তীত পুস্তকের মূল বিষয়ের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ
শিক্ষা
আমরা তীত পুস্তকের লক্ষ্য, তার ঐতিহাসিক পরিস্থিতি এবং কিছু পুনরুক্ত বিষয় (নেতাদের এবং সাধারণ বিশ্বাসীদের প্রয়োজনীয় ঈশ্বরীয় গুণ) অধ্যয়ন করে এসেছি। তীত পুস্তকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনিয় গুণ এবং নেতৃত্বের জন্য শর্তগুলোর উপর কেউ কেউ আপত্তি উঠিয়ে বলে যে পৌল এই চিঠির লেখক নন। পৌলের অন্য চিঠিতে (যেমন রোমীয়, গালাতীয়, কলসীয়) তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বলেন যে বিশ্বাসী তার কাজ, তার আচার-ব্যবহার, তার প্রচেষ্টা দ্বারা ঈশ্বরের চোখে কখনও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং যে এর উপর নির্ভর না করে বরং শুধুমাত্র যীশুর দয়ার উপর নির্ভর করা উচিত (যেমন গালাতীয় ২:১৬)। তীত পুস্তকে পৌল হঠাৎ করে কেন বিশ্বাসীর আচার-ব্যবহারের উপর এত গুরুত্ব দেন? পৌল এই চিঠিতে কি যীশুর দয়ার বিষয়ে প্রচার থেকে সরে গিয়ে এখন নিয়ম ও নিয়ম পালন করার প্রচার করেন?
প্রকৃতপক্ষে এপর্যন্ত আমরা ভাল গুণাবলির তালিকা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, অর্থাৎ নেতাদের এবং বিশ্বাসীদের ভাল চরিত্র, মনোভাবে ও আচার-ব্যবহার নিয়ে অধ্যয়ন করলাম। কিন্তু এই ভাল গুণের ভিত্তি কি? সেগুলো কিভাবে বিশ্বাসীর জীবন বৃদ্ধি পায়? অথবা এভাবেও প্রশ্ন করা যায়: সেই “সত্য শিক্ষা” যা তিনি তীতকে দান করতে বলেন (তীত ২:১), এই শিক্ষা আসলে ঠিক কি?:
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা তীত পুস্তকের ৩টি মূল অংশ দেখব:
মূল অংশ তীত ২:১১-১৩
নির্দেশনা
তীত ২:১১-১৩ পদ পড়ুন। গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করুন পৌল ঠিক কি শব্দগুলো ব্যবহার করেন। এই ৩টি পদগুলোতে কি ধারাবাহিকতা বলতে কিছু আছে? পৌল এই পদগুলোতে দয়ার ২টি বড় ভূমিকার বিষয়ে কি বলেন?
বিবেচনা করুন
এই পদগুলোতে প্রত্যেকটি শব্দের অনেক গুরুত্ব আছে। আমরা শব্দগুলো বিস্তারিতভাবে দেখব:
- অনুচ্ছেদের প্রথম শব্দ সাধারণ অনুবাদে দেখানো হয় নি, কিন্তু কেরী ভার্সনে তা ভালভাবে দেখা যায়: “কেননা ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রকাশিত হইয়াছে …”। পৌল এপর্যন্ত ভাল গুনাবলির উপর গুরুত্ব দিয়েছেন, এখন তিনি আমাদের বলবেন, সেই ভাল গুণাবলির ভিত্তি, উৎস ও অনুপ্রেরণা কি।
- “ঈশ্বরের যে দয়ার দ্বারা পাপ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায় তা সব মানুষের কাছেই প্রকাশিত হয়েছে… “ । ঈশ্বরের দয়া প্রকাশিত হয়েছে, অর্থাৎ যীশুই এসেছেন এবং তার জীবন ও ক্রুশীয় মৃত্যু দ্বারা আমাদের উদ্ধার করেছেন। দয়া, অর্থাৎ যীশু কি করেন? তা “উদ্ধার করে” অথবা কেরীতে “পরিত্রাণ আনায়ন করে”। যীশু উদ্ধার বা পরিত্রাণ কার কাছে নিয়ে এসেছেন? “সব মানুষের কাছেই”।
- “এই দয়াই আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে যেন আমরা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীনতা ও জগতের কামনা-বাসনাকে অগ্রাহ্য করে এই জগতেই নিজেদের দমনে রেখে ঈশ্বরভক্তির সংগে সৎ জীবন কাটাই”। দয়া উদ্ধার করার পাশাপাশি আর কি করে? “দয়া শিক্ষা দিচ্ছে …” (অন্যান্য অনুবাদে: “দয়া শাসন করে”, “দয়া প্রশিক্ষণ দেয়”) যেন আমরা “ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীনতা ও জগতের কামনা-বাসনাকে অগ্রাহ্য করে এই জগতেই নিজেদের দমনে রেখে ঈশ্বরভক্তির সংগে সৎ জীবন কাটাই”। দয়া আমাদের শিখাচ্ছে যেন আমরা কামনা-সাবনের বশে নয় বরং ঈশ্বরীয়ভাবে জীবন-যাপন করি। লক্ষ্য করুন:
১ দয়া উদ্ধার নিয়ে আসে > ঈশ্বরের চেখে গ্রহণযোগ্য হই > নির্দেশ বলে গ্রহণ ইংরেজীতে: justification
২ দয়া শিক্ষা দেয় > পরিবর্তিত জীবন-যাপন > পবিত্র জীবন ইংরেজীতে: sanctification
- দয়া কখন এই কাজটি করে? “এই জগতেই” অথবা কেরীতে “এই বর্তমান যুগে”। বিশ্বাসীর জীবন কখন পরিবর্তিত হবে? স্বর্গে নয় বরং এখুনই, এই বর্তমান যুগে! যখন পৌল “দয়া” বলেন, তিনি ঈশ্বরের অনুগ্রহ বুঝান, যা অনুতপ্ত মানুষকে উপহার হিসাবে দেওয়া হয়, অর্থাৎ তা কোনোভাবে অর্জন করা যায় না, নিজেকে তা পাওয়ার জন্য যোগ্য প্রমাণিত করা যায় না, তার কোনো শর্তও নেই। কিন্তু এই দয়ার ফলাফল থাকার কথা, তার পরিবর্তনকারী ক্ষমতা আমাদের জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসার কথা। দয়া ‘সস্তা’ নয়, দয়া ‘স্বর্গের টিকেট মাত্র’ নয়, দয়া ‘যা চাই তাই’ করার অনুমতি নয়। যদিও ঈশ্বরের দয়া পাওয়ার জন্য কোনো শর্ত বা দাবি নেই তবুও দয়ার ফলাফল থাকা আবশ্যক। দয়া বিনামূল্যে পাওয়া যায়, দয়া কার্যকারী।
- “ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীনতা ও জগতের কামনা-বাসনা” মানে কি? তা পাপ-স্বভাব বুঝায়, স্বার্থপরতা, অহংকার, প্রতারণা, দমন, অন্যের প্রতি অন্যায় ইত্যাদি। এগুলো একদম স্বাভাবিক এবং বর্তমান যুগে সেগুলো সবখানে দেখা যায়। তবুও ঈশ্বর তার বিশ্বাসীদের চ্যালেঞ্জ করেন যেন তারা সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে চলে, চারিদিকে সংস্কৃতি কি হোক না কেন। যদিও সবাই বিপরীত আচরণ করে এবং যদিও সবাই নিশ্চিত যে তা অসম্ভব তবুও আমাদের সঠিক আচার-ব্যবহারে সমর্পিত হতে হয়। তা অবশ্যই কঠিন, কিন্তু আদর্শ হয়ে আশা ছেড়ে দেওয়া যাবে না।
- “আর আমাদের মহান ঈশ্বর এবং উদ্ধারকর্তা যীশু খ্রীষ্টের মহিমাপূর্ণ প্রকাশের আনন্দ-ভরা আশা পুর্ণ হবার জন্যই আগ্রহের সংগে অপেক্ষা করি”। এখানে আমরা দয়ার তৃতীয় বিষয় পাই: ভবিষ্যৎ মহিমা বলতে কিছু আছে, চমৎকার ও নিশ্চিত একটি বাস্তবতা যার জন্য আমরা অপেক্ষা করি। এভাবে তালিকাটি পূর্ণ হয়:
১ দয়া উদ্ধার নিয়ে আসে > ঈশ্বরের চেখে গ্রহণযোগ্য হই ইংরেজীতে: justification উদ্ধার হয়েছে (অতীত)
২ দয়া শিক্ষা দেয় > পরিবর্তিত জীবন-যাপন ইংরেজীতে: sanctification উদ্ধার হচ্ছে (বর্তমান)
৩ ভবিষ্যৎ মহিমার অপেক্ষা > চমৎকার ও নিশ্চেত আশা ইংরিজীতে: glorification উদ্ধার হবে (ভবিষ্যৎ)

তাই বলে যায় যে পরিত্রাণের ৩টি অংশ আছে: আমরা উদ্ধার পেয়েছি (এই নিশ্চয়তা বিশ্বাসে ধরে রাখুন! কৃতজ্ঞ হন!), বর্তমানে আমরা উদ্ধার পাচ্ছি যা (আত্মায় সাড়া দেন! বৃদ্ধি পান! পরিবর্তিত হন!) এবং ভবিষ্যতে আমাদের উদ্ধার সম্পূর্ণ হবে (এই আশা উৎযাপন করুন!)। প্রথমটা নিশ্চিত হয়েছে, তৃতীয়টা সম্পূর্ণ ঈশ্বরের উপর – কিন্তু দ্বিতীয়টা নিয়ে আমাদের বিশ্বাসী হিসাবে দিনে দিনে ব্যস্ত থাকা দরকার। এইটা হল বিশ্বাসীদের চ্যালেঞ্জ: পরিবর্তিত হওয়া, বৃদ্ধি পাওয়া, ঈশ্বরীয়ভাবে জীবন-যাপন করা। বিষয়টি এমন গুরুত্বপূর্ণ যে পৌল পরবর্তী পদে তার সারাংশ আর একবার করেন:
মূল অংশ তীত ২:১৪
নির্দেশনা
তীত ২:১৪ পদ পড়ুন। গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করুন পৌল ঠিক কি শব্দগুলো ব্যবহার করেন। যা এইমাত্র শিখেছেন, তার আলোতে আপনি কি এই পদে একই বিষয় দেখতে পান?
বিবেচনা করুন
পৌল আবারও যীশুর দয়া দিয়ে শুরু করেন “যীশু খ্রীষ্ট আমাদের জন্য নিজের জীবন দিয়েছিলেন”। আবারও: এই দয়ার বা নিঃশর্ত গ্রহণ কি সের জন্য? “যেন সমস্ত পাপ থেকে আমাদের মুক্ত করতে পারেন এবং তাতে এমন একদল লোককে শুচি করতে পারেন যারা কেবল তাঁরই হবে এবং যারা অন্যদের উপকার করতে আগ্রহী হবে”। যীশুর দয়া এমন লোকদের সৃষ্টি করবে যারা ঈশ্বরীয়, সমর্পিত, অন্যদের সেবা ও উপকার করতে আগ্রহী। ভাল গুণাবলি, ভাল মনোভাব বা আচার-ব্যবহার পরিত্রাণের ভিতি নয়, কিন্তু তা হওয়ার কথা পরিত্রাণের ফলাফল। পৌল ক্রীটীয় বিশ্বাসীদের কখনও বলেন নি: ‘যদি তোমরা আর একটু চেষ্টা কর, তবে মোটামুটি ভাল জীবন করতে পারবে’। পরিবর্তে তিনি তাদেরকে যীশুর দয়ার উপর দাঁড়াতে বলেন, তাঁর অনুগ্রহের উপর নির্ভর করতে বলেন। এই দয়া যখন তাদের জীবনের কাজ করে তখন তারা পুত্রের হৃদয় নিয়ে বাবাকে খুশি করবে, তবে তারা কৃতজ্ঞতায় ভাল কাজে সমর্পিত থাকবে। লক্ষ্য করুন যে যীশু “এমন একদল লোক” শুচি করবেন যারা “কেবল তাঁরই”। শুচি হয়ে প্রভুর সঙ্গে সম্পর্ক ও সহভাগিতা সম্ভব। যীশু দাস পাওয়ার জন্য আমাদের পিছনে লেগে থাকেন না, তিনি আমাদের তাঁর মত হওয়ার জন্য শুচি ও গঠন করেন।
একই মূল চিন্তা তীত পুস্তকে আর একবার পাওয়া যায়:
মূল অংশ তীত ৩:৪-৭
নির্দেশনা
তীত ৩:৪-৭ পদ পড়ুন। গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করুন পৌল ঠিক কি শব্দগুলো ব্যবহার করেন। যা এইমাত্র শিখেছেন, তার আলোতে আপনি কি এই পদেও একই বিষয় দেখতে পান?
বিবেচনা করুন
পৌল এই অনুচ্ছেদের শুরুতে স্বাধীনভাবে স্বীকার করেন যে তিনি (এবং আমরা সবাই) খ্রীষ্টের লোক হওয়ার আগে স্বার্থপর ও পাপগ্রস্ত ছিলাম। পৌল আবারও যীশুর দয়া দাঁড় করান “কিন্তু যখন আমাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরের দয়া ও ভালবাসা প্রকাশিত হল তখন তিনি পাপ থেকে আমাদের উদ্ধার করলেন। কোন সৎ কাজের জন্য তিনি আমাদের উদ্ধার করেন নি, তাঁর করুণার জন্যই তা করলেন”। যীশুর দয়া হল সব কিছুর ভিত্তি। এই “নতুন জন্ম” (অতীত) পবিত্র আত্মা দ্বারা “অন্তর ধূয়ে পরিস্কার” একটি অবস্থা নিয়ে এসেছে (বর্তমান) এবং এভাবে আমরা “অনন্ত জীবনের আশ্বাস”ও পেয়েছি (ভবিষ্যৎ)।
সারাংশে বলা যায় যে:
দয়া…
দয়া আমাদের উদ্ধার করে দয়া আমাদের শিক্ষা দেয়
> নির্দোষ বলে গ্রহণ > পরিবর্তিত জীবন
গ্রহণযোগ্যতা পবিত্রকরণ
যীশুর উপর বিশ্বাস করা যীশু ও পবিত্র আত্মার উপর নির্ভর করা
পাপের শাস্তি থেকে মুক্তি পাপের ক্ষমতা থেকে মুক্তি
এক সময়, সব সময়ের জন্য মৃত্যু পর্যন্ত অনবরত চলতে থাকবে
নিঃশর্তভাবে ফলাফল হিসাবে
উদ্ধারকারী দয়া পরিবর্তনকারী দয়া
গালাতীয় পুস্তকে বেশি জোর পায় তীত পুস্তকে বেশি জোর পায়
গালাতীয়দের প্রলোভন: নিজের প্রচেষ্টা দ্বারা অর্জন করা ক্রীটীয়দের প্রলোভন: আগের মত চলা
প্রটেস্টেনটরা তার উপর বেশি জোর দেয় ক্যাথলিকরা তার উপর বেশি জোর দেয়
এইটা হল সেই “সত্য শিক্ষা” যা পৌল তীতকে দিতে বলেন (তীত ২:১) এবং যা পরবর্তীতে মণ্ডলীগুলোর নেতাদের দেওয়া দরকার (তীত ১:৯): যীশুর উপর বিশ্বাস রেখে, তাঁর দয়া এবং পবিত্র আত্মার উপর নির্ভর করে একটি পরিবর্তিত জীবন করা।
উপমা হিসাবে বলা যায় যে দয়া হল সেই সত্যিকারের মাটি, যার মধ্যে গাছ শিকড় বসিয়ে সুন্দরভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ভাল পরিমাণে ফল দেবে। মাটি হল দয়া। ফল হল ঈশ্বরীয় চরিত্র ও আচরণ।


বর্তমান যুগে যেন বিশ্বাসী হিসাবে আমরা উপযুক্তভাবে জীবন-যাপন করতে অনুপ্রেরণা পাই (sanctification), আমাদের চোখ কৃতজ্ঞতায় উভয় ক্রুশের দিকে (যীশু যা আমাদের জন্য করেছেন, justification) এবং যে ভবিষ্যৎ মহিমার প্রতিজ্ঞার দিকে (glorification) রাখতে হবে।
ক্রুশ এবং ভবিষ্যৎ মহিমা, এই উভয় বাস্তবতার আলোতে আমরা বর্তমান জীবনে বিশ্বস্ত হতে শক্তি ও অনুপ্রেরণা পাই।

ব্যবহারিক বিষয়
নির্দেশনা
তীত ২:১৪, ৩:১-২, ৩:৮ এবং ৩:১৪ পদ পড়ুন। গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করুন পৌল ঠিক কি শব্দগুলো ব্যবহার করেন। বিশ্বাসীদের জন্য পৌলের উদ্দেশ্য কি? কার জন্য তারা ভাল কাজ করবে? বিশ্বাসীদের কেমন সাক্ষ্য থাকার কথা?
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়
তীত ২:১৪“অন্যদের উপকার করতে আগ্রহী হবে।”
তীত ৩:১ “যেন শাসনকর্তা ও যাদের হাতে ক্ষমতা আছে তাদের অধীনে থাকে, বাধ্য হয় ও লোকদের সব রকম উপকার করবার জন্য প্রস্তুত থাকে।”
তীত ৩:২ “তারা যেন কারও নিন্দা না করে বা ঝগড়াঝাঁটি না করে, বরং তারা যেন শান্ত স্বভাবের হয় এবং সকলের সংগে খুব নম্র ব্যবহার করে।”
তীত ৩:৮ “তারা অন্যদের উপকার করবার কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখবার দিকে মন দেয়। মানুষের পক্ষে এই সব ভাল এবং উপকারী।”
তীত ৩:১৪ “অন্যদের উপকার করবার কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখতে আমাদের লোকদের শিখতে হবে, যেন তারা অন্যদের অভাব মিটাতে পারে। এই রকম করলে তাদের জীবন ফলবান হয়ে উঠবে।”
বিবেচনা করুন
পৌল চান যেন বিশ্বাসীরা সৎ, নম্র, শান্তিপ্রিয়, সেবাকারী, গঠনকারী ও দায়িত্বশীল লোক হয়। বিশ্বাসীরা পরস্পর্কে সেবা করবে (মণ্ডলীতে সেবা শুরু), কিন্তু তারা তা ‘বাইরের লোকদের’ জন্য, অর্থাৎ অবিশ্বাসীদের জন্যও করবে (তীত ৩:২, ৩:৮)। পৌল চান যেন মণ্ডলীগুলো এই পচা ক্রীটীয় সংস্কৃতি ও সমাজের মাখে শুচি ও ঈশ্বরীয় একটি জীবন করে। কিন্তু এছাড়া তিনি চান যেন মণ্ডলীগুলো ক্রীটীয় সমাজের উপর একটি ভাল প্রভাব ফেলে, যেন তারা আদর্শ নৈতিক জীবন করে, সমাজকে উপকার করে এবং আশীর্বাদ হয়ে সমাজকে ইতিবাচক দিকে টানার লোক হয়।
আমরা পরবর্তী ইতিহাস দেখে জানতে পারি যে ক্রীটীয় মণ্ডলীগুলো (এবং একইভাবে গ্রীসের অনেক জায়গায়ও) ধীরে ধীরে ঠিক এই প্রভাব ফেলেছিল: গ্রীস দেশে গ্রীক অর্থোডক্স্ মণ্ডলী শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে এবং আজ পর্যন্ত বিশ্বাসীদের কেন্দ্র। খ্রীষ্টিয় মণ্ডলী যে চারিদিকে সাংস্কৃতিকে পরিণত করবে, পৌলের এই দৃষ্টি থেকে আমরা আধুনিক বিশ্বাসী হিসাবে অনেক দূরে সরে এসেছি। আমরা অনেক বার নিজেদেরকে ‘পরিস্থিতির শিকার’ মনে করি এবং আমরা আমরা ‘আরো ভাল দেশে’ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।পৌল বিষয়টি একদম উল্টিয়ে দেন: যে সমাজে বা সাংস্কৃতিতে আমরা নিজেদেরকে খুঁজে পাই, সেই সমাজ বা সাংস্কৃতিকে আমরা প্রভাবিত করতে থাকি, এমন সময় পর্যন্ত যখন আমরা সেখানে বাস করতে পছন্দ করি। সুখবরের পরিবর্তনকারী ক্ষমতার উপর পৌলের দৃঢ় বিশ্বাস আছে, উভয় ব্যক্তিকে এবং সমাজ বা দেশকে পরিবর্তন করার ক্ষমতার উপর।
তীত পুস্তক নিয়ে কিছু প্রয়োগ
নির্দেশনা
চিন্তা করুন: আপনি তীত চিঠি থেকে কি কি শিখেছেন? আপনি কোন্ ক্ষেত্রে নতুন প্রকাশ পেয়েছেন? ঈশ্বর আপনাকে তাঁর বাক্যের আলোতে কি সাড়া দিতে চ্যালেঞ্জ করেন?
নির্দেশনা
উদাহরণস্বরূপ নিচে কিছু চিন্তা নিচে দেওয়া হয়েছে:
- আমার পরিত্রাণ নিয়ে দৈনিক নম্রতার সঙ্গে আনন্দ করব। পরিত্রাণ ঠিক কি এবং পরিত্রাণ কি সের – এই প্রশ্ন নিয়ে আরো গভীরভাবে চিন্তা করতে থাকব।
- এই চমৎকার পরিত্রাণের যোগ্যরূপে জীবন-যাপন করব। পরিত্রাণ নিয়ে যদি সন্দেহ লাগে তবে তা কি একারণে যে আমি ঈশ্বরকে আমার জীবনে পরিবর্তন আনার জন্য যথেষ্ট সুযোগ দেই নি?
- আমি কি অতি সহজ বা ‘সস্তা’ একটি সুখব প্রচার করছি (‘যীশুকে গ্রহণ করলে তুমি আনন্দ, শান্তি ও স্বর্গে যাওয়ার টিকেট পাবে’)? আমরি কি যীশুকে ‘প্রভু’ হিসাবে প্রচার করি কিন্তু আমি তাকে আসলে রাজা হিসাবে মানি না? আমার সুসমাচার প্রচার কি মানুষ-কেন্দ্রিক ও স্বার্থপর (ঈশ্বর মানুষের জন্য কি করতে পারেন)?
- দয়া উদ্ধার করে এবং দয়া শাসন করে / শিক্ষা দেয় – আমি কি উভয় বুঝি এবং আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করি? জীবনের পরিবর্তন আবশ্যক, এই সত্যকে আমার ‘আলিঙ্গন’ করা দরকার, কারণ পরিবর্তন হল সুস্বাস্থ্যের, বৃদ্ধির ও উন্নয়নের চিহ্ন। পরিবর্তন যদি হয় আমি আরো সফল, প্রভাবশালী, শক্তিশালী ও অধিকার প্রাপ্ত একটি জীবন করতে সক্ষম হব।
- ছোট বিষয়ে বিশ্বস্ততা শিখতেই হবে, কারণ তা হল আরো বড় বিষয়ের জন্য ভিত্তি। স্বনিয়ন্ত্রণ হল আবশ্যক, তা ছাড়া নেতৃত্ব দেওয়া যায় না কারণ অন্যদের কথা শোনা, তাদের অবস্থা বোঝা, তাদের প্রয়োজনগুলো বিবেচনা করা, ন্যায্য ব্যবহার এবং আদর্শ হওয়া একদম প্রয়োজন। স্বনিয়ন্ত্রণ সব ক্ষেত্রে প্রয়োজন: মনের চিন্তা, মুখের কথা, আচার-ব্যবহার, অর্থনৈতিক বিষয়ে, শারীরিক অভিলাস, কামনা এবং দমন করার আকাঙ্খার ক্ষেত্রে।
- নেতৃত্ব দান করার অধিকার ঈশ্বরীয় চরিত্র ও আচার-ব্যবহার থেকে আসে। অন্যদের কেন্দ্রিক চিন্তা, সেবা করা, ভাল আদর্শ দেখিয়ে প্রভাবে ফেলা, তা হল আসল নেতৃত্ব। দায়বদ্ধতাহীন, আত্ম-কেন্দরিক বা দমনকারী নেতৃত্ব বাইবেলীয় নয়। নেতা হওয়া মানে দাস হওয়া মানে যীশুর মত হওয়া।
- নিজের এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ঈশ্বরীয় চরিত্র, মনোভাবে ও আচার-ব্যবহারকে উৎসাহিত করব। সুসমাচার থিয়লোজিকেল তর্কাতর্কিতে প্রমাণিত নয় বরং দৈনন্দিন জীবনেই প্রমাণিত।
- ঝগড়া-বিবাদ, কথা কাটাকাটি, বিভেদ থেকে দূরে থাকব।
- পরিবর্তন কঠিন, কিন্তু সম্ভব। “আরো কড়াভাবে উদ্যোগ নেব বা আরো বেশি চেষ্টা করব, এতে পরিবর্তিত হওয়ার আশা নেই। বরং পরিবর্তিত হতে চাইলে যীশুর দয়ার উপর দাঁড়ানো, যীশুর দিকে তাকানো ও পবিত্র আত্মার সাহায্য চাওয়া কার্যকারী।
- ঈশ্বর চান যেন বিশ্বাসী হিসাবে আমরা বিশ্বরস ধরে রাখি এবং এই জগতে খাঁটি হই। কিন্তু তিনি তার চেয়ে বেশি চান: যেন আমরা এমন আদর্শ, শক্তিশালী ও অধিকার-প্রাপ্ত লোক হই যা মাত্র মণ্ডলীতে নয়, বরং চারিদিকে সমাজেও ভাল প্রভাব ফেলে।