
ইন্ডাক্টিভ বাইবেল অধ্যয়নের ৩টি ধাপ
ইন্ডাক্টিভ বাইবেল অধ্যয়নের ৩টি ধাপ হল:
- ১ম ধাপ লক্ষ্য করা লেখাটি কি বলে? লেখাটিতে কি কি পাওয়া যায়?
- ২য় ধাপ ব্যাখ্যা করা পাঠকদের জন্য লেখকের উদ্দেশ্য কি? তাদের জন্য লেখার অর্থ কি?
- ৩য় ধাপ প্রয়োগ করা আমার জন্য লেখার অর্থ কি? সাড়ায় কি করব?
১ ধাপ লক্ষ্য করা
- লক্ষ্য করা হল ইন্ডাক্টিভ বাইবেল অধ্যয়নের গুরুত্বপূর্ণ ও ভিত্তিক প্রথম ধাপ।
- লক্ষ্য করা মানে লেখাটি ভাল করে দেখা, কি কি আছে তা খুঁজে বের করা, পর্যবেক্ষণ করা, খেয়াল করা।
- লক্ষ্য যেন ভাল হয় আমরা অনেক কিছু খুঁজব এবং রং দেব। রং দেওয়া হল খেয়াল করার একটি পদ্ধতি।
- আমরা অনেক অনেক লক্ষ্য প্রশ্ন দিয়ে লেখাটি ভাল করে দেখব:
- কোনো ব্যক্তির নাম, কোনো দল, মণ্ডলী, গোষ্ঠি বা জাতি উল্লেখ করা হয়েছে?
- কোনো জায়গা কি উল্লেখ করা হয়েছে?
- সময় সম্বন্ধে কি কোনো কিছু বলা হয়েছে?
- কোনো কথা আছে যা বার বার উল্লেখ করা হয়েছে?
- কোনো দু’টি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে?
- কোনো দু’টি বিষয় তুলনা করা হয়েছে?
- কোনো দু’টি বিষয়ের মধ্যে কারণ বা ফলাফল ধরণের সংযোগ দেখানো হয়েছে?
- কোনো শর্ত দেখানো হয়েছে?
- কোনো আবেগ পাওয়া যায়?
- কোনো জোরালো উক্তি পাওয়া যায়?
- কোনো প্রশ্ন পাওয়া যায়?
- কোনো উদ্ধৃতি পাওয়া যায়?
- কোনো আদেশ পাওয়া য়ায়?
- কোনো প্রতিজ্ঞা পাওয়া যায়?
- কোনো ভবিষ্যদ্বাণী পাওয়া যায়?
- কোনো তালিকা পাওয়া যায়?
- কোনো ক্রমবৃদ্ধি পাওয়া যায়?
- কোনো উপমা পাওয়া যায়?
- কোনো রূপক ভাষা পাওয়া যায়?

- দেখুন! দেখুন! দেখুর! খুঁজে বের করুন! খেয়াল করুন! রং দেন!
- এই ধাপে অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ে বা পরিশ্রমের কাজে নামতে হয়। কিন্তু লক্ষ্য যদি ভালভাবে করেন, পরবর্তীতে আপনার ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ আরো সহজ, সঠিক ও শক্তিশালী হবে।
- এই ওয়েবসাইটে “ফিলীমন ০১ – লক্ষ্য করা” শিক্ষায় যদি যান তবে সেখানে অনেক নির্দিষ্ট নির্দেশনা ও উদাহরণ দিয়ে আপনাকে লক্ষ্য করা শেখানো হবে।
- সমস্ত লক্ষ্য প্রশ্নের একটি তালিকাও সেখানে পাবেন।

ব্যাখ্যা করা
- ব্যাখ্যা করা হল ইন্ডাক্টিভ বাইবেল অধ্যয়নের সবচেয়ে কঠিন অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
- সাধারণত বিশ্বাসীরা বাইবেল পাঠ করলে তারা কিছু পদ পড়ার পরে সরাসরি প্রয়োগে যায়: ‘আমি এখানে কি শিখতে পারি’? ব্যাখ্যা করা তাই সেই ধাপ যা আমরা করতে সবচেয়ে কম অভ্যস্ত।
- ইন্ডাক্টিভ অধ্যয়নে ব্যাখ্যা করা মানে না ‘একটু বুঝিয়ে বলা’ বা ‘বিশ্লেষণ করে বলা’। তার চেয়ে ব্যাখ্যার অর্থ এই: যারা এই লেখাটি বা পুস্তকটি প্রথম পেয়েছিল (তাদেরকে আমরা ‘প্রথম পাঠকেরা’ বলব), তাদের কাছে এর অর্থ কি ছিল? তাদের জন্য লেখকের উদ্দেশ্য কি?
- ব্যাখ্যা করতে গেলে আমাদের তাই ইতিহাসে ফিরে গিয়ে ঐসময়ের ব্যক্তি, পরিস্থিতি ও সমস্যা নিয়ে চিন্তা করতে হবে:
- লেখক কে? তার সম্বন্ধে আমরা কি জানি? তিনি পাঠকদের কিভাবে জেনেছেন? তাদের সম্পর্ক কেমন? তাদের একসাথে ইতিহাস কেমন?
- পাঠকেরা কি? তাদের সম্বন্ধে আমরা কি জানি? মণ্ডলী যদি হয়: মণ্ডলী কিভাবে স্থাপন হয়েছিল? স্থাপনকারী কে? স্থাপনের পরে কি কি ঘটেছিল?
- ঐতিহাসিক পরিস্থিতি কি ছিল? পাঠকদের সমস্যা, চ্যালেঞ্জ বা প্রয়োজন কি কি? রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আত্মিক পরিস্থিতি কেমন ছেল?
- ঠিক কি ঘটেছিল যার কারণে লেখক এই পুস্তকটি লেখেন? পাঠকদের জন্য লেখকের উদ্দেশ্য কি? যেন তারা কি জানে? কি বুঝে? কি করে? কি না করে?
- যখন আমরা নতুন নিয়ম পড়ি তখন আমরা ২০০০ বছর আগের একটি দলিল পড়ি।
- একটি উপমা: আপনি বড়দিনের সময়ে গ্রামে গিয়ে আনার দাদুর বাসায় একটি পুরাতন মরিচা পড়া ট্রান্কের ভিতরে কিছু পুরাতন কাগজ পাচ্ছেন। এইটা কি একটি জমির দলিল? না কোনো সার্টিফিকেট? না কোনো চুক্তির নথি? না কোনো প্রেম পক্র? আপনি পড়ে খুঁজবেন কোনো পরিচিত নাম, কোনো তারিখ না এই ধরণের কিছু পাওয়া যায় কিনা। ঠিক তেমনি আমাদের বাইবেলের লেখাও দেখতে হয়।
- ব্যাখ্যা করতে গেলে পুস্তকের সময় সম্বন্ধে কিছু ঐতিহাসিক তথ্য পেলে ভাল। এর জন্য এই ওয়েবসাইটে “পুস্তক ভিত্তিক অধ্যয়ন”-এ গেলে বাইবেলের প্রত্যেকটি পুস্তক সম্বন্ধে ঐতিহাসিক তথ্য ও সাহায্যকারি লেখা পাবেন। প্রত্যেকটি পুস্তকের জন্য ৩টি স্তর দেওয়া হয়েছে:
- ১। পুস্তকের মূল চিন্তা “৩ সেকেন্ডের সারাংশ”
- ২। পুস্তকের প্রধান বিষয়গুলো “৩ মিনিটের সারাংশ”
- ৩। পুস্তকের ঐতিহাসিক পরিস্থিতি এবং মূল বিষয়গুলো “৩০ মিনিটের সারাংশ”
- ধাপ পর ধাপ কিভাবে ব্যাখ্যা করতে শেখা যায়, তার জন্য “ফিলীমন ০২ – ঐতিহাসিক পরিস্থিতিকে বোঝা” নামে শিক্ষা দেখুন! সেখানে ফিলীমন পুস্তকের ব্যাখ্যা একটি একটি করে ধাপ বুঝানো হয়েছে।
প্রয়োগ করা
- প্রয়োগ করা হল ইন্ডাক্টিভ বাইবেল অধ্যয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ও অধ্যয়নের মূল লক্ষ্য।
- প্রয়োগ মানে লেখাটি থেকে আমার ব্যক্তিগত জীবনের জন্য কি শিখতে পারি, তা বোঝা ও প্রয়োগ করা। যদি আমরা লক্ষ্য ও ব্যাখ্যা করি, কিন্তু প্রয়োগ করি না, তবে আমরা খুব জ্ঞানী বাইবেল পণ্ডিত হব, কিন্তু আমাদের হৃদয় ও জীবন পরিবর্তিত হবে না। প্রয়োগের জন্যই বাইবেল অধ্যয়ন করা দরকার!
- ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে আমরা বুঝেছি, যা বাইবেলের পুস্তকগুলো এজন নির্দিষ্ট লেখক একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট কারণ কয়েকজন নির্দিষ্ট পাঠকদের জন্য লেখাটি লিখেছিলেন।
- লেখক নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে লিখলেও তিনি পবিত্র আত্মার পরিচালনায় ঈশ্বরের সত্য লিখেছেন, তিনি ঈশ্বরের দৃষ্টি থেকে এই নির্দিষ্ট পাঠকদের উত্তর দিয়েছেন। লেখাটি তাহলে ও হল ‘ঈশ্বরের অনন্ত বাক্য’ এবং যদিও পৌল বা পিতর আমাদের আধুনিক বাংলাদেশী পাঠকদের কেন্দ্র করে লিখেছেন, তা নয় তবুও লেখাটি হলেন ঈশ্বরের উত্তর, দৃষ্টি ও বাক্য মানুষদের জন্য।
- এই বিষয় আসলে বুঝিয়ে দেওযা কঠিন, কিন্তু বাস্তব: বাইবেলের পুস্তক হল নির্দিষ্ট পাঠকদের জন্য নির্দিষ্ট লেখকদের লেখা, কিন্তু তা একই সময় হল ঈশ্বরের অনন্ত বাক্য যা সব যুগে সব জায়গায় ও সব মানুষের জন্য প্রযোজ্য।



- কিভাবে ব্যাখ্যা করব? এই ধরণের প্রশ্ন নিজেকে করুন এবং যা বুঝেন, তা বাস্তবে প্রয়োগ করুন:
- আমি এই লেখা থেকে কি শিখতে পারি? কি বুঝতে পারি? কি আমার বিশ্বাস করা দরকার? কি আমার মেনে নেওয়া দরকার? সাড়ায আমার কি করা দরকার?
- প্রয়োগের ক্ষেত্রে এই নীতি গুরুত্বপূর্ণ: আপনি যত সৎ হন, যত চেতনা গ্রহণ করেন, যত বাধ্য হন, ততটা লাভ হবে।
- প্রয়োগ হতে হয় ব্যক্তিগত। উদাহরণ: ‘ওর এইটা মানা উচিত’, এই চিন্তাটি হয়তো ভুল না, কিন্তু তা আপনার প্রয়োগ না, লাভজনকও হবে না। আপনিই কি করবেন, তা হল এমন প্রয়োগ যা লাভজনক হয়।
- প্রয়োগ হতে হয় নির্দিষ্ট। উদাহরণ: ‘হ্যাঁ, ক্ষমা করা উচিত’, এই চিন্তাটি ঠিক কিন্তু তাতে কিছু যায়-আসে না। আপনি ঠিক কার কাছ থেকে আজকে আগের ঠিক কি আচরন বা কথার জন্য ক্ষমা চাইবেন? আপনি কাকে ঠিক কি সের জন্য ক্ষমা করেন এবং তার প্রতি কি ব্যবহার কিভাবে পরিবর্তন করবেন?
- প্রয়োগ হতে হয় সম্ভব। উদাহরণ: ‘আর কখনও রাগ করব না!’, এই চিন্তার চেয়ে ভাল হয়, নিজের রাগ স্বীকার করা, ক্ষমা চাওয়া, তার কারণ বুঝা, হয়তো সাহায্য নেওয়া, হয়তো কথা বলা, হয়তো সীমানা টানা, হয়তো একটি পরিস্থিতি পরিবর্তন করা ইত্যাদি।
- আমরা প্রয়োগ পেতে পারি যদি আমরা নিজেদেরকে লেখক পাশে দাঁড় করাই এবং তার কাছ থেকে শিখি (‘পৌল কিভাবে তার পাঠকদের উৎসাহিত করেন?’,’পিতরের কথা বলা থেকে নেতৃত্বের বিষয়ে কি শিখতে পারি?’)
- অথবা আমরা প্রয়োগ পেতে পারি যদি আমরা নিজেদেরকে পাঠকদের পাশে দাঁড় করাই এবং তাদের সাথে মিল খুঁজে পেয়ে লেখকের কথা গ্রহণ করি (‘আমও গালাতীয়দের মত অমুখ করি, পৌল তাহলে আমাকে কি করতে বলেন?’)।
- একটি পদ বা সত্য নিয়ে ধ্যান করার মধ্য দিয়ে প্রয়োগ করা যায়।
- একটি পদ বা সত্য নিয়ে প্রার্থনা করার মধ্য দিয়ে প্রয়োগ করা যায়।
- যদি আমরা সৎ হই এবং ইচ্ছুক হৃদয়ে প্রয়োগ বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করি তবে আমাদের প্রতিজ্ঞা দেওয়া হয়েছে যে পবিত্র আত্মা আমাদের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসবেন!
প্রয়োগ কিভাবে ব্যাখ্যা থেকে পাওয়া যায়, এর অনেক উদাহরণ দেওয়া হয়েছে “ফিলীমন ০৩ – প্রধান বিষয়ের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ” এবং “ফিলীমন ০৪ – চারিদিকে পরিস্থিতি বিবেচনা করে আরো ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ”।