ব্যাখ্যা করা – ভূমিকা
  • লক্ষ্য করার পরে ইন্ডাক্টিভ বাইবেল অধ্যয়নের দ্বিতীয় ধাপ হল ব্যাখ্যা করা।
  • ইন্ডাক্টিভ অধ্যয়নে ‘ব্যাখ্যা করা’ মানে না ‘বুঝিয়ে বলে বা বিশ্লেষণ করে বলা’ বরং ‘ব্যাখ্যা করা’ মানে: যারা এই পুস্তক প্রথম পেয়েছিলেন, তাদের কাছে পুস্তকটির অর্থ কি ছিল? যারা পুস্তকটি প্রথম পেয়েছিল, তাদেরকে আমরা ‘প্রথম পাঠকেরা’ বলি।
  • এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমাদেরকে ইতিহাসে ফিরে গিয়ে ঐসময়ের প্রেক্ষাপট বুঝতে হবে। অর্থাৎ আমাদের পুস্তকের লেখক এবং পাঠকদের বিবেচনা করতে হবে, তাদের ঐতিহাসিক পরিস্থিতি বুঝতে হবে এবং কেন এই পুস্তক লেখা হয়েছে, তার কারণ ও উদ্দেশ্যও বুঝতে হবে।
  • আমরা একটি পর একটি ব্যাখ্যা প্রশ্ন করে পুস্তকটির প্রয়োজনীয় ঐতিহাসিক পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট আরো ভালভাবে বুঝতে চেষ্টা করব।
  • সব কিছুর শেষে ব্যাখ্যা প্রশ্নের একটি সারাংশ তালিকা দেওয়া হবে।
১ম ব্যাখ্যা প্রশ্ন                  পুস্তকের লেখক কে?
  • লক্ষ্য করার সময় আমরা ফিলীমন ১ পদে দেখলাম যে পুস্তকের লেখক হলেন পৌল।
  • পৌল কে ছিলেন?
  • এই সময় নতুন নিয়মের পৌলের নাম যে ১৫৬ পদে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো সব বের করে দেখা ভাল হত।
  • তার অর্থ হত প্রেরিত পুস্তক এবং পৌলের চিঠিগুলো সব পড়া।
  • আমরা তার চেয়ে এখানে পৌলের জীবনের একটি সারাংশ দেখব। এই সারাংশটিতে নতুন নিয়মের বিভিন্ন পুস্তক থেকে পৌল সম্বন্ধীয় তথ্য সংগ্রহ ও সাজানো হয়েছে:
২য় ব্যাখ্যা প্রশ্ন                  পুস্তকের প্রথম পাঠকেরা কে কে?
  • লক্ষ্য করার সময়ে আমরা ফিলীমন ১-২ পদ থেকে শিখেছি যে পুস্তকটির পাঠকেরা হলেন ফিলীমন, আপ্পিয়, আর্খিপ্পের কাছে এবং ফিলীমনের বাড়িতে যে মণ্ডলী মিলিত হয, তাদের কাছেও লেখা।
  • ফিলীমন, আপ্পিয়া, আর্খিপ্প এবং এই মণ্ডলী সম্বন্ধে আমরা কিভাবে আরো কিছু জানতে পারব?
  • প্রথম ধাপ হল খুঁজে দেখা, তাদের নাম কি প্রেরিত পুস্তকে কোথাও উল্লেখ আছে কিনা। কিন্তু তাদের নাম প্রেরিত পুস্তকে আসে না।
  • দ্বিতীয় ধাপ হল খুঁজে দেখা, তাদের নাম নতুন নিয়মের আর একটি পুস্তকে উল্লেখ করা হয়েছে কিনা। এভাবে একটি word serach করলে পাওয়া যায় যে যদিও ফিলীমন ও আপ্পিয়ার নাম আর কোথাও উল্লেখ নেই, আর্খিপ্প এবং ওনীষিমের নাম আর একটি পুস্তকে পাওয়া যায় একবং একসাথে পাওয়া যায়: ওনীষিমের নাম কলসীয় ৪:৯ পদে উল্লিখিত এবং আর্খিপ্পের নাম কলসীয় ৪:১৭ পদে উল্লিখিত।

রির্দেশনা

  • কলসীয় ৪:৭-৯ পদ মনোযোগের সঙ্গে পড়ুন।
  • ভাল করে চিন্তা করুন:
  • তুখিক কে? কলসীয় চিঠির ক্ষেত্রে তার ভূমিকা কি?
  • তুখিক কার সাথে কলসীয়দের কাছে আসছেন?
  • ওনীষিমের বিষয়ে লেখক বলেন “তিনি তোমাদেরই একজন”। এই কথার গুরুত্ব কি?

কি কি খুঁজে পাওয়া যায়

  • তুখিক হলেন পৌলের একজন সমকর্মী। পৌল তার মধ্য দিয়ে কলসীয় চিঠি পৌছান, অর্থাৎ তিনি তুখিক কলসী শহরে পাঠান চিঠিটি পৌঁছানোর জন্য এবং পৌল সম্বন্ধে আরো খোঁজ দেওয়ার জন্য।
  • তুখিক ওনীষিমের সঙ্গে যাত্রা করবেন, তাই ওনীষিমও পৌলের কাছ থেকে কলসীয় মণ্ডলীর কাছে যাচ্ছেন।
  • ওনীষিম যে “তোমাদেরই একজন” মানে যে তিনি কলসীয় শহরের লোক।
  • ফিলীমন ১৬ পদ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে ওনীষিম ফিলীমনের দাস এবং যেহেতু দাসরা মনিবদের বাসায় থাকত ও কাজ করত আমরা বুঝতে পারি যে ফিলীমনের শহর কলসী।
  • ফিলীমনের বাড়িতে যে মণ্ডলী মিলিত হয় (ফিলীমন ২) তবে তা হল কলসীয় মণ্ডলী অথবা কলসীয় মণ্ডলীর পাশাপাশি একটি গৃহ মণ্ডলী।
  • ফিলীমন, আপ্পিয়া ও আর্খিপ্প সবাই হলেন কলসীয় লোক। তারা উভয় পৌলের একটি ব্যক্তিগত চিঠি পান, এছাড়া কলসীয় বিশ্বাসীদের কাছে পৌলের “কলসীয়” চিঠি ও তাদের কাছে লেখা।

রির্দেশনা

  • কলসীয় ১:১ এবং ৪:৭-১৭ পদ পড়ুন এবং লক্ষ্য করুন কাদের উল্লিখিত করা হয়েছে। তা ফিলীমন ১-২ এবং ২৩-২৪ পদে উল্লিখিত লোকদের সাথে তুলনা করেন।
  • কে কে উভয় চিঠিতে উল্লিখিত?
  • কে কে ফিলীমন চিঠিতে উল্লিখিত কিন্তু কলসীয় চিঠিতে নেই?
  • কে কে কলসীয় চিঠিতে উল্লিখিত কিন্তু ফিলীমন চিঠিতে নেই?
  • এত মিল পাওয়া যায়, এর অর্থ ও গুরুত্ব কি হতে পারে?

খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

  • ফিলীমন পুস্তকে উল্লিখিত লোক ফিলীমন ও আপ্পিয়া বাদে সবাই কলসীয় পুস্তকেও উল্লিখিত।
  • কলসীয় চিঠিতে তুখিক এবং একজন যীশু-যুষ্ট’ পাওয়া যায় যাদের উল্লেখ ফিলীমন পুস্তকে পাওয়া যায় না।
  • কলসীয় চিঠি থেকে আসা তথ্য বিবেচনা করলে আরো পরিষ্কার একটি ছবি উঠে আসে:
  • ওনীষিম (যিনি নিজের নামের চিঠির বাহক) তুখিকের সাথে (যিনি কলসীয় চিঠির বাহক) পৌল থেকে কলসী শহরে যান।
  • আমরা বুঝতে পারি যে কলসী শহরে এবং ইয়রাপলি ও লায়দিকেয়া মণ্ডলীর মধ্যে সম্পর্ক আছে এবং নূম্ফা নামে একজন মহিলা কাছাকাছি আর একটি গ্রহমণ্ডলীর নেত্রী।
  • ফিলীমনের বাড়িতে যে মণ্ডলী মিলিত হয় তা কলসীয় মণ্ডলী হতে পারে, অথবা নূম্ফার মণ্ডলীর মত কাছাকাছি আর একটি মণ্ডলী হতে পারে।
  • কলসীয় ও ফিলীমন চিঠিতে প্রায় একই লোক উল্লিখিত বলে আমরা বুঝতে পারি যে এই দু’টি চিঠি সম্পর্কিত এবং হতে পারে একই সময়ে লিখিত।

নির্দেশনা

  • নিচে দেওয়া তালিকায় সব উল্লিখিত লোকদের সম্বন্ধে তথ্য দেওয়া হয়েছে: তারা নতুন নিয়মের কত বার উল্লিখিত, তারা ফিলীমন ও কলসীয় পুস্তকে কোন পদে উল্লিখিত এবং তাদের সম্বন্ধে কি বর্ণনা করা হয়েছে।
  • তালিকাটি ভাল করে দেখুন:
  • নিচে দেওয়া ছবিগুলো লক্ষ্য করুন এবং ছবিগুলোর মধ্যে মিল ও পার্থক্য খেয়াল করুন:
৩য় ব্যাখ্যা প্রশ্ন                    লেখকের অবস্থা কেমন?

নির্দেশনা

  • লক্ষ্য করুন: পৌল ফিলীমন চিঠিতে নিজের অবস্থা সম্বন্ধে কি বলেন?
  • চিন্তা করুন: ফিলীমন ২২ পদের অর্থ বা গুরুত্ব কি?

কি কি খুঁজে পাওয়া যায়

  • পৌল কোথায় আছেন যখন তিনি ফিলীমন চিঠিটি লেখেন?
    • ফিলীমন ১      “আমি পৌল খ্রীষ্ট যীশুর বন্দী হয়েছি।”
    • ফিলীমন ৯     “বর্তমানে খ্রীষ্ট যীশুর জন্য বন্দী হিসাবে আমি পৌল তোমার কাছে … অনুরোধ করছি।”
    • ফিলীমন ১৩   “আমি তাকে … চেয়েছিলাম, যেন আমার এই বন্দী অবস্থায় সে … সেবা করতে পারে।”
    • ফিলীমন ২৩  “ইপাফ্রা তোমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন; তিনি খ্রীষ্ট যীশুর জন্য আমার সংগে বন্দী আছেন।”
  • পৌল পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করেন যে তিনি জেলে।
  • তিনি এত দিন ধরে জেলে আছেন যে ওনীষিমকে সুসমাচার দেওয়া, শিক্ষা ও শিষ্যত্ব দেওয়া এবং তার জন্য চিঠি লেখা সম্ভাব।
  • ফিলীমন ২২ পদ থেকে আমরা আরো বুঝতে পারি যে পৌল শীঘ্রই খালাস পেতে আশা করেন।
  • এইসব আমরা পৌলের জীবনের সাথে কিভাবে মিলাতে পারি? পৌল কতবার জেলে ছিলেন? কোথায় জেলে ছিলেন?

নির্দেশনা

  • পৌল জেলে থাকার বিষয়ে প্রেরিত পুস্তকে এবং চিঠিতে দেওয়া তথ্য নিচে তালিকা হিসাবে দেওয়া হয়েছে।
  • তালিকা ভাল করে দেখুন এবং চিন্তা করুন কোন বন্দন ফিলীমন চিঠিতে বর্ণিত পরিস্থিতির সাথে মিলানো যায়।

খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

  • কৌসরিয়া ও রোমে পৌল ২ বছর ধরে বন্ধনে আছেন। শুধুমাত্র এই দু’টি বন্ধনে ওনীষিমকে বিশ্বাসী ও শিষ্য বানানোর জন্য ও চিঠি লেখার জন্য সময় যথেষ্ট সময় থাকে।
  • কিভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারি পৌল কৈসরিয়ায় না রোম বন্ধনে আছেন যখন ফিলীমন চিঠিটি লেকেন?
  • প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আর একটু তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন।
  • প্রকৃতপক্ষে পৌল বেশ কয়েকটি চিঠিতে তার বন্ধন অবস্থা নিয়ে কথা বলেন: ফিলিপীয়, ইফিষীয়, কলসীয়, ফিলীমন ও ২ তীমথিয়।
  • শুধুমাতর ২ তীমথিয় চিঠিতে পৌল বলেন যে তার মুক্ত হওয়ার আর আশা নেই। এরজন্য ২ তীমথিয় চিঠি পরে লিখিত একটি চিঠি।
  • কিন্তু অন্য ৪টি চিঠির মধ্যে বিভিন্ন ধরণের মিল পাওয়া যায়। এই ৪টি চিঠিগুলো পৌলের জেলের চিঠি (prison epistles) বলা হয়।

নির্দেশনা

  • নিজের তালিকায় ৪টি চিঠির মধ্যে মিলগুলো দেখানো হয়েছে। তালিকাটি ভাল করে লক্ষ্য করুন।
  • চিন্তা করুন এই ধরণের মিল পাওয়ার অর্থ বা গুরুত্ব কি।
  • ফিলিপীয় ১:৩ এবং ৪:২২ পদ পড়ুন এবং চিন্তা করুন এই পদগুলোর অর্থ বা গুরুত্ব কি।

কি কি খুঁজে পাওয়া য়ায়

  • ৪টি চিঠির মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মিল আছে বলে ধারণা করা যায় যে সেগুলো কমবেশি একই সময়ে লেখা হয়েছে, একই বন্ধন থেকে লেখা হয়েছে এবং সবগুলো তুখিক দিয়ে পৌঁছানো হয়েছে।
 
৪র্থ ব্যাখ্যা প্রশ্ন                    লেখক কোথায়? লেখক পুস্তকটি কখন লেখেন?
  • ফিলিপীয় ১:১৩ পদে “এখানকার রাজবাড়ীর সৈন্যদল” এবং ৪:২২ পদে “সম্রাট কৈসরের বাড়ীর লোকেরা”, এই দু’টি কথা ইঙ্গিত করে যে পৌল যিহূদার নৌবন্দর কৈসরিয়াতে বন্ধনে নন বরং তিনি রাজধানী রোমে বন্ধনে আছেন।
  • তাই সম্ভাবনা বেশি যে পৌল এই ৪টি ‘জেলের চিঠিগুলো’ রোম শহরে থেকে লেখেন।
  • পৌলের জীবন তালিকা আর একবার দেখে বুঝা যায় যে তিনি রোম শহরে ৬০-৬২ খ্রীষ্টাব্দে বন্ধনে থাকে। পৌলের এই বন্ধন কিভাবে শুরু হয়েছে এবং তার মামলা এর পর্যন্ত কেমন গেল, প্রেরিত পুস্তকে এই বিষয়ে অনেক খুঁটানাটি তথ্য দেওয়া আছে (প্রেরিত ২১-২৮)। পৌলকে যিরূশালেমে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং অল্প দিনের মধ্যে কৈসরিয়ায় নেওয়া হয়েছিল যেখানে তিনি ২ বছর তার মামলার অপেক্ষায় বন্দী হিসাবে আছেন (৫৭-৫৯ খ্রীঃ)। যখন তিনি কৈসরের কাছে আপীল করে তখন তাকে রোম শহরে পাঠানো হয় এবং সেখানে তিনি আবারও ২ বছর তার মামলা আদালতে আসার অপেক্ষায় থাকেন (৬০-৬২ খ্রীঃ)।
  • তিনি রোম শহরে আসলে গৃহ বন্দী হিসাবে মোটামুটি ভদ্রভাবে সময় কাটাতে পারেন (প্রেরিত ২৮:৩০-৩১) যদিও কোথাও যেতে পারেন না। একারণে এই সময়কে ‘পৌলের হালকা বন্ধন’ বলা হয়।
  • “রাজবাড়ীর সৈন্যদল” খ্রীষ্টের বিষয়ে জানতে পাচ্ছে (ফিলিপীয় ১:১৩) কারণ পৌল তার পাহারাদারদের সুখবর দিতে থাকেন।
  • রোমীয় আইন অনুসারে একজন আসামীকে ২ বছরের চেয়ে বেশি দিন বন্ধনে রাখা যাবে না, তার মামলা আদালতে এসে রায় পাবে অথবা তাকে ২ বছরের মাথায় এমনি ছেড়ে দিতে হবে। পৌল রোমীয় নাগরিক (প্রেরিত ২২:২৮) এবং নাগরিক হিসাবে এই আইন অনুসারে তিনি আশা করতে পারেন যে আদালতে জ্যাম আছে বলে তাকে এমনি মুক্ত করা হবে। হতে পারে একারণে তিনি ফিলীমনকে প্রার্থনা করতে থাকতে বলেন, সঙ্গে অতিথিঘরখানাও প্রস্তুত করতে বলেন (ফিলীমন ২২)।
  • সারাংশ করে বলা যায় যে সম্ভাবন বেশি যে পৌল রোম শহরে হালকা বন্ধনের শেষদিকে অর্থাৎ ৬২ খ্রীষ্টাব্দে এই ৪টি জেলের চিঠি লেখেন।
 
৫ম ব্যাখ্যা প্রশ্ন                    কলসীয় মণ্ডলী কিভাবে স্থাপন হয়েছে? মণ্ডলীর স্থাপনকারী কে? কখন স্থাপন হয়েছে?
  • কলসীয় চিঠিতে (কলসীয় ৪:৯) পৌল ওনীষিমকে “তোমাদেরই একজন” বলেন। তাই আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে ফিলীমন, আপ্পিয়া ও অর্খিপ্প এবং ফিলীমনের বাড়িতে গৃহমণ্ডলী হল কলসী শহরে অবস্থিত।
  • কলসী শহর কোথায়? কলসীয় মণ্ডলী কিভাবে স্থাপন হয়েছিল?
  • ফিলীমন ১ এবং ১৯ পদ থেকে বুঝা যায় যে ফিলীমন পৌল থেকে সুখবর পেয়েছিলেন এবং এক সময় তার সঙ্গ কাজ করেছিলেন। কিন্তু তা কবে ছিল? কোথায় তারা একসাথে কাজ করেছিল? ঐসময় থেকে কত বছর পার হয়েছে?

নির্দেশনা

  • নিচে রোম সাম্রাজ্যের একটি মানচিত্র দেওয়া হয়েছে (কমবেশি ভূমধ্যসাগরের পূর্বঞ্চল)। মানচিত্রটি ভাল করে দেখুন এবং এশিয়া মাইনর প্রদেশে এশিয়া জেলায় কলসী শহর খুঁজে বের করুন।
  • লক্ষ্য করুন যে কলসীয় চিঠিতে উল্লিখিত ইয়রাপলি ও লায়দিকেয়া শহরগুলো কলসীর কাছাকাছি অবস্থিত।

শিক্ষা

  • কলসী শহর সম্বন্ধীে কিছুটা ঐতিহাসিক ও ভৌগলিক তথ্য:
  • কলসী হল প্রাচীন একটি শহর। আগের যুগেও তার উল্লেখ পাওয়া যায়।
  • কলসী শহরের নাম মানে “বিশাল” (Colossae < colossal) এবং প্রকৃতপক্ষে শহরটি প্রাচীন যুগ থেকে বড় একটি শহর।
  • এশিয়া মাইনর (আধুনিক তুরষ্ক দেশ) হল দু’টি মহাদেশের মাঝে ‘জমি সেতু’, তাই প্রাচীন যুগ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ এই এলাকা হয়ে যায়।
  • রোমীয়রা যখন ১৩৩ খ্রীষ্টপূর্বে এশিয়া মাইনর এলাকাটি নিজের অধীনে নিয়ে আসে, তারা ভাল ‘রোমীয় রাস্তা’ বসিয়ে দেয়। পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়কে অবস্থিত শহর হিসাবে কলসী শহর অনেক গুরুত্ব, বেচা-কেনা ও সুযোগ-সুবিধা ছিল।
  • কলসী থেকে কিছুটা পশ্চিম দিকে অবস্থিত ছিল ইফিষ শহর। ইফিষ ছিল গুরুত্বপূর্ণ নৌবন্দর এবং ঐযুগের সবচেয়ে বড় শহরগুলোর মধ্যে একটি।
  • ইয়রাপলি ও লায়দিকেয়া (কলসীয় ৪:১৬) শহরে ছিল কলসীর সাথে একই উপতাকায় অবস্থিত শহর, কমবেশি ১০ মাইল দূরে।

নির্দেশনা

  • কলসীয় ১:৫-৭, ২:১ এবং ৪:১২-১৩ পদ ভালভাবে পড়ুন।
  • এই পদগুলো নিয়ে চিন্তা করুন।
  • কলসীয় মণ্ডলীর স্থাপনকারী সম্বন্ধে কি বুঝা যায়?

কি কি খুঁজে পাওয়া যায়

  • দেখা যায় যে পৌল নয় বরং ইপাফ্রা হলেন কলসী মণ্ডলীর স্থাপনকারী এবং সম্ভাবনা বেশি যে তিনিই ইয়রাপলি ও লায়দিকেয়া মণ্ডলীরও স্থাপনকারী।
  • কলসীয় ২:১ পদ থেকে ধালনা নেওয়া যায় যে কলসীয় বিশ্বাসীরা পৌলকে মুখে দেখেন নি।
  • এখানে একটি প্রশ্ন উঠে আসে: পৌল সাধারণত আর একজন প্রেরিত দ্বারা স্থাপিত মণ্ডলী বা পরিচর্যার ক্ষেতে হাত দিতে চান না (২ করি ১০:১৩-১৪ পদ দেখুন)। কিন্তু এখানে তিনি কেন ইপাফ্রা দ্বারা স্থাপিত একটি মণ্ডলীর কাছে কেন চিঠি লেখেন? কেন তিনি নিজেকে তাদের জন্য দায়ী মনে করেন?

নির্দেশনা

  • প্রেরিত ১৯:১ এবং ১৯:৮-১০ পড়ুন।
  • চিন্তা করুন: এই পদগুলো থেকে আমরা এই এলাকায় পৌলের পরিচর্যা সম্বন্ধে কি বুঝতে পারি?

কি কি খুঁজে পাওয়া যায়

  • ধারণা করা যায় যে পৌল কলসী শহর থেকে কাছাকাছি ইফিষ শহরে অনেক সময় পরিচর্যা করেন। এখানে ২ বছর ও ৩ মাস উল্লেখ করা হয়েছে, প্রেরিত ২০:৩১ পদে এই সময়কে “৩ বছর” হিসাবে বর্ণিত হয়।
  • পৌলের জীবন সম্বন্ধীয় তালিকায় দেখে বুঝা যায় যে তা হল ৫৩-৫৬ খ্রীষ্টাবন্দ
  • পৌল ইফিষ শহরে সুখবর প্রচার করেন, যুক্তি-তর্ক করেন, শিক্ষা ও শিষ্যত্ব দেন এবং হতে পারে নতুন বিশ্বাসীদের কর্মী হিসাবে প্রশিক্ষণ দেন। পৌল এভাবে ইফিষ তার পরিচর্যার কেন্দ্র বানিয়ে হতে পারে সেখান থেকে বিভিন্নভাবে বহিঃপ্রচারেও বের হন এবং চারিদিকে এলাকায় মণ্ডলী স্থাপন করেন।
  • প্রেরিত পুস্তকের লেখক পৌলের এই সময় এভাবে সারাংশ করে বর্ণনা করেন (প্রেরিত ১৯:১০): “দু’বছর এইভাবেই চলল। তাতে যে যিহূদী ও গ্রীকেরা এশিয়া প্রদেশে থাকত তারা সবাই প্রভুর বাক্য শুনতে পেল।”
  • সম্ভাবনা বেশি যে ইপাফ্রা (এবং ফিলীমন ও আর্খিপ্পও) পৌলের পরিচর্যা দ্বারা বিশ্বাসী হয়েছিলেন, তার শিষ্য এবং তার সহকর্মী হয়েছিল। পৌল ফিলীমনকে “সহকর্মী” এবং আর্খিপ্পকে “সহযোদ্ধা” বলেন (ফিলীমন ১-২)। কলসীয় চিঠিতে তিনি ইপাফ্রাকে “খ্রীষ্টের একজন বিশ্বস্ত সেবাকারী” বলেন (কলসীয় ১:৭)।
  • হতে পারে পৌল থেকে সুখবর ও প্রশিক্ষণ পেয়ে ইপাফ্রা নিজের শহর কলসীতে ফিরে গিয়ে সেখানে (এবং কাছাকাছি ইয়রাপলি ও লায়দিকেয়া শহরে মণ্ডলী স্থাপন করেছেন। ইফাফ্রা মণ্ডলীর স্থাপকারী কিন্তু তার পরিচর্যা পৌলের নেতৃত্বে হচ্ছে, তাই পৌল এখানে নিজেকে দায়ী মনে করেন। ধারণা করা যায়:
    • ফিলীমন, পৌলের মধ্য দিয়ে সুখবর পেয়ে (ফিলীমন ১৯) নিজের শহরে ফিরে যান এবং সাখানে কলসীয় মণ্ডলীতে একজন প্রাচীন বা একটি গৃহমণ্ডলীর নেতা হিসাবে চমৎকারভাবে কাজ করেন (ফিলীমন ১-৭)।
    • ইপাফ্রা, যিনি কলসীয় মণ্ডলীর স্থাপনকারী, এখন রোমে অর্থাৎ পৌলের কাছে বেড়াতে যায় এবং পৌলকে কলসীয় মণ্ডলীর খোঁজ-খবর জানান। সম্ভাবনা বেশি যে তার কথার উপর ভিত্তি করে পৌল কলসীয় চিঠি লেখেন। কোনোভাবে ইপাফ্রাও বন্ধনে রাখা হয় (কলসীয় ৪:১২-১৩)। তিনি কলসীতে ফিরে যেতে পারেন না বলে তিনি তার হাত দিয়ে স্থাপিত মণ্ডলীগুলোর জন্য বিনতি চালিয়ে যান।
    • হতে পারে আর্খিপ্পও ইফিষ শহরে পৌলের পরিচর্যা দ্বারা বিশ্বাসী, শিষ্য এবং সহকর্মী হয়ে যান (ফিলীমন ২)। তিনি এখন কলসী মণ্ডলীর সাথে যুক্ত আছেন। হয়তো ইপাফ্রা তার কাছে দায়িত্ব দিয়ে রোমের দিকে রওনা দিলেন। কলসীয়তে পৌল তাকে বলেন (কলসীয় ৪:১৭): “প্রভুর সেবার জন্য তোমাকে যে কাজ দেওয়া হয়েছে তা শেষ করবার দিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দাও”। তিনি কলসীয় মণ্ডলীর দেখাশোনাকারী বলে হয়তো পৌল তাকে ফিলীমন চিঠিতেও সহ-প্রাপক হিসাবে উল্লেখ করেন (ফিলীমন ২)।
  • সারাংশে বলা যায় যে কলসীয় মণ্ডলী ৫৩-৫৬ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে পৌলের শিষ্য ও সহকর্মী ইপাফ্রা দ্বারা স্থাপতি হয় যখন পৌল ইফিষ তার পরিচর্যার কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করেন।
  • তাই যদি হয় তবে মণ্ডলীর স্থাপন থেকে ফিলীমন চিঠি লেখা পর্যন্ত কত বছর গেছে?
  • যদি স্থাপন ছিল ৫৩-৫৬ খ্রীষ্টাব্দে এবং ফিলীমন চিঠি ৬২ খ্রীষ্টাব্দে লেখা হয়েছে, তবে কলসীয় মণ্ডলীর বয়স ৬-৯ বছর যখন ফিলীমন ও কলসীয় চিঠি তাদের হাতে আসে।
 
৬ষ্ঠ ব্যাখ্যা প্রশ্ন                     মণ্ডলীর ঐতিহাসিক পরিস্থিত কেমন ছিল?

শিক্ষা

  • রাজনৈতিক ক্ষেত্রে:
    • পৌলের চিঠির সময়ে এশিয়া মাইনর প্রায় ১৮০ বছর রোম রাজ্যের অধীনে এবং এমন এর আগে এশিয়া মাইনর ছিল রোম সাম্রাজ্যের একজন মিত্র।
    • রোমীয়দের দ্বারা এলাকার আরো উন্নয়ন ঘটে: রোমীয়রা ভাল রাস্তা-ঘাত এবং উন্নত মাণের পানির ব্যবস্থা তৈরি করে। রোমীয়রা সাম্রাজ্যের সীমানা সুক্ষিত রাখত এবং সাম্রাজ্যের মধ্যে বেচা-কেনা, যাওয়া-আসা ও আইন-শৃঙ্খলার সুবিধা ছিল।
  • ভৌগলিক বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে:
    • কলসী ছিল পূর্ব-পশ্চিম প্রধান বাণিজ্যপথে অবস্থিত একটি শহর। শহরের নাম মানে ‘বিশাল’ এবং প্রকৃতপক্ষে শহরটি ছিল প্রাচীন, বড় ও ধনী।
    • এলাকাটি ছিল উর্বর এবং আঙ্গুর রস, ভেড়ার উল এবং কালো ও বেগুনী কাপড়ের জন্য বিখ্যাত।
    • কলসী শহরের আগে থেকে নিজের মুদ্রা ছাপানো এবং কর নেওয়ার অধিকার ছিল।
  • আত্মিক ক্ষেত্রে:
    • পশ্চিম থেকে গ্রীক দেবতাপূজার ও গ্রীক দর্শনের প্রভাব ছিল। পূর্ব থেকে এছাড়া গুপ্ত ভ্রান্ত দল এবং যাদু-বিদ্যার প্রভাব ছিল।
৭ম ব্যাখ্যা প্রশ্ন                     ঐতিহাসিক পরিস্থিতি – রোম সাম্রাজ্যে দাসদের অবস্থা কেমন ছিল?
  • ফিলীমন ১৬ পদে পৌল বলেন যে ওনীষিম আসলে ফিলীমনের দাস। বোধ হয় তিনি এমন কি পলাতক দাস।
  • তাই ফিলীমন পুস্তকটি ভালভাবে বুঝার জন্য ঐসময়ে রোম সাম্রাজ্যে দাসদের অবস্থা কেমন ছিল, তা সম্বন্ধে কিছুটা জানা দরকার। দাসদের কোন অধিকার ছিল? পলাতক দাসদের ক্ষেত্রে কি করা হত?

নির্দেশনা

  • নিচে রোম সাম্রাজ্যে দাসত্ব সম্বন্ধে তথ্য দেওয়া আছে। তা মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং চিন্তা করুন, ফিলীমন চিঠির ক্ষেত্রে তথ্যটির অর্থ ও গুরুত্ব কি?

শিক্ষা

  • একজন মানুষ কিভাবে দাস হয়ে যেত?
    • যখন রোমীয়রা একটি এলাকা দখল করত তবে তারা প্রায়ই পরাজিত সেনা বা লোকদেরকে দাস হিসাবে নিত (যেমন খনি শ্রমিক, জাহাজে দাঁড় টানা, রাস্তা-ঘাত তৈরি, কৃষি কাজে শ্রমিক …) অথবা তাদের দাস হিসাবে বিক্রি করত।
    • জলদস্যু বা ডাকাতেরা সাধারণ লোকদের অপহরণ করে বিক্রি করত।
    • রোমীয় সংস্কৃতিতে বাচ্চাদের প্রায় পরিত্যাগ করা হত। এই ধরণের বাচ্চাদের নিয়ে, লালন-পালন করে বিত্রি করা হত।
    • নিজ সন্তানদের বিক্রি
    • ঋণে পড়ার কারণে নিজেকে বিক্রি (বাঁচার জন্য)।
    • দাসদের ‘পোষা’ এবং পরে বিত্রি করা হত।
 

দাসত্বের বিভিন্ন ধরণ ও কঠোরতা

  • দাসত্বের কঠোরতা বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন জায়গায় এবং বিভিন্ন যুগে ভিন্ন রকম ছিল (যেমন আজকালের কাজের লোক)।
  • জমি বা পশু-পাখির মত একজন দাস ছিল মনিবের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ।
  • দাসের জীবনের উপর মনিবের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রন ছিল: পরিশ্রম, মার, যন্ত্রনা, শাস্তি, মৃত্যু শাস্তি দেওয়া পর্যন্ত। সাধারণত বিদ্রোহী মৃত্যুদন্ড-প্রাপ্ত দাসদের শাস্তি হিসাবে ক্রুশে দেওয়া হত।
  • সবচেয়ে কঠোর দাসত্ব ছিল: খনি শ্রমিক, জাহাজে দাঁড় টানা, রাস্তা-ঘাত তৈরি, কৃষিকাজ … এই ধরণের দাস বেশীরভাগ এক বছরের মধ্যে মারা যেত।
  • যখন রোম গ্রীসকে দখল করে (১৪৭ খ্রীঃপূঃ), নতুন ধরণের দাসত্ব শুরু হয়: শিক্ষিত দাস। একটি পরিবার নিজের জন্য শিক্ষিত দাস কিনত যেন লেখক, উকিল, শিক্ষক, হিসাবরক্ষক, ব্যবসায়ী হিসাবে পরিবারকে সেবা করতে পারে। এই ধরণের দাসদের সাথে সাধারণত একটু ভাল ব্যবহার করা হত।
  • ভিত্তিকভাবে বলা যায় যে, দাসত্ব শুরুতে সবচেয়ে কঠোর ছিল, কিন্তু শতাব্দ পর শতাব্দ কঠোরতা কমতে থাকে।
  • নতুন নিয়মের সময়ে অধিকাংশ দাসদের কিছু অধিকার ছিল (যেমন বিয়ে করা, সন্তান নেওয়া, মালিকানা, টাকা সঞ্চয় করা, নিজের মুক্তি কেনা, আদালতে যাওয়া সুযোগ)।
  • ধারণা করা হয় রোম রাজ্যের লোকসংখ্যার ৭০% দাস ছিল, গ্রীসে সর্বোচ্চ পরিসংখ্যান অনুসারে লোকসংখ্যার ৯৫% মানুষ ছিল দাস।
  • পলাতক দাসদের ক্ষেত্রে নিয়ম:
    • পলাতক দাস ফিরে পাওয়ার জন্য মনিবদের সাহায্য করা ছিল সরকারের দায়িত্ব।
    • কিছু লোক টাকা পাওয়ার জন্য পলাতক দাসদের মনিবদের কাছে ধরে নিয়ে আসত।
    • পলাতক দাসের আশ্রয় দেওয়া ছিল আইনের বিরুদ্ধে (যেমন চুরি মাল রাখা)। এর জন্য কঠিন শাস্তি হতে পারত।
    • পলাতক দাসের আশ্রয় দাতা আইনগতভাবে মনিবের কাছে বাদ যাওয়া শ্রমের মজুরী দেওয়ার জন্য দায়ী ছিল।
    • পলাতক দাস খুঁজে পেলে মনিবের অধিকার ছিল তাকে শাস্তি, সীলমোহর (branding, ডানের ছবি), যন্ত্রনা বা ক্রুশে দেওয়ার।

দাসত্ব থেকে মুক্তি হওয়ার পথ

  • মনিবের দয়ায় মুক্তি।
  • টাকা জমিয়ে নিজের মুক্তি কেনা।
  • মাঝে মাঝে মনিব মারা গেলে কিছু দাসদের মুক্তি দেওয়া হত।
  • রোমীয় আইন অনুসারে মুক্তি পাওয়া দাস নাগরিত্ব পেত। গ্রীসে মুক্তি পাওয়া দাসের তার মনিবের শহরে থাকার অধিকার ছিল, কিন্তু নাগরিকত্ব পেত না। এর জন্য দাসরা নাগরিকত্বের আশায় ইটালী যাওয়ার চেষ্টা করত।
  • রোম রাজ্যে দাসদের সংখ্যা এত বেশী হয়ে গিয়েছিল যে, সৈনিক হিসাবে সরকার লোক পেত না। সৈনিক পাওয়ার জন্য রোম অনেক দাসদের মুক্ত করত। নাগরিকত্ব পাওয়া দাসদের মুক্ত হওয়ার আগে নাগরিকত্বের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত।
  • শিক্ষিত দাস মুক্তি কেনার বা পাওয়ার পরে প্রায় মনিবের ব্যবস্যায় যুক্ত হত, অথবা মনিবের অর্থনৈতিক সাহায্য দ্বারা নিজে ব্যবসা শুরু করত। মনিবের সাথে কাজ করতে করতে দাস যে দক্ষতা অর্জন করেছে, তা মুক্ত হয়ে মনিবের অধীনে বা নিজের কাজে ব্যবহার করত।
  • নতুন নিয়মের সময়ে একজন পরিশ্রমী দাস ৭ বছরের মধ্যে মুক্তি পেতে আশা করতে পারত।
  • আমরা এখন ফিলীমন চিঠির পিছনে যে ঘটনা আছে, তা নিয়ে আলোচনা করব:

ফিলীমন চিঠির গল্প

  • ধারণা করা যায় যে ওনীষিম এক সময় ছিলেন ফিলীমনের বাড়িতে একজন ক্রিতদাস।
  • কোনো কারণে সে অখুশি ছিল এবং পালিয়ে গেল।

নির্দেশনা

  • নিজে দেওয়া প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করুন:
    • ওনীষিম কি বিশ্বাসী ছিল যখন সে মনিব ফিলীমন থেকে পালিয়ে গেল? না অর্ধেক মনা বিশ্বাসী? ফিলীমন পুস্তকে কোন পদ এই বিষয়ে কথা বলে?
    • ফিলীমন কি কঠোর মনিব ছিলেন? না কি ওনীষিম ছিল দায়িত্বহীন একজন দাস? ফিলীমন পুস্তকে কোন পদ এই বিষয়ের কথা বলে?
    • ওনীষিম কি চুরি করে পালিয়ে গেছে? পালিয়ে গেলে টাকা লাগবে বলে চুরি করেছেন? না কি ফিলীমনের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য চুরি করেছেন? ফিলীমন পুস্তকে কোন পদ এই বিষয়ে ইঙ্গিত দেয়?
    • কেন ওনীষীম রোমে গেলেন?
    • ওনীষিম সেখানে কিভাবে পৌলের সাথে পড়ল?

বিবেচনা করুন

  • হতে পারে ওনীষিম ফিলীমন থেকে সুখবার পেয়েছিল। রোমে যখন তার কোনোভাবে পৌলের সাথে পড়ে তখন তিনি সঠিকার অর্থে বিশ্বাসী ও যীশুর শিষ্য হয়ে যান। ফিলীমন ১০ পদে বলেন যে বন্দী অস্থায় ওনীষিম তার “সন্তান”, অর্থাৎ আত্মিক সন্তান হয়েছে। পৌলশব্দটি হালকাভাবে ব্যবহার করেন না (১ করি ৪:১৫ এবং গালা ৪:১৯ দেখুন)।
  • ফিলীমন কি কঠোর মনিব ছিলেন? না কি ওনীষিম ছিল দায়িত্বহীন একজন দাস? ফিলীমন ১১ পদে পৌল স্বীকার করেন যে ওনীষিমের একসময় ছিল যখন তার “কোনো মূল্য” ছিল না, তাই বোধ হয় যে ফিলীমনের চেয়ে ওনীষিমের দোষ বেশি ছিল। এভাড়া পৌল পুস্তকের ৪-৭ পদে ফিলীমনকে অনেক প্রশংসা করেন বলে যে তিনি কলসীয় মণ্ডলীতে চমৎকার একটি ভূমিকি পালন করেছেন। ফিলীমনের উপরে যদি পৌলের কোনো বিশ্বাস না থাকতেন তবে তিনি ওনীষিমকে তার কাছে ফিরে পাঠাতেন না।
  • ওনীষিম কি চুরি করে পালিয়ে গেছে? পালালে টাকা লাগবে বলে? পৌল ফিলীমন ১৮-১৯ পদে ওনীষিমের জন্য অর্থনৈতিক দায়িত্ব নিচ্ছেন তাই হয়তো ওনীষিম চুরি করে চলে গিয়েছিলেন। তবে পৌল তাহলে কেন “যদি” বলেন: “যদি সে তোমার কোনো ক্ষতি করে থাকে”? পৌল অবশ্যই ওনীষিমকে শিষ্যত্ব দানের ক্ষেত্রে পাপ স্বীকার করতে বলেছিলেন এবং যদি সে চুরি করেছিলে তবে তাকে তার অপরাধের জন্য ক্ষতিপূর্ণ করতে বলেছিলেন। পৌল তো ফিলীমনের অধিকার সুরক্ষা করার জন্যই ওনীষিমকে তার কাছে ফিরে পাঠাচ্ছেন।
  • এর চেয় সম্ভাবনা বেশি যে পৌল এখানে রোমীয় আইনের এই বিষয় বুঝান: পৌল একজন পলাতক দাস তার কাছে রেখেছেন, তাইমনিব হিসাবে ফিলীমন বাদ যাওয়া শ্রমের জন্য পৌলের কাছ থেকে টাকা দাবি করতে পারতেন। পৌল বলেন যে ওনীষিমের বাদ যাওয়া শ্রমের ঋণও তিনি দিতে রাজি – যদি ফিলীমন এই অধিকার দাঁড় করাতে চান। কিন্তু পৌল তাদের একসাথে ইতিহাস উল্লেখ করে (ফিলীমন ১৯) “অবশ্য এই কথা আমার বলবার দরকার নেই যে, খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসের ব্যাপারে তুমি নিজেই আমার কাছে ঋণী আছ” এই অধিকার দাঁড় না করালে ভাল মনে করেন।
  • কেন ওনীষীম রোমে গেলেন? আমরা নিশ্চিত বলতে পারি না, কিন্তু আমাদের যুগেও পলাতক ব্যক্তি বা সমাজের বাইরে পড়ে যাওয়া লোক প্রায়ই বড় শহরের দিকে বা রাজধানীর দিকে রওনা দেয়। এছাড়া মনে রাখেন যে গ্রীসে নয় কিন্তু ইটালীর মাটিতে মুক্ত করা দাস রোমীয় নাগরিকত্ব পেত, তাই ইটালীতে যাওয়ার আরো কারণ ছিল।
  • কিভাবে ওনীষিম পৌলের সাথে পড়লেন? আমরা জানি না। কোনোভাবে ওনীষিম রোমে পৌঁছায়। হয়তো তার খুব একা লাগে বা হয়তে সে আগে থেকে পরিচিত লোক খোঁজে, বোধ হয় যে তিনি বিশ্বাসীদের মধ্যে পড়েন এবং তারা হয়তো তাকে সাহায্যকারী হিসাবে পৌলের কাছে পাঠান। আমরা জানি যে পৌল এই হালকা বন্ধনে নিজের ভাড়ায় থাকতেন এবং অতিথি গ্রহণ করতে পারতেন (প্রেরিত ২৮:৩০-৩১)।
  • পৌল তাকে সুখবর দেন এবং ওনীষিম সাড়া দেয়। পৌল তাকে বিশ্বাসী, শিষ্য ও কর্মী হিসাবে গঠন করেন। শিষ্যত্বের অংশ হিসাবে পৌল তাকে ‘আগের ব্যর্থতার স্থানে’ ফিরে গিয়ে আগের খারাপ ব্যবহারের জন্য দায়িত্ব নিতে। তিনি ওনীষিমের হাতে একটি শক্তিশালী সুপারিশ চিঠি দিয়ে (ফিলীমন) তার মনিবের কাছে ফিরে পাঠান।
৮ম ব্যাখ্যা প্রশ্ন                     লেখক ও পাঠকদের মধ্যে সম্পর্ক কেমন?

নির্দেশনা

এপর্যন্ত এই চিঠিতে লেখক ও পাঠকদের সম্পর্ক কি শিখতে পেরেছেন? আসলে আমরা ৩টি প্রধান ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্ক দেখব। চিন্তা করে আপনার উত্তর লিখুন:

  • ১। পৌল ও ফিলীমনের সম্পর্ক?
  • ২। পৌল ও ওনীষিমের সম্পর্ক?
  • ৩। ফিলীমন ও ওনীষিমের সম্পর্ক?

বিবেচনা করুন

  • ১। পৌল ও ফিলীমনের সম্পর্ক কেমন?
    • তারা ‘পুরানো বন্ধু’, তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকে। তারা পরস্পরকে উৎসাহ, সম্মান ও কৃতজ্ঞতা দান করেন। উভয় ব্যক্তি বিশ্বাসীদের সেবায় অনেক চমৎকার ভূমিকা পালন করেছেন।
    • ফিলীমন পৌলের “কাছে ঋণী” এই ক্ষেত্রে যে হতে পারে ইফিষে ফিলীমন পৌলের মধ্য দিয়ে সুখবর পেয়ে বিশ্বাসী হয়েছিলেন।
    • পৌল ও ফিলীমন দু’জন “একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী” হয় এবং খ্রীষ্টের কাজে সমকর্মীও হয়ে যান (ফিলীমন ১)।
    • পৌল ফিলীমনের বাসায় থাকতে চান (ফিলীমন ২২), তিনি তা সরাসরি প্রকাশ করারা জন্য নিজেকে মুক্ত মনে করেন। হতে পারে পৌল আগেও ফিলীমনের কাছে থাকলেন, ইফিষে হোক বা কোনো বহিঃপ্রচারে হোক।
  • ২। পৌল ও ওনীষিমের সম্পর্ক কেমন?
    • পৌল ওনীষিমকে “প্রাণের মত প্রিয়” বলেন (ফিলীমন ১২), একটি খুব আবেগময় ও আন্তুরিক বর্ণনা।
    • পৌল ওনীষিমকে “আমার সন্তান” বলেন (ফিলীমন ১০)। এটা শক্তিশালী একটি রূপক শব্দ যা ভালবাসা, যত্ন, আন্তুরিকতা, সমর্পণ, গর্ব ও প্রতিনিধিত্ব বুঝায়। বাবা-সন্তানের সম্পর্ক মানে অপরিবর্তনশীল ও স্থায়ী একটি সম্পর্ক।
    • বুঝা যায় যে ওনীষিম পৌলের শিষ্যত্বে ভালভাবে সাড়া দিয়েছেন। তা না হলে সে এভাবে আগের মনিবের কাছে পুনরায় বশীভূত হতে রাজি থাকত না। ফিলীমন চিঠি আমাদের বাইবেলে আছে হল প্রমান যে ওনীষিম আসলে ফিরে গিয়েছে, পুনরায় পালিয়ে যায় নি। এখানে পৌলের উপরে ওনীষিমের বিশ্বাস ও নির্ভরতাও প্রকাশ পায়। ওনীষিম পৌলের পরামর্শে মেনে নিতে এবং পুনরায় গঠনের প্রক্রিয়ায় বাধ্য হতে রাজি।
  • ৩। ফিলীমন ও ওনীষিমের সম্পর্ক কেমন?
    • ফিলীমন মনিব, ওনীষিম তার দাস। হয়তো ফিলীমন তার এই ‘মূল্যহীন’ কাজের লোকের পিছনে যথেষ্ট কষ্ট করেছিলেন, কিন্তু সফল হতে পারেন নি। হয়তো ফিলীমন ওনীষিমের জীবনের এত পরিবর্তন দেখতে অনেক খুশি।
    • হয়তো ওনীষিম ফিরে পাওয়া হল ফিলীমনের একটি ভাল সুযোগ একটি ব্যর্থতার ও হতাশার কাহিনী ভাল উপসংহারে নিয়ে আসা। হয়তো অনেক দিন ধরে ফিলীমনের খারাপ লেগেছিল, হয়তো তিনি নিজেকে দোষী মনে করতেন এবং আত্ম-সন্দেহে ভুগতেন।
    • অথবা তিনি পৌলের চিঠির মধ্য দিয়ে চেতনা পান তার আগের ব্যবহারের বিষয়ে।

আমরা এখন ফিলীমনের চিঠির ঐতিহাসিক পরিস্থিতি ভালভাবে বুঝেছি। তাই এখন আসল ব্যাখ্যার কাজ করা সম্ভাব। “ফিলীমন ০৩ – প্রধান বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ” দেখুন।