প্রারম্ভিকা: যিহোশূয়ের সময়ে ভালভাবে শুরু
  • কনান দেশ দখলের মূল অংশ ইতিমধ্যে ঘটেছে (যিহোশূয় ১১:২৩), অর্থাৎ যিহোশূয়ের নেতৃত্বে ইস্রায়েল যুদ্ধ জয় করে দেশটি দখল করেছে এবং জমি ভাগও করেছে। যিহোশূয় জীবিতথাকাকালীন অব্স্থায় এবং তার পরে নেতাদের জীবিতথাকাকালীন অবস্থায় ই্স্রায়েল ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য ছিল। তারা দেশটি আরো নিজেদের অধিকারে আনার জন্য ঈশ্বরের দিক-নির্দেশনা চায় ও পালন করে এবং ইস্রায়েল গোষ্ঠিরা পরস্পর্কে সাহায্য করে ও দখল করতে থাকে।
  • শুরুতে ইস্রায়েলের সরকার বিকেন্দ্রিক, যেমন ঈশ্বর দ্বিতীয় বিবরণে ১ অধ্যায়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন: গোষ্ঠি থেকে নির্বাচিত স্থানীয় নেতারা গোষ্ঠিদের উপর রাজত্ব করে। তারা সদাপ্রভুর আরাধনা ও উৎসর্গ দানের জন্য সবাই রীতিমত এক হয়ে আবাস-তাম্বুর কাছে মিলিত হয়। লেবীয়রা, যারা ৪৮ লেবীয় শহরে বিভিন্ন গোষ্ঠিদের মধ্যে ছিটিয়ে বাস করে, তারা ঈশ্বরের নির্দেশনা এবং স্বাস্থ্যের সেবা যোগান করে। যখন ইস্রায়েল জাতি একটি বড় হুমকির সম্মুখীন হয়, শুধুমাত্র তখনই একজন জাতীয় নেতার প্রয়োজন বলে নিযুক্ত হবে।
  • এই পদ্ধতি অনুসারে রাজনৈতিক ক্ষমতা বেশিরভাগ সাধারণ লোকদের হাতে থাকে। প্রক্যেবটি গোষ্ঠি বা শহর নিজের জন্য নেতা নিযুক্ত করে। লোকেরা নিজেই ঠিক করে কে তাদের উপরে রাজত্ব করে। তারা নিজেদেরকে পরিচালনা করার জন্য নিজেই দায়িত্ব নেয়। তারা মোশির আইন-কানুন নিজের পরিস্থিতির জন্য প্রয়োগ করে। এছাড়া তারা নিজেদেরর জন্য নির্দিষ্ট আইন পাশ করতে পারে এবং সাথে আইন ভাঙ্গার ফলাফল ঠিক করে। তারা একসাথে বাস করে কিনা, তা তাদেরই সিদ্ধান্ত। তারা আইন কিভাবে বুঝবে ও প্রয়োগ করবে, এই বিষয়ে তারা নিজেই স্বাধীনতা নেয় (যেমন পরবর্তীতে বিভিন্ন ঘটনাতে দেখা যায়)।
ইস্রায়েল খারাপের দিকে যাওয়ার কারণ

বিচার ২:১০-১৫ “যিহোশূয়ের সময়কার ইস্রায়েলীয়েরা মারা গিয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে চলে যাবার পর তাদের জায়গায় আসল তাদের বংশধরেরা। এরা সদাপ্রভুকে জানত না এবং সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের জন্য যা করেছিলেন তা-ও জানত না। ১১ সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তারা তা-ই করত। তারা বাল দেবতাদের পূজা করত। ১২ তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি তাদের মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছিলেন তাঁকে তারা বার বার ত্যাগ করত। তারা তাদের চারপাশের জাতিদের বিভিন্ন দেব-দেবতার দিকে ঝুঁকে পড়ত এবং সেগুলোর পূজা করত, আর তাতে তারা সদাপ্রভুর ক্রোধ জাগিয়ে তুলত। ১৩ এইভাবে তারা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করে বাল দেবতা ও অষ্টারোৎ দেবীর পূজা করত। ১৪ সেইজন্য সদাপ্রভু ক্রোধে লুটকারীদের হাতে ইস্রায়েলীয়দের তুলে দিতেন। তারা তাদের জিনিসপত্র লুট করে নিত। তাদের চারপাশের শত্রুদের হাতে তিনি তাদের তুলে দিতেন, কাজেই তারা শত্রুদের বিরুদ্ধে আর দাঁড়াতে পারত না। ১৫ ইস্রায়েলীয়েরা যখন যুদ্ধে যেত তখন সদাপ্রভু শপথ করে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সেই অনুসারে তাঁর হাত তাদের অমংগলের জন্য তাদের বিরুদ্ধে থাকত, তাই তারা মহা বিপদের মধ্যে ছিল।”

  • ঈশ্বর অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেন, ইস্রায়েলের বর্তমান সমস্যাগুলোর কারণ কি: ঈশ্বরের মনোন্বিত জাতি তাঁর প্রতি অবাধ্য হয়েছে। শয়তান তাদেরকে প্রলোভনে ফেলেছে, প্রতিবেশি জাতিগুলো খুব মন্দ বা চারিদিকে সাম্রাজ্যগুলো খুব শক্তিশালী, এগুলো যে ইস্রায়েলের আসল সমস্যা, এমন নয়।
  • ঈশ্বর মাত্র এক বিষয়ে গুরুত্ব দেন: অবাধ্য হওয়া দ্বারা তাঁর জাতি নিজের উপর অভিশাপ নিয়ে আসছে, অর্থাৎ তাদের সিদ্ধান্তের ফলাফল তাদেরই ভোগ করতে হচ্ছে।
  • ঈশ্বর তাদেরকে নিজের সিদ্ধান্তের ফলাফলের মুখে পড়তে দেন। অবাধ্যতার ফলাফল হল পরাজয়, অর্থনৈতিক কষ্ট, লজ্জিত হওয়া ইত্যাদি। ঈশ্বর তাদেরকে এই ধরণের সমস্যায় পড়তে দেন এই আশায় যে, কষ্টে পড়লে তারা পুনরায় ঈশ্বরের দিকে ফিরে আসবে। ঈশ্বর যা বলেছেন, তা করেন, তিনি তাঁর দ্বারা স্থাপিত চুক্তি অনুসারেই আচরণ করেন (লেবীয় ২৬, দ্বিতীয় বিবরণ ২৮)।

ঈশ্বরের দয়া: তিনি বিচারক-উদ্ধারকর্তাদের উঠিয়ে দেন

বিচার ২:১৬-১৯ “তখন সদাপ্রভু তাদের মধ্যে শাসনকর্তা দাঁড় করাতেন। তাঁরা লুটকারীদের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করতেন, কি১৭ ন্তু তবুও ইস্রায়েলীয়েরা এই শাসনকর্তাদের কথায় কান দিত না। সদাপ্রভুর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে তারা দেব-দেবতাদের কাছে নিজেদের বিকিয়ে দিত এবং তাদের পূজা করত। তাদের পূর্বপুরুষেরা সদাপ্রভুর আদেশ পালন করে যে বাধ্যতার পথে চলতেন তারা সেই পথে না চলে অল্পকালের মধ্যেই সেই পথ থেকে সরে যেত। ১৮ সদাপ্রভু যখনই তাদের জন্য কোন শাসনকর্তা নিযুক্ত করতেন তখন তিনি তাঁর সংগে থাকতেন। সেই শাসনকর্তা যতদিন বেঁচে থাকতেন ততদিন পর্যন্ত সদাপ্রভু শত্রুদের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করতেন। অত্যাচারীদের হাতে যন্ত্রণা ও কষ্ট পেয়ে তারা যখন কান্নাকাটি করত তখন তাদের উপর সদাপ্রভুর দয়া হত। ১৯ কিন্তু সেই শাসনকর্তা মারা গেলে লোকেরা আবার দেব-দেবতার দিকে ঝুঁকে পড়ত এবং তাদের সেবা ও পূজা করে তাদের পূর্বপুরুষদের চেয়ে আরও জঘন্য পথে ফিরে যেত। তারা কিছুতেই তাদের মন্দ অভ্যাস আর একগুঁয়েমির পথ ছাড়ত না।”

  • যতবার ইস্রায়েল দেবতাপূজায় ঝুঁকে পড়ে নিজেদেরকে ক্ষতি করতে শুরু করে, ততবার ঈশ্বর তাদেরতে একটি শত্রুর হাতে পড়তে দেন (রাজনৈতিক ক্ষেত্রে খারাপ ফলাফল)। সংকটে পড়ার সময়ে ইস্রায়েলকে জাতি হিসাবে এক হতে হবে, তাদের ঈশ্বর দ্বারা নিযুক্ত নেতারকে সমর্থন করতে হবে এবং এভাবে সংকট অতিক্রম করতে হবে। ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা দিয়েছেন যে, তিনি প্রয়োজনের সময়ে বিশ্বস্তভাবে তাদের জন্য একজন বিচারক-উদ্ধারকর্তাকে উঠিয়ে দেবেন – কিন্তু শুধুমাত্র প্রয়োজনের সময়ে।
  •  শক্তিশালী একজন নেতা যে প্রয়োজন, তা ভাল বিষয় নয়। বরং তা দেখায় যে, জাতির অবস্থা বেশি ভাল নয়, তারা খারাপ পথে গিয়ে নিজেদেরকে দুর্বর করে ফেলেছে।
  •  বিচারকর্ত্তৃগণ পুস্তকে ঈশ্বর দ্বারা নিযুক্ত বিচারকদের জীবন থেকে আমরা সরকারের জন্য ঈশ্বরের নীতি সম্বন্ধে কি শিখতে পারি? নীচে দেওয়া অধ্যয়ন লক্ষ্য করুন:
অৎনীয়েল               যিহূদা গোষ্ঠি                      অত্যাচারী: অরাম

বিচার ৩:৭-৯ “ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতে লাগল। তারা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলে গিয়ে বাল দেবতাদের আর আশেরা দেবীদের পূজা করতে লাগল। ৮ সেইজন্য ইস্রায়েলের প্রতি সদাপ্র্রভুর ক্রোধ জ্বলে উঠল এবং তিনি অরাম-নহরয়িমের রাজা কূশন-রিশিয়াথয়িমের হাতে তাদের তুলে দিলেন। তারা আট বছর তাঁর অধীনে রইল। ৯ কিন্তু তারা সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করলে পর তিনি তাদের উদ্ধার করবার জন্য একজন উদ্ধারকর্তা দাঁড় করালেন। তিনি হলেন কনষের বংশধর কালেবের ছোট ভাই অৎনীয়েল।”

  • ইস্রাযেল  ৮ বছরের ধরে অত্যাচার ও বিপদের মুখে পড়ে। শুধুমাত্র এত দিন কষ্ট পাওয়ার পর তারা অবশেষে প্রভুর কাছে কান্না করে।
  • ঈশ্বর তাদের জন্য যে নেতাকে উঠিয়ে দেন, তিনি ভাল পরিবারের ছেলে। তার কাকা হলেন কালেব, সেই কালেব যিনি যিহোশূয়ের সাথে গুপ্তচর হয়ে কনান দেশের উপযুক্ত বর্ণনা নিয়ে ফিরে এসেছেন। কালেব বিশ্বাস রেখেছিলেন যে, ঈশ্বর ইস্রায়েলকে প্রতিজ্ঞাত দেশ দিতে সক্ষম। কালেবের কন্যা অক্‌ষা হলেন অৎনীয়েলের স্ত্রী।
  • ঈশ্বরের আত্মা ওৎনিয়েলের উপরে এসে তিনি ইস্রায়েলীয় সৈন্য অরামীয় রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরিচালনা করতে এবং শত্রুর উপর জয়লাভ করতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে ইস্রায়েল জাতি ৪০ বছর ধরে শান্তিতে বাস করে।
এহূদ                        বিন্যামিন গোষ্ঠি                 অত্যাচারী মোয়াব, অম্মোন, অমালেক

বিচার ৩:১২-১৫ ”পরে সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ ইস্রায়েলীয়েরা আবার তা-ই করতে আরম্ভ করল। কাজেই সদাপ্রভু মোয়াবের রাজা ইগ্লোনকে ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে শক্তিশালী করে তুললেন। ১৩ অম্মোনীয় ও অমালেকীয়দের সংগে নিয়ে ইগ্লোন ইস্রায়েলীয়দের আক্রমণ করলেন এবং খেজুর-শহরটা অধিকার করে নিলেন। ১৪ ইস্রায়েলীয়েরা আঠারো বছর মোয়াবের রাজা ইগ্লোনের অধীনে রইল। ১৫ এর পর ইস্রায়েলীয়েরা আবার সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করতে লাগল, আর তিনি তাদের জন্য এহূদ নামে একজন উদ্ধারকর্তা দাঁড় করালেন। তিনি ছিলেন বিন্যামীন-গোষ্ঠীর গেরার ছেলে। তিনি বাঁ হাতে কাজ করতেন।”

  • এই বার শুধুমাত্র ১৮ বছর ধরে অত্যাচার ও বিপদের মুখে পড়ার পরেই ইস্রায়েল অবশেষে প্রভুর কাছে কান্না করে।
  • খেজুর-শহর (অর্থাৎ যিরীহো) হল বিন্যামীন গোষ্ঠির সবচেয়ে পূর্বের এলাকার একটি শহর। যিরীহো এই সময় মোয়াবীয়দের হাতে পড়ে গেছে, এর অর্থ এই যে, খুব সম্ভবত ইস্রায়েলৈর রূবেন ও গাদ গোষ্ঠির এলাকাও আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে মোয়াবীয়দের অধীনের পড়ে গেছে।
  • ঈশ্বর এহূদ নামে বিন্যামীন গোষ্ঠির একজন বিচারক-উদ্ধারকর্তাকে নিযুক্ত করেন। লক্ষণীয় বিষয় যে, ঈশ্বর উদ্ধারকর্তাকে পরাজিত গোষ্ঠি থেকে নয় (রূবেণ, গাদ) বরং ঝুঁকির মুখে বিন্যামিন গোষ্ঠি থেকে নিযুক্ত করেন।
  • এহূদ একটি কৌশল ব্যবহার করেন: তিনি কর দেবেন বলে মোয়াবীয় রাজার সামনে উপস্থিত হন কিন্তু পরবর্তীতে তাকে আক্রমণ করে মেরে ফেলেন। এহূদ জায়গাটি ত্যাগ করে পালিয়ে যান। তিনি বিন্যামিনের প্রতিবেশি গোষ্ঠি ইফ্রায়িম থেকে ১০’০০০ সেনা তুলে মোয়াবীয়দের শক্তিশালী সৈন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং জয় করেন।
  • দেখা যায় যে এই যুদ্ধে গোটা ইস্রায়েলের চেয়ে শুধুমাত্র একটি দু’টি গোষ্ঠি অংশ গ্রহণ করে। এছাড়া দেখা যায় যে, গোষ্ঠিদের মধ্যে সম্পর্ক ও যোগাযোগ ছিল এবং তারা বিশ্বস্ততার এবং পরস্পর্কে সমার্থন করার মনোভাবে কাজ কাজ করে।
শম্‌গর             গোষ্ঠির উল্লেখ ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌নেই             অত্যাচারী: পলেষ্টীয়েরা

বিচার ৩:৩১ “এহূদের পরে অনাতের ছেলে শম্‌গর শাসনকর্তা হলেন। তিনি গরু চরানো লাঠি দিয়ে পলেষ্টীয়দের ছ’শো লোককে মেরে ফেলেছিলেন। তিনিও ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করেছিলেন।”

  • সমগর সম্বন্ধে শুধুমাত্র এই একটি পদে তথ্য পাওয়া যায়। বিচারকর্ত্তৃগণের চক্র (অবাধ্যতা > কষ্টভোগ > অুততাপ > উদ্ধারকর্তা > বিশ্রাম) এখানে সম্পূর্ণভাবে বর্ণনা করা হয় নি, কিন্তু সম্ভবত তা একইভাবে চলছিল। বিচার ৫:৬ পদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “শমগরের সময়ে সদর রাস্তা ছেড়ে পথিকেরা ঘুর পথে চলত”, অর্থাৎ রাস্তা-ঘাটে নিরাপত্তা ছিল না। দেখা যায় যে ইস্রায়েলের মধ্যে সেই সময় আইন-শৃঙ্খলা ছিল না এবং পলেষ্টীয়রা রীতিমত সামরিক অভিচান চালিয়েছিল।
    • তার বাবার নাম ছিল অনাত (Anath), যা নপ্তলী এলাকার একটি জায়গার নামের সাথে মিল আছে। শম্‌গর যদি প্রকৃতপক্ষে নপ্তলী গোষ্ঠির লোক হন তবে এতে প্রমাণিত যে, ইস্রায়েলের বিভিন্ন গোষ্ঠিদের মধ্যে এই সময় এখনও একতা ছিল, অর্থাৎ নপ্তলীর একজন ব্যাক্তি এখানে দান ও যিহূদা গোষ্ঠির এলাকার বিরুদ্ধে পলেষ্টীয়দের আক্রমণটি থামিয়ে দেন।
দবোরা, বারাক                ইফ্রায়িম ও নপ্তালী গোষ্ঠি                      অত্যাচারী: হাৎসোর শহরের কনানীয়ৈরা

বিচার ৪:১-৩ “এহূদ মারা যাবার পরে ইস্রায়েলীয়েরা আবার সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতে লাগল। ২ কাজেই সদাপ্র্রভু যাবীন নামে একজন কনানীয় রাজার হাতে তাদের তুলে দিলেন। যাবীন হাৎসোরে থেকে রাজত্ব করতেন। তাঁর সেনাপতির নাম ছিল সীষরা। তিনি হরোশৎ-হগোয়িম নামে একটা জায়গায় বাস করতেন। ৩ যাবীনের ন’শো দলোহার রথ ছিল এবং তিনি বিশ বছর ধরে ইস্রায়েলীয়দের উপর ভীষণভাবে অত্যাচার করে আসছিলেন। সেইজন্য ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর কাছে সাহায্যের জন্য কান্নাকাটি করতে লাগল।”

  • এই বার শুধুমাত্র ২০ বছর ধরে অত্যাচারের মুখে পড়ার পরেই ইস্রায়েল অবশেষে প্রভুর কাছে কান্না করে। পরিষ্কারভাবে দেখা যায় যে, ঈশ্বরের প্রতি তাদের হৃদয় আরো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
  • হাৎসোর ছিল সেই শক্তিশালী উত্তরের শহর যা যিহোশূয় পরাজিত এবং ধ্বংস করে ফেলেছিলেন (যিহোশূয় ১১:১০)। শহরটি নপ্তলী গোষ্ঠির এলাকার মাঝখানে, এমন কি আশ্রয় শহর কেদল থেকেও দক্ষিণে অস্থিত। এইটা দেখায় যে কনানীয় রাজারা হাৎসোর আবারও দখল করেছে এবং সেখানে পুনরায় রাজত্ব করতে শুরু করেছেন। ইস্রায়েলের সীমানা বা তাদের অধিকারে জমি কমে আসছে: কনানীয়রা শুধুমাত্র প্রতিজ্ঞাত দেশে উপস্থিত, এমন নয়, তারা উল্টা ইস্রায়েলকে চাপিয়ে রেখে অত্যাচার করে। তাদের সেনাপ্রধান শিশেরার শহর হল হরোশৎ-হগোয়িম, যিষ্রিয়েল উপত্যকায় একটি শহর, সবূলূন ও মনঃশি গোষ্ঠির কিনারা (মনঃশির যকিয়াম (Jokneam) শহরের কাছাকাছি। লোহার রথ সবচেয়ে কার্যকারীভাবে সমতলতে ব্যবহার করা যায় এবং যিষ্রিয়েল ঠিক এই ধরণের সমতল, যা লোহার রথ দিয়ে সমহজে আক্রমণ করা যায়। এই ভৌগলিক তথ্য পেয়ে আমরা বুঝতে পারি, ইস্রায়েলৈর অবস্থা কত খারাপ ছিল সেই সময়।
  • ঈশ্বর এইবার ইফ্রায়িম গোষ্ঠির এজন মহিলা নেত্রী নিযুক্ত করেন, যিনি ইতিমধ্যে তার গোষ্ঠির জন্য বিচারক হিসাবে ভূমিকা পালন করেছিলেন। দবোরা নপ্তলী গোষ্ঠির বারাককে আহবান করেন যেন তিনি ১০’০০০ সেনা তুলে তাদের নিয়ে তাবোর পাহাড়ে চলে আসেন। তাবোর পাহাড় ছিল যিষ্রিয়েল উপত্যকার উত্তর দিকে অবস্থিত।
  • দবোরা ঈশ্বরের রব বুঝতে পেরেছেন এবং তার শক্তিশালী বিশ্বাস আছে বলে তিনি বারাককে অনুপ্রেরণা দিতে সক্ষম হন। বারাক ঘোষণা করেন যে তিনি একা যু্দ্ধে নামবেন না, তিনি দবোরা তার পাশে চান। দবোরা রাজি হন। তবুও তিনি বারককে বলেন যে, তিনি নন বরং একজন মহিলা এই যুদ্ধে জয় করার গৌরব পাবে।
  • বারাক দবোরার আদেশে তার সেনাদের সাথে তাবোর থেকে দৌড়িয়ে নেমে উপত্যাকায় কনানীয় লোহার রথ সৈন্যকে আক্রমণ করেন।
  • ঈশ্বর এইবার ইফ্রায়িম গোষ্ঠির এজন মহিলা নেত্রী নিযুক্ত করেন, যিনি ইতিমধ্যে তার গোষ্ঠির জন্য বিচারক হিসাবে ভূমিকা পালন করেছিলেন। দবোরা নপ্তলী গোষ্ঠির বারাককে আহবান করেন যেন তিনি ১০’০০০ সেনা তুলে তাদের নিয়ে তাবোর পাহাড়ে চলে আসেন। তাবোর পাহাড় ছিল যিষ্রিয়েল উপত্যকার উত্তর দিকে অবস্থিত।
  • দবোরা ঈশ্বরের রব বুঝতে পেরেছেন এবং তার শক্তিশালী বিশ্বাস আছে বলে তিনি বারাককে অনুপ্রেরণা দিতে সক্ষম হন। বারাক ঘোষণা করেন যে তিনি একা যু্দ্ধে নামবেন না, তিনি দবোরা তার পাশে চান। দবোরা রাজি হন। তবুও তিনি বারককে বলেন যে, তিনি নন বরং একজন মহিলা এই যুদ্ধে জয় করার গৌরব পাবে।
  • বারাক দবোরার আদেশে তার সেনাদের সাথে তাবোর থেকে দৌড়িয়ে নেমে উপত্যাকায় কনানীয় লোহার রথ সৈন্যকে আক্রমণ করেন।
  • বিচার ৫:৪-৫ এবং ১৯-২১ পদ বর্ণনা করে, ঈশ্বর কিভাবে এই যুদ্ধে সাহায্য করেন: তিনি একটি শক্তিশালী বৃষ্টি পড়তে দেন, যার ফলে যিষ্রিয়েল উপত্যকায় কিশোন নদীর পানি বেড়ে গিয়ে সম্পূর্ণ জায়গায় বন্যা ঘটে যায়। ফলে ভারি লোহার রথ কাদায় আটকে যায় এবং এইভাবে ঈশ্বর কনানীয়দের প্রযুক্তিগত সুবিধা বাতিল দেন।
  • বিচার ৪:১৫-১৬ পদে বর্ণনা করা হয় কনানীয়েরা কিভাবে লোহার রথ ত্যাগ করে বারকের সামনে থেকে পায়ে পালিয়ে যায়। বারাক তাদের উপরে জয়লাভ করেন। সেই এলাকায় ইস্রায়েলীয়দের সাথে কেনীয় নামে একটি গোষ্ঠি সুসম্পর্কে বাস করত। কনানীয়দের সেনা প্রধান সীষরা কেনীয়দের মধ্যে লুকিয়ে হেবরের স্ত্রী যায়েলের তাম্বুতে আশ্রয় নেন। যায়েল তাকে মেরে ফেলেন এবং এভাবে জয়ের গৌরব একজন মহিলা, অর্থাৎ যায়েলের কাছে চলে যায়, যেমন দবোরা বলেছিলেন। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ইস্রায়েলীয়েরা অবশেষে রাজা যাবীনকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয় (বিচার ৪:২৩-২৪)।
গিদিয়োন পশ্চিম মনঃশি গোষ্ঠি অত্যাচারী: মিদিয়োন, অমালেক ও পূর্ব দেশের জাতিরা

বিচার ৬:১-১০ “পরে ইস্রায়েলীয়েরা আবার সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতে লাগল। এতে তিনি মিদিয়নীয়দের হাতে তাদের তুলে দিলেন আর তারা সাত বছর পর্যন্ত তাদের অধীনে রইল। ২ ইস্রায়েলীয়দের উপর মিদিয়নীয়দের অত্যাচার এত বেড়ে গেল যে, ইস্রায়েলীয়েরা পাহাড়ের ফাটলে, গুহায় এবং পাহাড়ের উপরকার দুর্গগুলোতে আশ্রয়ের জায়গা করে নিল। ৩ ইস্রায়েলীয়েরা যখন তাদের ফসল বুনত তখন মিদিয়নীয়, অমালেকীয় এবং পূর্ব দেশের লোকেরা এসে তাদের দেশ আক্রমণ করত। ৪ তারা ইস্রায়েলীয়দের দেশ আক্রমণ করে গাজা পর্যন্ত সমস্ত জায়গার ফসল নষ্ট করে দিত। ইস্রায়েলীয়েরা খেয়ে বাঁচতে পারে এমন কোন কিছুই মিদিয়নীয়দের হাত থেকে রেহাই পেত না, এমন কি, ভেড়া, গরু আর গাধাও না। ৫ তারা তাদের পশুর পাল ও তাম্বু নিয়ে পংগপালের ঝাঁকের মত আসত; তাদের লোক ও উটের সংখ্যা গোণা যেত না। তারা দেশটা ধ্বংস করে দেবার উদ্দেশ্যেই আসত। ৬ মিদিয়নীয়েরা ইস্রায়েলীয়দের অবস্থা এমন খারাপ করে তুলল যে, তারা সাহায্যের জন্য ঈশ্বরের কাছে কান্নাকাটি করতে লাগল।
৭-৮ মিদিয়নীয়দের অত্যাচারের দরুন ইস্রায়েলীয়েরা যখন সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করতে লাগল তখন সদাপ্রভু একজন নবীকে তাদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, ‘সেই দাসত্বের দেশ মিসর থেকে আমিই তোমাদের বের করে এনেছি। ৯ মিসরের ক্ষমতা থেকে আর সমস্ত অত্যাচারীদের হাত থেকে আমিই তোমাদের রক্ষা করেছি। তোমাদের সামনে থেকে আমিই তাদের তাড়িয়ে দিয়ে তাদের দেশ তোমাদের দিয়েছি। ১০ আমি তোমাদের বলেছিলাম যে, আমি সদাপ্রভুই তোমাদের ঈশ্বর। যাদের দেশে তোমরা বাস করছ সেই ইমোরীয়দের দেব-দেবতাদের পূজা তোমরা করবে না;’ কিন্তু তোমরা আমার কথা শোন নি।”

  • মিদিয়োন, অমালেক এবং পূর্বের জাতিরা ছিল উট-ভিত্তিক যাযাবর সমাজ এবং তারা বার বার ইস্রায়েলের জমিতে এসে ফসলগুলো চুরি করত, যা ইস্রায়েলের জন্য ছিল বড় অর্থনৈতিক ক্ষতি। ইস্রায়েলীয়েরা নিজেদেরকে এবং তাদের ফসল, খাবারের গুদাম ও অন্যান্য সম্পত্তি লুকাতে চেষ্টা করত। তাই গিদিয়োন মাড়াইয়ের গর্তের ভিতরে দানা ও তূষ আলাদা করতে চেষ্টা করে, যা পরাজয়ের একটি শক্তিশালী ছবি।
  • এখানে প্রথম বার ঈশ্বর উদ্ধারকর্তা নিযুক্ত করার আগে একজন ভাববাদী পাঠান। তিনি ইস্রায়েল জাতিকে বলেন যে, তাদের কষ্টভোগ সম্পূর্ণ তাদের কারণেই হচ্ছে। কষ্টভোগ ও অবাধ্যতার কিভাবে সম্পর্কিত, ইস্রায়েলীয়রা তা আর বোঝে না – এবং কেউ তাদেরকে সরাসরি বললেও তারা তা বুঝতে চায় না।

বিচার ৬:১৪-১৫ “সদাপ্রভু তাঁর দিকে ফিরে বললেন, “তোমার এই শক্তিতেই তুমি যাও এবং মিদিয়নীয়দের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার কর, কারণ আমিই তোমাকে পাঠাচ্ছি।” গিদিয়োন বললেন, “কিন্তু হে আমার প্রভু, আমি কেমন করে ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করব? মনঃশি-গোষ্ঠীর মধ্যে আমাদের বংশটাই সবচেয়ে নীচু, আর আমাদের পরিবারের মধ্যে আমার কোন দাম নেই।”

  • গিদিয়োন ভয়ের মধ্যে চলে এবং তার কথা নিজের বিষয়ে তার নিম্নের চিন্তা পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করে। তার একটি সিদ্ধান্তে আসতে খুব কষ্ট হয়। দেখা যায় যে, ইস্রায়েলের সবচেয়ে ভাল নেতৃত্ব আর তেমন ভাল নয়! যেমন ইস্রায়েল সমাজ ও সংস্কৃতি হিসাবে ধীরে ধীরে নিম্নের দিকে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি সম্ভাব্য নেতাদের মাণও কমে যাচ্ছে।
  • ঈশ্বর আরো পরিষ্কারভাবে যোগাযোগ করার জন্য একজন ভাববাদী পাঠান (বিচার ৬:৭-১০) যেন ইস্রায়েল নিঃসন্দেহে জানতে পারে, তাদের দুরাবস্থার কারণ ঠিক কি। একজন ভাবাবদী যে প্রয়োজন হয়, এতে প্রাণিত হয় যে, ঈশ্বরের সাথে তাদের চুক্তি বা আইন-কানুন সম্বন্ধে তাদের জ্ঞান কত কমে গেছে।
  • এছাড়া ঈশ্বর গিদিয়োনকে একজন স্বর্গদূত দেখতে এবং তার সাথে কথা বলতে সুযোগ দেন (বিচার ৬:১১-১২)। তিনি গিদিয়োনের জন্য কয়েকটি আশ্চর্যকাজও করেন (বিচার ৬:২১, ৬:৩৬-৪০) এবং যখন গিদিয়োন তার প্রথম বাধ্যতার কারণে ঝুঁকিতে পড়েন, তখন ঈশ্বর তাকে রক্ষা করেন (বিচার ৬:৩১)। এইসব ঈশ্বর ঘটতে দেন যেন গিদিয়োনের সাহস বৃদ্ধি পায় এবং যেন তিনি ঈশ্বরের উপর ভরাসা রেখে মিদিয়োনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সক্ষম হন। এই সব প্রয়োজন, এতে দেখা যায় যে, ঈশ্বরের উপর ভরাসাও ইস্রায়েলের লোকদের এবং নেতাদের মধ্যে কমে গেছে।
  • রাতের বেলায় গিদিয়োন বাবার প্রতিমাগুলো ধ্বংস করেন। গ্রামের লোকেরা তাকে এর জন্য মেরে ফেলতে চায়, যা থেকে বুঝা যায়, ইস্রায়েলের মধ্যে দেবতাপূজা কত বড় সমস্যা হয়ে গেছে (বিচার ৬:৩৫-২৭)। গিদিয়োনের বাবা তার পক্ষে কথা বলে লোকদের প্রতিরোধ করেন।
  • ঈশ্বরের আহ্বান অনুসারে গিদিয়োন আশের, সবূলূন ও নাপ্তলী গোষ্ঠি থেকে এবং নিজের গোষ্ঠি, অর্থাৎ পশ্চিম মনঃশি গোষ্ঠির অব্রিয়েষ্রীয় পরিবার থেকে সেনা তোলেন। এগুলো সব বেশ উত্তরদিকে অবস্থিত্ব গোষ্ঠিগুলো, যা থেকে আমরা ধারণা করতে পারি যে, ইস্রায়েলের দক্ষিণ এলাকাগুলো মিদিয়োনীয় অভিযানে শিকার হতে থাকে অথবার ইতিমধ্যে সম্পূর্ণভাবে মিদিয়োনীয়দের হাতে পড়েছে।
  • ঈশ্বর নিজের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করে গিদিয়োনকে মিদিয়োনীয়দের উপর জয়লাভ করতে দেন। তিনি এই জয়টি মাত্র ৩০০ ইস্রায়েলীয় সেনাদের দিয়ে ঘটিয়ে দেন, যাতে অতি পরিষ্কারভাবে প্রকাশ পায় যে, এই জয় ঈশ্বরেরই।
  • মিদিয়োনীয়দের উপরে জয় করার পরেই গিদিয়োন দক্ষিণ দিকে ইফ্রায়ীম গোষ্ঠির লোকদের ডাকেন যেন তারা তার সঙ্গে যোগ দিয়ে মিদিয়োনীয়দের সম্পূর্ণভাবে হারানোর কাজে অংশ পায় (বিচার ৭:২৪)। ইফ্রায়ীম গোষ্ঠির লোকেরা এই বিষয়টি খুব অপমান বোধ করে অভিযোগ করে, কেন তাদেরকে শুরু থেকে ডাকা হয় নি (বিচার ৮:১)। এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে গিদিয়োন একটি খুব প্রজ্ঞাবান, নম্র ও মাথা থাণ্ডা ধরণের উত্তর দিয়ে বিভেদের প্রতিরোধ করেন (বিচার ৮:২-৩)। ইফ্রায়ীম গোষ্ঠির লোকেরা তার সাথে যোগ দিয়ে তারা মিদিয়োনীয়দেরকে আরো বেশি করে পরাজিত করতে সক্ষম হয়।
  • এই অদ্ভূত জয়লাভের পরে ইস্রায়েল জাতির নেতারা গিদিয়োনের কাছে এসে তাকে রাজা হিসাবে নিযুক্তি করতে চান। তারা বলে “আমরা তোমাকে চাই, তোমার ছেলে, তোমার নাতি” (কেরী অনুবাদ, বিচার ৮:২২)। এখানে প্রথম বারের মত ইস্রায়েল নিজেকে একটি আত্ম-চালিত বংশভিত্তিক গনতন্ত্র থেকে একটি রাজতন্ত্রে পরিণত করতে চায়। তারা রাজতন্ত্র চায় ‘৩ প্রজন্ম পর্যন্ত’, অর্থাৎ সীমিত সময়ের জন্য। কিন্তু তা বাস্তবে সম্ভব না, কারণ সেই তৃতীয় প্রজন্মের নাতী যখন রাজত্ব করবে, সে নিশ্চিত করবে যে, ক্ষমতা তার পরিবারের হাতে থাকবে।
  • এখানে ইস্রায়েল জাতির নেতাদের উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু তারা আসলে কে? সম্ভবত যারা এখানে গিদিয়োনের কাছে আসেন, তারা হল যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করা সেই ৫টি গোষ্ঠির সেনাপতিরা। কিন্তু তারা কি আসলে সম্পূর্ণ ইস্রায়েল জাতির প্রতিনিধি? তা অবশ্যই চিন্তার বিষয়।
  • ক্ষমতার লোভে না পড়ে দিগিয়েন নেতাদেরকে প্রজ্ঞা ও নম্রতার সঙ্গে উত্তর দেন “স্বয়ং প্রভুই তোমাদের রাজা। আমি বা আমার পুত্র তোমাদের শাসন করব না” (বিচার ৮:২৩)।
  • গিদিয়োন সত্যিকার অর্থে বুঝতে পেরেছেন যে, রাজা চাওয়া মানে প্রভুকে রাজা হিসাবে অগ্রাহ্য করা, যেমন ঈশ্বর পরবর্তীতে সরাসরিভাবে শমূয়েলের কাছে বলেন “লোকেরা … আসলে আমাকেই অগ্রাহ্য করেছে যেন আমি তাদের উপর রাজত্ব না করি” (১ শমূয়ের ৮:৫,৭)।
  • এত প্রজ্ঞার কাজের পরে গিদিয়েনের দুর্বলতা দেখা যায়: তিনি তাদের কাছ থেকে লুট করা মালের এক অংশ দাবি করেন। তারা তাকে খুশিমনে ৩০ কেজি ৫০০ গ্রাম সোনা দান করেন, কিন্তু গিদিয়োন তা থেকে একটি এফোদ বানিয়ে দেন।
  • এফোদ শব্দটি দু’ভাবে অনুবাদ করা যায়:
    • ১) সাধারণত তা মহাপুরোহিতের পোশাক (“সোনা আর নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে” তৈরি, যাত্রা ২৮:৬-৮, লেবীয় ৮:৭)।
    • ২) মুর্তী বা প্রতিমা (‘image’)।
  • গিদিয়োন তাই এখানে কোন ধরণের সোনার মুর্তী বা পুরোহিতের পোশাক বানিয়ে তা নিজের গ্রাম, অর্থাৎ অফ্রাতে রাখেন। লোকেরা তা পূজা করতে শুরু করে এবং এভাবে গিদিয়োনের কারণে একটি নতুন পূজা প্রতিষ্ঠা হয়।
  • গিদিয়েন লেবীয় গোষ্ঠিরও নন, পুরোহিতও নন। অফ্রা লেবীয় শহরও নয়। তাহলে এই সব কেন? স্বর্গদূত প্রথম অফ্রাতে গিদিয়োনের সাথে দেখা করেছিলেন। হয়তো তিনি এই অদ্ভুত ঘটনার স্মৃতি সৌধ হিসাবে ফোদটা তৈরি করেন। দেখা যায় যে, গিদিয়োন বাল দেবতার পূজার প্রতিরোধ করেন (বিচার ৮:৩৩) কিন্তু তার দুর্বলতার কারণে অন্য একটি পূজা স্থাপিত হয়।
  • গিদিয়োন অনেক স্ত্রী গ্রহণ করেন এবং তাদের দ্বারা তার ৭০জন ছেলে-মেয়ে হয়। ৭০জনের মধ্যে একজন উপস্ত্রী দ্বারা অবীমেলেক নামে একটি ছেলে হয় (বিচার ৮:৩০) যার কারণে পরবর্তীতে সমস্যা তৈরি হয়। প্রকৃতপক্ষে দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:১৭ পদে ঈশ্বর নেতাদের ক্ষেত্রে বেশি স্ত্রী গ্রহণ করা সরাসরি নিষেধ করেছেন।
    • ইস্রায়েলে ৪০ বছর শান্তি ছিল (বিচার ৮:২৯)।
অবীমেলক পশ্চিম মনঃশি গোষ্ঠি রাজতন্ত্র স্থাপন করার প্রচেষ্টা
  • অবীমেলক হল গিদিয়োনের ছেলে, যার মা ছিল গিদিয়োনের একজন উপস্ত্রী। অবীমেলক শিখিমে বড় হয়, পশ্চিম মনঃশি গোষ্ঠির একটি শহর।
  • দেখা যায় অবীমেলক মনে করে যে, রাজার পদ পাওয়ার বিষয়ে তার বাবা গিদিয়োন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অবীমেলক শিখিম নেতাদের কাছে রাজতন্ত্র স্থাপন করার এবং তাকে রাজা হিসাবে নিযুক্ত করার প্রস্তাব দেয়। সে নেতাদেরকে প্রতারণা করে, এই হুমকি দিয়ে যে, গিদিয়োনের অন্যান্য ছেলেরা তাদের উপর রাজত্ব করতে চাচ্ছে – তাই অন্যদের দ্বারা শাসিত হওয়ার চেয়ে স্থানীয় অবীমেলককে দিয়ে শাসিত হওয়াই ভাল।
  • শিখিমের নেতাদের প্রজ্ঞা নেই বলে তারা অবীমেলককে রাজা হিসাবে গ্রহণ করে। দেখা যায় যে, শিখিম শহরে বাল দেবতার পূজা প্রচলিত ছিল কারণ তারা বাল দেবতার মন্দির থেকে রূপা নিয়ে তা অবীমেলককে দান করে, যেন সে সেনাদের ভাড়া করে (বিচার ৯:৪)। এটি হল ইস্রায়েলের ইতিহাসে প্রথম বার যে, ইস্রায়েল সৈন্যটি সেচ্ছায় যোগ দেওয়া সেনাদের পরিবর্তে ভাড়া নেওয়া সেনাদের দিয়ে গঠিত হয়।
  • অবীমেলক সেনাদের নিয়ে অফ্রা শহরে গিয়ে সেখানে তার ৭০জন ভাইদের হত্যা করে। মাত্র যোথম নামে সবচেয়ে ছোট ভাই পালাতে সক্ষম হয়।
  • এভাবে অবীমেলক ঘটায় ভ্রাতৃহত্যা, গণহত্যা এবং ইস্রায়েলের ইতিহাসে সৈন্যকে ক্ষমতার লড়াইয়ে ব্যবহার করার সর্বপ্রথম ঘটনা।
  • এর পরেও শিখিমের লোকেরা অবীমেলককে অগ্রাহ্য করে না, বরং তারা কি করে? “তারপর শিখিম ও বৈৎ-মিল্লোর সমস্ত লোক একত্র হয়ে শিখিমের থামের কাছে এলোন গাছটার পাশে গিয়ে আবিমালেককে বাদশাহ্‌ করল” (বিচার ৯:৬)।
  • কেন তারা তা করে? ভয়ের কারণে? একবার শুরু করে পিছিয়ে যাওয়া যায় না বলে? অথবা তারা নিজের ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য অবীমেলকের সাথে হাত আরো মিলায়? একটি প্রবাদ বলে: ‘সাফল্যের চেয়ে সফল কিছু নেই’ (‘nothing succeeds like success’), অর্থাৎ যে ব্যক্তি লোকেরা সফল মনে করে, তার সাথেই তারা যায়।
  • বেঁচে থাকা ভাই যোথম শিখিমের নেতাদের চ্যালেঞ্জ করে ( বিচার ৯:৮-২১): “কিন্তু আজ যদি যিরুব্বাল ও তাঁর পরিবারের প্রতি আপনারা বিশ্বস্ততা ও সততার কাজ করে থাকেন তবে আবিমালেক যেন আপনাদের আনন্দের কারণ হয় এবং আপনারাও যেন তার আনন্দের কারণ হন! কিন্তু তা যদি আপনারা না করে থাকেন তবে আবিমালেকের মধ্য থেকে যেন আগুন বের হয়ে এসে আপনাদের, অর্থাৎ শিখিমের ও বৈৎ-মিল্লোর লোকদের পুড়িয়ে দেয়; আর আপনাদের, অর্থাৎ শিখিমের ও বৈৎ-মিল্লোর লোকদের মধ্য থেকেও যেন আগুন বের হয়ে এসে আবিমালেককে পুড়িয়ে দেয়” (বিচার ৯:১৯-২০)। সম্ভবত, তারা যোথমের কথায় সাড়া দেয় না এবং সে বের্ শহরে পালিয়ে যায়। হতে পারে তা বের্-শেবা বুঝায়, যিহূদার দক্ষিণ দিকের শেষ প্রান্তে। খুনীরা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায় এবং নির্দোষ লোকেরা জীবনের ভয়ে থাকে।
  • এই ঘটনাটি হল ইস্রায়েলের ইতিহাসে সর্বপ্রথম ঘটনা যে, জাতির নেতা ক্ষমতায় আসার প্রক্রিয়ায় ঈশ্বরের কোন হাত নেই।
  • এই ঘটনাটি হল ইস্রায়েলের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বার যে, ইস্রায়েল এমন সময়ে একজন নেতা ঠিক করে যখন অন্যান্য জাতিরা ইস্রায়েলকে হুমকি না দেয় বা আক্রমণ না করে।
  • এই ঘটনাটি হল ইস্রায়েলের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বার যে, একটি মন্দিরের টাকা সরকারের জন্য ব্যবহৃত হয় – এবং দেবতার মন্দিরের টাকা – তবুও!
  • এই ঘটনাটি হল ইস্রায়েলের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বার যে, ইস্রায়েলের নেতৃত্ব ঠিক হওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতার লড়াই ও খুন করা হয়েছে। এখন থেকে তা প্রায়ই দেখা যাবে।
  • এই ঘটনাটি হল ইস্রায়েলের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বার যে, ইস্রায়েলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ‘পারিবারিক বিষয়’ মনে করা হয়।
  • অবীমেলক ৩ বছর রাজত্ব করার পরে ঈশ্বর নিশ্চিত করেন যেন অবীমেলক এবং শিখিম লোকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। বিচার ৯:২৪ পরিষ্কারভাবে বলে যে, ঈশ্বর তা ঘটান কারণ অবীমেলকের দ্বারা অনেক নির্দোষ রক্তপাত হয়েছে এবং শিখিম লোকরা তাকে তার বিভিন্ন মন্দ কাজে সমর্থন করেছে।
  • শিখিম লোকেরা অবীমেলকের বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করে: তারা জালিয়াতি ও ডাকাতি দ্বারা কর তুলতে শুরু করে, যার ফলে বেচাকেনা কমে যায় এবং অবীমেলকের কর আদায় করতে কষ্ট হয়।
  • বাল দেবহার পূজার একটি অনুষ্ঠানে গাল নামে একজন লোক নিজেকে অবীমেলকের বিরুদ্ধে শক্তিশালী লোক হিসাবে দাঁড় করায় এবং শিখিমের লোকদেরকে নিজের পক্ষে আনতে চেষ্টা করে।
  • শিখিমের কর্তা অবীমেলককে এই বিষয়টি জানান এবং অবীমেলক সাথে সাথে গালকে পরাজিত করে ও মেরে ফেলে।
  • কিন্তু পরবর্তী দিনে অবীমেলক শিখিমের লোকদেরকে অত্যাচার করতে শুরু করে। যখন লোকেরা বাল দেবতার মন্দিরে আশ্রয় নেয়, অবীমেলক মন্দিরটি এবং সঙ্গে শিখিমের ১০০০ লোকদেরকে পুড়িয়ে মেরে ফেলে। এখন শিখিম লোকদেরকে এই স্বৈরাচারী নেতার শিকার হতে হচ্ছে।
  • অবীমেলক তেবেস নামে আর একটি শহরকে আক্রমণ করে (হতে পারে শিখিমের পলাতক লোকেরা সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল)। শহরের লোকেরা তাদের দুর্গে আশ্রয় নেয়। একটি মহিলা জালানা থেকে যাঁতার উপরের একটি পাথর ফেলে দিয়ে অবীমেলককে আঘাত করে। সে তার অস্ত্রবহনকারীর সাহায্যে আত্ম-হত্যা করে।
  • এই ঘটনাটি হল ইস্রায়েলের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বার যে, ইস্রায়েল জাতির মধ্যে গৃহযুদ্ধ ঘটে।
  • এছাড়া এই ঘটনাটি হল সর্বপ্রথম বার যে, ইস্রায়েলের একটি সৈন্যদল নিজের লোকদেরকে আক্রমণ করে।
  • বিচার ৯:৫৬-৫৭ পদে এই মন্তব্য করা হয়: “শিখিমের লোকেরা যে সব অন্যায় করেছিল তার পাওনা শাস্তি ঈশ্বর তাদেরও দিলেন। এইভাবে যিরুব্বালের ছেলে যোথমের অভিশাপ তাদের উপর পড়েছিল।”
  • অবীমেলকের গল্প দেখায় যে, ইস্রায়েল দেশে মানব জীবনের জন্য সম্মান, ঈশ্বরের ভক্তিপূর্ণ ভয় এবং আইন-কানুনের প্রতি বাধ্যতা দিনে দিনে কমতে থাকে।
  • ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা দান করেছেন; তিনি তাঁর আইন-কানুন, ভাববাদীদের দ্বারা সাবধানবাণী এবং বিশ্বাসের উৎসাহের জন্য আশ্চর্য কাজও দান করেছেন – কিন্তু ইস্রায়েল জাতি কোন মতে ঈশ্বরের কথা মানতে রাজি নয়।
  • ঈশ্বর জাতির নেতা এবং সাধারণ লোকেরা উভয়দেরকে দায়বদ্ধ করে রাখেন।
তোলয়                    ইষাখর গোষ্ঠি                    অত্যাচারী: ?

বিচার ১০:১-২ “আবিমালেকের পরে তোলয় নামে ইষাখর-গোষ্ঠীর একজন লোক ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করতে আসলেন। তোলয় ছিলেন পূয়ার ছেলে আর দোদয়ের নাতি। ইফ্রায়িম পাহাড়ী এলাকার শামীরে তিনি বাস করতেন। ২ তিনি তেইশ বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা ছিলেন। পরে তিনি মারা গেলেন এবং শামীরেই তাঁকে কবর দেওয়া হল।”

  • বিচারক তোলয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, বেশি তথ্য দেওয়া হয় নি। ইস্রায়েলীয়েরা যে ঈশ্বরের কাছে কান্না করেছে, ঈশ্বর যে তোলয়কে বিচারক-উদ্ধারকর্তা হিসাবে উঠিয়েছেন অথবা তোলয়ের সময়ে অত্যাচারী জাতি কে, এই সব কিছুর কোন উল্লেখ নেই।
  • এর অর্থ কি এই যে, তোলয় নিজেকে বিচারক হিসাবে বিস্তার করেছিলেন? অর্থাৎ যে, ইস্রায়েলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এখন ‘যা চাই তাই’ চলে? আমরা জানি না।
  • তোলয় ২৩ বছর ধরে ইস্রায়েলের শাসনকর্তা ছিলেন।
যায়ীর                     গাদ গোষ্ঠি                       অত্যাচারী: ?

বিচার ১০:৩-৫ “তোলয়ের পরে গিলিয়দ এলাকার যায়ীর বাইশ বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা ছিলেন। 4যায়ীরের ত্রিশজন ছেলে ছিল; তারা ত্রিশটা গাধায় চড়ে বেড়াত। গিলিয়দের ত্রিশটা গ্রাম তাদের অধীনে ছিল। আজও সেই গ্রামগুলোকে হবোৎ-যায়ীর বলা হয়। ৫ যায়ীর মারা গেলে পর তাঁকে কামোনে কবর দেওয়া হল।”
• যায়ীরকে নেতা হিসাবে নিযুক্তকরণের বিষয়ে এবং যায়ীরের জীবনের বর্ণনায় ঈশ্বরের আর কোন ভূমিকা দেখা যায় না।
• ইস্রায়েল যখন দেশ হিসাবে হুমকির মুখে পড়ে, শুধুমাত্র তখনই একজন বিচারক-শাসনকর্তার থাকা উচিত ছিল, কিন্তু এখন তা ভিন্ন হয়ে গেছে। যে কোন সময়ে নেতারা নিজেদেরকে বিস্তার করে এবং হয়তো তারা কঠোরভাবেও লোকদের উপর শাসন করে।
• এই নেতাদেরকে ‘রাজা’ বলা হচ্ছে না, কিন্তু দেখা যায় যে তারা ঠিক রাজাদের মত নিজের ক্ষমতা লোকদের উপর বিস্থার করে, অর্থাৎ উপর থেকে নিচ দিকে রাজত্ব করে।

যিপ্তহ                      গাদ গোষ্ঠি                       অত্যাচারী: অম্মোন

বিচার ১০:৬-১০ “পরে ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ আবার তা-ই করতে লাগল। তারা বাল দেবতাদের এবং অষ্টারোৎ দেবীদের এবং অরামীয়, সীদোনীয়, মোয়াবীয়, অম্মোনীয় ও পলেষ্টীয়দের দেব-দেবতাদের পূজা করতে লাগল। এইভাবে ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করল এবং তাঁর সেবা করল না। ৭ সেইজন্য তিনি তাদের উপর ক্রোধে জ্বলে উঠলেন এবং পলেষ্টীয় ও অম্মোনীয়দের হাতে তাদের তুলে দিলেন। ৮ সেই বছরে তারা ইস্রায়েলীয়দের যেন দলে-পিষে মারল। তারা যর্দনের পূর্ব দিকে ইমোরীয়দের দেশ গিলিয়দে বাসকারী ইস্রায়েলীয়দের আঠারো বছর ধরে কষ্ট দিয়েছিল। ৯ যিহূদা, বিন্যামীন ও ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য অম্মোনীয়েরা যর্দন পার হয়ে আসল। তখন ইস্রায়েলীয়েরা মহা কষ্টে পড়ল। ১০ তারা সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করে বলল, “আমাদের ঈশ্বরকে ত্যাগ করে বাল দেবতাদের পূজা করে সত্যি আমরা তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি।”

  • এই সময় পলেষ্টীয়েরা পশ্চিম দিক থেকে ইস্রায়েলকে আক্রমণ করতে থাকে এবং অম্মোনীয়েরা যর্দনের পূর্বে ইস্রায়েলের এলাকা দমন করে। এছাড়া অম্মোনীয়েরা এখন যর্দনের পশ্চিমে যিহূদা, বিন্যামিন ও ইফ্রায়ীমকেও আক্রমণ করে, অর্থাৎ ইস্রায়েল দেশের কেন্দ্র এখন শত্রুদের হুমকির মুখে পড়ছে।
  • ইস্রায়েল জাতি ঈশ্বরের কাছে কান্না করে। ধারণা করা যায় যে, তা হল ৬৩ বছর পরে অনুতাপের প্রথম চিহ্ন। 

বিচার ১০:১১-১৪ “উত্তরে সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “মিসরীয়, ইমোরীয়, অম্মোনীয় ও পলেষ্টীয়দের হাত থেকে আমি কি তোমাদের উদ্ধার করি নি? ১২ যখন সীদোনীয়, অমালেকীয় এবং মায়োনীয়দের অত্যাচারে তোমরা সাহায্যের জন্য আমার কাছে কান্নাকাটি করেছিলে তখন তাদের হাত থেকেও আমি তোমাদের উদ্ধার করেছি। ১৩ কিন্তু তোমরা আমাকে ত্যাগ করে দেবতাদের পূজা করেছ, সেইজন্য আর আমি তোমাদের উদ্ধার করব না। ১৪ যে দেব-দেবতাদের তোমরা বেছে নিয়েছিলে তাদের কাছে গিয়ে কাঁদ। বিপদের সময়ে তারাই তোমাদের উদ্ধার করুক।”
বিচার ১০:১৫-১৬ “কিন্তু ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুকে বলল, “আমরা পাপ করেছি। তোমার যা ভাল মনে হয় আমাদের প্রতি তা-ই কোরো, কিন্তু দয়া করে এবার তুমি আমাদের রক্ষা কর।” ১৬ এর পর তাদের মধ্যে অন্য জাতিদের যে সব দেব-দেবতা ছিল তাদের দূর করে দিয়ে তারা সদাপ্রভুর সেবা করতে লাগল। ইস্রায়েলীয়দের কষ্ট দেখে সদাপ্রভুর মনে দুঃখ হল।”
বিচার ১১:১-২ “সেই সময় গিলিয়দীয় যিপ্তহ খুব শক্তিশালী যোদ্ধা ছিলেন। তাঁর মা ছিল একজন বেশ্যা আর তাঁর বাবার নাম ছিল গিলিয়দ। ২ গিলিয়দের নিজের স্ত্রীর গর্ভের কতগুলো ছেলে ছিল। তারা বড় হয়ে যিপ্তহকে এই বলে তাড়িয়ে দিল, “তুমি আমাদের পরিবারের সম্পত্তির অধিকার পাবে না, কারণ তুমি অন্য এক স্ত্রীলোকের সন্তান।”

  • যিপ্তহ হলেন একজন শক্তিশালী বীরযোদ্ধা। তিনি গাদ গোষ্ঠির লোক। তার বাবার নাম গিলিয়দ, তার মা ছিল একজন পতিতা।
  • গিলিয়দের বৈধ্ সন্তানেরা তাদের ভাই যিপ্তহকে তার উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করে পরিবার থেকে তাড়িয়ে দেয়।
  • যিপ্তহ গাদ এলাকা ত্যাগ করে ইস্রায়েলের উত্তরে টোব নামে একটি এলাকায় অপরাধী বা ডাকাতদের একটি সেনাদলের নেতা হয়ে যান (বিচার ১১:৩)।
  • যখন অম্মোনীয়েরা ইস্রায়েল দেশকে আক্রমণ করে এবং গাদ গোষ্ঠি প্রথম তাদের পথে পড়ে, তখন গাদ গোষ্ঠির নেতারা যিপ্তহকে তাদের পক্ষ হয়ে সৈন্যদলের নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
  • যিপ্তহের প্রথম দিকে সংকোচ প্রকাশ করেন কিন্তু যখন তাকে প্রতিজ্ঞা দেওয়া হয় যে, গাদ গোষ্ঠি তাকে স্থায়ীভাবে তাদের শাসনকর্তা হিসাবে মানবে, তখন তিনি রাজি হন।
  • যিপ্তহ অম্মোনীয়দের কাছে রাষ্টদূত পাঠিয়ে তাদের আক্রমণের কারণ জানতে চান। অম্মোনীয়েরা উত্তরে দাবি করে যে, ইস্রায়েল জাতি যখন মিসর দেশ থেকে কনানে যাওয়ার পথে অম্মোনের কাছে এসেছিল, তখন তারা অম্মোনীয়দের কিছু এলাকা দখল করেছিল।
  • যিপ্তহ উত্তরে গল্পটি সংশোধন করেন: ইস্রায়েল অম্মোনীয়দের আক্রমণও করেন নি, তাদের জমি দখলও করেন নি। অম্মোন দেশে পার হওয়ার অনুমতি না পেয়ে ইস্রায়েল বরং অম্মোনের সীমানা সম্মান করে চারিদিকে চলে গিয়েছিল। ইস্রায়েল মাত্র ইম্মোরীয় রাজারা হিষবোণের সীহোন এবং বাশনের ওগের এলাকা দখল করেছিল। ইম্মোরীয়দের জমি এখন ইস্রায়েলের রূবেণ, গাদ (গিলিয়দ) ও পূর্ব মনঃশি গোষ্ঠির এলাকা।
  • যিপ্তহ ঈশ্বরকে ন্যায় বিচারক হিসাবে ঘোষিত করে অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালান। রওনা দেওয়ার সময় তিনি একটি মানত করেন যে, জয়লাভ করলে যে তাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বাড়ী থেকে বের হয়ে আসবে, তিনি এটাকে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবেন।
  • যখন তিনি প্রকৃতপক্ষে জয়লাভ করে নিজের ঘরে ফিরে আসেন, তখন তার একমাত্র মেয়ে আনন্দে নেচে তাকে নেওয়া জন্য এগিয়ে আসে। যিপ্তহ তার শপথ পূর্ণ করে নিজের মেয়েকে উৎসর্গ করেন!
  • এই ঘটনা হল ইস্রায়েলের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বার যে, একজন মানুষকে উৎসর্গ করা হয়। দেখা যায় যে, ইস্রায়েল চারিদিকের জাতিদের প্রতিমাপূজা দিয়ে প্রভাবিত হয়েছে, যেখানে কিছু ক্ষেত্রে সন্তান উৎসর্গ করা হত।
  • মোশির আইন-কানুন অনুসারে একজন ব্যক্তিকে সমর্পণ করার মানত বা শপথ ফিরে নেওয়ার একটি পদ্ধতি ছিল (লেবীয় ২৭:১-৮)। দেখা যায় যে, ঈশ্বরের জ্ঞান এবং মোশির আইন-কানুনের জ্ঞান ইস্রায়েলের আরো বেশি কমে গেছে, কারণ যিপ্তহের মেয়ের মৃত্যুর কোন প্রয়োজন ছিল না।
  • ইফ্রায়িম গোষ্ঠির লোকেরা গিদিয়োনের প্রতি যেমন করেছিল, এখন যিপ্তহের প্রতিও করে। তারা যিপ্তহের দোষ ধরে বলে যে, অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার বিষয়ে তাদের ডাকা হল না কেন? গিদিয়োনের সময়ের মত, তারা যুদ্ধে জয়ের জন্য কৃতজ্ঞ না হয়ে বরং অপমান ভাব দেখিয়ে সমস্যা তৈরি করে। একবার যুদ্ধে জয় করা হয়েছে, ‘আমরাও অংশ গ্রহন করতাম’ বলা অবশ্যই সহজ।
  • দেখা যায় যে, গিদিয়োনের তুলনায় যিপ্তহের উত্তরে নম্রতা ও প্রজ্ঞা কম আছে এবং ঝগড়াটি একটি গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়, যাতে ইফ্রায়িম গোষ্ঠির ৪২ হাজার সেনাদের সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়ভাবে প্রাণ নষ্ট হয় (বিচার ১২:৬)। এই গৃহযুদ্ধে যিপ্তহের পাশি কতজন সেনা মারা যায়, তার উল্লেখ নেই। এই ঘটনাটি হল ইস্রায়েল ইতিহাসে সর্বপ্রথম গোষ্ঠিদের মধ্যে যুদ্ধ। ইস্রায়েলের অবস্থা খারাপ থেকে আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।
  • যিপ্তহ ৬ বছর রাজত্ব করেন।
ইব্‌সন                      যিহূদা গোষ্ঠি                 অত্যাচারী: ?

বিচার ১২:৮-৯ “যিপ্তহের পরে ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা হলেন বৈৎলেহম গ্রামের ইব্‌সন। 9তাঁর ত্রিশজন ছেলে ও ত্রিশজন মেয়ে ছিল। তিনি নিজের বংশের বাইরে তাঁর মেয়েদের বিয়ে দিলেন এবং বংশের বাইরে থেকে তাঁর ছেলেদের বৌ হিসাবে ত্রিশজন যুবতী মেয়ে আনলেন। ইব্‌সন সাত বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা ছিলেন।”

এলোন                     সবূলূন গোষ্ঠি                  অত্যাচারী: ?

বিচার ১২:১১-১২ “ইব্‌সনের পর সবূলূন-গোষ্ঠীর এলোন দশ বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা ছিলেন। ১২ তিনি মারা গেলে পর সবূলূন এলাকার অয়ালোনে তাঁকে কবর দেওয়া হল।”

অব্‌দোন                    আশের গোষ্ঠি                  অত্যাচারী: ?

বিচার ১২:১৩-১৫ “এলোনের পর পিরিয়াথোনের হিল্লেলের ছেলে অব্‌দোন ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা হয়েছিলেন। ১৪ তাঁর চল্লিশজন ছেলে ও ত্রিশজন নাতি ছিল। তারা সত্তরটা গাধায় চড়ে বেড়াত। অব্‌দোন আট বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা ছিলেন। ১৫ তিনি মারা গেলে পর অমালেকীয়দের পাহাড়ী এলাকার মধ্যে ইফ্রয়িম এলাকার পিরিয়াথোনে তাঁকে কবর দেওয়া হল।

শিম্‌শোন                   দান গোষ্ঠি                     অত্যাচারি: পলেষ্টীয়েরা

বিচার ১৩:১ “পরে ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ আবার তা-ই করতে লাগল। কাজেই সদাপ্রভু তাদের চল্লিশ বছর পলেষ্টীয়দের অধীন করে রাখলেন।”

  • ইস্রায়েল দেশ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ঈশ্বর সারা ইস্রায়েল জাতির মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার মত একজনও খুঁজে পাচ্ছেন না। তাই শিম্‌শোনকে ব্যবহার করার আগে তার জন্ম ঘটাতে হচ্ছে। একইভাবে কিছু বছর পরে দেখা যাবে যে, ঈশ্বর শমূয়েল নামে একটি অল্প বয়সের ছেলেকে আহ্বান করবেন, কারণ প্রাপ্ত বয়সের কেউ পাওয়া যাচ্ছে না।
  • যখন ইস্রায়েলীয়েরা ৪০ বছর ধরে অত্যাচারিত হয়, শুধুমাত্র তখনও তারা ঈশ্বরের কাছে কান্না করে। অন্যভাবে বললে, ৪০ বছর ধরে কষ্ট না পাওয়া পর্যন্ত ইস্রায়েলীয়রা তাদের দেব-দেবতাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে ঈশ্বরের দিকে তাকাতে রাজি না।
  • ঈশ্বর আবারও ইস্রায়েলকে দয়া করে আশ্চর্যভাবে হস্তক্ষেপ করেন। একজন স্বর্গদূতের ঘোষণা, একটি বন্ধা স্ত্রীর গর্ভে সন্তান, সন্তানটি জন্ম থেকে নাসরীয় হওয়ার নির্দেশনা এবং ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা যে, সন্তানটি ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করার কাজ শুরু করবেন। শিম্‌শোন জন্ম নেন এবং “শিম্‌শোন বড় হতে লাগলেন এবং ঈশ্বর তাঁকে আশীর্বাদ করলেন। ২৫ … তখন থেকে সদাপ্রভুর আত্মা তাঁকে উত্তেজিত করতে লাগলেন” (বিচার ১৩:২৪-২৫)। ঈশ্বর শিম্‌শোনকে শুরু থেকে যথেষ্ট দয়া দান করেন।
  • শিম্‌শোনের আশ্চর্যজনক জন্ম, তার মা-বাবার সমর্পণ এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাওয়ার পরেও শিম্‌শোনের চরিত্রে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা যায়। বিশেষভাবে মহিলাদের প্রতি তার দুর্বলতা অনেক বেশি।
  • শিম্‌শোন একজন পলেষ্টীয় মেয়ের প্রেমে পড়েন। তিনি তার মা-বাবার ইচ্ছা এবং দেবতাপূজারীকে বিয়ে না করা ঈশ্বরের আদেশের বিরুদ্ধে তাকে বিয়ে করেন। ফলে বিভিন্ন সমস্যা তেরি হয়। বিবাহের অনুষ্ঠানে অতিথীদের সাথে ধাঁধাঁর বিষয়ে ঝগড়া, শিম্‌শোনের শশুরের পরিবারের উপরে চাপ আসা, তার নতুন স্ত্রীর সাথে সম্পর্কে টেন্সন, উপহার যোগার করার জন্য কিছু পলেষ্টীয়দের খুন, তার নতুন স্ত্রীকে তার বন্ধুর হাতে হারানো – এই সব দেখায় যে, শিম্‌শোন নিজের ইচ্ছা পূর্ণ করার অনুসন্ধানে কোন রকম আশীর্বাদ বা শান্তি লাভ করতে পারছেন না।
  • শিম্‌শোন যখন তার স্ত্রীকে ফিরে পাওয়ার দাবি করেন কিন্তু তা অস্বীকার করা হয়, তখন তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার পলেষ্টীয়দের প্রধান ফসল নষ্ট করেন। উল্টোভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পলেষ্টীয়েরা শিম্‌শোনের স্ত্রী ও শশুড়কে মেরে ফেলে।
  • শিম্‌শোন একটি গুহায় আশ্রয় নেন। যিহূদার নেতারা সেখানে এসে তাকে অনুরোধ করেন যে, যিহূদার বিরুদ্ধে পলেষ্টীয়দের যুদ্ধের প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে যেন তিনি তাদের কাছে আত্ম-সমর্পণ করেন।
  • শিম্‌শোন রাজি হন কিন্তু আত্ম-সমর্পণের সময়ে তিনি সব দড়ি ছিড়ে ১০০০জন পলেষ্টীয়দের মেরে ফেলেন। ঈশ্বর আশ্চর্যভাবে তার জন্য জলের ব্যবস্থা করে তাকে বাঁচান।
  • পরবর্তীতে শিম্‌শোন ঘসা শহরে একজন পতিতার কাছে যাওয়ার সময় পলেষ্টীয়েরা তাকে গ্রেফতার করতে চেষ্টা করে, কিন্তু শিম্‌শোন তার অদ্ভুত শক্তি দিয়ে মুক্ত হতে সক্ষম হন।
  • পরে শিম্‌শোন দলীলা নামে একজন পলেষ্টীয় মহিলার প্রেমে পড়েন। দলীলা টাকার লোভে পলেষ্টীয়দের পক্ষ হয়ে শিম্‌শোনের শক্তির রহস্য খুঁজে বের করতে চেষ্টা করে। গল্পটিতে শিম্‌শোন স্বনিয়ন্ত্রণের ও ভক্তিপূর্ণ ভয়ের অভাবে রহস্যটি বলে দেন: নাসরীয় হিসাবে তার চুল কাটা নিষেধ, চুল কাটলে তিনি তার শক্তি হারাবেন। দলীলা শিম্‌শোনকে প্রতারণা করে তার চুল কেটে ফেলেন এবং তার শক্তি হারিয়ে শিম্‌শোন অবশেষে পলেষ্টীয়দের হাতে পড়েন।
  • যখন পলেষ্টীয়রা এই জয়ের জন্য দাগোন নামে তাদের দেবতাকে ধন্যবাদ দেওয়ার অনুষ্ঠানে শিম্‌শোনকে এনে সবার সামনে উপস্থানা করে, তখন ঈশ্বর তাকে আর একবার শক্তি দান করেন এবং শিম্‌শোন দু’টি পিলার ধরে দালানটি তাদের উপর ভেঙ্গে পড়তে দেন। এভাবে শিম্‌শোন তার মৃত্যুতে ৩০০০ পলেষ্টীয়রা মারা যায়। শিম্‌শোন ২০ বছর ধরে ইস্রায়েলের শাসনকর্তা ছিলেন।
  • শিম্‌শোনের দুঃখের গল্পে একটি বিষয় খুব পরিষ্কার হয়। যদিও শিম্‌শোন কোন মতে যোগ্য ব্যবহার করেন না, ঈশ্বর তাকে রক্ষা করতে ও দয়া দেখাতে থাকেন। দুঃখের বিষয় এই যে, শিম্‌শোন নারীদের প্রতি অতি আকর্ষিত হওয়ার কারণে তিনি একটি সংকোট থেকে আর একটি সংকোটে পড়তে থাকেন। শিম্‌শোনের সমস্ত ‘জয়গুলো’ বা ‘আশ্চর্য ঘটনাগুলো’ নারীদের নিয়ে খারাপ গল্পের ফলাফল হিসাবে ঘটে।
  • ভেবে দেখুন: যদি শিম্‌শোনের একটু মাত্র স্বনিয়ন্ত্রণ থাকত, যদি তিনি গুরত্বের সঙ্গে ঈশ্বরকে অন্বেষণ করতেন এবং ঈশ্বরের আদেশে ইস্রায়েলীয়দের নেতৃত্ব দিতেন, তবুও তিনি কত বড় জয় সাধন করতে পারতেন! কিন্তু দেখা যায় যে, নারীদের পিছনে দৌঁড়িয়ে তিনি নিজের কার্যকারীতা, সফলতা ও আহ্বান হারান।

বিচারকর্ত্তৃগণ পুস্তক দ্বারা ঈশ্বর আমাদের কি কি শেখাতে চান?

  • ঈশ্বর এই সব লজ্জার ও দুঃখের গল্পগুলো বানিয়ে বলেন না, তিনি ইস্রায়েলের ইতিহাসের বাস্তব বর্ণনা দেন।
  • ঈশ্বর এই বিশ্রী গল্পগুলো আমাদেরকেও জানান কারণ সেগুলো থেকে অনেক কিছু শেখা যায়।
  • কি কি শেখা যায়?
লোকেরা
  • দেখা যায় যে, নেতাদের আগে সাধারণ জনগণের নৈতিকতা ধীরে ধীরে ভেঙ্গে যাচ্ছে।
  • অনেক বার পুনরুক্তি করে বলা হয়েছে যে, “সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ ইস্রায়েলীয়েরা আবার তা-ই করল”।
  • ইস্রায়েল কেন অন্য জাতিদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়, এর মাত্র একটি কারণ আছে এই, ইস্রায়েলীয়েরা ঈশ্বরকে ত্যাগ করে মন্দ কাজ করেছে। অন্য জাতিগুলো যে ইস্রায়েলের চেয়ে শক্তিশালী, অন্য জাতিদের দেব-দেবতা যে সদাপ্রভুর চেয়ে শক্তিশালী – এই চিন্তা-ধারণা পুস্তকে কোথাও পাওয়া যাবে না। ইস্রায়েলের খারাপ অবস্থার কারণ হল তারা নিজেই।
  • ইস্রায়েল জাতি হিসাবে ঈশ্বরকে ও তাঁর আদেশগুলো ত্যাগ করেছে বলে বর্তমান সমস্যা তৈরি হয়েছে। ইস্রায়েল যখন জাতি হিসাবে ঈশ্বরের কাছে কান্না করে শুধুমাত্র তখনই ঈশ্বর একজন জাতীয় বিচারক-উদ্ধারকর্তা উঠানো দ্বারা তাদেরকে রক্ষা করেন।
  • সময় যত আগাচ্ছে, ইস্রায়েল মন ফিরানোর ক্ষেত্রে তত দেরি করে, যার ফলে দেশের অবনতি বা ক্ষয় দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে।
  • ইস্রায়েল জাতি যখন দেবতাপূজায় পড়ে, তখন সাথে দেখা যায় স্বৈরাচারী নেতৃত্ব, ক্ষমতার লড়াই, একজন নেতা আর একজন নেতাকে খুন করা, মানুষকে উৎসর্গ করা, হিংস্রতা, বিভেদ এবং গৃহযুদ্ধ। আত্মিক পতনের সাথে আসে সামাজিক পতন।
নেতারা
  • বিচারকর্ত্তৃগণ পুস্তকে দেখায় যে, প্রাথমিকভাবে সাধারণ লোকদের দ্বারা, কিন্তু দ্বিতীয়ত নেতাদেরই দ্বারাও ইস্রায়েলের পতন ঘটে। যেমন একটি প্রবাদ বলে, ‘আমরা যে নেতৃত্বের যোগ্য, আমরা সেই নেতৃত্বকে ঠিকই পাচ্ছি’।
  • লক্ষ্য করুন উল্লিখিত ১২জন বিচারকেরা কোন কোন গোষ্ঠির। প্রকৃতপক্ষে তারা ৯টি গোষ্ঠি থেকে। ঈশ্বর নিশ্চিত করেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব যেন এক গোষ্ঠিতে না থাকে, যেন বিচারকেরা বিভিন্ন গোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব করে।
  • সময় যত আগাচ্ছে, বিচারকদের স্বভাব-চরিত্রের মান, ঈশ্বর সম্বন্ধীয় তাদের জ্ঞান এবং ঈশ্বরের প্রতিনিধি বা আদর্শ হওয়া, এই সব তত কমে যাচ্ছে। ঈশ্বর বর্তমান সমস্যা সমাধান করার জন্য ভাল ব্যক্তিকে খোঁজ করেন কিন্তু ইস্রায়েল দেশের অবনতির কারণে ভাল নেতৃত্বের প্রাপ্যতাও কমে যাচ্ছে। প্রথম ৪জন বিচারক (অর্থাৎ অৎনীয়েল, এহূদ, দবোরা ও গিদিয়োন) বেশ ভালভাবে তাদের ভূমিকা পালন করেন, অর্থাৎ তারা শত্রুদেরকে পরাজিত করেন, শান্তি পুনরায় স্থাপন করেন এবং সাধারণ জীবন-যাপনে ফিরে যান।
  • গিদিয়েনের বেলায় দেখা যায় যে, তার তেমন বিশ্বাস নেই যে, তিনি ঈশ্বরের আদেশ অনুসারে কাজটি সাধন করতে সক্ষম হবেন। ঈশ্বর তাকে সেনা কমাতে বলেন, কারণ ৩০০ সেনা দ্বারা জয়লাভ করার মাধ্যমে গিদিয়োন নিজেই এবং ইস্রায়েলে সবাই জানতে পারবে যে, এই জযটি সয়ং ঈশ্বর সাধন করেছেন।
  • কিন্তু এই সব কিছুর পরেও ইস্রায়েলীয়েরা গিদিয়োনের দিকে তাকিয়ে তাকে রাজা বানাতে চায়, যার অর্থ এই যে, তারা এই জয়ের জন্য ঈশ্বরের চেয়ে গিদিয়োনকে বেশি সম্মান দেয়।
  • গিদিয়োনের যথেষ্ট ঈশ্বরের জ্ঞান আছে বলে, তিনি তাদের অনুরোধ অস্বীকার করেন। কিন্তু তার ছেলের এই প্রজ্ঞা আর থাকে না।
  • ইস্রায়েল গোষ্ঠিদের মধ্যে একতা ভাঙ্গার প্রথম চিহ্ন দেখা যায় যখন দবোরার ডাকে কিছু গোষ্ঠিগুলো সাড়া দিতে অস্বীকার করে (বিচার ৫)। একতা ভাঙ্গার পরবর্তী চিহ্ন দেখা যায়, যখন পশ্চিম মনঃশি গোষ্ঠি অবীমেলকের রাজত্ব সমর্থন করে (অবীমেলকের হয়তো সব গোষ্ঠিদের উপর রাজত্ব করার চিন্তা ছিল, বিচার ৯)। আরো একতা ভাঙ্গার চিহ্ন দেখা যায় যখন ইফ্রায়িম গোষ্ঠি দু’বার চরম মুহূর্তে অপমান ভাব দেখায় এবং এভাবে ইস্রায়েলকে বড় ঝুঁকিতে ফেলে (বিচার ৮, ১১)।
  • কিছু বছর পরে (রাজা রহবিয়ামের সময়ে) বিভেদটি বাস্তবে ঘটবে এবং ইস্রায়েলের একতা সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে যাবে।
শত্রুরা
  • লক্ষ্য করুন যে, বিচারকর্ত্তৃগণ পুস্তকে যত বার ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে শত্রু বা অত্যাচারী হয়ে ওঠে, তত বার বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর নিজেই শত্রুটি উঠিয়ে দিয়েছেন। ঈশ্বর তা-ই করেন ইস্রায়েলীয়দের সাবধানবাণী দেওয়ার জন্য যে, তারা তাঁর কাছ থেকে সরে গেছে।
  • শত্রুদের উপর বা শত্রুদের সামরিক ক্ষমতার উপর যে, গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এমন নয়। বরং গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, ইস্রায়েল জাতি হিসাবে ঈশ্বরকে ও তাঁর আইন-কানুনকে অগ্রাহ্য করছে। তারা আর ঈশ্বরের লোক হিসাবে জীবন-যাপন করে না। যখন ইস্রায়েল জাতি অনুতপ্ত হয়, শুধুমাত্র তখনই ঈশ্বর তাদেরকে উদ্ধার করেন।
ঈশ্বর
  • ইস্রায়েল জাতি যখন দুরাবস্থায় পড়ে, তখন ঈশ্বর যে সরাসরি হাত দেন, এমন নয়। বরং ঈশ্বর ইস্রায়েলের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে চেষ্টা করেন। তিনি তাদেরকে আইন-কানুন স্মরণ করিয়ে দেন, সাবধানবাণী দেন, নেতাদের ও ভাববাদীদের উঠিয়ে দেন, আশ্চর্য কাজ করেন এবং তাদেরকে আংশিক বিচারে ভুগতে দেন। এই সব তিনি সেই আশায় করেন যে, তারা বুঝবে এবং মন ফিরাবে। কিন্তু সময় যত আগাচ্ছে তত তাদের সাড়া বা অনুতাপ কম দেখা যায়।
  • এই পুস্তকে আমরা ইস্রায়েলের ইতিহাসের বাস্তব বর্ণনা পাই, অর্থাৎ ইস্রায়েল জাতির পাপ, জেদ ও মুর্খতা পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। চিন্তু করুন, একটি জাতি যদি নিজের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে, তারা কি নিজের মুর্খতা, দুর্বলতা ও অন্যায় কাজ এত খোলামেলাভাবে প্রকাশ করবে? মতেই না। বাইবেলে ইতিহাসের অতি সৎ বর্ণনা দেখেই আমরা প্রমাণ পাই যে, বাইবেল মানুষ দ্বারা নয় বরং ঈশ্বরের আত্মার পরিচালনায় লেখা হয়েছে।
বিচারকর্ত্তৃগণ পুস্তকে পুনরুক্তি বিষয় “তখনও রাজা ছিল না”
  • বিচারকর্ত্তৃগণ পুস্তকে ৪ বার (বিচার ১৭:৬, ১৮:১, ১৯:১, ২১:২৫) এই বাক্যটি পুনরুক্তি করে বলে হয়েছে: “ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে তখনও কোন রাজা ছিল না। যে যা ভাল মনে করত তা-ই করত।”
  • আমাদের আধুনিক চিন্তা অনুসারে আমরা পদটি কিভাবে বুঝি? আমরা বলি:
    • যখন শত্রুরা আক্রমণ করে তখন আমাদের কি দরকার? > একজন শক্তিশালী নেতা!
    • যখন জাতির অবস্থা খারাপ থেকে আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে তখন সমাধান কি? একজন ভাল রাজা!
    • যখন দেশে আইন-শৃঙ্ক্ষলা ভেঙ্গে যায় তখন সামধান কি? > একজন ভাল নেতা! শক্তিশালী একটি সরকার!
  • কিন্তু সাবধাণ! বিচারকর্ত্তৃগণ পুস্তকে আমাদের ঠিক বিপরীত ছবি দেখায়: আমরা শক্তিশালী নেতার অভাবে ভুগছি না, আমরা অনুতাপ ও নৈতিকতার অভাবে ভুগছি!
  • কিন্তু তাহলে এই পুরুক্তি বাক্য “ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে তখনও কোন রাজা ছিল না। যে যা ভাল মনে করত তা-ই করত” কি বুঝায়?
  • পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, যখন লেখক বিচারকর্ত্তৃগণ পুস্তক লেখেন তখন ইস্রায়েল ঠিকই রাজা দিয়ে শাসিত ছিল। তাই আমরা নিশ্চিত জানি যে, পুস্তকটি লেখা হয়েছে যখন ইস্রায়েল একটি রাজতন্ত্র ছিল।
  • দেখা যায় যে, লেখক (সম্ভবত ভাববাদী শমূয়েল) পুস্তকটি লেখেন, তখন তিনি বর্তমান রাজাকে (রাজা শৌল, রাজা দায়ূদ) ইস্রায়েলের ইতিহাস থেকে শেখাতে চান, ঈশ্বর আসলে কি চান – এবং নেতা হিসাবে তার ভূমিকা কি হওয়া উচিত। পুস্তকটি রাজাদেরকে শিক্ষা, সাবধানবাণী ও অনুপ্রেরণা দেন যেন তারা দেশের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর চান নি যে, ইস্রায়েল একটি রাজতন্ত্রে পরিণত হয়, কিন্তু যেহেতু ইস্রায়েল জাতি তা দাবি করেছিল এবং তা এখন বাস্তায়ন হয়েছে, সেহেতু এখন রাজার বুঝা প্রয়োজন, ঈশ্বর কি চান। শমূয়েল রাজাদেরকে ভাল আচরণে ও দায়বদ্ধতায় আহ্বান করেন।

বিচারকর্ত্তৃগণ পুস্তকে আত্মিক নেতাদের ভূমিকা ও প্রভাব

  • একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকে গেছে: ইস্রায়েল জাতির ইতিহাসে আত্মিক নেতাদের, অর্থাৎ পুরোহিত ও লেবীয়দের ভূমিকা কি ছিল?
  • বিচারকর্ত্তৃগণের শেষে দু’টি অত্যন্ত খারাপ গল্প পাওয়া যায়। উভয় গল্পে একজন লেবীয় হল প্রধান ব্যক্তি:
মীখা ও তার লেবীয়ের গল্প                                                    (বিচার ১৭-১৮)
  • মীখা নামে ইফ্রয়িম গোষ্ঠির একজন লোক তার মায়ের অনেক রূপা চুরি করে। পরবর্তীতে সে তার অপরাধ স্বীকার করে। তার মা তাকে ক্ষমা করে। মীখা ও তার মা এই রূপা দিয়ে একটি রূপার মূর্তি বানায়। তারা তাদের বাড়ীতে একটি পূজার স্থানে তৈরি করে এবং নিজের পরিবারের একজন ছেলে পুরোহিত হিসাবে রেখে মূর্তিপূজা শুরু করে। এক দিন কাজের খোঁজে যিহূদা থেকে একজন লেবীয় ব্যক্তি মীখার বাড়িতে আসে এবং মীখা নিজেকে ধন্য মনে করে তাকে রূপার মূর্তির পুরোহিত হিসাবে গ্রহণ করে। এভাবে লেবিয়টি মীখার বাড়িতে থাকে। পরবর্তীতে দান গোষ্ঠির কিছু সেনারা উত্তরে নতুন জমি আবিষ্কার করার অনুসন্ধানে মীখার বাড়ীতে এক রাত কেটে লেবীয় ব্যক্তির সাথে পরিচিত হয়। তারা মীখার প্রতিমা থেকে পরামর্শ চায় এবং ভাল উত্তর পেয়ে খুশি হয়। পরে, যখন তারা বড় সৈন্যদল নিয়ে জমি দখর করার জন্য আবারও উত্তরদিকে যাত্রা করে, তারা মীখার মন্দির ও প্রতিমা লুট করে এবং তারা লেবীয়কে নিয়ে গিয়ে তাকে তাদের গোষ্ঠির পুরোহিত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে। মীখা যখন আপত্তি ওঠাতে চেষ্টা করে তারা তাকে হুমকি দেয় এবং তার দাবি অগ্রাহ্য করে চলে যায়।
  • এই গল্পটি প্রকাশ করে, ইস্রায়েল জাতির পতন কত দূরে! তারা ঈশ্বরকে ভয়ও করে না, তাঁর আইন-কানুন জানেও না, মানেও না। গল্পে প্রায় প্রতেক্যটি ব্যক্তির প্রায় প্রত্যেকটি আচরণ হল আইন ভাঙ্গার।
  • গল্পরে শেষে লেখক এই কথা বলে পাঠকদের আচমকায় (বিচার ১৮:৩০): “দান-গোষ্ঠীর লোকেরা সেখানে নিজেদের জন্য সেই খোদাই করা প্রতিমাটা স্থাপন করল। দেশের লোকেরা বন্দীদশায় না যাওয়া পর্যন্ত দান-গোষ্ঠীর লোকদের জন্য যোনাথন ও তার বংশধরেরা পুরোহিতের কাজ করত। যোনাথন ছিল গের্শোম বংশের আর গের্শোম ছিল মোশির ছেলে।”
  • সর্বনাশ! সেই সুবিধাবাদি লেবীয় ব্যক্তি যে দান গোষ্ঠির নকল প্রতিমার ‘পুরোহিত’ হয়ে যায়, সে হল মোশির নাতি! আরো দেখা যায় যে, দান গোষ্ঠি ইতিমধ্যে দেবতাপূজায় লিপ্ত এবং কিছু বছর পরে দান শহরে স্থাপিত একটি পূজা ইস্রায়েলের জন্য ফাঁদে পরিণত হবে (১ রাজা ১২:২৫-৩৩)।
  • ঈশ্বর এবং পুস্তকের লেখক এখানে খুব অন্ধকার একটি ছবি দেখান: লেবীয়েরা, পুরোহিতেরা এবং ইস্রায়েল জাতির লোকেরা দুরাবস্থায়। তারা দেবতাপূজা প্রতিষ্ঠিত করে এবং গোটা গোষ্ঠি হারিয়ে যাওয়ার পথে।
একজন লেবীয় ব্যক্তি, তার উপস্ত্রী ও বিন্যামিন গোষ্ঠির গণহত্যার গল্প                (বিচার ১৯-২১)
  • ইফ্রায়িমে বাসকারী একজন লেবীয় ব্যক্তির একজন উপস্ত্রী আছে। উপস্ত্রী তার কাছ থেকে পালিয়ে গিয়ে বৈথলেহেমে নিজের পরিবারের কাছে ফিরে যায়। লেবীয় ব্যক্তি তাকে ওখান থেকে আবার নিয়ে আসে কিন্তু যাত্রা করতে করতে রাত পড়ে। তারা বিন্যামিন গোষ্ঠির গিবেয়া শহরে পৌঁছিয়ে, সেখানকার একজন বুড়ো তাদেরকে নিজের বাড়ীতে থাকতে দেয়। কিন্তু রাতে শহরের দুষ্ট পুরুষেরা বুড়োর বাড়ীতে এসে লেবীয় পুরুষকে যৌন সম্পর্কের জন্য দাবি করে। বুড়ো তাদেরকে প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করে কিন্তু লেবীয় তাদের হাতে নিজের উপস্ত্রীকে দেয়। তারা সারা রাত ধরে তার উপস্ত্রীকে ধর্ষণ করতে থাকে এবং মহিলাটি শেষে বুড়োর চৌকাঠে মারা যায়।
  • লেবীয় ব্যক্তি তার উপস্ত্রীর লাশ ১২ ভাগে ভাগ করে ইস্রায়েলের প্রত্যেকটি গোষ্ঠিকে এক একটা টুকরা পাঠিয়ে এই ঘটনার বিচার দাবি করে। ১২ গোষ্ঠি মিস্পা শহরে একত্রিত হয়। তারা বিন্যামিন গোষ্ঠির প্রতিনিধি না ডেকে ও তাদের সাক্ষ্য না নিয়ে ঘটনাটির বিচার দাবি করে।
  • বিন্যামিন গোষ্ঠির নেতারা তাদের দাবি অস্বীকার করে এবং উত্তরে ১২ গোষ্ঠিগুলোদের আক্রমণ করে। ঝগড়াটি একটি অতি দুঃখের গৃহযুদ্ধে পরিণত হয় যাতে বিন্যামিন গোষ্ঠির পাশে ৪৩’১০০ এবং অন্যান্য গোষ্ঠির পাশে ৪০’০০০ সেনা মারা যায়। এভাবে বিন্যামিন গোষ্ঠির প্রায় সব পুরুষরা ধ্বংস হয়ে যায়। তখন ১২ গোষ্ঠিরা আফসোস করে আর একটি শহর থেকে কিছু মেয়েদের অপহরণ করে এদেরকে বিন্যামিন গোষ্ঠির পুরুষদেরকে স্ত্রী হিসাবে দিয়ে দেয়। গল্পটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুঃখজনক ছাড়া আর কিছু নয়।
  • এই দ্বিতীয় গল্পেও লেখক পাঠকদের আচমকানোর মত কিছু বলেন: এই গল্পটি ঘটে যখন হারোণের নাতী ও ইলীয়েসরের ছেলে পীনহস মহাপুরোহিত (বিচার ২০:১৪), অর্থাৎ এই ঘটনা বিচারকর্ত্তৃগণ পুস্তকে বর্ণিত ইতিহাসের শুরুর দিকে ঘটে। পীনহসের শহর গিবেয়া, হয়তো সেই একই গিবেয়া??
সারাংশ
  • পুস্তকের শেষে এই দু’টি গল্প ইস্রায়েলের আত্মিক অবস্থা সম্বন্ধে এবং আরো বেশি ইস্রায়েলের আত্মিক নেতাদের সম্বন্ধে একটি অতি অন্ধকার ছবি দেখায়। দু’টি গল্প একজন লেবীয় লোক অত্যন্ত দুঃখের ভূমিকা পালন করে।
  • ইস্রায়েলীয়রা যখন ঈশ্বর থেকে সরে গিয়ে দেবতাপূজারী হয়ে যায়, যখন তারা ঈশ্বরের আইন-কানুন আর জানে না ও আর মানে না, তখন একটি নৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবনতি ঘটে।