17b)
    • যীশু ছিলেন দেবতাপুজারী লোক যিনি যাদু করতেন। (Sanh 107b; Sot 47a)
    • যীশু নরকে শাস্তি পাচ্ছেন। (b Git 56b, 57a)
    • যীশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। (b Sanh 43a-b)

সুসমাচারে উল্লিখিত ব্যক্তি বা ঘটনা

কৈসর আগস্ত               Emperor Augustus
  • কৈসর আগস্ত ২৭ খ্রীঃপূঃ থেকে ১৪ খ্রীষ্টাব্দে রাজত্ব করেন।
  • যীশুর জন্মের সময় আগস্ত ছিলেন রোমীয় সম্রাট। লূক ২:১ ‘সে সময়ে সম্রাট আগস্ত কৈসর তাঁর রাজ্যের সব লোকদের নাম লেখাবার আদেশ দিলেন’
  • আগস্ত ছিলেন খুব বুদ্ধিমান রাজনীতিবিদ ও চমৎকার প্রশাসক।
  • তিনি রোম রাজ্যে স্থায়ীভাবে গণতন্ত্র থেকে একনায়কতন্ত্রে নিয়ে আসেন যেমন তার আত্মীয় জুলিয়াস কৈসর তার আগে ঘটাতে চেষ্টা করেছিলেন।
  • তিনি নিজেকে ‘শান্তির রাজা’ ও ‘ঈশ্বরের পুত্র’ হিসাবে দাবি করতেন।
আগস্তের সময়ে লোকগণনা                        Augustus’ Census
  • লূক ২:১-২ একটি লোকগণনা উল্লিখিত। সময় নির্দিষ্ট করার জন্য লূক উল্লেখ করেন। লূক পরিস্কার করেন যে এইটা ছিল প্রথম লোকগণনা, যখন কুরীণিয় সিরিয়ার শাসনকর্তা।
  • রোমীয় ইতিহাসেও উল্লেখ আছে যে আগস্ত রীতিমত কর তোলার সুবিধার জন্য লোকগণনার আদেশ দিলেন। তার আদেশে লোকগণনা করা হয় ২৩-২২ খ্রিষ্টপূর্বে এবং ৯-৮ খ্রিষ্টপূর্বে
  • যোষিফাস বলেন যে যিহূদার লোকগণনা সিরিয়ার অধীনে ঘটল (লূক যেমন বলে) কিন্তু তিনি আরো বলেন যে কূরীণিয় মাত্র ৬ খ্রিষ্টাব্দে সিরিয়ার শাসনকর্তা হয়ে যান, অর্থাৎ যীশুর জন্মের কয়েকটি বছর পরে।
  • মিসরে একটি পুরানো কাগজে (Papyrus) লোকগণনা চালানোর দিক-নির্দেশনা উল্লেখ করে যে: ‘যারা কোন কারণে অন্য একটি শহরে বাস করে তাদের সাথে সাথে আদেশ দিতে হয়, নিজের শহরে ফিরতে যেন তারা ওখানে পারিবারিক নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তি করে তাদের জমির উপর উত্তরাধিকার রক্ষা করার জন্য।’ এই বর্ণনা ও লূকের বর্ণনা লূক ২:৩-৫ সম্পূর্ণভাবে মিলে।
হেরোদ মহান (হেরোদ-১)      Herod I the Great
  • যখন রোমীয়েরা ৬৩ খ্রিষ্টপূর্বে যিহূদা এলাকা প্রথমে দখল করতে চেষ্টা করে, একজন ইদুমীয় (হেরোদের বাবা আন্তিপাটের) তার সমর্থন দেন।
  • কৃতজ্ঞতায় রোমীয়েরা আন্তিপাটেরকে স্থানীয় রাজা হিসাবে নিযুক্ত করে যেন তিনি তাদের অধীনে রাজত্ব করেন (৬৩-৩৭ খ্রিঃপূঃ)। ফলে যিহূদীরা আন্তিপাটেরকে রাজাকার বলে ঘৃণা করে।
  • একটি যিহূদী স্ত্রী থেকে তার ২য় ছেলের নাম ছিল ‘হেরোদ ১ (হেরোদ মহান)’।
  • তিনি রোমীয়দের অধীনে ৩৭-৪ খ্রিষ্টপূর্ব পর্যন্ত যিহূদার উপর রাজত্ব করেন।
  • লূক ১:৫ পদ বলে যে যীশুর জন্ম তার রাজত্বে।
  • তিনি ছিলেন ক্ষমতা লোভী ও নিষ্ঠুর। তার রাজত্বে অনেক লোকদের মেরে ফেলা হয়। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ তিনি নিষ্ঠুরতার সঙ্গে দমন করেন। এমন কি তার আপন দুই ছেলেকেও মেরে ফেলেন।
  • মথি ২ অধ্যায়ে হেরোদের একই ধরণের বর্ণনা পাওয়া যায়: পণ্ডিতদের কথা শুনে ও ভয় পেয়ে তিনি দুই বছরের নিচের ছেলেদের মেরে ফেলার আদেশ দেন ।
  • হেরোদ মহান তার দুনীতি, কর তোলা ও নিষ্ঠুরতা দ্বারা কুখ্যাতভাবে ধনীও ছিলেন। তার ধন নিয়ে তিনি নানা দুর্গ ও দালান নির্মাণ করতেন: যেমন দুর্গ হেরোদিয়ন (বামে উপরের দু’টি ছবি)।
  • যিহূদীদের খুশি করার জন্য হেরোদ যিরূশালেমে সদাপ্রভুর উপাসনা-ঘর অনেক টাকা দিয়ে আরো সুন্দর বানান (২০ খ্রিঃপূঃ-৬০ খ্রিঃ)।
  • কিন্তু উপাসনা-ঘর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে (৭০ খ্রিঃ) রোমীয়েরা উপাসনা-ঘরকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে (ডানের ছবি: উপাসনা-ঘরের মডেল)।
  • হেরোদ নৌবন্দর কৈসরিয়া মারিটিমা (Caesarea Maritima) এবং মরুসাগরের পাড়ে আশ্রয়-দুর্গ ‘মাসাদা’ (Masada) নির্মান করেছেন (বামে উপরের ছবি)।
  • যিরূশালেম ধ্বংস হওয়ার পরে যিহূদী জঙ্গীরা মাসাদায় আশ্রয় নেয়। ৭৩ খ্রিষ্টাব্দে রোমীয়রা মাসাদা দখল করতে সক্ষম হয় বলে জঙ্গীরা আত্ম-হত্যা করে।
  • হেরোদের মদ খাওয়ার মাটির পেয়ালা পাওয়া গেছে যার গায়ে হেরোদের নাম উল্লেখ আছে (ডানের দু’টি ছবি)।
  • হেরোদ মহানের মৃত্যুর পরে তার রাজ্য তার ৩টি জীবিত ছেলেদের মধ্যে ভাগ হয়: আর্খিলায় (যিহূদা), হেরোদ আন্তিপাস (গালীল, পেরেয়া) এবং হেরোদ ফিলিপ (যর্দনের পূর্বে)।h
কুরীণিয়, সিরিয়ার শাসনকর্তা                  Quirinius, governor of Syria
  • লূক ২:১-২ পদে লূক দাবি করেন যে যীশুর জন্মের সময় কুরীণিয় নামে একজন ছিলেন যিনি সিরিয়ার শাসনকর্তা।
  • যোষিফাস বলেন যে, যিহূদার লোকগণনা সিরিয়ার অধীনে ঘটে (যা লূকের কথার সাথে মিল আছে)।
  • কিন্তু তিনি আরো বলেন যে, কুরীণিয় শুধুমাত্র ৬ খ্রিষ্টাব্দে সিরিয়ার শাসনকর্তা হয়ে যান (যীশুর জন্মের কয়েক বছর পরে)। তাই লূক কি ভুল করলেন?
  • আসলে লূক ঠিক বলেন কারণ পরে একটি খোদাই করা লেখা পাওয়া গেল যাতে বলা হয় যে কুরীণিয় ৭ খ্রিষ্টপূর্বে সিরিয়ার শাসনকর্তা হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।
  • তাই কূরীণীয় দুইবার এই দায়িত্ব পালন করলেন, এক বার যীশুর জন্মের সময়ে এবং দ্বিতীয় বার যোষিফাস দ্বারা উল্লিখিত সময়ে (৬ খ্রিঃ)।
অবিলীনীর রাজা লুষাণিয়                     Lysanias, tetrarch of Abilene
  • লূক ৩:১ পদে যোহনের ও যীশুর পরিচর্য্যার তারিখ দেওয়ার সময় (২৬ খ্রিঃ) লূক একজন অবিলীরীর রাজা লুষাণিয়কে উল্লেখ করেন। ইতিহাসবিদদের লেখায় লুষাণিয় নামে মাত্র একজন উল্লেখ আছেন, কিন্তু তার মৃত্যুর সাল ৩৬ খ্রিষ্টপূর্বে। তা লূকের কথার সাথে অমিল।
  • কিন্তু সম্প্রতি দামেস্ক শহরের কাছে একটি খোদাই করা লেখা আবিষ্কৃত হয়েছে যাতে একজন রাজা লুষানিয়ের দাস মুক্তি পাওয়ার পরে এই রাস্তা স্থাপন করেছিলেন: ‘নিম্ফেয়, রাজা লুষাণিয়ের একজন মুক্ত করা দাস, রাস্তাটি তৈরি করেছিলেন।’ লেখার তারিখ ১৪-২৯ খ্রিষ্টাবদে
তিবিরিয়ের দীনার                           Tiberius’ denarius
  • লূক ২০:২৩-২৫ এবং মার্ক ১২:১৩:১৭ পদে হেরোদীয়েরা ও ফরীশীরা যীশুকে ফাঁদে ফেলার জন্য একটি প্রশ্ন করেন, সম্রাটকে কর দেওয়া উচিত কিনা।
  • উত্তরে যীশু একটি দীনার দেখতে চেয়েছেন যাতে সম্রাটের মুখ থাকে।
  • ডানের ছবি: সম্রাত তিবিরিয়ের দীনার।
শাসনকর্তা পন্তীয় পীলাত          Governor Pontius Pilatus
  • চারটি সুসমাচারে উল্লিখিত যে, রোমীয় শাসনকর্তা পন্তীয় পীলাত যীশুকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পন্তীয় পীলাত ২৬-৩৬ খ্রিষ্টপূর্বে তিবিরিয় সম্রাটের অধীনে যিহূদার শাসনকর্তা।
  • ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে কৈসরিয়া মারিটিমা (Caesarea Maritima) শহরে একটি থিয়েটারে ল্যাটিন ভাষায় একটি খোদাই করা লেখা আবিষ্কৃত হয়েছে যা ৩০ খ্রিষ্টাব্দে তৈরি করা হয়েছিল যখন কৈসরিয়া ছিল যিহূদা এলাকার রোমীয় সরকারের কেন্দ্র (বামের ছবি)। 
  • যদিও খোদাইয়ের সব লেখা আর পড়া যায় না তবুও কিছু লেখা বুঝা যায়: [DIS AUGUSTI]S TIBERIEUM, [PO]NTIUS PILATUS, [PRAEF]ECTUS IUDA[EA]E, [FECIT D]E[DICAVIT]। এর অর্থ হল: ‘দালানটি সম্রাট তিবিরিয়ের কাছে উৎসর্গ করা হয়েছে যিহূদার শাসনকর্তা পিলাতের দ্বারা।’
  • রোমীয় ইতিহাসবিদ টাকিটাস, যোষিফাস ফ্লাভিয়াস ও আলেক্জান্দ্রিয়ার ফীলো তিনজনই পন্তীয় পীলাতকে উল্লেখ করেন। 
  • তারা বলেন যে পন্তীয় পীলাতের রাজত্বের শুরুর অল্পক্ষণের মধ্যে তিনি যিহূদীদের এমন অপমানিত করেন যে তারা অস্থির হয়ে উঠে। 
  • পরে পীলাত একটি শমরীয় বিদ্রোহ নিষ্ঠুরভাবে বন্ধ করেন যার ফলে তাকে রোমে ফেরার আদেশ দেওয়া হয়।
রোমীয় সম্রাট কৈসর তিবিরিয়           Roman Emperor Tiberius
  • সম্রাট তিবিরিয়ের নাম লূক ৩:২ পদে উল্লিখিত যখন লূক যোহন বাপ্তিস্মদাতা ও যীশুর পরিচর্যার তারিখ দেন (২৬ খ্রিঃ)।
  • তিনি ১৪-৩৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন, অর্থাৎ তিনি যীশুর পরিচর্যা, মৃত্যু ও পুনরুত্থানের সময়ে সম্রাট ছিলেন।
  • তার জীবনের বর্ণনা রোমীয় ইতিহাসবিদ টাকিটাস ও সুয়েটনিয়াসের লেখায় পাওয়া যায়।
রোমীয় সম্রাট কৈসর ক্লোদিয়                  Roman Emperor Claudius
  • সম্রাট ক্লৌদিয় ৪১-৫৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
  • তার নাম প্রেরিত ১১:২৮ ১৮:২ পদে পাওয়া যায়।
  • যখন ৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘খ্রেষ্টস’ নামে একজনের কারণে যিহূদীরা আন্দোলন করে, তখন সম্রাট ক্লৌদিয় তাদের রোম (ইটালী) থেকে চলে যাওয়ার আদেশ দেন।
  • রোমীয় ইতিহাসবিদ টাকিটাস, সুয়েটনিয়াস ও কাসিয়াস ডিও ক্লৌদিয় সম্পর্কে লিখেছিলেন।

সুসমাচারগুলোতে উল্লিখিত স্থানগুলো

শীলোহের পুকুর                   Pool of Siloam
  • যিহূদার রাজা হিষ্কিয় ৭০০ খ্রিষ্টপূর্বে গীহোন ফোয়ারা থেকে ওফেল পাহাড় কেটে পানির একটি খাল তৈরি করেছিলেন যা ছিল যিরূশালেম শহরের মধ্যে শীলোহের পুকুরের পানির উৎস (১,৭৫০ ফিট লম্বা খাল)।
  • যোহন ৯:৭ পদে যীশু একজন অন্ধকে তার চোখ ধোয়ার ও সুস্থ হওয়ার জন্য এই পুকুরে যেতে বলেছিলেন।
  • উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে শীলোহের পুকুরের একটি ছোট অংশ খনন করে পাওয়া গেছে। খোঁড়ার জায়গার উপরে ‘শীলভান’ নামে একটি আধুনিক গ্রাম আছে (শীলভান হল শীলোহের আধুনিক নাম)।
  • ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে আরো খনন করার সময়ে শীলোহের পুকুরের আরো একটি বড় অংশ খুঁজে পাওয়া যায় (৫০ মিটার দৈর্ঘ্য)। এই সময় আরো একটি পুরাতন সিঁড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে যা পুকুর থেকে সরাসরি মন্দিরে গিয়েছিল।
  • তাই চিন্তা করা হয় যে মন্দিরে যাওয়ার আগে যিহূদীরা শীলোহের পুকুরে শুচি হওয়ার জন্য যেত। হয়তো একারণে যীশু তাঁর আশ্চর্য কাজের জন্য ঠিক এই স্থান পছন্দ করেছিলেন।

পাথর দিয়ে বন্ধ করা কবরস্থান                   Rolling Stone Tombs

  • মথি ২৮:২ পদে লেখা আছে যে “একজন দূত স্বর্গ থেকে নেমে আসলেন এবং কবরের মুখ থেকে পাথরখানা সরিয়ে দিয়ে তার উপর বসলেন”
  • যীশুর সময়ের বেশ কিছু পাথর দিয়ে বন্ধ করা কবরস্থান বর্তমানেও যিরূশালেমে দেখা যায় (যেমন আদিয়াবেনের রাণী হেলেনার এবং হেরোদ মহান পরিবারের কবরস্থান)।
  • বর্তমান ইস্রায়েল ও যর্দন দেশে ৬০টিরও বেশি এই ধরণের কবর এখনও দেখা যায়।
  • ‌ছবিটি হল এই ধরণের কবরের একটি উদাহরণ। 
বৈথেসদা পুকুর                  Pool of Bethesda
  • যোহন ৫:২ পদে বৈথেসদা পুকুরের বর্ণনা করা হয় ‘৫টি ছাদ দেওয়া জায়গা’, যেখানে অনেক রোগী (অন্ধ, খোঁড়া) পড়ে থাকত।
  • ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে খনন কাজের মধ্য দিয়ে এই পুকুরটি পাওয়া গেছে।
  • বর্তমানে এই জায়গার নাম ‘বৈজেথা’।
কাইয়াফার কবর                         Tomb of Caiaphas
  • ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে যিরূশালেমে পুরাতন একটি কবরে সুন্দরভাবে সাজানো হাঁড়ের বাক্স (ossuary) পাওয়া যায়, যার গায়ে লেখা: ‘যোষেফ, কাইয়াফার পুত্র’
  • কবরটি হিন্নোম উপত্যকায় ‘শান্তির বন’ নামক একটি জায়গায় পাওয়া গেছে।
  • যীশুর বিচারে তিনি কাইয়াফা নামে মহাপুরোহিতের সামনে দাঁড়ান (মথি ২৬:৩, ২৬:৫৭, লূক ৩:২, যোহন ১১:৪৯, ১৮:১৩-১৪,২৪,২৮)।
  • পরে পিতর ও যোহন যিরূশালেমে কাইয়াফার সামনে বিচারে দাঁড়ান (প্রেরিত ৪:৬)।
  • প্রত্নতত্ত্ববিদেরা সেই কবরটি মহাপুরোহিত কাইয়াফার পরিবারের কবর হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।
শীলাস্তরণ নামক স্থান যেখানে যীশুকে রায় দেওয়া হয়                       The pavement ‘Gabbatha’ in the Fortress Antonia
  • যোহন ১৯:১৩ পদে যীশুকে যখন পিলাতের হাত দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যোহন এই স্থানের নাম এইভাবে চিহ্নিত করেন: ‘শীলাস্তরণ নামক স্থান’।
  • প্রত্নত্ত্ববিদ অলব্রাইট (F.Albright) তার লিখিত বইয়ে ‘প্যালেষ্টাইনের প্রত্নত্ত্ব’ (Archeology of Palestine) দেখান যে এই শীলাস্তরণ স্থান ছিল যিরূশালেমে আন্তোনিয়া দুর্গের (Fortress Antonia) উঁচু গৃহের উঠানে।
  • রোমীয়েরা আন্তোনিয়া দুর্গ যিরূশালেমে তাদের সামরিক সদর দপ্তর হিসাবে ব্যবহার করত।
  • ৭০ খ্রিষ্টাব্দে যিরূশালেমের ধ্বংসে উঠানটি ভাঙ্গা পাথর দিয়ে আবৃত হয়েছিল এবং শুধুমাত্র বর্তমান যুগে খনন করে পাওয়া গেছে।
  • মাঝের ছবি: উপাসনা ঘরের পাশাপাশি রোমীয় সদর দপ্তর দুর্গ আন্তোনিয়া (মডেল)। ডানের ছবি: আন্তোনিয়া দুর্গের মধ্যে শীলাস্তরণ নামে স্থান। 
কফরনাহূমে যিহূদীদের সমাজ গৃহ  Synagogue of Capernaum
  • যীশুকে যখন তাঁর পরিচর্য্যার শুরুতে নাসরতে অগ্রাহ্য করা হয় তিনি কফরনাহূমে যান, গালীল সাগরের উত্তর পারের একটি ছোট গ্রাম (লূক ৩:২৩, ৪:১৬-৩০)।
  • সম্ভবত তিনি তাঁর শিষ্য পিতরের বাসায় থাকেন (মথি ৮:১৪, মার্ক ২:১) এবং যিহূদীদের সমাজ গৃহে শিক্ষা দেন (মার্ক ১:২১, ৩:১, যোহন ৬:৫৯)।
  • মাঝের ছবি: কফরনাহূম গ্রামে খনন করে চতুর্থ বা পঞ্চম শতাব্দী থেকে সমাজ গৃহের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে (বামের ছবি)।
  • ডানের ছবি: সমাজ গৃহের ভিত্তি (ছাই রং) খনন করা হয়েছে। এটা হল যীশুর সময়ের সমাজ গৃহের ফ্লোর।
যিরূশালেম এলাকায় কবরে হাঁড়ের বাক্স                 Ossuaries near Jerusalem
  • ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রত্নতত্ত্ববিদ এলিয়েষর সুকেনিক যিরূশালেমের কাছাকাছি ৫০ খ্রিষ্টাব্দের একটি কবর খনন করে দুটি হাঁড়ের বাক্স আবিষ্কার করেছেন যার গায়ে এই লেখা আছে: “Iesous iou”“Iesous aloth”
  • কবরে ৪টি ক্রুশও পাওয়া গেছে। লেখার অর্থ হল মৃতদের জন্য যীশুর সাহায্য ও পুনরুত্থিত হওয়ার বিনতী। এই হাঁড়ের বাক্স হল খ্রিষ্টান ধর্মের সর্বপ্রথম সাক্ষ্যের মধ্যে একটি।
নাসরত খোদাই করা লেখা             Nazareth Inscription
  • নাসরতে প্রথম শতাব্দীর (হতে পারে সম্রাট তিবিরিয়ের বা ক্লৌদিয়ের সময়ে, ১৪-৫৪ খ্রিঃ) গ্রীক ভাষায় মার্বেল পাথরে একটি খোদাই করা লেখা পাওয়া গেছে যাতে সম্রাট একটি আইন ঘোষনা করেন: যে কেউ কবরে হাত দেয়, তার মৃত্যুদণ্ড হবে।
  • কেউ কেউ চিন্তা করে যে এই আইন প্রমাণ করে যে শিষ্যরা কখনও যীশুর কবরে হাত দিতে সাহস পেতেন না।
  • আবার কেউ কেউ মনে করে যীশুর পুনরুত্থান নিয়ে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তার খবর সম্রাটের কাছে পৌঁছিয়েছিল এবং তিনি এই কারণে আইনটি প্রকাশ করেছিলেন।
দায়ূদ ও শলোমনের কবর                          David and Solomon’s grave
  • প্রেরিত ২:২৯ পদে পিতর তার প্রচারে দায়ূদ সম্বন্ধে বলেন যে ‘তাঁর কবর আজও এখানে রয়েছে’। বর্তমান দিনে আর জানা নেই দায়ূদ ও শলোমনের কবর কোথায় ছিল, কিন্তু রোমীয় ইতিহাসবিদ কাসিয়াস ডিও (Book 69:14, ২২৯ খ্রিঃ) উল্লেখ করেন যে ৬৬-৭০ খ্রিষ্টাব্দে যিহূদী-রোমীয় যুদ্ধের সময়ে রোমীয়েরা শলোমনের কবরটি ধ্বংস করে।
  • তিনি বলেন: ‘যিহূদীদের ৫০টি সামরিক কেন্দ্র ও ৯৮৫টি গুরুত্বপূর্ণ যিহূদী গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে। সর্বমোট ৫.৮ লক্ষ পুরুষকে মেরে ফেলা হয়েছে এবং কতজন দুর্ভিক্ষ, রোগ ও আগুনের কারণে মারা গিয়েছিল, তার সংখ্যা অজানা। যিহূদা এলাকা প্রায় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, যেমন যিহূদীদের যুদ্ধের আগে সাবধাণবাণী হিসাবে বলা হয়েছিল। শলোমনের কবর, যা যিহূদীরা সম্মানের সঙ্গে দেখত, তা নিজে নিজে পতন হয়েছিল এবং যিহূদীদের শহরগুলিতে নেকড়ে বাঘ ও হায়না আর্তনাদ করে ঢুকল।’

নতুন নিয়ম: ঐতিহাসিক প্রমাণ - প্রেরিত পুস্তক

রাজা আরিতা           King Aretas
  • প্রেরিত ৯:২৩-২৫ পদে উল্লেখ আছে যে দামেষ্কের যিহূদীরা পৌলকে মেরে ফেলতে চেষ্টা করে কিন্তু শিষ্যেরা তাকে শহরের দেওয়ালের উপর দিয়ে একটি ঝুঁড়িতে নামাল।
  • ২ করি ১১:৩২ পদে একটি ঘটনার উল্লেখ আছে: রাজা আরিতার অধীনে দামেষ্কের শাসনকর্তা ফটককে পাহারা দেওয়ার আদেশ দিলেও পৌল শিষ্যদের সাহায্যে দেওয়ালের জানালা দিয়ে ঝুঁড়ির সাহায্যে নেমে পালিয়ে যান।
  • রাজা আরিতা-৪ ফিলোপাত্রিস্ (৯ খ্রিঃপূঃ – ৪০ খ্রিঃ) ছিলেন রোমীয়দের অধীনে নাবাতীয়দের রাজা।
  • নাবাতীয়া পরে রোম রাজ্যের একটি প্রদেশ হয়ে যায়। তার কনে হেরোদ আন্তিপাসকে বিয়ে করে, যিনি তাকে পরে তার ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়াকে বিয়ে করার জন্য তালাক করে দেন।
  • যোহন বাপ্তিস্মদাতা এর বিরুদ্ধে আপত্তি উঠান, ফলে তাকে জেলে বন্দী করা হয় এবং পরে মেরে ফেলা হয় (মার্ক ৬:২৭)।
  • হেরোদ আন্তিপাস তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অপমানের কারণে রাজা আরিতা ৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।
  • দামেষ্ক আগে সিরিয়ার রাজধানী ছিল, কিন্তু সেই সময় শহরটি নাবাতীয়ার একটি অঞ্চল হিসাবে রাজা আরিতার একজন শাসনকর্তা দিয়ে পরিচালিত হত।
  • হতে পারে সম্রাট কালিগুলা (৩৭ – ৪১ খ্রিঃ) আরিতাকে দামেষ্ক শহরের উপরে কর্তৃত্ব দিলেন। নাবাতীয়াকেও ‘আরব দেশ’ও বলা হত।
  • পৌল তার মন পরিবর্তনের পরে সেখানে যান (গালা ১:১৭)। হতে পারে তার প্রচারের কারণে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল।
  • ডানের ছবি: আরিতা-৪এর ব্রোঞ্জের মুদ্রা, যাতে লেখা আছে: ‘আরিতা, নাবাতীয়ার রাজা’
হেরোদ আগ্রিপ্প ১-এর মৃত্যু                  Death of King Herod Agrippa I
  • হেরোদ আগ্রিপ্প ১০ খ্রিষ্টপূর্বে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ৪১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে যিহূদা, গালীল, বাতানীয়া, পেরেয়া ও ত্রাখনিতীয়ার উপরে রাজত্ব করেন।
  • প্রেরিত ১২:২০-২৩ পদে লূক তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর বর্ণনা করে।
  • প্রায় একই বর্ণনা যিহূদী ইতিহাসবিদ যোষিফাসও করেন: ‘হেরোদ আগ্রিপ্প কৈসরিয়া শহরে সম্রাটের উদ্দেশ্যে একটি বড় অনুষ্ঠান চালান। তিনি উঁচু শ্রেণীর লোক ও প্রদেশের অফিসারদের নিয়ন্ত্রন দেন। অনুষ্ঠানের ২য় দিনে তিনি একটি রূপালী পোষাক পড়ে ঠিক সূর্য উঠার সময়ে শ্রোতাদের সামনে উপস্থিত হন। সূর্যের আলোতে তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে শ্রোতারা ভয় পায় ও তার তোষামোদকারীরা তাকে দেবতার মত ডাকতে শুরু করে: ‘আপনি আমাদের দয়া দান করুন! এই পর্যন্ত আমরা আপনাকে মানুষ হিসাবে সম্মান দিতাম, কিন্তু এখন আমরা বুঝতে পেরেছি যে আপনি মরণশীল মানুষের চেয়েও বেশি।’ তিনি তাদের কথা প্রতিরোধ না করার কারণে দেবতারা তাকে শাস্তি হিসাবে পেটের যন্ত্রণা দিয়ে পাঁচ দিনের মধ্যে মেরে ফেলে।’
  • ডানের ছবি: হেরোদ আগ্রিপ্প ১ এবং তাকে দিয়ে ছাপানো মুদ্রা।
ক্লৌদিয়ের সময়ে দুর্ভিক্ষ                                Famine during the days of Claudius
  • প্রেরিত ১১:২৭-২৮ পদে ক্লৌদিয় সম্রাটের রাজত্বে (৪১-৫৪ খ্রিঃ) নবী আগাব একটি বড় দুর্ভিক্ষের ভবিষ্যদ্বাণী দেন।
  • যিহূদী ইতিহাসবিদ যোষিফাস লিখেন যে আদিয়াবেনের (Adiabene, টাইগ্রিস নদীর পূর্বে) যিহূদী রানীমা হেলেনা মিসর থেকে গম ও সাইপ্রাস থেকে ডুমুর কিনে, সেগুলি যিরূশালেমে বিতরণ করেন।
  • বার্ণবা ও পৌল আন্তিয়খিয়া মণ্ডলীর একটি দান যিরূশালেমে নিয়ে আসেন (প্রেরিত ১১:২৯-৩০)।
  • যোষিফাস বলেন যে দুর্ভিক্ষ ঘটল যিহূদা শাসনকর্তা ক্রীষ্প ফাদ্ (Crispus Fadus, ৪৪-৪৬ খ্রিঃ) ও তিবিরিয় জুলিয়াস আলেকজান্ডারের সময়ে (৪৬-৪৮ খ্রিঃ), তাই ৪৬ খ্রিষ্টাব্দে
লূস্ত্রা ও দর্বী লুকায়নিয়ার শহর, কিন্তু ইকনিয় নয়       Lystra & Derbe in Lycaonia, though not Iconium
  • লূক প্রেরিত ১৪:৬ পদে বলেন যে ‘লুস্ত্রা ও দর্বী শহরগুলি লুকায়নিয়া এলাকার শহর’, কিন্তু ইকনিয় সম্বন্ধে তা বলেন নি।
  • রোমীয় লেখক কিকেরো (Cicero) ইকনিয় শহরকে লুকায়নিয়ার শহর বলেছেন বলে কেউ কেউ লূকের লেখা নিয়ে আপত্তি উঠাল।
  • ১৯১০ সালে বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ উইলিয়াম রাম্সী একটি স্মৃতিস্তম্ভ আবিষ্কার করেন যাতে ইকনিয় ফ্রুগিয়ার শহর বলা হয়, লুকায়নিয়ার শহর নয়।
  • পরে এই ধরণের আরো প্রমাণ পাওয়া গেছে।
  • ডানের ছবি: গালাতীয়া এলাকার মানচিত্র।
ফিলিপী শহর                Philippi
  • প্রেরিত ১৬:১২ পদে লূক ফিলিপীকে ম্যাসিডোনিয়ার একটি ‘এলাকা’ (গ্রীক ‘meris’) বলেন।
  • আপত্তি উঠানো হয়েছিল যে রোম রাজ্যে এলাকাকে বুঝালে কখনও ‘meris’ শব্দ ব্যবহৃত হত না।
  • পরে আবিষ্কৃত লেখায় পাওয়া গেছে যে রোম রাজ্যের এলাকা বুঝালে ‘meris’ শব্দ ঠিকই ব্যবহার করা হত। বামের ছবিগুলো: ফিলিপীর ধ্বংসাবশেষ।
ভীয়া ‘এগ্নাটিয়া’                 Via Egnatia
  • যদিও এই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক এই নামে বাইবেলে উল্লেখ নেই, তবুও পৌলের যাত্রার বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে তিনি ভীয়া এগ্নাটিয়া ব্যবহার করেন, যেমন তার ২য় প্রচার যাত্রায় নিয়াপলি থেকে থিষলনীকীয়া পর্যন্ত (৫০-৫২ খ্রিঃ, প্রেরিত ১৬:১১-১৭:১) এবং তার ম্যাসিডোনিয়া হয়ে করিন্থে যাওয়ার যাত্রায় (৫৫-৫৬ খ্রিঃ, প্রেরিত ২০:১-৬)।
  • ডানের ছবি: ভীয়া ‘এগ্রাটিয়া’র মানচিত্র।
থিষলনীকীয়া শহরের নগরাধ্যক্ষেরা                 Politarchs
  • কেউ কেউ লূকের লেখার সঠিকতা নিয়ে আপত্তি উঠায় কারণ প্রেরিত ১৭:৬ পদে যখন পৌলকে শহরের শাসকদের সামনে আনা হয়, লূক শাসকদের শহরের নগরাধ্যক্ষেরা বলেন (গ্রীক: ‘politarch’)।
  • কেউ কেউ দাবি করে যে রোম রাজ্যে এই টাইটেলের কোনো অফিসার ছিল না।
  • কিন্তু পরে বিভিন্ন শহরে ৩৫টি খোদাই করা লেখা আবিষ্কৃত হয়েছে যেখানে শহরের স্থানীয় শাসকদের ঠিক এই টাইটেল দেওয়া হল: ‘politarch’, তার মধ্যে ১৯টা থিষলনীকীয় শহরে।
  • উপরের ছবি: ভীয়া এগ্নাটিয়ার একটি তোরণে খোদাই করা লেখা। বড় করে সেই অংশ যেখানে ‘politarch’ উল্লিখিত।
এথেন্সে আয়েরপাগ                    Mars Hill or Aeropag
  • প্রেরিত ১৭:২২ পদ উল্লেখ করে যে পৌল এথেন্সের আয়েরপাগে প্রচার করেন।
  • আয়েরপাগ হল শহরের মাঝে প্রধান মন্দিরগুলির (Acropolis) পাশের একটি জায়গা।
  • হতেও পারে আগের যুগে এই টিলায় দালানও ছিল (আজকে কিছু নেই) যেখানে শহরের দার্শনিকেরা একত্রিত হত ও আলোচনা করত।
  • মাঝের ছবি: আয়েরপাগ টিলা (আক্রোপলিস্ থেকে দেখা)। বামের ছবি: এথেন্সে আক্রোপলিস্, প্রধান মন্দির: পার্থেনন। 
করিন্থ শহরে যিহূদীদের সমাজ গৃহ ও মাংস বাজার                 Synagogue in Corinth
  • করিন্থে একটি ভাঙ্গা খোদাই করা লেখা পাওয়া গেছে যা বলে ‘ইব্রীয়দের সমাজ গৃহ’প্রেরিত ১৮:৪-৭ পদে লূক তা উল্লেখ করেন।
  • আর একটি খোদাই করা লেখা পাওয়া গেছে যা বলে ‘মাংস বাজার’। পৌল মাংসের বাজার নিয়ে কথা বলেন ১ করি ১০:২৫ পদে।
  • বামের ছবি: করিন্থ শহরের ধ্বংসাবশেষ, পিছনে আক্রোকরিন্থ (মন্দিরের পাহার)।
গাল্লিয়ের সামনে পৌলের বিচার                          Paul’s Trial before Gallio in Corinth
  • প্রেরিত ১৮:১-২ পদে লেখা আছে যে পৌল যখন করিন্থে আসেন, তিনি যিহূদী আকিলা ও তার স্ত্রী প্রিষ্কিল্লার সাথে বাস কাজ করেন যারা ‘কিছু দিন আগে… ইটালী থেকে করিন্থে এসেছিলেন’। তারা ক্লৌদিয়ের আদেশের কারণে এসেছেন, যা রোমীয় ইতিহাসবিদ সুয়েটনিয়াস অনুসারে ৪৯ খ্রিষ্টাব্দে দেওয়া হয়েছিল। তাই পৌলের করিন্থে আসার তারিখ বেশ নির্দিষ্ট বলা যায়: ৫০ খ্রিষ্টাব্দ
  • পৌল তার ২য় প্রচার যাত্রায় দের বছর করিন্থে কাটান (৫০-৫১ খ্রিঃ, প্রেরিত ১৮:১১)। এই সময়ের শেষদিকে (৫১ খ্রিঃ মে মাসে) করিন্থে আখায়ার নতুন শাসনকর্তা ক্ষমতায় আসেন, গাল্লিয়, যার ভাই ছিলেন বিখ্যাত স্তোয়িক (stoic) দার্শনিক সেনেকা (Seneca), যিনি সম্রাট নীরোর শিক্ষক ও পরামর্শদাতাও ছিলেন। সেনেকা জন্ম নেন ৩ খ্রিপূর্বে এবং তিনি ৬৫ খ্রিষ্টাবদে মারা যান।
  • গাল্লিয় শুধুমাত্র এক বছর আখায়ার শাসনকর্তা ছিলেন, ৫১ খ্রিষ্টাব্দের মে মাস থেকে ৫২ খ্রিষ্টাব্দে পর্যন্ত, যখন তিনি একটি জ্বরে আত্রান্ত হন ও চলে যান। তাই লূকের লেখা ও রোমীয় ইতিহাস থেকে জানা তারিখগুলি সুন্দরভাবে মিলে।
  • যখন গাল্লিয় শাসনকর্তা হয়ে যান যিহূদীরা পৌলের উপরে একটি মামলা চাপিয়ে দিয়ে তার বিরুদ্ধে একটি রায় ঘটানোর চেষ্টা করে (প্রেরিত ১৮:১২) এবং তাকে ‘আদালতে আনল’ (গ্রীক অনুবাদে: ‘bema’এর সামনে আনলেন। ‘bema’ গ্রীক ভাষায় একটি মঞ্চ বুঝায় যা বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হত, যেমন: ‘bema’র উপরে বক্তা দাঁড়াত, সরকারী ঘোষণা পড়া হত এবং অফিসার বা বিচারক বসত। গাল্লিয় পৌলের কোনো অন্যায় বা দোষ খুঁজে পাচ্ছেন না (প্রেরিত ১৮:১৪)। তিনি যিহূদীদের চাপ অগ্রাহ্য করে পৌলের রায় দিতে প্রত্যাখান করেন এবং যিহূদীদের আদালত থেকে (‘bema’এর সামনে থেকে) তাড়ান (প্রেরিত ১৮:১৬)।
  • পৌল ১০ বছর পরে রোমে সম্রাটের সামনে যখন দাঁড়ান ও (হতেও পারে) মুক্তি পান, হয়তো গাল্লিয় বা সেনেকা নীরোকে আগের খালাসের কথা বলেছিলেন।
  • লূক যেমন উল্লেখ করেন যে গাল্লিয় যে আখায়ার শাসনকর্তা ছিলেন তার প্রমাণে গ্রীসের দেল্ফী শহরে একটি খোদাই করা লেখা পাওয়া গেছে, যা বলে: ‘লুকিয়াস ইউনিয়াস গাল্লিয়, আমার বন্ধু, আখায়ার শাসনকর্তা’। দেল্ফী হল করিন্থের কাছাকাছি শহর ও গাল্লিয়ের বাসস্থান। লেখার তারিখ হল ৫২ খ্রিষ্টাব্দ। বামের ছবি সেই খোদাই করা লেখা।
  • আরো একটি সরকারী চিঠির ৪টি কপি পাওয়া গেল যাতে গাল্লিয়ের নাম, সম্রাটের নাম ও তাদের রাজত্বের তারিখ উল্লিখিত।
করিন্থ শহরের ইরাস্ত                         Erastus of Corinth
  • যখন পৌল করিন্থ শহর থেকে রোমীয় চিঠি লিখেন, তিনি করিন্থ উপস্থিত একজন ইরাস্ত উল্লেখ করেন, যিনি রোমীয়দের শুভেচ্ছা পাঠান (প্রেরিত ১৬:২৩)।
  • ইরাস্ত প্রচলিত নাম ছিল না। পৌল ইরাস্ত সম্বন্ধে বলেন যে, তিনি ‘এই শহরের টাকা-পয়সা হিসাব রাখবার ভার যাঁর উপরে আছে…’। গ্রীকে ব্যবহৃত কথা হল ‘oikonomos’, বা হিসাব রক্ষক, ল্যাটিন ভাষায় ‘aedile’ (যিনি শহরের পাব্লিক দালান দেখাশুনা করে।
  • করিন্থ শহরে একটি রাস্তায় পাথরে এই খোদাই করা লেখা পাওয়া গেছে: ‘aedile’ পদ পাওয়ার কৃতজ্ঞতায় ইরাস্ত এই রাস্তা নিজের খরচ করে বানিয়েছেন’। রাস্তা তৈরির তারিখ ৫০ খ্রিষ্টাব্দ। তাই সম্ভাবনা বেশি যে রোমীয় পুস্তকে উল্লিখিত সেই ইরাস্ত থেকে খোদাই করা লেখা পাওয়া গেছে। উপরের ছবি।
ইফিষ শহরে থিয়েটারে আন্দোলন                     Riot in the theater in Ephesus
  • প্রেরিত ১৯:২১-৪১ পদে লূক বর্ণনা করেন কিভাবে সুসমাচারের প্রভাবের কারণে ইফিষ শহরে একটি বিরাট আন্দোলন সৃষ্টি হয়।
  • লূক প্রেরিত ১৯:২৯ পদে বলেন যে শহরের সবাই থিয়েটারে উপস্থিত হলেন, তাকে তিনি ‘সভা’ বলেন, গ্রীকে ‘ecclesia’, যার মানে ‘সরকারী সভা’।
  • ইফিষের অন্যান্য লেখায় বা নথিতে পাওয়া গেল যে আসলে সরকারী সভার জন্য থিয়েটার ব্যবহার করা হত।
  • থিয়েটার ছিল বিশাল বড়, ২৫’০০০ লোক বসতে পারত। তার ধ্বংসাবশেষ আজ পর্যন্ত দেখা যায় (ডানের ছবি)।
ইফিষ শহরে শাসনকর্তারা                        Proconsuls in Ephesus
  • একই ঘটনায় আর একটি খেয়াল করার বিষয় পাওয়া যায়। লূক বলেন যে ভীর এত উত্তেজিত হল যে শুধুমাত্র নগরের সম্পাদক আন্দোলন ঠাণ্ডা করতে পারলেন (প্রেরিত ১৯:৩৫)।
  • তিনি বলেন ‘অভিযোগকারীদের যদি কোন কথা আছে, আদালত খোলা আছে, শাসনকার্তারাও আছে … তাদের সামনে অভিযোগ করুক’ (প্রেরিত ১৯:৩৮)।
  • এইটা অবাক লাগার বিষয় কারণ শাসনকর্তা বহুবচনে উল্লেখ, কিন্তু রোম রাজ্যে তা ছিল শুধুমাত্র একজনের অফিস।
  • কিন্তু রোমীয় ইতিহাস লেখায়ও উল্লেখ আছে যে ইফিষ শহরে শুধুমাত্র অল্পক্ষণের জন্য (৫৪খ্রিঃ) দুইজনই শাসনকর্তা ছিল: যখন দুইজন ব্যক্তি ষড়যন্ত্র করে আগের শাসনকর্তা সিলানুসকে (Silanus) খুন করে একসাথে ক্ষমতা ধরে। তাই আমরা লূকের সঠিকতা বুঝতে পারি (কথায় ও তারিখে) এবং এই আন্দোলনের নির্দিষ্ট তারিখও জানতে পারি, ৫৪খ্রিষ্টাব্দ
  • পৌলের ৩য় যাত্রায়, অর্থাৎ ৫৩-৫৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই ঘটনা ঠিকই পড়ে।

যিরূশালেমে একজন অযিহূদীকে উপাসনা-ঘরে আনার কারণে আন্দোলন               Riot in Jerusalem over Paul
  • প্রেরিত ২১:২৮ পদে লূক উল্লেখ করেন কিভাবে যিহূদীরা পৌলের বিরুদ্ধে ৫৭ খ্রিষ্টাব্দে আন্দোলন শুরু করে কারণ তারা মনে করে যে, পৌল একজন অযিহূদী উপসনা-ঘরে নিয়ে এসেছেন।
  • উপসনা-ঘরের চারিদিকে কয়েকটি উঠান ছিল, যে উঠানে অযিহূদীদের ঢোকা নিষেধ, সেই উঠানের দেওয়ালে একটি সাবধাণবাণী থাকত।
  • এই খোদাই করা লেখা আবিষ্কার হয়েছে যাতে উভয় গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষায় এই কথা লেখা থাকে: ‘কোনো অযিহূদীকে উঠানে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয় নি।  কিন্তু যদি কেউ তা করে তবে সে তার নিজের মৃত্যুর জন্য দায়ী হবে’
  • পৌল ইফিষীয় ২:১৪ পদে এই দেওয়ালটি রূপকভাবে উল্লেখ করেন: ‘এইভাবেই যে শত্রুতার ভাব এই দু’য়ের মধ‌্যে (যিহূদী -অযিহূদীর মধ্যে) দেওয়ালের মত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তা তিনি (যীশু) ভেঙ্গে ফেলেছেন’
শাসনকর্তা ফীলিক্স ও ফীষ্ট                Roman Proconsuls Felix & Festus
  • প্রেরিত ২৩:২৮ পদে যিহূদায় রোমীয় শাসনকর্তা ফীলিক্স এবং প্রেরিত ২৪:২৭ পদে রোমীয় শাসনকর্তা ফীষ্টকে উল্লেখ করা হয়েছে।
  • রোমীয় ইতিহাস বলে যে ফীলিক্সের পরিবর্তে ৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ফীষ্টকে পাঠানো হয়। কারণ ছিল কৈসরিয়ায় যিহূদীদের একটি বিদ্রোহ শুরু, যাকে ফীলিক্স খুব নিষ্ঠুরভাবে বন্ধ করে এবং অনেক সাধারণ যিহূদীদের, এমন কি অনেক যিহূদী নেতাদেরও মেরে ফেলেন।
  • এই খবর পেয়ে নীরো তাকে রোমে ফিরতে বলে ও পরিবর্তে ফীষ্টকে পাঠান।
  • ডানের ছবি: ফীলিক্স ও ফীষ্ট দিয়ে চাপানো মুদ্রা।
মাল্টা দ্বীপের প্রধান লোক পুব্লিয়                               Publius, the chief man in Malta
  • প্রেরিত ২৮:৭ পদে লূক মাল্টা দ্বীপে পুব্লিয়কে ‘দ্বীপের প্রধান লোক’ বলেন।
  • কিছু খোদাই করা লেখা আবিষ্কার হয়েছে যাতে পুব্লিয়কে উল্লেখ ও যেখানে তার জন্য সেই একই টাইটেল ‘প্রধান লোক’ ব্যবহার করা হয়েছে।
যিরূশালেমের ধ্বংসের ভাববাণী ও পূর্ণতা
  • মথি ২৪:১-২ এবং মার্ক ১৩:১-২  পদে যীশু একটি ভাববাণী দেন যে শীঘ্রই যিরূশালেম ও মন্দির সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হবে। এই ভাববাণী পূর্ণ হয় যখন ৭০ খ্রিষ্টাব্দে যিহূদী-রোমীয় যুদ্ধের শেষে সেনাপ্রধান তীত (সম্রাট ভেস্পাসিয়ানের পুত্র) যিরূশালেমকে ঘেড়াও, দখল ও লূটপাত করে ফেলেন এবং সম্পূর্ণ পুড়িয়ে ধ্বংস করেন।
  • রোম শহরে তীতের এই জয়ের উদ্দেশ্য একটি স্মৃতি তোরণে তৈরি হয়েছিল। তোরণে নানা খোদাই করা ছবি আছে, এর মধ্যে বাম পাশের ছবিটা, যাতে দেখা যায় কিভাবে রোমীয় সেনারা মন্দিরের আসবাব-পত্র লূট করে নিয়ে যায়। সবচেয়ে চোখে পড়ার মত হল মন্দিরের বাতিদান।
কৈসরিয়া মারিটিমা শহরে খোদাই করা লেখা                      Scripture Inscription in Caesarea Maritima
  • ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে অব্রাহাম নামে একজন যিহূদী প্রত্নতত্ত্ববিদ নেগেভ মরুভূমিতে একটি বিচিত্র নকশা (mosaic) আবিষ্কার করেন যাতে একটি নতুন নিয়মের বাইবেল পদ লেখা আছে।
  • ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে প্রত্নতত্ত্ববিদ যোহন ম্যাকরে যিরূশালেমের নৌবন্দর কৈসরিয়া মারিটিমা খনন করে একটি বড় বিচিত্র নকশা আবিষ্কার করেন যাতে গ্রীক ভাষায় নতুন নিয়মের রোমীয় ১৩:৩ পদ লেখা আছে। উভয় বিচিত্র নকশাগুলি পাওয়া যায় একটি বড় সর্বজনীন দালানে যা ৫ম শতাব্দীতে তৈরি হয়েছিল।
  • বিচিত্র নকশাগুলিতে দেখানো শব্দগুলি হুবহু আমাদের বর্তমান বাইবেলের সাথে মিল রয়েছে। বিচিত্র নকশাগুলি (যেমন আরো হাজার হাজার অন্যান্য পুরাতন দলীল) প্রমাণ করে যে, বাইবেলের লেখা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পরিবর্তিত হয় নি।

ব্যবহৃত উৎসগুলি

ওয়েবসাইট

  • www.biblearcheology.org .
  • www.4truth.net
  • www.biblicalarcheology.org
  • www.bibleandarcheology.blogspot.com
  • www.christiananswers.org
  • www.interbible.org
  • www.bible.ca
  • www.christianevidences.org
  • www.visualbilblealive.com
  • www.josh.org

 

বই

  • Josh McDowell, Evidence that demands a verdict. Volume I and II
  • Randall Price’s, The Stones Cry Out: What Archaeology Reveals About the Truth of the Bible (Harvest House, 1997)
  • Kenneth A. Kitchen, On the Reliability of the Old Testament,(Grand Rapids: Eerdmans, 2003), 167.
  • Jeffery Sheler, Is The Bible True?
  • Millar Burrows, What Mean These Stones? 63.
  • “The Antediluvian Patriarchs and the Sumerian King List,” by Raul Lopez, in CEN Technical Journal 12 (3) 1998
  • Ian Wilson, The Bible Is History (Washington, DC: Regnery, 1999),
  • Charles Krahmalkov, “Exodus Itinerary Confirmed by Egyptian Evidence,” Biblical Archaeological Review, Sep/Oct 1994, 58.
  • Michael D. Lemonick, “Are the Bible’s Stories True?”  Time, Dec. 18, 1995
  • Francis Hitching, The Mysterious World: An Atlas of the Unexplained (New York: Holt, Rinehart and Winston, 1979),
  • Colin J. Humphreys, The Miracles of Exodus: (San Francisco: Harper San Francisco, 2003)