তীত পুস্তকের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ
শিক্ষা
আমরা তীত পুস্তকে বিভিন্ন ধরণের লক্ষ্য করেছি এবং পুস্তকের পিছনে ঘটনা ও ঐতিহাসিক পরিস্থিতি বুঝে নিলাম। এখন আমরা পুস্তকের কয়েকটি প্রধান বিষয়ের উভয় ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ করব। তীত পুস্তক থেকে প্রয়োগ করা তেমন কঠিন বিষয় নয় কারণ সেই যুগের ক্রীটীয় সমাজ এবং আধুনিক সমাজের অনেক মিল আছে। পৌল ক্রীটীয় বিশ্বাসীদের চরিত্র, ব্যবহার ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে কি বলেন, তা আমাদের জন্যও প্রযোজ্য।
প্রথম অনুচ্ছেদ
নির্দেশনা
তীত ১:১-৪ পদ পড়ুন। অনুচ্ছেদটিতে বেশ কয়েকটি বিষয় দেখানো হয়েছে যা পুস্তকের প্রধান বিষয়ও বটে। চেষ্টা করুন যা বলা হয়েছে তা আঁকতে চেষ্টা করেন। নীচে দেওয়া প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করুন:
- পৌল নিজের পরিচয় কিভাবে দেন? নিজের বর্ণনায় ব্যবহৃত শব্দগুলোর ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করুন। কেন মনে করেন পৌল নিজের পরিচয় এভাবে দেন?
- পৌল কিভাবে তার প্রৈরিতিক অধিকার দেখান? কেন তিনি তা করেন?
- পৌলের আহ্বান কাদের জন্য?
- পৌল ঈশ্বরের বর্ণনা কিভাবে করেন? কেন মনে করেন তিনি তা বলেন?
- ‘সত্য জানা’, ‘ঈশ্বরভক্তি’ এবং ‘অনন্ত জীবন পাওয়ার আশা’, এই বিষয়ের মধ্যে লিংক ঠিক কি?
- অনুচ্ছেদের সংবাদ আঁকতে চেষ্টা করুন!
বিবেচনা করুন

- পৌল নিজের পরিচয়ে বলেন যে তিনি “ঈশ্বরের দাস” এবং “যীশু খ্রীষ্টের একজন প্রেরিত”। তিনি নম্রতা এবং তার প্রৈরীতিক অধিকার উভয় প্রকাশ করেন। শব্দগুলোর ধারাবাহিকতা গুরুত্বপূর্ণ: দাসের মনোভাবে থেকেই অধিকার আসে, যেমন যীশুও অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলেছেন: “কেউ যদি প্রধান হতে চায় তবে তাকে সবার শেষে থাকতে হবে এবং সকলের সেবাকারী হতে হবে” (মার্ক ৯:৩৫) এবং “তোমরা জান যে, অযিহূদীদের শাসনকর্তারা অযিহূদীদের প্রভু হয় এবং তাদের নেতারা তাদের উপর হুকুম চালায়। কিন্তু তোমাদের মধ্যে তা হওয়া উচিত নয়, বরং তোমাদের মধ্যে যে বড় হতে চায় তাকে তোমাদের সেবাকারী হতে হবে, আর যে প্রথম হতে চায় তাকে সকলের দাস হতে হবে” (মার্ক ১০:৪২-৪৪)। এভাবে যীশু সংজ্ঞা দেন যে নেতা হওয়া মানে দাস বা সেবাকারী হওয়া। এই বিষয় পুস্তকে বিভিন্ন সময়ে তোলা হবে, বিশেষভাবে যখন পৌল নির্দেশনা দেন, মণ্ডলীর নেতাদের কি কি চরিত্র ও বৈশিষ্ট দরকার: স্বার্থহীন সেবা ও স্বনিয়ন্ত্রণ (তীত ১:৫-৯, ২:১, ২:৭-৮)।
2. পৌল প্রেরিত হিসাবে তার অধিকার দাঁড় করান: “আমি পৌল … যীশু খ্রীষ্টের একজন প্রেরিত্ হয়েছি, …আমাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরের আদেশ মত আমি যা প্রচার করি তার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর তাঁর বাক্য ঠিক সময়েই প্রকাশ করেছেন”। তার সেই অধিকার তিনি তীতকে দান করেন (তীত ১:৫), যাকে তিনি “সত্যিকারের সন্তান” হিসাবে সুপারিশ করেন (তীত ১:৫)। পৌল নিশ্চিত করেন যে তার চলে যাওয়ার পরে যেন কোনো দ্বিদাদ্বন্দ্ব তৈরি না হয় বরং যেন ক্রীটীয় মণ্ডলীগুলো স্পষ্টভাবে জান, তীতের অধিকার এবং ভূমিকা কি।
3. পৌলের আহ্বান “ঈশ্বরের বাছাই করা লোকদের বিশ্বাসের পথে নিয়ে আসতে পারি, আর ঈশ্বরভক্তির সংগে যে সত্যের যোগ আছে সেই সত্যকে জানতে তাদের সাহায্য করতে পারি”। “ঈশ্বরের বাছাই করা লোক” মানে বিশ্বাসীরা বা মণ্ডলী। পৌলের আহ্বান – যেমন সব আহ্বান – নিজের জন্য না (যদিও আহ্বান হল আশীর্বাদের বিষয়) বরং অন্যদের জন্য। অব্রাহামকে আশীর্বাদ দেওয়া হয়েছিল যেন তিনি সব জাতির জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ান (আদি ১২:১-৩)। ইস্রায়েলকে একটি পুরোহিত জাতি হিসাবে আহ্বান করা হয়েছে যার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর অন্য জাতিদের কাছে প্রকাশিত হবে (যাত্রা ১৯:৪-৬, দ্বিঃবিঃ ৪:৬-৭)। যীশুকে সেবা পেতে আহ্বান করা হয় নি বরং সেবা করতে (মার্ক ১০:৪৫) এবং ঠিক তেমনি বিশ্বাসীদের আহ্বান করা হয়েছে যেন তার জাতিদের কাছে সাক্ষী হয় (প্রেরিত ১:৮)।

4. পৌল ঈশ্বরের চরিত্রের বর্ণনায় বলেন “ঈশ্বর, যিনি মিথ্যা বলেন না”। ক্রীট দ্বীপের প্রধান দেব জিউস মিথ্যা ও প্রতারণার জন্য বিখ্যাত ছিলেন এবং মিথ্যা সাধারণ লোকদেরমধ্যেও অত্যন্ত প্রচলিত ছিল বলে, পৌল ঈশ্বরের এই বর্ণনা শক্তিশালীভাবে দাঁড় করান। তিনি ক্রীটীয়দের দেখান যে আসল ঈশ্বর সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন। ঈশ্বর বিশ্বাসযোগ্য। তিনি চুক্তি পালনকারী ঈশ্বর এবং তিনি তার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেন। তিনি তাঁর কথা অনুসারে সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করবেন।
5. ‘সত্য জানা’, ‘ঈশ্বরভক্তি’ এবং ‘অনন্ত জীবন পাওয়ার আশা’, এই বিষয়ের মধ্যে লিংক ঠিক কি? পৌল সুখবর প্রচার দ্বারা চান যেন লোকেরা সত্য জানবে। সত্য জানা ও ঈশ্বরের ভক্তির সংযোগ থাকতে হবে। জ্ঞান যার প্রয়োগ বা চর্চা নেই, তা সত্যিকারের জ্ঞান নয়। সুখবর পাওয়া, সত্য জানা, বিশ্বাস করা – তার সাথে অবশ্যই জীবনের পরিবর্তন দরকার। এই পরিবর্তিত জীবন করার জন্য অনুপেরণা পাই জেনে যে অনন্ত জীবনের আশা আমাদের প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে।

মণ্ডলীর জন্য নেতৃত্ব
নেতাদের নিযুক্ত করার বিষয়ে পৌল কি বলেন, তা নিয়ে প্রথম দুটি সার্বিক লক্ষ্য করব, পরে উল্লিখিত গুনগুলো একটি পর একটি দেখব।
নির্দেশনা
তীত ১:৫-৯ পদ পড়ুন। চিন্তা করুন: পৌল তীতকে কি করতে বলেন? কি ধরণের লোক নিযুক্ত করতে বলেন? প্রধান নেতা এবং পরিচালক কি একই নেতার দু’টি বর্ণনা? না কি তা দুই স্তরের নেতৃত্ব বুঝায়?
বিবেচনা করুন
তীত ১:৫ পদে পৌল বলেন “আমি তোমাকে যে আদেশ দিয়েছিলাম সেই অনুসারে প্রত্যেক শহরের মণ্ডলীতে প্রধান নেতাদের কাজে বহাল কোরো”। “প্রধান নেতা” বলতে গ্রীক ভাষায় ব্যবহৃত শব্দ হল ‘প্রেসবুটেরস’ (presbyteros), যার অর্থ হল ‘প্রাচীন’। তীত ১:৭ পদে পৌল বলেন “ঈশ্বরের কাছ থেকে দায়িত্বভার পাওয়া লোক হিসাবে সেই পরিচালককে এমন হতে হবে …”। “পরিচালক” বলতে গ্রীক ভাষায় ব্যভহৃত শব্দ হল ‘এপিস্কপস্’ (episkopos), ইংরেজীতে ‘bishop’। কেউ কেউ বলেন যে গুনের সম্পূর্ণ তালিকাটি (তীত ১:৬-৯) মণ্ডলীর নেতাদের প্রযোজনীয় গুনাবলি দেখায়। আবারও কেউ কেউ বলেন যে তালিকার দুই ভাগ আছে, ‘প্রেসবুটেরস’ (নেতৃত্বের নিজের স্তর) হতে চাইলে তবে প্রয়োজনীয় গুণাবলি কি (তীত ১:৬-৭) এবং ‘এপিস্কপস’ (নেতৃত্বের উপরের স্তর) হতে চাইলে তবে প্রয়োজনীয় গুণাবলি কি (তীত ১:৭-৯)।
যদি পদগুলো দুইটি তালিকা হিসাবে ধরেন, তবে আর একটি মজার বিষয় লক্ষ্য করুন: নিজের স্তরের নেতাদের জন্য ৫টি প্রয়োজনীয় গুণ উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু উপরের স্তরের নেতাদের জন্য ১৪টি প্রয়োজনীয় গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে একটি নীতি প্রকাশ পায়: নেতার স্তর যত উঁচু তত বেশি গুণ প্রয়োজন। নেতৃত্ব যত উঁচু তত বেশি ঈশ্বরের দাবি বা শর্ত। এইটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ অনেক বার আমরা স্বভাবিকভাবে চিন্তা করি যে নেতা যত উঁচু হন, তিনি তত বেশি ‘যা চান তাই’ করতে পারেন। কিন্তু ঈশ্বর ঠিক বিপরীত বলেন: একজন নেতা যত উঁচু (তার প্রভাব ও ক্ষমতা বেশি) – তত কঠোরভাবে ঈশ্বর তার চরিত্র-আচরণের উপর দাবি রাখনে, কারণ নেতার ব্যবহার খারাপ হলে তবে আরো বেশি লোক আরো বেশি করে আঘাত ও ক্ষতি পায়।
একই নীতি যাকোব চিঠিতে এভাবে প্রকাশ পায়: “আমার ভাইয়েরা, তোমাদের মধ্যে সকলেই শিক্ষক হতে যেয়ো না, কারণ তোমরা তো জান, আমরা শিক্ষক বলে অন্যদের চেয়ে আমাদের আরও কঠিন ভাবে বিচার করা হবে” (যাকোব ৩:১)। যে নেতা নিজের ইচ্ছায় চলে, কাউকে মানে না, দায়বদ্ধ হতে চায় না, সংশোধনের জন্য সুযোগ দেয় না, সে ঈশ্বরীয় নেতা নয়।
নির্দেশনা
বিবেচনা করুন
প্রধান নেতা / প্রাচীন / ‘প্রেসবুটেরস্’ / elders তীত ১:৫-৬
নির্দেশনা
তীত ১:৫-৬ পদ আর একবার পড়ুন। চিন্তা করুন: যতটা গুণ উল্লিখিত তত গুণ নিয়ে চিন্তা করেন: গুণটি কেন প্রয়োজন? গুণটি নেতার থাকলে তবে ফলাফলে কি দেখা যাবে? গুণটি না থাকলে তবে কি কি সমস্যা হতে পারে?
বিবেচনা করুন
- “কেউ তার নিন্দা করতে পারে না / অনিন্দনীয়”: এর অর্থ এই নয় যে, নেতাকে পাপহীন হতে হবে বরং যেন নেতা একটি সৎ, স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ জীবন করেন, চেতনায় সাড়া দেন এবং পাপে পড়লে অনুতপ্ত হন।
- “মাত্র একজন স্ত্রী থাকবে”। এই কথার অর্থ কি? তা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। কেউ কেউ বলে: এর অর্থ হল যে শুধুমাত্র পুরুষ প্রাচীন হতে পারে। কেউ কেউ বলে: এর অর্থ এই যে, শুধুমাত্র বিবাহিত ব্যক্তি প্রাচীন হতে পারে। যদি তা-ই হয় তবে একজন প্রাচীনের স্ত্রী মারা গেলে তাকে নেতৃত্ব থেকে বাদ দিতে হত এবং পৌল বা যীশুকেও অবিবাহিত ব্যক্তি হিসাবে নেতা হতে যোগ্য নন। দেখা যায় যে, ব্যাখ্যাটি অতি সরু। তবে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? “মাত্র একজন স্ত্রী থাকবে” মানে প্রাচীনকে একবিবাহের লোক হতে হবে, যৌন ক্ষেত্রে স্বনিয়ন্ত্রিত ও বিবাহে সমর্পিত হতে হবে। একজন বহুবিবাহের লোক বিশ্বাসী হওয়ার পরে স্ত্রী-ত্যাগ করতে হবে, এমন নয়, কিন্তু বহুবিবাহের লোককে আদর্শ হিসাবে দাঁড় করানো যায় না। তবে এই কথার অর্থ এই নয় যে, নেতার পুরুষ হতে হবে বা বিবাহিত হতে হবে বরং যে, যৌন ক্ষেত্রে অনিন্দনীয় হতে হবে: বিবাহিত হলে আপন পাত্রের প্রতি বিশ্বস্ত এবং অবিবাহিত হলে তবে যৌনত্যাগ। কিন্তু ঈশ্বরীয় চরিত্রের অবিবাহিত একজন মহিলা, একজন বিপত্নীক বা বিধবা অবশ্যই প্রাচীন হতে পারে।
- “তার ছেলেমেয়ে যেন খ্রীষ্টে বিশ্বাসী হয়, যেন তারা নিজেদের খুশীমত না চলে এবং অবাধ্য না হয়”: এমন একজনকে নেতা হিসাবে নিযুক্ত করা দরকার যিনি ইতিমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছেন। যদি একজন তার নিজের পরিবারকে ভাল নেতৃত্ব দিতে না পারে তবে সে অন্যদেরকে কিভাবে নেতৃত্ব দেবে? এই পদের কারণে প্রায়ই পালক বা নেতাদের ছেলে-মেয়েদের উপর অনেক চাপ সৃষ্টি হয়, মনে করে যে তাদের সব কিছু মেনে নিতে হয় যেন বাবার সম্মান নষ্ট না হয়। কিন্তু এই পদে উল্লিখিত নীতিটি ছেলে-মেয়েদের উপর চাপ দেওয়ার চেয়ে মা-বাবার উপর দায়িত্ব দেয়। নেতা হিসাবে তাদের আদর্শ হওয়া দরকার এবং পরিবারে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত যাতে ছেলে-মেয়েরা উৎসাহ পায়, ফুটে উঠে এবং স্বাধীনভাবে একটি ঈশ্বরীয় জীবন পছন্দ করে।
পরিচালক / ধনাধক্ষ্য / ‘এপিস্কপস’ / bishop তীত ১:৭-১০
নির্দেশনা
তীত ১:৭-১০ পদ আর একবার পড়ুন। চিন্তা করুন: যতটা গুণ উল্লিখিত তত গুণ নিয়ে চিন্তা করেন: গুণটি কেন প্রয়োজন? গুণটি নেতার থাকলে তবে ফলাফলে কি দেখা যাবে? গুণটি না থাকলে তবে কি কি সমস্যা হতে পারে?
বিবেচনা করুন
- “দায়িত্বভার পাওয়া লোক”: মানে এই না যে তিনি সবার মালিক, অর্থাৎ ‘যা ইচ্ছা তা-ই’ করতে পারেন। দায়িত্বভার পাওয়া লোককে ঈশ্বর থেকে অধিকার দেওয়া হয়েছে কিন্তু তিনি ঈশ্বরের অধীনে বলে তাঁর কাছে দায়বদ্ধ। তার কাজ হল দায়িত্বশীল ও যত্নশীল হওয়া, যেন তার অধীনে লোকেরা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে বৃদ্ধি পায় এবং ফলবান বিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
- “একগুঁয়ে না হওয়া”: একগুঁয়ে মানে এমন একজন যিনি শুধুমাত্র নিজের সিদ্ধান্তে গুরুত্ব দেয়, অন্যদের চিন্তা বা মত বিবেচনা করে না, জেদী হয় ও নিজের ইচ্ছা পূর্ণ করতে ব্যস্ত থাকে। তাই একগুঁয়ে না হওয়া মানে অন্যদের কথা ভালভাবে শোনা, আত্ম-কেন্দ্রিক না হওয়া এবং নিজের বিষয়ে মূল্যায়ন বা সংশোধন গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হওয়া।
- “রাগী না হওয়া”: রাগান্বিত মানুষ ভয়ংকর। রাগ দ্বারা রাগীরা নিজের ইচ্ছা বিস্তার করে এবং অন্যদের বশে আনে। রাগী হওয়া মানে স্বনিয়ন্ত্রণ হারানো। ফলে ভয়ের ও অনিশ্চয়তার একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়: কেউ জানে না পরের মুহূর্তে কি যে ঘটবে! মাসের পর মাস ভাল ব্যবহার দ্বারা যে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা হয়, তা এক মুহূর্তের রাগ প্রকাশে নষ্ট হতে পারে। স্বনিয়ন্ত্রণ হারানো মানে বিশ্বাস ও বিশ্বাসযোগ্যতা ভাঙ্গা। আবেগ হিসাবে যে কোন একজনের কোন কারণে রাগ লাগতে পারে, কিন্তু একজন নেতার জন্য পুনরুক্তি বা ইচ্ছাকৃতভাবে রাগ দেখানো চলবে না।
- “মাতাল না হওয়া”: কেউ কেউ বলে এই কথার অর্থ হল মদ খাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। অনেকে বলে যে, মদ খাওয়ার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় নি বরং মাতাল হওয়া, স্বনিয়ন্ত্রণ হারানো বা আসক্ত হওয়ার নিষেধাজ্ঞা। আসক্ত হওয়া মানে ভুল বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া, নিজের ইচ্ছা পূর্ণ করতে ব্যস্ত থাকা, অর্থাৎ না পেলে রাগ প্রকাশ। আসক্ত মানুষ প্রায়ই প্রতিজ্ঞা ভেঙ্গে দেয় এবং এভাবে নির্ভরযোগ্যতা হারায়। মাতাল লোকদের ছেলে-মেয়েরা কখনও জানে না বাসায় ফিরলে তারা বাবাকে (বা মাকে) কি অবস্থায় খুঁজে পাবে। সব কিছু ‘এক এক সময় এক এক রকম’, কথা বার বার ভাঙ্গা হয়। তারা ভয়ে ভয়ে বাস করে এবং প্রায়ই নির্যাতিত হয়।
- “বদমেজাজী না হওয়া” (ইংরেজীতে “হিংস্র না হওয়া”): তা হল রাগের আরো বড় পর্যায়: স্বীমানা পার হওয়া, অন্যদেরকে নিয়ন্ত্রণ বা দমন করা, হুমকি দিয়ে বশে আনা, মানসিক বা শারীরিক আঘাত করা। এই সব একজন নেতার ক্ষেত্রে কোনমতেই চলবে না।
- “অন্যায় লাভের ঝোঁকে না পড়া”: এইটি আবশ্যক বিষয়। যদি একজন নেতার মধ্যে লোভ কাজ করে তবে তার যত চমৎকার আহ্বান, অদ্ভুত তালন্ত বা সফল পরিচর্যা থাকুক না কেন, তা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে। যেমন প্রবাদ বলে: ‘টাকা-পয়সা হল ভাল দাস কিন্তু খারাপ মনিব’। কয়েকটি বিষয়গুলো মানুষের হৃদয়কে প্রলোভিত করে: কামনা, ক্ষমতার লোভ, ধন-সম্পত্তির প্রতি লোভ বা খ্যাঁতির
- “লোভ”। দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:১৬-২১ পদে ঈশ্বর রাজার ক্ষেত্রে এই চারটি বিষয় প্রতি লোভ নিষেধ করেন: বেশি স্ত্রী, বেশি ঘোড়া, বেশি ধন ও বেশি সম্মান।
অতিথি সেবাকে ভালাবাসা: নেতাকে একজন মিশুক, খোলা, আকাঙ্ক্ষী, গ্রহণকারী ও বড়-মনা ব্যক্তি হওয়া দরকার, যিনি নতুন বা অন্য বা ভিন্ন কিছু স্বাগতম জানাতে এবং অন্যদেরকে মুক্ত করতে আগ্রহী। - “দয়ার কাজকে ভালবাসা”: বাইবেলের সংজ্ঞা অনুসারে ভালবাসা মানেই অন্যদের সেবা করা ও তাদের মঙ্গল চাওয়া। নেতাকে একজন যত্নশীল ও সেবাকারী ব্যক্তি হতে হয়, যিনি অন্যদের বুঝতে পারেন, যত্ন নেন এবং স্বক্রিয়ভাবে অন্য মানুষদের প্রয়োজন মেটান। ভালবাসা হল ব্যবহারিক বিষয়।
- “ভাল বিচারবুদ্ধি”: নেতাকে প্রজ্ঞাপূর্ণ ও ঠাণ্ডা মাথার ব্যক্তি হওয়া দরকার, যিনি সুবিবেচক ও ন্যায্য। একজনের পক্ষ নেওয়া বা মনে করা যে ‘এ কোন ভুল করতে পারে না এবং ও কোন কিছু ঠিক করতে পারে না’, তা চলবে না।
- “সৎ”। নেতাকে হওয়া দরকার সৎ, খোলা ও স্বচ্ছ, এমন একজন যিনি সত্যে ও ভাল কাজ করতে সমর্পিত।
- “ঈশ্বরের বাধ্য”: নেতাকে হওয়া দরকার ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের বাধ্য ও সমর্পিত, বিশ্বস্ত এবং মনেপ্রাণের লোক। আদর্শ হিসাবে তাকে ঈশ্বরের ও তাঁর নীতির অত্যন্ত বাধ্য হতে হবে, এমন কি মানবীয় প্রতিষ্ঠা ও মানুষের প্রতি বাধ্য হওয়ার চেয়েও। আমরা বলি যে, অনুসরণকারীদের বাধ্য হওয়া দরকার কিন্তু ঈশ্বর আগে নেতাদেরকেই বাধ্য হতে বলেন। নিজেই বাধ্য না হলে তিনি নিজের অধিকার ভেঙ্গে দেন।
- “নিজেকে দমনে রাখা”: যদি একজন নেতাকে সুবিধার চেয়ে সত্যে সমর্পিত থাকতে হয়, নিজের স্বার্থের চেয়ে অন্যদের প্রয়োজন মেটাতে সমর্পিত থাকতে হয়, সেবা পাওয়ার চেয়ে অন্যদের মঙ্গল করার জন্য পরিশ্রমী হতে হয়, তবে তার ক্ষেত্রে স্বনিয়ন্ত্রণ বা নিজেকে দমনে রাখা আবশ্যক।
- “ঈশ্বরের বিশ্বাসযোগ্য বাক্য শক্ত করে ধরে রাখা”: একজন নেতার উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া এবং ভুল শিক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকা দরকার। তার সত্য জানা দরকার, তা চর্চা করা দরকার, অন্যদেরকে সত্য বুঝিয়ে দেওয়া এবং যুক্তি-তর্কে সত্যকে রক্ষা করার ক্ষমতাও থাকা দরকার। একজন নেতার ক্ষেত্রে ঈশ্বরীয় নীতির পক্ষে এবং ভ্রান্ত শিক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জ্ঞান-বুদ্ধি থাকা আবশ্যক।
পৌল যে গুণাবলি দাবি করেন, সেইগুলো হল ব্যবহারিক এবং আমাদের মণ্ডলীগুলোর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। গুণের এই তালিকা দেখে অনেকে ভয় পায় এবং উপসংহারে আসে যে তারা কখনও নেতৃত্বের জন্য উপযুক্ত হবে না। কিন্তু চিন্তা করেন যে ক্রীটীয় মণ্ডলীগুলো নতুন স্থাপিত, তাই অতি অভিজ্ঞ লোক পাওয়া যাবে না। আরো বিবেচনা করুন যে পৌল এখানে মাত্র নেতাদের নিযুক্তকরণ সম্বন্ধীয় নীতি দেন, তা নয়। তিনি এছাড়া মণ্ডলীতে সব বিশ্বাসীদের দেখান, আদর্শ বা ঈশ্বরেীয় চরিত্র ও আচার-ব্যবহার কেমন যেন তারা সেই দিকে তাদের নিজের চরিত্র উন্নত করতে থাকে। তাই যতজন ঈশ্বরীয় জীবন করতে এবং খ্রীষ্টেতে বৃদ্ধি পেতে চায় ততজনের জন্য তালিকাটি প্রযোজ্য। এছাড়া পৌল চান যেন ক্রীটীয় বিশ্বাসীরা বোঝে তীত কোন নীতি অনুসারে নেতাদের নিযুক্ত করতে যাচ্ছেন যেন তারা তাকে এই বিষয়ে সমর্থন করে এবং নিযুক্ত নেতাদের সুন্দরভাবে মেনে নেয়।
তীত তীত ১:৭-১০

নির্দেশনা
তীত ২:৭-৮ এবং ২:১৫ পদ পড়ুন। চিন্তা করুন: তীতের কাছে পৌল কি বলেন? মণ্ডলীতে তীতের ভূমিকার জন্য কথাগুলো কেন প্রয়োজন? তা থেকে কি শিখতে পারেন?
বিবেচনা করুন
নেতৃত্বের ক্ষেত্রে পৌল যা বলেছেন, কথাগুলো তার একটি সারাংশ: নেতা হিসাবে তার একটি চমৎকার আদর্শ এবং ঈশ্বরীয় জীবনের অধিকারী হতে হবে। যেহেতু পৌল তাকে ভাল নেতৃত্ব নিযুক্ত করতে বলেন, তার আদর্শ আচার-ব্যবহার আরো গুরুত্বপূর্ণ।
পদগুলোর মধ্য দিয়ে পৌল তীতকে উৎসাহও দেন: তীত নেতৃত্বের যোগ্য, পৌল তাকে নিজের অধিকার দান করেছেন এবং তার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন, ক্রীটীয় মণ্ডলীগুলোর জন্য তীত এখন একটি গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অতি লাজুক হওয়া যাবে না বরং দাঁড়িয়ে ভূমিকাটি পালন করা দর্কার। লক্ষ্য করুন যে বাইবেলে অধিকার কখনও ‘নেওয়া’ হয় না, দখল করাও যায় না বরং অধিকার সব সময় দেওয়া হয়। ঈশ্বর ভাল চরিত্রের মানুষকে অধিকার দান করেন, এবং মণ্ডলীর সদস্যেরা একজনের ভাল চরিত্র দেখে তাকে অধিকারতা দান করেন।
মণ্ডলীতে বিভিন্ন দল তীত ২:২-১০

বৃদ্ধেরা

নির্দেশনা
তীত ২:২ পড়ুন। চিন্তা করুন: বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে পৌল কি গুণটি উল্লেখ করেন? গুণগুলো থাকলে তবে কি ভাল ফলাফলে দেখা যাবে? গুণগুলো না থাকলে তবে কি কি সমস্যা হতে পারে?
বিবেচনা করুন
- “নিজেকে দমনে রাখা”: লক্ষণীয় বিষয় যে, পৌল এটাই প্রথম উল্লেখ করেন। পুরুষদের যখন বয়স ও অভিজ্ঞতা বাড়ে তখন তাদের এমনি এমনি নেতা হিসাবে দেখা হয়, যদিও তাদেরকে স্বভাব-চরিত্রের জন্যই নিযুক্ত করা হয় নি। তাই পৌল তাদের ক্ষেত্রে প্রথমেই স্বনিয়ন্ত্রণ দাবি করেন, যেমন নেতাদের ক্ষেত্রেও দাবি করেছিলেন – এবং একই কারণে তা করেন। আমাদের সংস্কৃতিতে বয়স্কোদের গুরুত্ব দেওয়া হয়, বিশেষভাবে পরিবারের প্রধান পুরুষকে। তাকে সম্মান করা হয়, তার কথায় লোকেরা বাধ্য থাকে, সবাই মনে করে যে তাকে ‘না’ বলা যায় না। তাই বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে নিজেকে দমনে রাখা আরো কত আবশ্যক! নিজের স্বার্থে চিন্তা না করা, নিজের ইচ্ছা পূর্ণ না করা, নিজেকে স্বেচ্ছায় দায়বদ্ধ রাখা, নিজের মধ্যে ‘যা ইচ্ছা তাই’ মনোভাব বৃদ্ধি হতে না দেওয়া, এই সব হল অত্যন্ত কঠিন ও প্রয়োজন। অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে হোক, যৌন ক্ষেত্রে হোক, নেশার ক্ষেত্রে হোক, তাদেরই মনোভাব পরিবার এবং চারিদিকে সবার উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে। ধরুন পরিবারের প্রধান পুরুষ যদি জুয়া খেলেন, তিনি সহজে পরিবারের সম্পূর্ণ ধন-সম্পদ নষ্ট করতে পারেন। তিনি যদি সবাইকে দমন করে এবং সব ক্ষেত্রে অন্ধ বাধ্যতা দাবি করেন, তবে ভয় ও হতাশার একটি পরিবেশ সৃষ্টি করেন। পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজন বা প্রতাশা কি, তা নিয়ে তার খেয়াল থাকবে না। যৌন ক্ষেত্রে যদি তার স্বনিয়ন্ত্রণ না থাকে তবে তা সদস্যদের নিজের ঘরে নিরাপত্তাহীনতায় ফেলবে এবং পরিবারকে একদম ধ্বংস করবে। মোশির আইন-কানুনে একারণে অনেক নিয়ম আছে যা প্রাথমিকভাবে পরিবারে প্রধান পুরুষদেরকে সীমানা দেওয়া (লেবীয় ১৮:৬-২৩)। একটি বাস্তব উদাহরণ: পরিবারের বাবা নিজের ছেলের জন্য বৌ নিয়ে এসে নিজে তার সাথে যৌন সম্পর্ক রাখেন, যাতে মেয়েকে জোর করে একটি সম্মানহীন বহুবিবাহে ফেলা হয়, নিজের ছেলে ও স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় এবং মেয়ের পরিবারকে তুচ্চ করা হয়।
- “সম্মান পাওয়ার যোগ্য”: বৃদ্ধদের এমন ব্যক্তি হতে হবে যাকে আসলে সম্মান দেওয়া যায়। সম্মান দাবি করা ঠিক নয় বরং সম্মানজনক ব্যবহার দেখানোর মাধ্যমে তাদেরকে অন্যদের চোখে সম্মানযোগ্যতা অর্জন করতে হয়। বৃদ্ধেরা যদি প্রজ্ঞার লোক হন, যদি তারা স্বার্থহীন, ন্যায্য ও মঙ্গলে সমর্পিত, যদি তারা কারো পক্ষ নেন না বরং ভাল বিচার-বুদ্ধি দেখান তবে তারা আসলেই সম্মান পাওয়ার যোগ্য। যদি তারা পরিবারে প্রধান কিন্তু প্রজ্ঞার লোক নন তবে তাদের দুর্বলতা পরিবারের সবার জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় এবং পরিবারে যারা ভাল করতে চায়, তাদের জন্য তারা বাধাস্বরূপ হয়ে দাঁড়ান। একজন প্রজ্ঞাশূন্য যুবক হল দুঃখের বিষয়, একজন প্রজ্ঞাশূন্য বৃদ্ধ হলেন আরো অনেক দুঃখের ও লজ্জার বিষয়।
- “ভাল বিচারবুদ্ধি”: যেহেতু তাদের সম্মান ও প্রভাব বেশি, ঠিক একারণেই তাদের ভাল বিচারবুদ্ধি থাকা আবশ্যক।
- “সত্য বিশ্বাস, ভালবাসা ও ধৈর্যগুণ”: সেবা দাবি করা বা নিজের স্বার্থ পূর্ণ করার চেষ্টা করা বৃদ্ধদের উচিত নয় বরং তাদের একটি ভাল আদর্শ হওয়া দরকার, যেন পরিবারে যাদের বয়স কম, তারা সঠিক ব্যবহারে উৎসাহ পায়। এমন বৃদ্ধেরা যারা অন্যদের মঙ্গলের জন্য জীবন-যাপন করছেন, যারা শক্তিশালী ও আশীর্বাদের পাত্র, তারা শেষ পর্যন্ত একটি চমৎকার প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবেন। শরীর যখন দুর্বল হয় ধৈর্যগুণ আরো প্রয়োজন।
তাই পৌল বৃদ্ধদের, অর্থাৎ এমনি এমনি নেতৃত্ব-প্রাপ্ত লোকদেরকে অনেক আদেশ দেন এবং তাদের থেকে অনেক কিছু দাবিও করেন! আবারও আমরা এই নীতি পাই: ‘একজন নেতা যত উঁচু ঈশ্বর তার মনোভাব-চরিত্রের ক্ষেত্রে তত বেশি শর্ত বা দাবি রাখেন’।
বৃদ্ধারা

নির্দেশনা
তীত ২:৩-৪ পড়ুন। চিন্তা করুন: বৃদ্ধাদের ক্ষেত্রে পৌল কি কি গুণ উল্লেখ করেন? গুণগুলো থাকলে তবে কি ভাল ফলাফলে দেখা যাবে? গুণগুলো না থাকলে তবে কি কি সমস্যা হতে পারে?
বিবেচনা করুন
- “চালচলনে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি”: পৌল দাবি করেন, যেন বৃদ্ধারা ঈশ্বরের ভক্তিপূর্ণ ভয়ে চলেন এবং অন্যদের প্রতি সম্মান ও ভদ্র ব্যবহার দেখান। বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে যেমন, তারা এমনি এমনি বেশ সম্মান পান এবং প্রভাব ফেলেন, পৌল দাবি করে যেন তারা এর যোগ্য ব্যবহারও করেন।
- “নিন্দা না করা”: নিন্দা করা বিশেষভাবে মহিলাদেরই জন্য প্রলোভন, হয়তো কারণ তারা পরিবার ও সম্পর্কের উপর বেশি গুরুত্ব দেন। হয়তো কারণ তাদেরকে এছাড়া অন্য কোন রব দেওয়া হয় না অথবা কারণ পুরুষদের চেয়ে মহিলাদেরকে সম্পর্কের ভিত্তিতে মূল্যায়ন ও বিচার করা হয়। পৌল তাদের কথা বলার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জ করেন।
- “মাতাল না হওয়া”: একবার ছেলে-মেয়ে বড় হলে পরিবারে বৃদ্ধাদের দৈনন্দিন দায়িত্ব বা ভূমিকা কমে যায়। হয়তো একারণে বৃদ্ধারা বাকি দায়িত্ব ফেলে দেওয়ার এবং এতবছর অন্যদের সেবা করার পরে নিজে সেবা চাওয়ার প্রলোভনে পড়ে। হয়তো এভাবে আসক্ত হওয়ার প্রলোভনও বাড়ে অথবা নিজের ভূমিকা কমে গেছে বলে তাদের একঘেয়েমি লাগে। কিছু সংস্কৃতিতে বৃদ্ধদের নেশাগ্রস্ত হতে দেওয়া হয় না (মদ, ধূমপান বা জুয়া খেলা) কিন্তু অনেক বার অন্য ধরণের আশক্তি থাকে (টি.ভি. আড্ডা)।
- “যবতীদেরকে ভাল শিক্ষা দান”: ঈশ্বর চান, যেন বৃদ্ধারা নিজেদের গুরুত্ব বোঝেন এবং নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকেন: শিক্ষা দান, আদর্শ দেখানো, ঈশ্বরীয় প্রভাব ফেলা এবং উপকারী হয়ে সময় ভালভাবে ব্যবহার করা। ঈশ্বর আদেশ দেন, যেন বৃদ্ধারা শিক্ষা দেন। কেউ কেউ বলে যে, এখানে মহিলাদের জন্য শুধুমাত্র মহিলাদেরকেই শিক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন নিয়মের অন্যান্য পদগুলো দেখে বুঝা যায় যে, এই ব্যাখ্যা অতি সরু, কারণ নতুন নিয়মে উল্লিখিত যে মহিলারা পুরুষদেরও শিক্ষা দেন (প্রেরিত ১৮:২৬)। ঈশ্বর বৃদ্ধাদের উৎসাহিত করেন যে, তাদের দান দেওয়ার মত তাদের অনেক কিছু আছে: অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা, সেবা ও সময়।
অনেক বার দেখা যায়, ছেলেমেয়ে বড় হওয়ার পরে বিশ্বাসী বৃদ্ধারা টি.ভি. নিয়ে , সিরিয়ালে ও আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন, যা প্রকৃতপক্ষে তাদের সময় ও জীবনের অপচয়। পৌল তাদের এর চেয়ে নতুন দায়িত্ব গ্রহণ এবং শক্তিশালী ও মঙ্গলের ভূমিকা পালন করতে বলেন। ভাল শ্রোতা, উৎসাহদানকারী ও প্রজ্ঞাপূর্ণ পরামর্শদাতা হিসাবে তারা কত না মঙ্গল করতে পারেন!
যুবতীরা

নির্দেশনা
তীত ২:৪-৫ পড়ুন। চিন্তা করুন: যুবতীদের ক্ষেত্রে পৌল কি কি গুণ উল্লেখ করেন? গুণগুলো থাকলে তবে কি ভাল ফলাফলে দেখা যাবে? গুণগুলো না থাকলে তবে কি কি সমস্যা হতে পারে?
বিবেচনা করুন
- “স্বামী ও ছেলেমেয়েদের ভালবাসা, সংসারের দিকে খেয়াল করা”: বৃদ্ধাদের ক্ষেত্রে যেমন পৌল চান যেন যুবতীরা তাদের ভূমিকায় বিশ্বস্তভাবে পালন করে এবং মনেপ্রাণে অন্যদের সেবা ও মঙ্গল করে, সংসারের দিকে খেয়াল করে, সুযোগ সর্বোচ্চ কাজে লাগায় এবং যা আছে তা নিয়ে দায়িত্বশীল হয়। এভাবে তারা তাদের পরিবারে, সংসারে ও সমাজে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, আদর্শ, ভাল ধনাধক্ষ্য ও শান্তির নোঙ্গর হতে পারে। ক্রীটীয় সংস্কৃতির মত পচা সংস্কৃতিতে যুবক মহিলাদের সম্মানযোগ ব্যবহার, স্বনিয়ন্ত্রণ ও সীমানা সুরক্ষা করা আরো প্রয়োজন।
- “নিজেকে দমনে রাখা, সতী থাকা, দয়ালু হওয়া”: নিজেদেরকে দমনে রাখা আগে যেমন চাওয়া হয়েছে, এখন যুবতীদের ক্ষেত্রেও দাবি করা হয়, কারণ স্বনিয়ন্ত্রণ না থাকলে পরিবারের সুঅবস্থা ও স্থিরতা রক্ষা করা সম্ভব না।
- “স্বামীদের অধীনে থাকা যেন ঈশ্বরের বাক্য অসম্মান করা না হয়”: স্বামীদের অধীনতা মেনে নেওয়া কি স্ত্রীদের জন্য অনন্ত নীতি? অথবা এটা কি সংস্কৃতি বা পরিবেশের কারণে প্রয়োজন? এখানে পৌল সংস্কৃতিকে কারণ হিসাবে দেখান: “যেন বাক্য অসম্মান করা না হয়”। পরস্পরের প্রতি বশীভূত হওয়ার আদেশ মনে রাখতে হয় (ইফি ৫:২১) এবং স্মরণ করতে হয় যে বশীভূত হওয়া মানে দু’জন সমান মানুষের মধ্যে স্বেচ্ছায় একটি সিদ্ধান্ত।
যেমন পৌল প্রায়ই বলেন (১ করি ৭:২৪), এখানেও তিনি যুবতীদের যে অবস্থা ও ভূমিকার মধ্যে তারা নিজেকে পায় না কেন, তা গ্রহণ করা ও মনেপ্রাণে পালন করতে এবং এভাবে ঈশ্বরকে গৌরব দিতে বলেন।
যুবকেরা

নির্দেশনা
তীত ২:৬ পড়ুন। চিন্তা করুন: যুবতীদের ক্ষেত্রে পৌল কি কি গুণ উল্লেখ করেন? গুণগুলো থাকলে তবে কি ভাল ফলাফলে দেখা যাবে? গুণগুলো না থাকলে তবে কি কি সমস্যা হতে পারে?
বিবেচনা করুন
- “নিজেকে দমনে রাখা”: পৌল শুধুমাত্র এই একটি শর্ত রাখেন? প্রাথমিকভাবে এই শর্ত, কারণ যুবকদের ক্ষেত্রে তা-ই হয়তো সবচেয়ে বড় প্রলোভন, পাপের দিকে যাওয়া বা খারাপ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বিষয়। যদি যুবকেরা স্বনিয়ন্ত্রণের অধিকারী হতে সক্ষম হয় তবে বাকি সব ভালদিকে যাবে: তাদের শক্তি, উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষমতা, উদ্দেশ্যপূর্ণতা ও মনেপ্রাণে এক লক্ষ্যের পিছনে দৌড়ানে সফল হবে এবং তারা তাদের পরিবারের সুরক্ষাকারী ও যোগানদাতা হবে। গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যের জন্য বর্তমান ও ক্ষণিক আনন্দ-ভোগ ত্যাগ করার ক্ষমতা – তা যুবকদের অত্যন্ত প্রয়োজন। বাইবেলে তার বিপরীত উদাহরণ হল এষৌ (আদি ২৫:৩২) যিনি এক মুহূর্তের আকাঙ্খা বা প্রয়োজনের জন্য দীর্ঘদিনের ও মূল্যবান বিষয় হাত ছাড়া করে। এষৌর ক্ষেত্রে তা খাবারের ক্ষেত্রে ঘটে, কিন্তু তা যৌন প্রলোভন, নেশা, দমন, হিংস্র ব্যবহার ও টাকা-পয়সার লোভেও প্রযোজ্য।
দাসেরা

নির্দেশনা
তীত ২:৯-১০ পড়ুন। চিন্তা করুন: দাসদের ক্ষেত্রে পৌল কি কি গুণ উল্লেখ করেন? গুণগুলো থাকলে তবে কি ভাল ফলাফলে দেখা যাবে? গুণগুলো না থাকলে তবে কি কি সমস্যা হতে পারে?
বিবেচনা করুন
যেমন অন্য দলের ক্ষেত্রেও বলেছেন ঠিক তেমনি পৌল দাসদের ক্ষেত্রেও বলেন যেন তারা তাদের অবস্থা ও ভূমিকা গ্রহণ করে সর্বোচ্চভাবে পালন করে। দাসেরা সহজে বলতে পারে: আমার জন্য মনিবের প্রতি বাধ্যতা বাধ্যমূলক, তাই আমার বাধ্যতার কোনো মূল্য নেই। পৌল এই ধরণের শিকার বা বেচারা মত চিন্তার বিরুদ্ধে দেখান যে দাস হিসাবে তাদেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে এবং তারা ঈশ্বরের জন্য সাক্ষী ও রাষ্টদূত হতে পারে: যদিও দাস হিসাবে তাদের বাধ্যতা বাধ্যমূলক তবুও মনেপ্রাণে ও চমৎকারভাবেও বিশ্বাসযোগ্য ধনাধক্ষের মনোভাবে পরিশ্রম করতে তবে তা অত্যন্ত শক্তিশালী।
নতুন নিয়মে দাসদের বিষয়ে পৌলের আদেশগুলো আমাদের আধুনিক চাকরী ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারি: শ্রমিক হিসাবে আমাকে অবশ্যই নির্দেশনা অনুসারে অবশ্যই কাজ করতে হবে, কিন্তু যদি আমি মনেপ্রাণে ও উদ্যোগ নিয়ে পরিশ্রম করি তবে আমার কাজে অনেক পার্থক্য দেখা যায়।
মণ্ডলীতে খারাপ নেতৃত্ব
ভাল নেতৃত্বের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া পরে পৌল এমন লোকদের বর্ণনা দেন, যারা ক্রীটীয় মণ্ডলীগুলোতে খারাপ প্রভাবে ফেলে এবং যাদের জীবনে ঠিক সেই ভাল গুণের অভাবে দেখা যায়।

নির্দেশানা
তীত ১:১০-১৬ পড়ুন। যারা এখানে খারাপ প্রভাব ফেলে তারা আসলে কারা? তাদের খারাপ আচার-ব্যবহার, উদ্দেশ্য ও চরিত্র নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করুন।
খুঁজে কি কি পাওয়া য়ায়
খারাপ আচার-ব্যবহার
- তীত ১:১০ যারা বাজে কথা বলে ও যারা ছলনা করে বেড়ায়
- তীত ১:১১ এমন শিক্ষা দেয় যা তাদের দেওয়া উচিত নয়; আর এইভাবে তারা কতগুলো পরিবারকে ধ্বংস করে ফেলেছে
- তীত ১:১২ বরাবরই মিথ্যাবাদী, বুনো পশুর মত
- তীত ১:১৪ যিহূদীদের গল্প-কথায় ও যারা ঈশ্বরের সত্যের কাছ থেকে ফিরে গেছে তাদের আদেশে কান দেয়
- তীত ১:১৬ মুখে তারা বলে তারা ঈশ্বরকে জানে, কিন্তু তাদের কাজ দ্বারা তারা তাঁকে অস্বীকার করে
খারাপ উদ্দেশ্য
- তীত ১:১১ অন্যায় লাভের জন্য
খারাপ চরিত্র
- তীত ১:১০ অবাধ্য
- তীত ১:১২ অলস ও পেটুক
- তীত ১:১৫ তাদের অন্তর নোংরা, তাদের কাছে কিছুই শুচি নয়; এমন কি, তাদের মন ও বিবেক পর্যন্ত নোংরা
- তীত ১:১৬ তারা ঘৃণার যোগ্য ও অবাধ্য; তারা কোন ভাল কাজেরই উপযুক্ত নয়
নির্দেশনা
তীত ১:১০-১৬ এবং তীত ৩:৮-১১ পদ পড়ুন। চেষ্টা করেন খুঁজে বের করতে, নেতিবাচক প্রভাব যারা ফেলে, তারা কারা? তারা কতটুকু বিপজ্জক? পৌল তাদের ক্ষেত্রে কি করতে বলেন?
বিবেচনা করুন
তারা কারা?
দেখা যায় পৌল বিভিন্ন ধরণের লোকদের কথা তোলেন। এক দল হলেন যিহূদীরা (তীত ১:১০ “যারা সুন্নত করানোর উপর জোর দেয়, বিশেষ করে আমি তাদের কথাই বলছি”, তীত ১:১৮ “যিহূদীদের গল্প-কথা”, তীত ৩:৯ “বংশ-তালিকা”)। তারা কি যিহূদী (যারা নতুন বিশ্বাসীদের যিহূদী বানাতে এবং তাদের আইন-কানুন ও যিহূদী ঐতিহ্যে বাধ্য করাতে চায়)? না কি তারা যিহূদী বিশ্বাসী (যারা মনে করে বিশ্বাসী হিসাবে অবশ্যই আইন-কানুন পালন করা দরকার)? অথবা উভয় ধরণের লোক উপস্থিত?
এছাড়া সাধারণ ক্রীটীয় সংস্কৃতি দিয়ে প্রভাব ফেলার লোক আছে (তীত ১:১২ “ক্রীট দ্বীপের লোকেরা বরাবরই মিথ্যাবাদী, বুনো পশুর মত, অলস ও পেটুক”)। তাদের মধ্যে আবারও দুই দল থাকতে পারে: এমন লোক যারা বিশ্বাসী, কিন্তু তারা নিজেকে খুব স্বাধীন মনে করে এবং তাদের জীবন এখনও পরিবর্তিত হয় নি (তীত ১:১৬ “মুখে তারা বলে তারা ঈশ্বরকে জানে, কিন্তু তাদের কাজ দ্বারা তারা তাঁকে অস্বীকার করে”)। অপর পক্ষে এমন লোক আছে, যারা বিশ্বাসী নয় (তীত ১:১৫ “অবিশ্বাসী, তাদের মন ও বিবেক পর্যন্ত নোংরা”)।
তারা কতটুকু বিপজ্জনক?
আসলে তারা বিপজ্জনক কারণ তারা এমন কি তারা “কতগুলো পরিবারকে ধ্বংস করে ফেলেছে” (তীত ১:১)।
পৌল তাদের ক্ষেত্রে কি করতে বলেন?
তাদের বিষয়ে তীতের কাছে পৌলের আদেশ পরিষ্কার: “এই লোকদের মুখ মুখ বন্ধ করে দেওয়া দরকার” (তীত ১:১১)। এই চিঠির মাধ্যমে পৌল তীতকে তা করতে আদেশ ও অধিকার দেন, যেন তিনি ক্রীটীয় মণ্ডলীগুলোর উপরে তাদের প্রভাব বন্ধ করে দেন এবং বিশ্বাসীদের যথেষ্ট শিক্ষা দেন, যেন তারা বুঝতে পারে মণ্ডলীতে একজন নেতা বা প্রভাবে ফেলার লোকের মধ্যে কি ধরণের চরিত্র, মনোভাব ও আচার-ব্যবহার গ্রহণযোগ্য – এবং কি গ্রহণযোগ্য নয়।
পৌল তীতকে বলেন যেন তিনি এই ধরণের লোকদেরকে “প্রথমে একবার, পরে আর একবার সাবধান কোরো” (তীত ৩:১০)। যেহেতু পৌল এখানো সংশোধনের কথা বলেন ধরা যায় যে তারা বিশ্বাসী। কিন্তু যদি তারা ভাল সাড়া না দেয় তবে “তার সংগে মেলামেশা একেবারেই বন্ধ করে দাও। তুমি তো জান যে, এই রকম লোকের মনের চিন্তা খারাপ। সে পাপী; সে নিজেকে নিজেই দোষী বলে প্রমাণ করে” (তীত ৩:১০-১১)।
এখানে পৌল একটি কঠিন বিষয় উঠান: মণ্ডলীতে শৃঙ্খলা (church discipline)। প্রাথমিকভাবে বলা যায় যে পৌল এমন লোক যারা সত্য ও সংশোধন অগ্রাহ্য করতে থাকে, তাদেরকে মণ্ডলীর উপরে প্রভাব ফেলার সুযোগ বন্ধ করে দিতে হবে। এভাবে তাদের মণ্ডলী থেকে বের করা প্রয়োজন হতে পারে। তবুও পৌল এমন লোক যারা তার্কাতর্কি, ঝগড়া-বিবাদ, কথা কাটাকাটি ও বিভেদ সৃষ্টি করেন, তাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী কথা বলেন (তীত ৩:৯)। এমন লোক যারা অন্যদের বাদ দিতে অতি আগ্রহী, পৌল তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করেন। আধুনিক মণ্ডলীতেও অনেক ঝগড়া-বিবাদ ও বিভেদ দেখা যায়, মণ্ডলীর শৃঙ্খলার উপযুক্ত এবং অনুপযুক্ত প্রয়োগও দেখা যায়। তাই এখানে একটি শক্তিশালী সাবধানবাণী দেওয়া হয়েছে যেন প্রত্যেক বিশ্বাসী অন্য বিশ্বাসীর বিরুদ্ধে তার মনোভাব ও আচরণ পরিক্ষা করে দেখে এবং পবিত্র আত্মার চেতনায় সাড়া দেয়।