আমরা “ফিলীমন ০২ – ঐতিহাসিক পরিস্থিতি” শিক্ষার মধ্যে ফিলীমন চিঠির পিছনে গল্প এবং লেখক ও পাঠকদের ঐতিহাসিক পরিস্থিতি বুঝেছি। এখন আমরা চিঠির প্রধান বিষয়ের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ শুরু করতে পারি:

ব্যাখ্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৪টি প্রশ্ন

আমরা ফিলীমন চিঠির বিভিন্ন বিষয় তুলে বার বার এই ৪টি প্রশ্ন করব:

  • ৯ম ব্যাখ্যা প্রশ্ন কেন?                                এইটি হল ব্যাখ্যা প্রশ্নের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটা। কেন লেখক এটা বলেন? কেন পাঠকদের এটা শোনা দরকার?
  • ১০ম ব্যাখ্যা প্রশ্ন প্রথম পাঠকদের কাছে এর অর্থ কি?
  • ১১ম ব্যাখ্যা প্রশ্ন প্রথম পাঠকদের কাছে এর গুরুত্ব কি?
  • ১২ম ব্যাখ্যা প্রশ্ন লেখকের উদ্দেশ্য কি?                তিনি কি চান যেন তার পাঠকেরা জানে? বুঝে? বিশ্বাস করে? করে? তিনি তার পাঠকদের থেকে কি সাড়া বা কি পরিবর্তন দেখতে চান?

 

এই ৪টি ব্যাখ্যা প্রশ্ন অবশ্যই বেশ কাছাকাছি এবং প্রায়ই এক প্রশ্নের পরিবর্তে আর একটি প্রশ্ন করা যায়।

ফিলীমন চিঠির প্রধান বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ

১। ক্ষমা করা
  • এই চিঠিতে পৌল ফিলীমনকে অনুরোধ করেন যেন তিনি ওনীষিমের আগের খারাপ ব্যবহার ও অবিশ্বস্ততা ক্ষমা করেন।

নির্দেশনা

  • চিন্তা করুন কেন ক্ষমা করা এত গুরুত্বপূর্ণ।
  • চিন্তা করুন কেন ক্ষমা করা আবশ্যক। যীশু বলেন যে শুধুমাত্র যদি আমরা ক্ষমা করি তবে আমাদের পাপ ক্ষমা হবে।
  • চিন্তা করুন ক্ষমা ঠিক কি? এবং কি নয়?
    • যদি ক্ষমা করি তবে এর অর্থ এই যে, আমি বলি ‘কিছু হয় নি’?
    • যদি ক্ষমা করি তবে এর অর্থ এই যে, আমি ঐ অপরাধের অজুহাত দেই? অপরাধকে সমর্থন করি?
    • যদি ক্ষমা করি তবে এর অর্থ এই যে, অন্যায় পুনরায় ঘটতে দেই?
    • যদি ক্ষমা করি তবে এর অর্থ এই যে, অপরাধীকে আবার আগের মত বিশ্বাস করি?

বিবেচনা করুন

  • চিন্তা করুন কেন ক্ষমা করা এত গুরুত্বপূর্ণ?
  • ক্ষমা যদি করি আমি ঈশ্বরের প্রতিনিধি কারণ তিনি আমাদের ক্ষমার চোখে দেখেন। ক্ষমা করা মানে ঈশ্বরের মত হওয়া, তার মত আচরণ করা।
  • ক্ষমা যদি করি আমি স্বীকার করি যে আমিও পাপী এবং আমিও অন্যদের আঘাত করি। ক্ষমা করা মানে স্বীকার করি যে আমি অপরাধী থেকে এত ভিন্ন নই।
  • চিন্তা করুন কেন ক্ষমা করা আবশ্যক। যীশু বলেন যে শুধুমাত্র যদি আমরা ক্ষমা করি তবে আমাদের পাপ ক্ষমা হবে।
  • যা আমরা পরস্পরকে ক্ষমা করি, তার তুলনায় ঈশ্বর আমাদের আরো অনেক বেশি ক্ষমা করেছেন। দু’জন ঋণী লোকদের দৃষ্টান্ত দেখুন (মথি ১৮:২৩-২৫)।
  • যদি আমি একটি অপরাধ ক্ষমা করতে রাজি নই, তবে একই কাজ করলে আমার জন্য ক্ষমা থাকবে না।
  • একটি সাহায্যকারী উপমা: ধরুন একজন লোক আপনার বসার ঘরে ঢুকে সেখানে সব কিছুর মাঝখানে একটি বালটি দুর্গন্ধের ময়লা ফেলে দিয়ে চলে যায়। এই নোংরামির পরিষ্কার করা উচিত কে? অবশ্যাই সেই লোকের পরিষ্কার করা উচিত। কিন্তু সে যদি ফিরে না আসে? তাহলে আমার একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে: আমি এখন কি করব? ভিত্তিকভাবে দু’টি পথ আছে: আমি বলতে পারি যে ময়লাটি তারই পরিষ্কার করা উচিত, আমি আমার বসার ঘর এই ময়লার চারিদিকে সাজাই এবং ময়লার চারিদিকে গিয়ে জীবন-যাপন করতে অভ্যস্ত হই। প্রত্যেকবার যে কেও আমার ঘরে আসে আমি তাকে ময়লাটি দেখিয়ে বলি: “দেখ, সে আমার বিরুদ্ধে কি অন্যায় করেছে!”
  • অথবা আমি বলতে পারি: যদিও তারই নোংরামিটা পরিষ্কার করা উচিত, এমন না যে আমার তার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আমি রোংরামির মধ্যে বাস করতে রাজি না, তা নিজের হাতে বের করে পরিষ্কার করি। ময়লাটি আমার জীবনকে চালাতে দিব না, চারিদিকে নাচব না। যদি পরে সে এসে মাফ চায়, তবে আরো ভাল কিন্তু আমি তার জন্য অপেক্ষা করব না।
  • ক্ষমা করা মানে ছেড়ে দেওয়া, মানে একজনের অন্যায় বা দোষ ছেড়ে দেওয়া। যদি আমি সেই অন্যায় বা আঘাত বা ক্ষতিকারক কথা ক্ষমা না করে বরং ধরে রাখি, তবে সেই বিষাক্ত জিনিস আমার জীবনে থেকে যায়, আমি নিজেকে তার সাথে বেঁধে রাখি। ফলে এই অন্যায় আমার জীবনকে চালাতে দেই, এই বিষ আমার আবেগে প্রভাব ফেলতে দেই, আমার মনকে ভরতে দেই। ধরে রাখা মানে তা থেকে কখনও মুক্ত না হওয়া। এই কারণে পরামর্শদাতাদের একটি প্রবাদ আছে: “অক্ষমা হল একমাত্র জেলখানা যেখানে ছিটকানি, তালা ও চাবি বন্দীর হাতে থাকে। বন্দী চাইলে বের হতে পারে, কিন্তু বাইরে থেকে তাকে বের করা যায় না।”
  • চিন্তা করুন ক্ষমা ঠিক কি? এবং কি নয়?
    • যদি ক্ষমা করি তবে এর অর্থ এই যে, আমি বলি ‘কিছু হয় নি’? … না, যদি অন্যায় বলতে কিছু হয় নি তবে ক্ষমা করারও কিছু থাকে না। অন্যায় হয়েছে, তাই ক্ষমা করার কিছু আছে।
    • যদি ক্ষমা করি তবে এর অর্থ এই যে, আমি ঐ অপরাধের অজুহাত দেই্ বা তা সমর্থন করি? … না, ক্ষমা করলে আমি অজুহাত দেই না, খারাপকে ভাল বলি না, তা সমর্থনও করি না। কিন্তু আমি তা ছেড়ে দেই।
    • যদি ক্ষমা করি তবে এর অর্থ এই যে, অন্যায় পুনরায় ঘটতে দেই? … না, ক্ষমা মানে না যখন লোকটি দ্বিতীয় বালটি ময়লা নিয়ে আসে তখন দরজা খুলে দেওয়া। আমি ক্ষমা করার সাথে সীমানা বিস্তারও করতে পারি, অন্যায়টি পুনরায় ঘটার প্রতিরোধ করতে পারি।
    • যদি ক্ষমা করি তবে এর অর্থ এই যে, অপরাধীকে আবার আগের মত বিশ্বাস করি? … না, ক্ষমা ও বিশ্বাস একই নয়। বিশ্বাস দীর্ঘদিনের ভাল ব্যবহার করতে করতে অর্জন করা হয়। অন্যায় করলে বিশ্বাস ভেঙ্গে যায়। ক্ষমা করা মানে আগের বিষয় ছেড়ে দেওয়া কিন্তু মানে না অন্ধভাবে বিশ্বাস করা।
২। দ্বিতীয় সুযোগ দান এবং বিশেষ করা যে পরিবর্তন সম্ভব
  • ওনীষিম ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছে যে, সে অবিশ্বস্ত। তবুও পৌল ফিলীমনকে এই চিঠিতে অনুরোধ করেন, যেন তিনি তাকে দ্বিতীয় সুযোগ দান করেন, যেন তিনি বিশ্বাস করতে রাজি হন, যে ওনীষিমের মধ্যে আসলে পরিবর্তন ঘটেছে।

নির্দেশনা

  • আপনার জীবনে এমন ঘটনা ঘটেছিল যেখানে আপনি খারাপ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে দ্বিতীয় সুযোগ পেছেছেন?
  • কেন দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়া এবং অন্য একজনকে দ্বিতীয় সুযোগ দান করা এত গুরুত্বপূর্ণ।
  • কেন মনে করেন পৌলের এত বিশ্বাস আছে যে ওনীষিম আসলে পরিবর্তিত হয়েছে?
  • পৌলের জীবন নিয়ে চিন্তা করুন। কোন সময়ম পৌল দ্বিতীয় সুযোগ দানের গুরুত্ব বুঝেছিলেন?
  • যদিও আর একজন ভাল লোক (ফিলীমন) ওনীষিমের ক্ষেত্রে নিষ্ফল হয়েছিলেন তবুও পৌল ওনীষিমের পিছনে তার সময়, শ্রম ও চেষ্টা বিনিয়োগ করেন। আমরা সবাই কোন না কোন সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেই। আগের একটি ভুল সিদ্ধান্ত যেন লোকদের সব সময়ের জন্য আটকিয়ে রাখতে না পারে, একারণে ক্ষমা ও দ্বিতীয় সুযোগ দান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে ও অন্যদেরকে দ্বিতীয় সুযোগ দান করুন! আর একবার চেষ্টা করুন! প্রথম ধাপ নেন! দয়া দেখানোই হল ঈশ্বরীয় একটি মনোভাব।

বিবেচনা করুন

  • আমরা সবাই একসময় না অন্য সময় একটি ভুল সিদ্ধান্ত নেই বা খারাপ ব্যবহার করি। মানুষ ব্যর্থ হয়। ঈশ্বর জানি যে কোউ নিখুঁত নয়।
  • নিজের খারাপ সিদ্ধান্ত, লজ্জার গল্প বা নিজের হৃদয়ের মন্দ টান নিয়ে সচেতন যদি হই তবে আমরা অন্যদের খারাপ আচরণ অতি কঠোরভাবে বিচার করব না, নিজেকেও আগের ব্যর্থতা থেকে মুক্ত হতে দেই।
  • ঈশ্বরই আমাদের দ্বিতীয় সুযোগ দান দিতে থাকেন। যারা দ্বিতীয় সুযোগ দেয় তারা তার প্রতিনিধি, তারা তার ইচ্ছা অনুসারে চলে, যীশুর মত আচরণ করে এবং তাকে খুশি করে।
  • লোকদেরকে আগের ভুল ব্যবহারে আটকিয়ে দেওয়ার চেয়ে তাদেরকে অনুতপ্ত ও পরিবর্তিত হতে উৎসাহ দেওয়াই ভাল। যা ঘটেছিল আমরা আর পরিবর্তন করতে পারি না। ভবিষ্যতে কি ঘটবে তার উপরে আমাদের ক্ষমতা আছে।
  • পৌল নিজেই একসময় ছিলেন মণ্ডলীর অত্যাচারী, তিনি ছিলেন প্রতারিত, কঠোর, শক্তিশালী ও গোড়া – কিন্তু যীশু তাঁর দয়ায় তাকে পরিবর্তিত হতে সুযোগ দিয়েছেন।
  • পৌল নিজেই সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়েছিলেন, এর জন্য তার বিশ্বাস আছে যে অন্যেরাও ঈশ্বরের দয়ায় গভীরভাবে পরিবর্তিত হতে পারে (যেমন এখানে ওনীষিম)।
  • প্রায়ই দেখা যায়, যারা সবাইকে অবিশ্বস্ত বা দুর্নীতিগ্রস্ত মনে করে তারা নিজেই বেশি বিশ্বস্ত নয়। নিজেকে যদি বিশ্বাস করতে না পারি তবে অন্যকে কিভাবে বিশ্বাস করব?
  • প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরীয় বার্ণবা ছিলেন সেই লোক যিনি পৌলৈর মন পরিবর্তনের পরে পৌলের সাথে প্রথম দেখা করেন, এমন একটি সময় যখন বিশ্বাসীরা পৌলকে এখনও এমন ভয় পেত যে তারা তার সাথে মিশতে রাজি ছিল না (প্রেরিত ৯:২৬-২৯)। বার্ণবাও সেই ব্যক্তি যিনি পৌলকে পরিচর্যার কাজের জন্য নিযুক্ত করেন (প্রেরিত ১১:২৫-২৬)। পরে তিনি পৌলকে নিয়ে একটি বহিঃপ্রচারে বের হন (প্রেরিত ১৩:১-৩) এবং পরে তিনি দলের নেতৃত্ব পৌলের কাছে হস্তান্তর করেন (প্রেরিত ১৩:১৩)। পৌলের সেই সময় একজন পরামর্শদাতা, উৎসাহদানকারী ও সুযোগদানকারী ব্যক্তির প্রয়োজন ছিল এবং বার্ণবা এই ভূমিকা চমৎকারভাবে পালন করেন।
  • বার্ণনা পৌলকে দ্বিতীয় সুযোগ দান করতে শেখান যখন পৌল যোহন মার্ককে আগের একটি আচরণের জন্য বহিঃপ্রচার দলে গ্রহণ করতে চান না (প্রেরতি ১৫:৩৬-৪০)। পৌল যদিও সেই সময় রাজি হয় না এবং বার্ণবা থেকে আলাদা হয়ে যান, তবে পরে দেখা যায় যে পৌল এই যোহন মার্ককে ভাল কর্মী হিসাবে স্বীকার করেন (২ তীম ৪:১১)। বার্ণবা যোহন মার্ককে দ্বিতীয় সুযোগ দানের মধ্য দিয়ে একটি বিশ্বস্ত কর্মী হিসাবে গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

এর প্রয়োগ নিয়ে চিন্তা করুন

  • আপনি এটি থাকে কি শিখতে পারেন?
  • কাকে আপনার দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া দরকার?
  • আপনার জীবনে কি ব্যর্থতা থেকে নিজেকে মুক্ত করা দরকার?
  • আপনার চারিদিকে কে আছে যাকে আপনি সময় বা উৎসাহ দিতে পারেন? ঈশ্বরীয় শিক্ষা দিতে পারেন? একটি বাধ্য ও শক্তিশালী জীবন করতে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন?
  • কাকে বা কাদের আপনি ‘আশাহীন’ মনে করেন? ঈশ্বরের এই বিষয়ে কি বলার আছে?
৩। যে কোনো পরিবেশে সুযোগ ভাল কাজে লাগানো

নির্দেশনা

  • পৌলের জীবনের সময় তালিকা ব্যবহার করে খুঁজে বের করেন পৌল এই চিঠি লেখার সময়ে কতদিন ধরে জেলে আছেন।
  • এর গুরুত্ব কি? আপনি কি মনে করেন পৌলের কেমন লেগেছিল?
  • জেলে আটকিয়ে থাকার সময় পৌল কি কি করেন?

বিবেচনা করুন

  • পৌলকে যিরূশালেমে ৫৭ খ্রীষ্টাব্দে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি ফিলীমন চিঠি ৬২ খ্রীষ্টাব্দে লেখেন, তাই তিনি ৪ বা ৫ বছর জেলে যখন তিনি ফিলীমন পুস্তক লেখেন।
  • আসলে ইতিমধ্যে ৫৬ খ্রীষ্টাব্দে, ঠিক যিরূশালেমের গ্রেফ্তার হওয়ার আগে তিনি পরিকল্পনা নিলেন যে তিনি প্রেরিত হিসাবে পশ্চিম দিকে গিয়ে নতুন একটি প্রান্তরে সুসমাচার প্রচার করবেন (রোমীয় ১৫:২২-২৯)।
  • পৌল হলেন নতুন জায়গায় দখল করার মত প্রেরিত। এভাবে বছর পর বছর জেলে বসে থাকাই তার জন্য অবশ্যই সহজ ছিল না। এভাড়া তিনি বিভিন্ন মণ্ডলীর খবর শোনেন (২ করি ১১:২৭), খারাপ খবরও শোনেন, কিন্তু যেতে পারেন না।
  • আমরা বলতাম: এই ধরণের একজন কার্যকারী প্রেরিতকে ঈশ্বর কেন এত বছর আটকে পড়তে দেন? পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে আমরা ঈশ্বরের মত চিন্তা করি না।
  • পৌল এখানে সহজে হতাশায়, আত্ম-দয়ামায়ায় বা অযত্ন করার একটি মনোভাবে পড়তে পারতেন কিন্তু তিনি তার চেয়ে একটি ভাল মনোভাব দেখান। তিনি কষ্টের মধ্যেও ঈশ্বরের প্রতি কৃহজ্ঞ হন এবং আনন্দ করতে থাকেন (এবং একই সময়ে তিনি ফিলিপীয়দের ঠিক এই মনোভাবে চলতে বলেন)।
  • পৌল যত সুযোগ পান, ততটা তিনি সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগান। তিনি একজন অবিশ্বস্ত কাজের লোক সামনে পেলে (ওনীষিম) তাকে সুসমাচার দেন, তার সাথে জীবন ভাগ করেন, তাকে শিক্ষা ও শিষ্যত্ব দেন এবং তার মধ্যে বিনিয়োগ করেন।
  • আসলে পৌল জেলের ভিতরে করেন যা তিনি জেলের বাইরেও করেন: সুসমাচার প্রচার, শিক্ষা, শিষ্যত্ব, কর্মী গঠন, বিনতি, মণ্ডলীগুলোকে দেখাশোনো।
  • পৌল পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন না, তিনি বলেন না “যদি আমি মুক্ত হতাম তবে অনেক কিছু করতাম।” বরং তিনি তার আহ্বানের সম্পূর্ণভাবে সমর্পিত – জেলের ভিতরে না জেলের বাইরে।

এর প্রয়োগ নিয়ে চিন্তা করুন

  • আপনি পৌলের কাছ থেকে কি শিখতে পারেন?
  • কোন বিষয়ের কারণে আমি নিজেকে আত্ম-মায়াদয়ায় পড়তে দিচ্ছি? ঈশ্বর আমাকে এর চেয়ে কি করতে চ্যালেঞ্জ করেন?
  • আপনার জীবনের কোন বিষয়ে বা কোন পরিস্থিতকে আপনি কিছু না করার অজুহাত হতে দেন? কি নিয়ে দোষারোপ করেন? এর চেয়ে ঈশ্বর আপনাকে কি পথ দেখাতে চান?
  • বর্তমান পরিস্থিতিতি আপনি কিভাবে আরো বেশি করে নিজের আহ্বান অনুসারে এগিয়ে যেতে পারেন?
৪। সময় ও মনে-প্রাণে কাজ করার যোগ্য

নির্দেশনা

  • ফিলীমন চিঠিতে বুঝা যায় যে পৌল যদিও খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রেরিত এবং অনেক দায়িত্বে প্রাপ্ত, তিনি ‘সাধারণ লোকদের জন্য’ সময় বের করা, তাদের গুরুত্ব দিতে এবং তাদের মধ্যে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক ও স্বক্রিয়। বড় নেতা এখানে আর একজনের অবিশ্বস্ত কাজের লোকের জন্য সময় ও হৃদয় দেন।
  • আধুনিক যুগে বড় আত্মিক নেতারা কি তাদের সময় এভাবে বের করতে আগ্রহী? আমরা এখানে পৌল থেকে কি শিখতে পারি?
  • আধুনিক যুগে একটি প্রচলিত কথা হল যে আত্মিক নেতা হিসাবে লোকদের সঙ্গে অতি অন্তরঙ্গ সম্পর্ক না করা ভাল। পৌল কি এই কথা অনুসারে চলে? পুস্তকে কোন পদ এই বিষয়ে কিছু দেখায়?

বিবেচনা করুন

  • গালাতীয় ৩:২৮ পদে এবং কলসীয় ৩:১১ পদে পৌল বলেন যে “খ্রীষ্টেতে” মানুষদের মধ্যে আর কোনো তফাৎ নেই। যে কোনো জাতির হোক, পুরুষ বা মহিলা হোক, সমাজের যে কোনো শ্রেণীর লোক হোক, স্বাধীন বা দাস হোক।
  • ফিলীমন চিঠি হল প্রমাণ যে পৌল আসলে যা বলেন তাই করেন। তিনি এখানে ওনীষিমকে সময় ও গুরুত্ব দেন। ওনীষিম কাজের লোক হলেও এবং আগে অবিশ্বস্ত হলেও পৌল তার কাছে শুধুমাত্র সুসমাচার দেন না, তিনি তার সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক এবং আবেগময় বন্ধুত্ব স্থাপন করেন।
  • তিনি এমন নেতা নন যিনি ‘দূর থেকে মঙ্গল কামনা করছেন’, তিনি নিজেই সম্পর্কে নেমে মনে-প্রাণে এই লোকের মধ্যে বিনিয়োগ করেন, তাকে হৃদয় থেকে ভালবাসেন। ফিলীমন ১০ পদ পৌল ওনীষিমকে “সন্তান” বলেন, ১২ পদে তিনি তাকে “প্রাণের মত প্রিয়” বলেন এবং ১৩ পদে তিনি প্রকাশ করেন যে ওনীষিমকে নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিলেন যেন সে পৌলের পরিচর্যা অংশ গ্রহণ করে।
৫। শিষ্যত্ব সম্বন্ধে আমরা পৌল থেকে কি শিখতে পারি?

নির্দেশনা

  • চিন্তা করুন: আমরা পৌল থেকে শিষ্যত্ব সম্বন্ধে এই চিঠি থেকে কি শিখতে পারি?
  • চিন্তা করুন: বিশ্বাসী হওয়ার পরে একজন নতুন বিশ্বাসীর আর কি কি দরকার আছে?
  • এই চিঠি অনুসারে পৌল কি কি শিষ্যত্বের প্রয়োজনীয় অংশ হিসাবে দেখেন?

বিবেচনা করুন

  • ‘আত্মকে জয়’ বা ‘স্বর্গের টিকেট পাওয়াই আসল’ – পৌল এই ধরণের সীমিত চিন্তার লোক নন। তিনি ‘পরিত্রাণ’ শেষ উদ্দেশ মনে করেন না বরং প্রয়োজনীয় শুরু। শিষ্যত্ব, বাধ্তায় ও নম্রতায় জীবন-যাপন উন্নয়ন করা আবশ্যক যেন বিশ্বাসী শক্তিশালী সক্তিশালী ও সফল হয়।
  • শিষ্যত্ব মানে কি? শিষ্যত্বের প্রয়োজনীয় অংশ কি কি?
    • ঈশ্বরে কাছে পাপ স্বীকার করা ও ক্ষমা পাওয়া দরকার। এভাড়া একজন পরামর্শদাতার কাছে পাপ স্বীকার করা দরকার। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। আমরা ওনীষিমকে বলতাম: ‘তুমি পরিত্রাণ ও ক্ষমা পেয়েছ, তাই তুমি এখন মুক্ত। তুমি ঈশ্বরের আহ্বান অনুসারে আগাও। আগের সব পাপ বা অন্যায় কাজ ভুলে যাও, তুমি এখন যীশুতে নতুন সৃষ্টি হয়েছ।
    • তার চেয়ে পৌল ওনীষিমকে আগের আচরণ ও পাপের জন্য দায়িত্ব নিতে বলেন। তিনি তাকে ফিরে যেতে বলেন, তার ব্যর্থতার স্থানে, তার ভুল আচরণের স্থানে। তিনি তাকে আগের গল্প ঠিক করতে বাধ্য করেন, তাকে ণত হতে, লজ্জার গল্প স্বীকার করতে, মাফ চাইতে এবং ক্ষতিপূর্ণ করতে বাধ্য করান। পৌল এখানে মনিব হিসাবে ফিলীমনের অধিকারকে সম্মান করেন। তিনি ওনীষিমকে পরিবেশকে দোষ দেওয়ার, এড়িয়ে যাওয়ার বা নিজেকে ‘বেচারা’ মনে করার অনুমতি দেন না। তিনি তাকে আগে অশেষ কাজ সমাধান করতে বাধ্য করান।
    • ওনীষিমের এখানে ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করতে হয়, পৌলের উপর বিশ্বাস রাখতে হয় এবং ফিলীমনে ভাল ব্যবহারের উপর আশা রখতে হয়। তার বাধ্যতা ও বশীভূত হতে শিখতে হয়, , যা হল তার ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য ভিত্তি ও তার অধিকারের উৎস। মনে রাখুন: যারা অধিকারের অধীনে থাকে শুধুমাত্র তাদেরই অধিকার আছে (লূক ৭:৮, ইব্রীয় ৫:৮)।
    • ওনীষিম এভাবে আচরণ ও ফলাফল বুঝবে, পাপের বৈশ্যিষ্টও শিখবে, সঠিকারের শিষ্যত্ব মানে কি, তাও তিনি জানবেন। এইভাবে পাপ তার উপরে আর প্রভাব ফেলতে পারবে না। তিনি ঈশ্বরের চরিত্র সম্বন্ধে অনেক শিক্ষা লাভ করবে। এই প্রক্রিয়া ওনীষিমরের হৃদয়ের বিভিন্ন বিষয় প্রকাশ পাবে (ভয়, অবিশ্বাস, জেদ, দোষারোপ, এড়িয়ে যাওয়া, অহংকার) এবং পৌল সেগুলো উপযুক্তভাবে সমাধান করতে পারবে।
      এর প্রয়োগ নিয়ে চিন্তা করুন
  • পৌলের শিষ্যত্বের চেয়ে আমাদের শিষ্যত্ব কত হালকা। আমরা লোকদেরকে আগের সমস্যা সমাধান না করে আমাদের পরিচর্যায় গ্রহণ করি। আমরা প্রজাপতিকে বাসা থেকে বের হওয়ার সংগ্রামে সাহায্য করতে চাই এবং বাসা কেটে খুলি যেন সহজে বের হতে পারে। কিন্তু সংগ্রাম না করে প্রজাপতির ডানায় প্রয়োজনীয় ব্যায়াম হয় না। ফলে প্রজাপতি বিকালঙ্গ হয়ে উড়তে অক্ষম। আমরা প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে চাই কিন্তু তা দ্বারা শিষ্যের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করি। আমাদের শিষ্যত্ব এমন যে লোকদের বেশি পরিবর্তন হয় না। ফলে তাদের অন্যদের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বাস নেই এবং তাদেরই শিষ্য আরো দুর্বল।
  • ঈশ্বর আপনাকে এটা দিয়ে কি শেখাতে চান? আপনার কোনো বিষয় আছে যা আপনি কখনও স্বীকার করেন নি? যাতে আপনি কখনও ফিরে যেতে রাজি ছিলেন না? হয়তো একারণে আপনি কিছু খারাপ অভ্যাস ভাঙ্গতে পারেন না? এমন কিছু আছে যা ভাঙ্গার জন্য আপনার একজন পরামর্শদাতার কাছে যাওয়া দরকার যেন সাহায্য পান?
  • আপনার চারিদিকে কে কে আছে যার শিষ্যত্ব দরকার? কার এই ধরণের শিক্ষা শোনা প্রয়োজন? কিভাবে আপনে তাদের বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য সমর্থন করতে পারেন?
৬। সুপারিস করা, বিশ্বাস করা এবং সম্পর্কের পুনরায় মিলন

নির্দেশনা

  • চিন্তা করুন এই চিঠি থেকে আপনি নির্ভরযোগ্য হওয়ার বিষয়ে এবং অন্য একজনের উপর নির্ভর করার বিষয়ে কি শিখতে পারেন।
  • চিন্তা করুন এই চিঠি থেকে আপনি অন্য একজনের জন্য সুপারিশ দেওয়ার বিষয়ে কি শিখতে পারেন।
  • চিন্তা করুন এই চিঠি থেকে আপনি ভাঙ্গা সম্পর্ক পুনরায় মিলন করার বিষয়ে কি শিখতে পারেন? পরিচিত দু’জনের মধ্যে যদি সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় তবে আপনার ভূমিকা কি হওয়ার কথা?

বিবেচনা করুন

  • ওনীষিমের শিষ্যত্বের একটি অংশ হল ফিলীমনের উপর তার বিশ্বাস পুনরায় স্থাপন করা। তা হতে গুলে পৌলের উপরে ওনীষিমের বিশ্বাস রাখতে হবে, ফিলীমন সম্বন্ধে পৌলের সুপারিশের উপরে বিশ্বাস রাখতে হবে (‘আমি জানি ফিরে গিয়ে ফিলীমন তোমাকে ক্ষতি করবে না!’)।
  • অন্য পাশে পৌল এই চিঠির মাধ্যমে ফিলীমনের হৃদয়ে ওনীষিমের বিষয়ে বিশ্বাস পুনরায় স্থাপন করতে চেষ্টা করেন।
  • এখানে বিশ্বাসের একটি তৃবুঝ দেখা যায়: পৌলের বিশ্বাস আছে ফিলীমনের উপরে। পৌল ওনীষিমকে নিশ্চয়তা দেন যে ফিলীমন নির্ভরযোগ্য। আবারও পৌলের বিশ্বাস আছে ওনীষিমের উপরে। পৌল (এই চিঠির মাধ্যমে) ফিলীমনকে নিশ্চয়তা দেন যে ওনীষিম নির্ভরযোগ্য।
  • ওনীষিম ও ফিলীমন উভয়ের হৃদয়ে পৌলের উপর বিশ্বাস না থাকলে এই পুনরায় মিলনের প্রচেষ্টা নিঃস্ফল হত। আবারও পৌলের হৃদয়ে যে দু’জনের জন্য বিশ্বাস আছে বলে তিনি এই পুনরায় মিলনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
  • পৌলের উদ্দেশ্য হল এই দু’জনের মধ্যে সুসম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করতে যেন তাদের সম্পর্কে পৌলের উপর আর নির্ভর করে না।
  • আমরা কিন্তু অনেক বার সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যবহার করি। যখন পরিচিত দু্’জনের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়, আমরা অনেক বার তা ‘নিজেকে আরো প্রিয় বানানোর সুযোগ’ হিসাবে ব্যবহার করি। আমরা একজনের কাছে গিয়ে ‘দয়ামায়া’ করে আবেগীয় কথা বলি (‘হাই, সে তোমাকে এত কষ্ট দিয়েছে!)। আমরা ‘সান্ত্বনাদাতা’ হই এবং এভাবে তাদের দ্বন্দ্ব আরো খারাপ করে তুলি।
  • পৌল এর চেয় কত ভিন্ন ব্যবহার দেখান! তিনি ফিলীমনের অনুপস্থিতিতেও তার প্রতি বিশ্বস্ত। পৌল ফিলীমনকে ‘সব দোষ’ দেন না, তিনি ওনীষিমকে ‘বেচারা’ মনে করেন না। বরং তিনি ওনীষিমের কাছে ফিলীমনের সুপারিশ দেন। পৌল সম্পর্ক পুনরায় গঠনের ও মিলনের জন্য চেষ্টা করেন।
  • পৌল তার উপরে এত বিশ্বাস রাখেন বলে ওনীষিম সম্মানিত হবে এবং এই বিশ্বাসরের যোগ্যরূপে চলতে চেষ্টা করবে। প্রকৃতপক্ষে পৌল ওনীষিমের সুপারিস করেন বলে পৌল ওনীষিমকে ক্ষমতা দেন: পৌলের কথা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা এখন ওনীষিমের হাতে আছে। যদি সে অহংকারী হয় বা কলসীতে গিয়ে খারাপ ব্যবহার দেখায় তবে তা পৌলের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করবে এবং তাকে লজ্জায় ফেলবেন।
  • সুপারিশ দেওয়া হল ঝামেলার কাজ। আমি যদি একজনের সুপারিশ দেই তবে আমি আমার বিশ্বাসযোগ্যতা তার দিকে বিস্তার করি। আমি আমার কথার বিশ্বাসযোগ্যতা আর একজন লোকের ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল বানিয়েছি। আমার সুপারিশ যদি মিথ্যা হিসাবে প্রমাণিত (অর্থাৎ লোকটি ভাল ব্যবহার করেন না), তবে তার জন্য আমার দায়িত্ব নিতে হয়। এরজন্য হালকা মনোভাবে সুপারিশ না দিলে ভাল। কিন্তু একটি সুপারিশ দিয়ে আমি অনেক উপকারও করতে পারি। সুপারিশ দ্বারা একজনের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হয় – একটি শক্তিশালী বিষয়।
  • আপনি সম্পর্কের ক্ষেত্রে কেমন করছেন? অন্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হলে আপনি কি সম্পর্কের পুনর্মিলনের চেষ্টা করেন? না কি ‘আগুনে তেল দেন’? আপনি কি আড্ডা মারতে পছন্দ করেন? আপনি কি নিজেকে প্রিয় বানানোর জন্য সুযোগ ধরেন? আপনি কি অনুপস্থিত ব্যক্তির প্রতি বিশ্বস্ত?
  • আপনি কি আর একজনের সুপারিশ দ্বারা উপকার পেয়েছেন? আপনি কি বিশ্বস্ত ছিলেন যেন সুপারিশকারীর সমস্যা না হয়? আপনি কি সুপারিশ দিয়েছেন? হালকাভাবে দিয়েছেন? আপনার কথা কি পরে প্রমাণিত হয়েছে?
  • আপনি কি অন্যদের বিশ্বাসকে মূল্যবান বলে গুরুত্ব দেন? আপনি কি বিশ্বাসযোগ্য? নির্ভরযোগ্য?
৭। খোলাভাবে যোগাযোগ

নির্দেশনা

  • ফিলীমন চিঠিতে আর একটি ক্ষেত্রে আমরা পৌলের আদর্শ ব্যবহার পাই: তিনি খোলাভাবে যোগাযোগ করেন। সম্ভাবনা বেশি যে চাইলে পৌল ওনীষিমকে তার কর্মী হিসাবে পশ্চিমদিকে নতুন পরিচর্যার জন্য পাঠাতে পারতেন এবং এর খবর ফিলীমনের কাছে পৌঁছিয়ে যেত না।
  • কিন্তু পৌল এভাবে করতে চান না। তিনি বিষয়টি গোপন রাখেন না, ষড়যন্ত্রও করেন না, বরং তিনি চান যেন সব কিছু সুন্দরভাবে ও পরিষ্কার যোগাযোগের মাধ্যমে সমাধান হয়।

এর প্রয়োগ নিয়ে চিন্তা করুন

  • কোন ক্ষেত্রে আপনারও আরো খোলাভাবে যোগাযোগ করা দরকার? আপনি কোনো বিষয় গোপনে রেখেছেন যা প্রকাশ্যে করা আরো ভাল হত? এমন কিছু আছে যা সরাসরিভাবে একজনের সাথে তোলা ভাল হত?
  • ঈশ্বর কি আপাকে কোনো বিষয়ে কথা বলতে বা আপত্তি উঠাতে বলেন? বা আপনা কারণ বুঝিয়ে বলতে বলেন?
  • এমন কোনো কথা বলছেন যা অনুপস্থিত লোক শুনলে তার খারাপ লাগবে? অন্যভাবে কি বলা যেত? কথাটি বলা কি প্রয়োজন? আমি কি ঠিক ব্যক্তির কাছে বলছি না ‘বাকি সবাইকে’ বলছি?
৮। সাংস্কৃতিক চিন্তা এবং ঈশ্বরের নীতি সম্বন্ধে ফিলীমন চিঠি থেকে কি শিখতে পারেন?

চিন্তা করুন

  • চারিদিকের সংস্কৃতি অনুসারে এবং রোমীয় সাম্রাজ্যের আইন অনুসারে ওনীষিমকে পলাতক দাস হিসাবে শাস্তি দিতে, নির্যাতন করতে, কঠোর পরিশ্রম করাতে এবং এমন কি মেরে ফেলার অধিকার ফিলীমনের আছে।
  • পৌল এই চিঠিতে ফিলীমনের কাছ থেকে দাবি করেন, তা একদম প্রচলিত সাংস্কৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে: একজন দাসকে ক্ষমা করা এবং তাকে আর দাস হিসাবে নয় বরং প্রিয় ভাই হিসাবে গ্রহণ করা।
  • পৌলের এই দাবি থেকে আপনি কি শিখতে পারেন?

এর প্রয়োগ নিয়ে চিন্তা করুন

  • যদি আমাদের সংস্কৃতিতে এক ধরণের আচরণ বা মনোভাব প্রচলিত কিন্তু ঈশ্বরের নীতি ঠিক বিপরীত ধরণের আচরণ বা মনোভাবে দাবি করে, তবে আপনি কোনটা বেঁছে নেবেন?
  • কোনটা বড়, ঈশ্বরের বাক্য বা আমাদের সংস্কৃতি? যদিও আমরা সবাই এই উত্তর জানি, নির্দিষ্ট কোনো বিষয় উঠলে আমরা সংস্কৃতি অনুসারে কেন তারপরেও করা দরকার, তার এক হাজার কারণ বানাই।
  • কিন্তু তা যদি আমরা করি, আমাদের উপর এবং মণ্ডলীর উপর এর প্রভাব কি হবে? দীর্ঘ দিনের চিন্তা করলে তার ফলাফল কি হবে? আমি যদি ঈশ্বরের বাক্যকে আমার সংস্কৃতির নিচে রাখে, তবে বাক্যের পরিবর্তনকারী ক্ষমতা থাকবে কি?
৯। পৌল কি ফিলীমনকে জোর করেন বা অতিরিক্ত চাপ দেন?

চিন্তা করুন

  • এই চিঠিতে পৌল আসলে কিছু জোরপূর্বক ও আবেগীয় চাপের কথা বলেন, যেমন ফিলীমন ১৯ পদ যেখানে তিনি ফিলীমনকে শোনোন যে তিনি তার কাছে ঋণী। কিছু আধুনিক পাঠকেরা ফিলীমন চিঠিটি ঠিক একারণে অপছন্দ করে।
  • রোমীয় আইন এবং প্রচলিত সংস্কৃতি অনুসারে পলাতক দাস ফিরে পেয়ে তাকে শাস্তি দেওয়া, কঠোর পরিশ্রম করানো, নির্যাতন করা বা মেরে ফেলার অধিকার ফিলীমনের আছে। তাই বলা যায় যে পৌলের সুপারিশ চিঠি হল ওনীষিমের ‘শুধুমাত্র’ সুরক্ষা বা নিরাপত্তা। পৌল নিশ্চিত করতে চান যে ওনীষিমের ক্ষতি না হয়, তাই চিঠিতে জোর আছে।
  • কিন্তু চিঠিতে হালকা কথাও আছে। ফিলীমন ১১ পদ হল এক ধরণের রসিকতা। ওনীষিমের নামের অর্থ হল ‘সুবিধা’ বা ‘উপকারী’। তাই গ্রীক ভাষায় ১১ পদ শুনতে এমন: ‘মিঃ ওনীষিম বেশি ওনীষিম ছিল না, কিন্তু এখন ওনীষিম
  • আসলেই ওনীষিম হয়ে গেছে’। অথবা: ‘মিঃ সুবিধা আগে বেশি সুবিধার ছিল না কিন্তু এখন মিঃ সুবিধা আসলেই খুব সুবিধার লোক হয়ে গেছে’।
  • এছাড়া ফিলীমন ৪-৭ পৌল ফিলীমনকে খুব সুন্দরভাবে প্রশংসা করেন এবং ফিলীমন ২১ পদও ইতিবাচক কথা বলেন: “তুমি আমার কথা মেনে নেবে জেনেই আমি তোমার কাছে এই চিঠি লিখছি। অবশ্য আমি জানি, আমি যা বলছি তুমি তার চেয়েও বেশী করবে।”
  • পরবর্তী শিক্ষায় “ফিলীমন ০৪ – চারিদিকে পরিস্থিতি বিবেচনা করে আরো ব্যাখ্যা ও প্রয়েগ” আমরা আরো কারণ দেখাব কেন পৌল এই চিঠিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেন না।
১০। ফিলীমন চিঠি থেকে আমরা দায়বদ্ধতা সম্বন্ধে কি শিখতে পারি?

চিন্তা করুন

  • পৌল ফিলীমন ২২ পদে বলেন “আর একটা কথা বলছি-অতিথিদের ঘরখানা আমার জন্য প্রস্তুত রেখো, কারণ আমি আশা রাখি যে, তোমাদের প্রার্থনার ফলে আমাকে তোমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে”। পৌল বলেন যে তিনি শীঘ্রই কলসী শহরে আসবেন – এই কথাটির গুরুত্ব কি? এভাবে পৌল সবার জন্য দায়বদ্ধতা নিয়ে আসেন।
  • কাকে তিনি দায়বদ্ধ করে রাখেন?
    • তিনি ফিলীমনকে দায়বদ্ধ করে রাখেন। কলসীতে এসে ফিলীমনের কাছে পৌলের প্রথম প্রশ্ন হবে: “ওনীষিম কোথায়?” পৌল অবশ্যই খোঁজ নেবেন, ফিলীমন ওনীষিমের প্রতি কি ধরণের আচার-ব্যবহার করেছেন।
    • তিনি ওনীষিমকে দায়বদ্ধ করে রাখেন। কলসীতে এসে পৌল অবশ্যই খোঁজ নেবেন ওনীষিম ফিরে এসে কি ধরণের আচার-ব্যবহার করেনছে। সে কি বশীভূত হয়েছে? ক্ষমা চেয়েছে? নম্র ও প্রজ্ঞাবান মানুষের মত জীবন-যাপন করে?
    • পৌল নিজেকে ফিলীমনের কাছে দায়বদ্ধ করে রাখেন: ওনীষিম সম্পর্কে পৌলের সুপারিশ যদি মিথ্যা হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে, তবে পৌল ফিলীমনকে সংকটে ফেলেছেন। পৌলের দায়িত্ব নিতে হবে, ক্ষমা চাইতে হবে এবং সমস্যা সমাধান করতে চেষ্টা করতে হবে। ফিলীমন তার কাছে আপীল করবেন।
    • পৌল নিজেকে ওনীষিমের কাছেও দায়বদ্ধ করে রাখেন: ফিলীমন সম্পর্কে পৌলের সুপারিশ (যার কারণে ওনীষিম বাধ্য হয়ে নিজের দেশে ফিরেছে) যদি মিথ্যা হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে, তবে পৌল ওনীষিমকে সংকটে ফেলেছেন। ফিলীমনের হাতে দিয়ে যদি ওনীষিনিম নির্যাতিত হয়েছে তবে পৌলকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ওনীষিমের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে, তার হতাশা বহর করতে হবে এবং তাকে পুনরায় গঠিত করতে হবে।
    • আর্থিকদিক দিয়েও পৌলের দায়িত্ব নিতে হবে এবং প্রয়োজন অনুসারে ক্ষতিপূর্ণ করতে হবে। আবেগ দিক দিয়েও তার ওনীষিমের নিরাশা ভাঙ্গতে হবে এবং আঘাত থেকে পুনরায় সুস্থ হতে তাকে সাহায্য করতে হবে।
  • আর একটি বিষয়: মনে আছে যে চিঠিটি শুধুমাত্র ফিলীমনের কাছে লেখা নয়, বরং “বোন আপ্পিয়া”, “সহযোদ্ধা আর্খিপপ্পের” এবং মণ্ডলীর কাছেও লেখা (ফিলীমন ২)। সবাই চিঠিটি পড়তে পারবেন এবং তারা সহজে ফিলীমনকে জিজ্ঞাসা করতে পারে: “তুমি এই বিষয়ে কি করেছ?” এই বিষয় নিয়ে পরবর্তী শিক্ষা “ফিলীমন ০৪ – চারিদিকে পরিস্থিতি বিবেচনা করে আরো ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ” দেখুন।
    এর প্রয়োগ নিয়ে চিন্তা করুন
  • আমরা দায়বদ্ধতার বিষয় থেকে কি কি শিখতে পারি? আমরা অবশ্যই এই ধরণের উদাহরণ দেখেছি: একজন বাংলাদেশী পালক বিদেশে একটি ট্রেনিংগে যাওয়ার সুযোগ পায় কিন্তু বেআইনীভাবে সেই দেশে থেকে যায় এবং অত্যাচারিত খ্রিষ্টান হিসাবে সেখানে আশ্রয় পাওয়ার দাবি করে। যে সংস্থা ট্রেনিং চালিয়েছিল, তারা এই পালকের ব্যবহারের কারণে আর বাংলাদেশ থেকে লোক আনার ভিসা পায় না। পালক নিজের সুবিধা ধরে অন্য সবার জন্য দরজা বন্ধ করে রেখেছেন।
  • ওনীষিম কি অন্যদের জন্য দরজা খুলবে? না বন্ধ করবে? ওনীষিম যদি অত্যন্ত বিশ্বস্ত হয় তবে সে অন্যদের জন্য অনেক সুযোগ তৈরি করতে পারে।
  • আপনার কি ভূমিকা আছে? আপনার ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আপনি কি পার্থক্য তৈরি করতে পারেন? আপনি সত্যকে কত ভালবাসেন? সততা রক্ষা করার জন্য কি করতে রাজি আছেন? আপনি কি বুঝতে পারে যে আপনার দায়বদ্ধতা দরকার আছে? আপনি কি দায়বদ্ধতা স্বেচ্ছায় খোঁজ করেন এবং আলিঙ্গন করেন? দায়বদ্ধতার প্রয়োজনীয়তা দেখার জন্য আপনার যথেষ্ট প্রজ্ঞা আছে।

এপর্যন্ত আমরা ফিলীমন চিঠিতে যতটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি, ততটা নিয়ে প্রধান ৩টি ব্যক্তি কেন্দ্র করে আলোচনা করেছি: পৌল, ফিলীমন, ওনীষিম। কিন্তু চিঠিটি যে মাত্র ৩জন প্রধান ব্যক্তির উপর প্রভাব ফেলবে, এমন নয়। চিঠিটি ‘শূণ্যস্থানে’ লেখা হয় নি, চিঠিটি চারিদিকে লোকদের উপরেও অনেক প্রভাব ফেলবে। পরবর্তী শিখায় “ফিলীমন ০৪ – চারিদিকে পরিস্থিতি বিবেচনা করে আরো ব্যাখ্যা ও প্রয়েগ” আমরা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করে আর অনেক নতুন বিষয় দেখব।