ধরুন যে ফিলীমন চিঠি কলসীয় শহরে পৌঁছিয়ে পৌলের উদ্দেশ্য অনুসারে কাজর করেছে: ওনীশিম নম্রভাবে ফিলীমনের কাছে ফিরে এসে ক্ষমা চায়, ফিলীমন তাকে ক্ষমা করে এবং সুন্দরভাবে গ্রহণ করেন “দাস হিসাবে” আর না “বরং দাসের চেয়ে বেশী, অর্থাৎ প্রিয় ভাই হিসাবে” (ফিলীমন ১৬)। ধরুন ফিলীমন খুশি যে আগের এই খারাপ গল্প এত সুন্দর একটি মোড় নিয়েছে এবং ওনীষিম মুক্ত মানুষ হয়েছে। সব চমৎকার! এপর্যন্ত আমরা শুধুমাত্র পৌল, ফিলীমন এবং ওনীষিম কেন্দ্র করে আলোচনা করেছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চারিদিকে আরো অনেক লোক আছে, যাদের উপর চিঠিটি প্রভাব ফেলবে। উদাহরণস্বরূপ:
- ১। পিলীমনের সংসারে অন্যান্য দাস। ধনী লোকদের বাড়িতে প্রায়ই বেশ কয়েকটি দাস কাজ করত।
- ২। কলসীয় মণ্ডলীতে অন্যান্য মনিব, যাদের বাড়িতে ফিলীমনের মত দাসেরা কাজ করত।
- ৩। কলসীয় মণ্ডলীতে অন্যান্য দাস, যাদের মনিব হয়তো খ্রিষ্টান ছিলেন, অথবা অন্য ধরমের ছিলেন।
- ৪। কলসীয় শহরে অন্যান্য মনিবেরা, যারা খ্রিষ্টান নন, হয়তো খ্রিষ্টানদের পছন্দও করেন না।
নিদেশনা
- আপনি নিজেকে প্রত্যেকটি দলের একজন মনে করেন এবং চিন্তা করুন: আপনার পৌলের চিঠি কেমন লাগে? চিঠির বিষয়ে আপনার কি কি প্রশ্ন আছে? পৌল যা বলেন তা নিয়ে আপনার আপত্তি কি কি? যখন ফিলীমন ওনীষিমকে মুক্ত করেন? যখন ফিলীমন তার দাসদের মুক্ত করতে শুরু করেন?
- এসময় বেশি ‘আত্মিক’ বা ‘ভদ্র’ হবেন না বরং খুব সৎ ও ব্যবহারিক চিন্তা করুন।
বিবেচনা করুন
১। ফিলীমনের সংসারে অন্যান্য দাস
তারা সহজে বলতে পারে: “ওনীষিম দয়া পাচ্ছে তা তো সুন্দর, কিন্তু আমাকে কে দয়া দিচ্ছে?” “আমরা বিশ্বস্তভাবে কাজ করেছিলাম, আমরা ওনীষিম পালানোর পরে তার দায়িত্বও পালন করলেম কিন্তু আমাদের নিয়ে কেউ চিন্তা করে না, আমাদের জন্য কেউ চিঠি লিখে না, কেউ অনুরোধও করেনা? কেন সে এত সুযোগ-সুবিধা পায় কিন্তু আমরা পাই না? পোল কি আমাদের নিয়ে চিন্তা করেন না? কেন বিশ্বস্তদের পক্ষে কেউ দাঁড়ায় না কিন্তু অবিশ্বস্তদের পিছনে অনেক কিছু করা হয়? এইটা কি ঠিক? এটা কি ন্যায্য? আমরাও কি পালাব এবং পরে পৌল-মামার বড় চিঠি নিয়ে ফিরে আসি? বড় ব্যক্তিদের কি চিনতে হয়? বড়দের প্রিয় লোক হতে হয়? ন্যায্যতা কোথায়?”
২। কলসীয় মণ্ডলীতে অন্যান্য মনিব
তারা সহজে বলতে পারে: “আমরা তো বুঝি যে এই ধরণের চিঠি পাওয়ার পরে ফিলীমনের কিছু না কিছু করতে হয়, কিন্তু একারণে অনেক সমস্যা তৈরি হতে পারে। ফিলীমন যদি দাস মুক্ত করতে শুরু করেন, তবে আমাদের দাসেরা তা অবশ্যই শুনবে। তারাও মুক্ত চাইবে এবং আমরা চাপ পাব। অশৃঙ্খলা তৈরি হবে এবং একবার এই আন্দোলন শুরু হয় তা সহজে আর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। মনে হয় আমরা সবাই মিলিয়ে ফিলীমনের কাছে যাওয়া দরকার এবং তাকে একটু চাপ দেওয়া দরকার। আমরা তাকে বলব “হে ভাই, মাথা ঠাণ্ড কর্! আমরা তো বুঝি যে পৌল তোমাকে অনেক কিছু বলেছেন কিন্তু ভাল করি চিন্তা করে এর ফলাফল কি হবে! দাস মুক্ত করতে শুরু করলে কাজ কে করবে? একজন মুক্তি পেলে সবাই মুক্তি চাইবে। খবর ছড়াবে এবং বিপজ্জনক একটি অবস্থা তৈরি হবে। একটু সাবধান হও! পলাতক দাসকে যদি তুমি এভাবে অবিলাসিতায় রাখ তবে অন্যরা কেন কাজ করবে? দাসদের শাসন করার কি উপায় থাকবে? এছাড়া শহরের লোকারা ইতিমধ্যে মণ্ডলীকে বেশি পছন্দ করে না। যদি আমরা বিশ্বাসী হিসাবে এই ধরণের কিছু শুরু করি, তবে তারা আমাদের উপর চাপ অথবা এমন কি অত্যাচার সৃষ্টি করবে!”
৩। কলসীয় মণ্ডলীতে অন্যান্য দাস
তারা সহজে বলতে পারে: “অবশ্যই শুনতে ভাল লাগে যে ওনীষিমকে মুক্ত করা হয়েছে এবং সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করা হয়েছে। ভাল লাগে শুনতে যে ফিলীমন আরো দাস মুক্ত করতে শুরু করেছেন। কিন্তু আমাদের নিয়ে কি হবে? আমাদের মনিব তো বিশ্বাসী নন, তিনি আমাদের কখনও মুক্ত করবেন না, ছেড়ে দেবেনও না। তিনি পৌলের চিঠির কথা যদি শুনতেন, তার বিরুদ্ধে অবশ্যই কিছু করতেন। আমরা মণ্ডলী যাওয়ার অনুমতিও হারাতাম। এখন কি অবস্থা তৈরি হয়েছে? যাদের বিশ্বাসী মনিব আছে, তারা সুপোগ পাবে, কিন্তু আমরা তো কোনো সুযোগ পাব না। আমাদের মনিব অবিশ্বাসী, তা তো আমাদের দোষ না। ঈশ্বর, তুমি কেন আমাদের জন্য কিছু কর না?
৪। কলসীয় শহরে অন্যান্য মনিব
তারা সহজে বলতে পারে: “আমরা তো আগে থেকে জানতাম যে খ্রিষ্টান নামে এই ভ্রান্ত দল বিপজ্জনক। যদি তারা শুধুমাত্র নিজের ধর্ম পালন করত, আমরা হয়তো তাদের বিরুদ্ধে কিছু ঘটাতাম না, কিন্তু এখন তা একদম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। যদি কেও দাসদের মুক্ত করে, তবে সাথে সাথে খবর ছড়াব। সব দাসেরা শুনবে। তাদের মাথা গরম হয়ে যাবে এবং অস্থিরতা শুরু হবে। তারা মুক্তি চাইবে ও আন্দোলন শুরু করবে। এইটা একদম খারাপের দিকে যাবে এবং শেষে একটি দাস-বিপ্লব শুরু হবে এবং অনেক রক্তপাত হবে। আমাদের এই পাগল খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে কিছু না কিছু ঘটাতে হবে। সব কিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে তাদেরকে সাইজ করতে হবে! শহরের শাসকদের তা জানাতে হবে যেন তারা জরুরীভাবে উপযু্ক্ত পদক্ষেপ নিতে পারে।”
ফিলীমন চিঠির আর একটি ‘স্তর’
বিবেচনা করুন
যদি আমরা বিবেচনা করি পৌলের চিঠি চারিদিকে লোকদের উপরে কি প্রভাব ফেলতে পারি তবে আমরা বুঝতে পারি যে এই সরল চিঠিটির আর একটি স্তর আছে। দেখা যায় যে, প্রথমে বিষয়টি যত সহজ মনে করি, প্রকৃতপক্ষে তত সহজ নয়।
- ফিলীমন
- পৌল রোমীয় আইন ভালই জানেন, চারিদিকে সংস্কৃতি নিয়েও তার খেয়াল আছে। তিনি ভালই জানেন: যা তিনি ফিলীমনকে করতে উৎসাহিত করেন (ওনীষিমকে দান নয় বরং ভাই হিসাবে গ্রহণ করা, হয়তো আরো দাস মুক্ত করা) তা করলে ফিলীমের উপর বিভিন্ন ধরণের চাপ আসবে। দ্বন্দ্ব, বিভেদ এবং হয়তো এমন কি আন্দোলন শুরু হতে পারে বা মণ্ডলী তার সুনাম হারাবে। যদি তিনি চিঠি মেনে তা অনুসারে কাজ করেন, তবে অনেক লোকদের অনেক কিছু বলার থাকবে।
- তারপরেও পৌল ফিলীমনকে তা করতে বলেন। তিনি চান যেন ফিলীমন একটি আদর্শ মনোভাব দেখান, এমন ঈশ্বরীয় আচার-ব্যবহার, যা চারিদিকে সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জ করবে। ফিলীমনের অনেক কিছু শুনতে হবে, তার বিভিন্ন লোকদের সাথে কথা বলতে ও ব্যাখ্যা দিতে হবে, তার দাঁড়াতে হবে, তার একটি পরিবর্তনের চ্যাম্পিয়ান হতে হবে। যখন বিভিন্ন ধরণের কথা, সন্দেহ, আপত্তি, চাপ বা হুমকি আসবে (মণ্ডলীর মধ্য থেকে বা বাইরে থেকে) তখন তার নম্র এবং শক্তিশালীভাবে দাঁড়াতে হবে।
- কোকিল পাখি মনে আছে? কোকিল তার ডিম অন্য পাখির বাসায় রাখবে যেন সেই অন্য পাখি তা দেয় এবং বাচ্চাটি লালন-পালন করবে। বলা যায় যে পৌল এখানে ফিলীমনের কলে একটি ‘কোকিলের ডিম’ দিয়ে দেন। তিনি ফিলীমনকে এই ডিমকে তা দিতে এবং বাচ্চাটি লালন-পালন করতে বলেন। যদিও তা ফিলীমনের উপরে বিভিন্ন ধরণের চাপ সৃষ্টি করবে।
- আমরা আগে বলেছিলাম যে পৌল ফিলীমনকে এই চিঠিতে বেশ চাপ দেন। হয়তো এখানে আমরা এই ‘জোর’ নতুন চোখে দেখতে পারি। হয়তো ফিলীমন অনেক আগেই ওনীষিমকে ক্ষমা করেছেন এবং তিনি খুব খুশি মনে তাকে গ্রহণ করেন ও মুক্ত করেন। হয়তো তিনি খুব খুশি যে ওনীষিম এখন শক্তিশালী একজন বিশ্বাসী হয়েছে এবং সে এখন ফিলীমনের সংসারে একটি ভাল প্রভাব ফেলতে পারেন। পৌল ফিলীমনকে অনেক বিশ্বাসযোগ্য ও উপকারী নেতা হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং তা চাটুবাক্য নয়, বরং বাস্তব (ফিলীমন ৪-৭)। হয়তো পৌল চিঠিতে জোর করার মত কথা বলেন কারণ তা দ্বারা তিনি নিজের অধিকার ফিলীমনের হাতে দান করেন। যদি চাপ আসে ফিলীমন বলতে পারেন: ‘এই ধরণের চিঠি পাওয়ার পরে কি ‘না’ করতে পারি?’ হয়তো চিঠিটি আসলে ফিলীমনের চেয়ে অন্যদেরই কারণে বেশি প্রয়োজন। যখন ওনীষিম দাস মুক্ত করতে শুরু করেন, তখন চিঠিটি ‘অধিকার দানের চিঠির’ মত কাজও করবে।
- হয়তো “বোন আপ্পিয়া” এবং “সহযোদ্ধা আর্খিপ্প” (ফিলীমন ২) উল্লেখ করার কারণ হল এই: যেন তারা ফিলীমনের সাথে দাঁড়ান এবং তাকে এই কঠিন কাজে সমর্থন করেন। হয়তো চিঠিটি মণ্ডলীর কাছেও যায় (ফিলীমন ২) যেন তারাও বুঝে ফিলীমন কি করতে যাচ্ছে এবং যেন তাকে সমর্থন করে।
- হয়তো পোল যে শীঘ্রই আসবেন (ফিলীমন ২২), তাও এই বিষয়ে সম্পর্কিত। পৌল বলেন: ‘আমি আসব, এবং আমি ফিলীমনকে এই বিষয়ে সমর্থন করব। যদি বড় সমস্যা হয়ে যায় আমি দায়িত্ব নেব এবং নিজেই দাঁড়াব।
- ওনীষিম
- কিন্তা আর একজন ব্যক্তির উপর এখন অনেক চাপ আছে: ওনীষিম। চিন্তা করুন:
- ওনীষিমরের আচার-ব্যবহার ও মনোভাবের উপর এখন অনেক কিছু নির্ভর করে। যদি সে কোনো রকম অহংকার দেখায়, নিজেকে অন্য দাসদের চেয়ে ভাল মনে করে, যদি সে এক মিনিটও পৌলকে চিনে, এই বিষয় নিয়ে বড় কথা বলে, যদি সে চমৎকারভাবে অন্যদের সাথে পরিশ্রম না করে, যদি সে অন্য দাসদের বলে ‘তোমরা কি এখনও ফ্লোর মুছছ?’ – তবে সবাই বলবে: ‘দেখ! তাই তো বলেছি। দাস মুক্ত করলে, খালি ঝামেলা হবে। তারা অহংকারী হবে। তারা ঠিকমত আর কাজ করবে না। দাসদের একদম মুক্ত করা যাবে না!’
- যদি সে অহংকার দেখায় তবে সে এমন অবস্থা তৈরি করবে যে ফিলীমন আরো দাস মুক্ত করতে চাইলেও তা আর করতে পারবেন না এবং পৌলের প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ নিঃস্ফল হয়ে যাবে। যদি সে অহংকার দেখায় তবে সে অন্য দাসদের মুক্ত হওয়ার সুযোগ নষ্ট করবে।
- প্রকৃতপক্ষে পৌল ফিলীমন এবং ওনীষিম উভয়কে খ্রীষ্টের মনোভাবের আদর্শ হতে বলেন, যেন তারা দু’জন মিলিয়ে লোকদের হৃদয়ে এবং সমাজে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারেন।
- তাই বুঝা যায় যে এই ছোট চিঠি থেকে আমরা ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা করা সম্বন্ধে শিখতে পারি, কিন্তু আর একটি স্তরে আমরা শিখতে পারি:
একটি সমাজে কিভাবে পরিবর্তন ঘটানো যায়?
- কিছু আধুনিক পাঠক ফিলীমন চিঠি তেমন পছন্দ করে না পৌল ফিলীমনকে বেশি ‘জোর করেন’ বলে।
- আবারও কিছু আধুনিক পাঠকেরা চিঠিটি পছন্দ করে না কারণ তারা বলে: পৌলের আর অনেক শক্তিশালীভাবে দাঁড়ানো উচিত! পৌল একজন দাস দাসত্বে ফিরে পাঠান – তা কি করে ঠিক হবে?? ভাল হত যদি পৌল ফিলীমনকে বলতেন: ‘তোমার দাস রাখা ঠিক হয় নি! আমি তোমার হাতে ওনীষিমকে দেব না। তুমি বাকি দাসদের মুক্ত কর!’
- প্রকৃতপক্ষে এখানে প্রশ্ন উঠানো যায়:
- কেন পৌল দাসত্বের বিরুদ্ধে এর চেয়ে শক্তিশালী কথা বলেন না?
- কেন তিনি দাসত্ব নিষেধ করেন না?
- কেন তিনি মনে করেন যে ওনীষিমের উপরে ফিলীমনের একটি অধিকার আছে?
- কেন তিনি ফিলীমনের সব দাস মুক্ত করার আদেশ দেন না?
- কেন তিনি বিশ্বাসী মনিবদের দাস রাখা নিষেধ করেন না?
- তার সময়ে এই সামাজিক মন্দতা (দাসত্ব) চলে, তবে কেন তিনি এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চালান না?
- আসলে, একই প্রশ্ন যীশুকে নিয়েও উঠানো যায়! যীশুও সরাসরিভাবে দাসত্ব নিষেধ করেন না, তার বিরুদ্ধে আন্দোলনও করেন না।
- ঐসময়ের একটি সামাজিক মন্দ ছিল দাসত্ব। আমাদের যুগে একটি সামাজিক মন্দ হতে পারে মহিলাদের যৌন কাজে বিক্রি করা (trafficking), দরিদ্রতা, দুর্নীতি ইত্যাদি। তাই আমরা আরো ভিত্তিকভাবে প্রশ্নটি এভাবে রাখতে পারি: “আমাদের বর্তমান সমাজের একটি মন্দের উপস্থিতিতে – আমাদের বিশ্বাসী হিসাবে কি করা উচিত? কি করা উচিত নয়?” ফিলীমন চিঠি থেকে আমরা কিছু উত্তর পেতে পারি।
নির্দেশনা
- চিন্তা করুন: যীশু দাসত্ব সম্বন্ধে কি বলেছিলেন? পৌল দাসত্ব সম্বন্ধে কি বলেছিলেন?
- স্মৃতি থেকে একটি তালিকা তৈরি করুন: যক বার নতুন নিয়মে কোনোভাবে দাসদের উল্লেখ করা হয়েছে (ঘটনা, দৃষ্টান্ত, শিক্ষার মধ্যে হোক) তা তালিকায় উঠান।
শিক্ষা
নতুন নিয়মে দাস বা দাসত্ব সম্বন্ধে কি কি বলা হয়, নিচে তার একটি সারাংশ দেওয়া হয়েছে:
- মানুষ ঈশ্বরেরই দাস। ঈশ্বরের দাস হওয়া = মানুষের জন্য উপযুক্ত ভূমিকা (লূক ১:৫৪, ২:২৯, ১৭:৭-১০, রোমীয় ১:১)। আসলে আমরা সবাই দাস।
- এমন কি যীশুকেই বর্ণনা করার সময় তাকে দাস বলা হয়: “তিনি বরং দাস হয়ে এবং মানুষ হিসাবে জন্মগ্রহণ করে নিজেকে সীমিত করে রাখলেন” (ফিলিপীয় ২:৭)।
- আদর্শ নেতাই হলেন সবার সেবক বা দাস: “কিন্তু তোমাদের মধ্যে এই রকম হওয়া উচিত নয়। তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বড়, সে বরং সবচেয়ে যে ছোট তারই মত হোক, আর যে নেতা, সে সেবাকারীর মত হোক” (লূক ২২:২৬) অথবা “মনে রেখো, মনুষ্যপুত্র সেবা পেতে আসেন নি বরং সেবা করতে এসেছেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন” (মথি ২০:২৮)। যীশুই হলেন দাসের চূড়ান্ত আদর্শ, যার অর্থ এইও যে তিনি নেতৃত্বের জন্য চূড়ান্ত আদর্শ।
- যীশু – এবং ঈশ্বর – তার দাসদের মনে-প্রাণে বাধ্যতা দাবি করেন “আমার এই কথাটা তোমরা ভুলে যেয়ো না যে, দাস তার মনিবের চেয়ে বড় নয়। সেইজন্য লোকেরা যদি আমাকে মেরে ফেলবার চেষ্টা করে থাকে তবে তোমাদেরও তা-ই করবে; যদি তারা আমার কথা শুনে থাকে তবে তোমাদের কথাও শুনবে” (যোহন ১৫:২০)।
- কিন্তু যীশু দাসদের ‘দাস হওয়ার অবস্থায়’ থাকতে দেন না: “আমি তোমাদের আর দাস বলি না …বরং আমি তোমাদের বন্ধু বলছি” (যোহন ১৫:১৫)। পৌল তা এইভাবে প্রকাশ করেন: “ফলে তোমরা আর দাস নও বরং সন্তান। যদি তোমরা সন্তানই হয়ে থাক তবে … তোমরা তার অধিকারী” (গালা ৪:৭)।
- সবাইকে দাস বলা হয়। যীশু দেখান যে সব মানুষ পাপের দাস: “যারা পাপে পড়ে থাকে তারা সবাই পাপের দাস” (যোহন ৮:৩৪)। “তোমরা কি জান না যে, দাসের মত যখন তোমরা কারও হাতে নিজেদের তুলে দাও এবং তার আদেশ পালন করতে থাক তখন তোমরা আসলে তার দাসই হয়ে পড়? সেইভাবে হয় তোমরা পাপের দাস হয়ে মরবে, নয় ঈশ্বরের দাস হয়ে ন্যায় কাজ করবে” (রোমীয় ৬:১৬)। “কেউ যদি কোন কিছুর কাছে হার মানে তবে সে তার দাস হয়” (২ পিতর ২:১৯)। “কোন দাস দু’জন কর্তার সেবা করতে পারে না” (লূক ১৬:১৩)।
- যীশু বিভিন্ন সময়ে দাসদের সাথে কথা বলেন, মনিবদের সাথেও কথা বলেন। উদাহরণ: রোমীয় সেনাপতির দাসকে সুস্থতা দান (মথি ৮:৬)।
- যীশু তার বেশ কিছু দৃষ্টান্তে দাস উল্লেখ করেন।
- কিন্তু এমন কোনো বাইবেল পদ পাওয়া যায় না যেখানে যীশু সরাসরি দাসত্ব মন্দ বলেন বা নিষেধ করেন বা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে বলেন।
নতুন নিয়মের চিঠিতে কি দাসত্ব নিয়ে কথা পাওয়া যায়?
নির্দেশনা
- নিজে দেওয়া দাসত্ব সম্বন্ধীয় পদগুলো পড়ুন।
- চিন্তার করুন, আমরা যেমন কথা প্রতাশ্যা করতাম, তার চেয়ে পৌলের কথা কত ভিন্ন:
দাসদের প্রতি আদেশ
- “তোমরা যারা দাস, তোমরা যেমন খ্রীষ্টের বাধ্য তেমনি ভয় ও সম্মানের সংগে অন্তর থেকে তোমাদের এই জগতের মনিবদের বাধ্য হয়ো। মানুষকে খুশী করবার মনোভাব নিয়ে তোমাদের মনিবদের চোখের সামনেই কেবল তাদের বাধ্য হয়ো না; তার চেয়ে বরং খ্রীষ্টের দাস হিসাবে ঈশ্বরের ইচ্ছা মনে-প্রাণে পালন করে তোমরা মনিবদের বাধ্য হয়ো” (ইফিষীয় ৫:৫-৬, কল ৩:২২)।
- “যে সব দাসদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয় তারা সাবাই তাদের মনিবদের সমস্ত সম্মান পাবার যোগ্য মনে করুক, যেন কেউ ঈশ্বরের নামের এবং আমাদের শিক্ষার নিন্দা করতে না পারে” (১ তীমথিয় ৬:১)।
- “যারা দাস, তাদের বলবে যেন সব ব্যাপারে তারা মনিবদের অধীনে থাকে, তাদের খুশী করতে চেষ্টা করে, কথার উপর কথা না বলে, আর মনিবদের জিনিস চুরি না করে, বরং তারা যে সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য তা প্রমাণ করে, যেন তারা আমাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরের সম্বন্ধে যে শিক্ষা আছে তা সব দিক থেকে সুন্দর করে তুলতে পারে” (তীত ২:৯-১০)।
- “যারা দাস, তাদের বলবে যেন সব ব্যাপারে তারা মনিবদের অধীনে থাকে, তাদের খুশী করতে চেষ্টা করে, কথার উপর কথা না বলে, আর মনিবদের জিনিস চুরি না করে, বরং তারা যে সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য তা প্রমাণ করে, যেন তারা আমাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরের সম্বন্ধে যে শিক্ষা আছে তা সব দিক থেকে সুন্দর করে তুলতে পারে” (১ পিতর ২:১৮-২১)।
- একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পথ হল এই: “তোমাকে যখন ডাকা হয়েছিল তখন কি তুমি দাস ছিলে? সেইজন্য দুঃখ কোরো না; অবশ্য যদি স্বাধীন হবার সুযোগ পাও তবে তা গ্রহণ কোরো। দাস থাকা অবস্থায় প্রভু যাকে ডেকেছেন সে প্রভুর দ্বারা স্বাধীন হয়েছে। সেইভাবে যাকে স্বাধীন অবস্থায় ডাকা হয়েছে সে খ্রীষ্টের দাস হয়েছে। অনেক দাম দিয়ে তোমাদের কেনা হয়েছে; মানুষের দাস হয়ো না। ভাইয়েরা, ঈশ্বর যাকে যে অবস্থায় ডেকেছেন সে ঈশ্বরের সামনে সেই অবস্থাতেই থাকুক” (১ করিন্থীয় ৭:২১-২৪)।
মনিবদের প্রতি আদেশ
এর অর্থ কি এই যে ঈশ্বর দাসত্বের পক্ষে? দাসদের কাছে আদেশের অপর পক্ষে আমাদের মনিবদের প্রতি আদেশও দেখা দরকার:
- “তোমরা যারা মনিব, তোমরাও তোমাদের দাসদের প্রতি ঠিক সেই রকম ব্যবহার কর। তাদের ভয় দেখানো ছেড়ে দাও, কারণ তোমরা তো জান যে, তাদের ও তোমাদের একই প্রভু এবং তিনি স্বর্গে আছেন; তাঁর চোখে সবাই সমান” (ইফিষীয় ৬:৯)।
- “মনিবেরা, স্বর্গে তোমাদেরও একজন মনিব আছেন জেনে তোমরা তোমাদের দাসদের সংগে সৎ এবং ন্যায় ব্যবহার কোরো” (কলসীয় ৪:১)।
দাসত্বের ভিত্তি নেই
উভয় যীশু এবং পৌল মানুষকে অনেক মূল্যবান বলে এবং এমন একটি উঁচু একটি দৃষ্টি দেখান, যার সাথে দাসত্ব মিলানো যায় না। তারা ভিত্তিক সত্যগুলো শক্তিশালীভাবে ঘোষণা করেন: “যিহূদী ও অযিহূদীর মধ্যে, দাস ও স্বাধীন লোকের মধ্যে, স্ত্রীলোক ও পুরুষের মধ্যে কোন তফাৎ নেই, কারণ খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হয়ে তোমরা সবাই এক হয়েছ” (গালা ৩:২৮, কলসীয় ৩:১১).
ফিলীমন ও কলসীয় চিঠির সংযোগ
নির্দেশনা
- নতুন নিয়মে দাসত্ব সম্বন্ধীয় পথ দেখার পরে আমাদের স্বরণ করা দরকার যে ফিলীমন চিঠির সঙ্গে পৌল কলসীয় মণ্ডলীকে কলসীয় চিঠিও পাঠান। কলসীয় চিঠিতে তিনি দাসত্বের বিষয়ে কি বলেন? কলসীয় চিঠিতে পৌলের কথা ফিলীমন চিঠি বুঝারে ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষ গুরুত্ব আছে।
- কলসীয় ৩:১১, ৩:২২-২৫ এবং ৪:১ পদ পড়ুন। পদগুলোর অর্থ ও গুরুত্ব কি?
বিবেচনা করুন
- প্রথম পৌল কলসীয় চিঠিতে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে অঘোষণা করেন যে খ্রীষ্টেতে মানুষদের মধ্যে সব তফাৎ বাতিল করা হয়েছে (কলসীয় ৩:১১): “এই অবস্থায় অযিহূদী বা যিহূদীর মধ্যে, সুন্নত-করানো বা সুন্নত-না-করানো লোকের মধ্যে, অশিক্ষিত, নীচজাতি, দাস বা স্বাধীন লোকের মধ্যে কোন তফাৎ নেই; সেখানে খ্রীষ্টই প্রধান এবং তিনি প্রত্যেকের মধ্যেই আছেন।” লক্ষ্য করুন যে পৌল নির্দিষ্টভাবে “দাস বা স্বাধীন”-দের উল্লেখ করেন।
- কিন্তু এই মৌলিক সত্যের প্রয়োগ কি? পৌল কিছু পদ পরে এর নির্দিষ্ট প্রয়োগ দেখান (কলসীয় ৩:২২-২৫): “তোমরা যারা দাস, তোমরা সব বিষয়ে তোমাদের এই জগতের মনিবদের বাধ্য থেকো। যখন তাঁরা তোমাদের লক্ষ্য করেন কেবল তখনই যে তাঁদের খুশী রাখবার জন্য তাঁদের বাধ্য থাকবে তা নয়, বরং খাঁটি অন্তরে প্রভুর উপর ভক্তি রেখে তাঁদের বাধ্য থেকো। তোমরা যা-ই কর না কেন, তা মানুষের জন্য নয় বরং প্রভুর জন্য করছ বলে মন-প্রাণ দিয়ে কোরো, কারণ তোমরা তো জান, প্রভু তাঁর লোকদের জন্য যা রেখেছেন তা তোমরা পুরস্কার হিসাবে তাঁরই কাছ থেকে পাবে। তোমরা যাঁর সেবা করছ তিনি প্রভু খ্রীষ্ট। যে অন্যায় করে সে তার ফল পাবে। প্রভুর চোখে সবাই সমান।”
- পৌল দাসদের বিপ্লবী করতে বা কাজে ফাঁকি দিতে বলেন না, তিনি দাসদের চমৎকার দাস হতে বলেন। তিনি তাদেরকে ‘বেচারা’ হিসাবে দেখেন না। বরং তিনি তাদেরকে শক্তিশালী সাক্ষ্যী হিসাবে দেখেন এবং তাদের চ্যালেঞ্জ করেন ঈশ্বর যে ভূমিকায় তাদের রেখেছেন, যেন তারা সেই ভূমিকা মনে-প্রাণে পালন করার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের রাজদূত হিসাবে কাজ করেন (১ করি ৭:২১-২৪)। আমরা মণ্ডলীর আদিপিতাদের বিভিন্ন লেখা থেকে জানি যে রোম সাম্রাজ্যের উঁচু শ্রেণী রোমীয় পরিবারদের কাছে সুসমাচার প্রায়ই দাসদের দ্বারাই পৌঁছিয়েছে!
- ঠিক পরেই তিনি কিন্তু অপর পক্ষে মনিবদেরও কঠোরভাবে চ্যালেঞ্জ করেন: “মনিবেরা, স্বর্গে তোমাদেরও একজন মনিব আছেন জেনে তোমরা তোমাদের দাসদের সংগে সৎ এবং ন্যায় ব্যবহার কোরো” (ফিলীমন ৪:১)।
- পৌল তাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে সংস্কৃতি অনুসারে যদিও তাদের জন্য অনেক কিছু করার অনুমতি আছে তবে ঈশ্বর তাদের ঠিকই দায়বদ্ধ রাখবেন। তাদেরও ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে ভূমিকা পালন করতে হয়: ন্যায্য ও স্বনিয়ন্ত্রিত মনিব হিসাবে লোকদের জন্য ঈশ্বরীয় আদর্শ হওয়া।
দাসত্বের বিষয়ে কিছু নীতিমালা
- যীশু ও পৌল দুইজন:
- একবারও সরাসরি দাসত্বের বিরুদ্ধে কথা বলেন না।
- একবারও দাসত্ব বাতিল করার জন্য আন্দোলন করেন না।
- একবারও দাসদের উৎসাহিত করেন না অবাধ্য হতে বা পালিয়ে যেতে।
- বরং যীশু ও পৌল:
- দাবি করেন যে দাস ও স্বাধীন মানুষদের একই মূল্য আছে।
- দাসদের আদেশ দেন মনিবের প্রতি বাধ্য হতে ও বিশ্বস্তভাবে কাজ করতো।
- দাসদের উৎসাহিত করেন যেন তারা যেখানে আছে তা ঈশ্বরের জন্য ব্যবহার করে।
- মনে করেন না যে পরিস্থিতি মানুষকে সীমিত করে রাখে বরং মনোভাব আসল বিষয় মনে করেন।
- মনিবদেরও দায়বদ্ধতায় আনেন।
- ব্যক্তিগতভাবে পৌল স্বক্রিয়ভাবে দাসত্বের বিরুদ্ধে কাজ করেন: তিনি মনিব ফিলীমনের কাছে একটি চিঠিতে একজন পলাতক দাসের জন্য ক্ষমা ও স্বাধীনতা দাবি করেন: “কিন্তু তুমি তাকে আর দাস হিসাবে পাবে না বরং দাসের চেয়ে বেশী, অর্থাৎ প্রিয় ভাই হিসাবে পাবে … ভাই, আমরা প্রভুর হয়েছি বলে আমি চাই যে, তুমি আমার একটা উপকার কর” (ফিলীমন ১৬:২০)।
- পৌল মনিব হিসাবে ফিলীমনের অধিকার রক্ষা করেন কিন্তু তাকে অনুরোধ করেন, তার দাসের প্রতি ভাল ব্যবহার করতে।
সারাংশ
- অসন্তোষ, অবাধ্যতা, আইনের বাইরে আন্দোলন বা বিদ্রোহ ঈশ্বরের পথ নয়।
- একটি সামাজিক অন্যায় ঘটতে, তার মানে না এই যে আমার অনুমতি আছে, আইনের বাইরে তার বিরুদ্ধে কিছু করতে। নতুন অন্যায় দিয়ে সামাজিক অন্যায় সরানো সম্ভব না।
- একজনের পরিস্থিতি কি, তা ঈশ্বর বড় বিষয় মনে করেন না, বরং তাকে চ্যালেঞ্জ করেন পরিস্থিতির মধ্যে সঠিক মনোভাবে আচরণ করতে।
- পরিস্থিতিকে দোষ দেবেন না, বরং যে কোন পরিস্থিতিকে ব্যবহার করতে শিখুন।
- ভুল চিন্তায় যোগ দেবেন না: মানুষ হিসাবে দাসদের অবশ্যই একই মূল্য আছে।
- আমাদের ঈশ্বরের দৃষ্টিতে রাজী হতে হয়, তা অনুসারে জীবন-যাপন করতে হয়, তাতে আদর্শ হতে হয়: “যিহূদী ও অযিহূদীর মধ্যে, দাস ও স্বাধীন লোকের মধ্যে, স্ত্রীলোক ও পুরুষের মধ্যে কোন তফাৎ নেই, কারণ খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হয়ে তোমরা সবাই এক হয়েছ” (গালাতীয় ৩:২৮, কলসীয় ৩:১১)।
- সমাজকে পরিবর্তন করা হল আস্তে-আস্তে কাজ। ধৈর্য দরকার।
- স্বক্রিয়ভাবে সমাজের জন্য বাইবেলীয় ভিত্তি তৈরী কর (শিক্ষা, যুক্তি, তথ্য দান) > পরিবর্তন আসবে
- সামাজিক পরিবর্তন হতে হয় ‘ভিতর থেকে বাইরে’, জোর করে না বরং স্বাধীনভাবে শিক্ষা ও যুক্তি দেখানোর মাধ্যমে।
- চমৎকার উদাহরণ: উয়িলিয়াম কেরী (William Carey) সত্যিদাহ, বাল্য বিবাহ বাতিল।
- চমৎকার উদাহরণ: উইলিয়াম উইল্বার্ফর্স (William Wilberforce) দাস ক্রয়-বিক্রয় ও দাসত্ব বাতিল।
একটি চমৎকার উদাহরণ
উইলিয়াম উইল্বার্ফর্স সম্বন্ধীয় একটি চমৎকার ফিল্ম আছে (Amazing Grace) যাতে দেখানো হয় তিনি ব্রিটিশ সংসদে দাস ত্রয়-বিক্রয় এবং শেষে দাসত্ব বাতিল করার জন্য কিভাবে কাজ করেন ।
নির্দেশনা
- উইলিয়াম উইল্বার্ফর্স সম্বন্ধীয় “Amazing Grace” ফিলেম দেখুন। চিন্তা করুন তিনি কিভাবে প্রথম দাস ক্রয়-বিক্রয় এবং পরবর্তীতে দাসত্ব বাতিল করেন।
- ভাল করে খেয়াল করুন যখন থোমাস্ ক্লার্কসন (Thomas Clarkson) তাকে প্রস্তাব দেন যেন তারা ফ্রান্সের মত বিপ্লব শুরু করেন।
ফিলেমে উল্লিখিত কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা
- ১৭৭৬ ইংল্যান্ড থেকে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য ইউ.এস.-এর যুদ্ধ
- ১৭৮৯ ফ্র্যান্সে রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, পরে নাপোলেয়ন
- ১৭৯৩-১৮১২ নাপোলেয়ন ইউরোপকে দখল করে, ইংল্যন্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
- ১৮০৭ দাস ক্রয়-বিক্রয় বাতিল
- ১৮৩৩ দাসত্ব বাতিল

ফিলেমের প্রধান চরিত্র
- উইলিয়াম উইল্বার্ফর্স – বিশ্বাসী, সংসদের এমপি, দাসত্বের বিরুদ্ধে, অন্যান্য বিষয়েও কাজ করেন, উইলিয়াম কেরীর বন্ধু
- উইলিয়াম পিত্ত্ – সংসদের এমপি, পরে প্রধান মন্ত্রী, উইলিয়াম উইল্বার্ফর্সের বন্ধু, সমর্থনকারী।
- বার্বারা স্পূনার – বিভিন্ন রাজনৈটিক বিষয়ে কর্মী, পরে উইলিয়াম উইল্বার্ফর্সকে বিয়ে করেন।
- যোহন নিউটন – বিশ্বাসী, আগে দাস বেচা-কেনার জাহাজের চালক ছিলেন, এখন প্রচারক, “২০’০০০ আফ্রিকান ভূত তার সাথে বাস করে”, “এ্যমেসিং গ্রেস” (আশ্চর্য অনুগ্রহ)
কোরাসের লেখক। - চার্লস্ ফক্স্ – গুরুত্বপূর্ণ এমপি, প্রথম বিরুদ্ধে, পরে এ্যবলিশন দলে যোগ।
- ডিউক অফ্ ক্ল্যারেন্স্ – সংসদের এমপি, বর্তমান রাজার পুত্র, দাসত্বের পক্ষে ।
- লোর্ড টার্ল্টন্ – সংসদের গুরুত্বপূর্ণ এমপি, দাসত্বের পক্ষে।
- লোর্ড ডান্ডাস্ – সংসদের রাষ্ট্র মন্ত্রী, স্কোটিস্ , দুই দল থেকে চাপ পায়।
- হেন্রী ও ম্যারিয়্যান থর্নথন – উইলিয়ামের আত্মীয়, বন্ধু, সমর্থনকারী, সংসদের এমপি।
- ক্ল্যাপ্হ্যাম দল – এক দল বিশ্বাসী যারা রাজনৌতিক কাজে সমর্পিত।
- থোমাস ক্লার্কসন্ পরে বিদ্রোহী হয়ে যায়, ফ্র্যান্সে যায় বিদ্রোহ দেখতে
- একুইয়ানো আফ্রিকান, দাস ছিলেন, এখন মুক্ত, বই লেখেন।
- হান্না মূর্
- রেভঃ রাম্সী
- জেম্স্ স্তিভান এ্যবলিশন দলের সচিব, জামাইকায় যান।