ইন্ডাক্টিভ বাইবেল অধ্যয়ন কেন?

আজকাল চার্চে বেশিরভাগ প্রচার ও শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে এবং অধিকাংশ থিয়লজিকেল প্রশিক্ষণে ‘বিষয়ভিত্তিক অধ্যয়ন পদ্ধতি’ ব্যবহার করা হয় (ডিডাক্টিভ্ অধ্যয়ন পদ্ধতি)।
এই পদ্ধতি অনুসারে আমি প্রচারক বা শিক্ষক হিসাবে প্রথম একটি বিষয় পছন্দ করি (যোমন: ‘কিভাবে পরিত্রাণ পেতে পারি?’, ‘কার্যকারী প্রার্থনা’, ‘ক্ষমা করার গুরুত্ব’ ইত্যাদি)। পরবর্তীতে আমি বিভিন্ন পুস্তকে থেকে এই বিষয় সম্বন্ধীয় কিছু না কিছু বাইবেল পদ খুঁজে বের করি এবং সেগুলো অধ্যয়ন করে প্রচার বা শিক্ষা সাজিয়ে লিখি।
এই পদ্ধতিতে অধ্যয়ন করলে যদিও পছন্দ করা বিষয় সম্বন্ধে অনেক কিছু শেখা যায় তবুও পদ্ধতিটির কিছু বড় দুর্বলতা আছে:

  • প্রথমতঃ আগে থেকে যা জানি, শিখেছি বা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি তা অনুসারে আমি প্রচারের বিষয় পছন্দ করি – কিন্তু হয়তো বাইবেলে অনেক বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে যেগুলো আমি কখনও লক্ষ্য করতে শিখি নি এবং যেগুলোর গুরুত্ব আমি এখনও বুঝি নি। ডিডাক্টিভ্ পদ্ধতিতে অনেক (!) বিষয় বাদ পড়তে পারে যা নিয়ে আমি সচেতন নই, তাই সেগুলো পছন্দ করি না এবং এভাবে সেগুলোর অধ্যয়নও করি না।
  • দ্বিতীয়তঃ এই পদ্ধতিতে আমি বেশিরভাগ সময় একটি দু’টি পুস্তক থেকে একটি দু’টি বাইবেল পদ পছন্দ করি – কিন্তু কোথা থেকে সেগুলো তুলে নিচ্ছি, সেই পদগুলোর পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা অন্য বিষয়ের সাথে পদগুলোর সংযোগ আমি লক্ষ্য করছি না। ফলে পদগুলো বুঝার ক্ষেত্রে এবং অন্য বিষয়গুলোর সাথে তার সংযোগ বুঝার ক্ষেত্রে আমি বেশি গভীরে যাই না। এভাবে অধ্যয়ন করলে আমি অনেক কিছু হারাই, আমি এমন কি পদগুলো সম্পূর্ণ ভুলভাবে ব্যাখ্যাও করতে পারি। টুকরা টুকরা করে পদগুলো নেওয়ার কারণে সম্ভাবনা আছে যে, আমি ভুল ব্যাখ্যায়, ভারসাম্য ছাড়া মতবাদে বা এমন কি প্রতারণায় পড়ি।

একটি উপমা: যদি কেউ আপনাকে যোহন ৩:১৬ পদ মুখস্ত করে বলতে চ্যালেঞ্জ করা হয় তবে সম্ভাবনা বেশি যে আপনি তা পারেন। কিন্তু যদি কেউ আপনাকে যোহন ৩:১৭ পদ মুখস্ত করে বলতে চ্যালেঞ্জ করা হয় তবে সম্ভাবনা বেশি যে আপনি তা পারেন না, যোহন ৩:১৫ পদও বলতে পারেন না। যদি আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়: এই নামকরা ৩:১৬ পদ কি প্রথম বলেছিলেন তবে অনেকে হয়তো উত্তরে বলবে ‘যীশু’। যদি জিজ্ঞাসা করেন কার সাথে যীশু সেই সময় কথা বলেছিলেন, আরো কম লোম উত্তর দিতে সক্ষম হবে। কিন্তু আমরা কিভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ৩:১৬ পদ গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ৩:১৫ বা ৩:১৭ পদের গুরুত্ব নেই? যীশু তো ৩টি পদ বলেছেন? যোহন ৩:১৬ পদ অবশ্যই সুন্দর, কিন্তু কোন ভিত্তিতে আমরা যীশুর এক কথা নিচ্ছি এবং কতগুলো কথায় গুরুত্ব দেই না?
কিন্তু ডিডাক্টিভ বাইবেল অধ্যয়নের এই দুর্বলতাগুলো বা বিপদগুলো এড়িয়ে চলতে পারি? আমাদের প্রস্থাব: ইন্ডাক্টিভ বাইবেল অধয়ন পদ্ধতি দ্বারা।

ইন্ডাক্টিভ বাইবেল অধ্যয়ন

এই ধরণের দুর্বলতা বা বিপদ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ইন্ডাক্টিভ বাইবেল অধ্যয়নে এখান সেখান থেকে পদ বা বিষয় পছন্দ করার চেয়ে যদি আমি সম্পূর্ণ বাইবেল, বাইবেলের প্রত্যেকটি পুস্তক এবং পদগুলোর সম্পূর্ণ পারিপার্শ্বিক অবস্থা অধ্যয়ন করি। এভাবে নিরাপত্তা বেশি কারণ বাইবেল তো ঠিক এই: যে সত্যগুলো ঈশ্বর মানুষদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন বলেন, এর একটি সংগ্রহ। যদি আমরা বেশ কিছু পুস্তক সম্পূর্ণভাবে বাদ দেই, যদি আমরা পুস্তকের বেশিরভাগ অংশ বাদ দেই, যদি আমরা শুধু যেখান সেখান থেকে একটি দু’টি পদ বেছে নেই তবে আমাদের প্রচারে কিভাবে গভীরতা থাকে? অনেক বিশ্বাসীরা বাইবেলের ২০% পড়ে, কিন্তু ৮০% লেখা পড়ে না, বুঝে না এবং এর গুরুত্ব জানেও না।
একারণে ইণ্ডাক্টিভভাবে অধ্যয়ন করতে গেলে বাইবেলের প্রত্যেকটি পুস্তক এবং সম্পূর্ণ পুস্তকটি অধ্যয়ন করা হয়। প্রত্যেকটি পুস্তকের একজন নির্দিষ্ট লেখক আছে, যিনি নির্দিষ্ট লোকদের জন্য লেখেন, এমন লোক যারা নিজেকে একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে খুঁজে পায়। তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করার এবং তাদের প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্যই লেখক পুস্তকটি লিখেছেন – কেবলমাত্র যদি আমরা পুস্তকের লেখক ও পাঠকদের পরিস্থিতি লক্ষ্য করি তবে আমরা পুস্তকটি আরো ভালভাবে বুঝতে পারি। একারণে যদি আমি এখান থেকে সেখান থেকে একটি দু’টি পদ মাত্র নিচ্ছি, আমার প্রচারে বা শিক্ষায় গভীরতা থাকে না এবং আমি ঈশ্বরের সত্যগুলো থেকে অনেক কিছু হারাব।

এই ওয়েবসাইট

আপনি যেন বাইবেল পাঠে বা বাইবেল অধ্যয়ন করার সময়ে আরো অনেক কিছু পেতে পারেন, এরজন্য এই ওয়েবসাইটে বাইবেলের প্রত্যেকটি পুস্তক সম্বন্ধীয় সাহায্যকারী তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক পুস্তকটির লেখক, পাঠকেরা এবং তাদের ঐতিহাসিক পরিস্থিত সম্বন্ধে অনেক ঐতিহাসিক তথ্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেকটি পুস্তকের মূল বিষয়গুলোর সাহায্যকারী আলোচনা দেখানো হয়েছে। তথ্যগুলো ৪টি স্তরে উপস্থাপনা করা হয়েছে:

  • ১ পুস্তকের মূল চিন্তা                               “৩ সেকেন্ডের সারাংশ”
  • ২ পুস্তকের প্রধান বিষয়গুলো                        “৩ মিনিটের সারাংশ”
  • ৩ পুস্তকের ঐতিহাসিক পরিস্থিতি এবং মূল বিষয়গুলো  “৩০ মিনিটের সারাংশ”
  • ৪ পুস্তক নিয়ে বিস্তারিত অধ্যয়ন                     “বিস্তারিত অধ্যয়ন”            ইংরেজি মাত্র।

আমাদের প্রার্থনা এই যে বইয়ে দেওয়া তথ্য ও চিন্তাগুলো আপনার বাইবেলে অধ্যয়নের জন্য সাহায্যকারী হবে।

ইন্ডাক্টিভ বাইবেল অধ্যয়ন কিভাবে করব?

নিচে বাইবেলের কয়েকটি পুস্তক নিয়ে ইন্ডাক্টিভ অধ্যয়ন করার জন্য ধাপ পর ধাপ ব্যভহারিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভাল হয় যদি ছোট একটি পুস্তকে দিয়ে শুরু করেন (ফিলীমন) এবং পরবর্তীতে আরো বড় পুস্তকগুলো হাতে নেন। আমরা শীঘ্রই পুরাতন নিয়মের পুস্তকও এই ওয়াবসাইটে দিতে চাই।