আমোষ পুস্তকে অন্যন্য মূল বিষয়
মূল বিষয়: যৌন ক্ষেত্রে অনৈতিক ব্যবহার
নিরদেশনা
আমোষ ২:৭-৮ পদ পড়ুন এবং নিচের প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করুন:
- কি ধরণের অনৈতিকতা এখানে বর্ণনা করা হয়?
- যৌন ক্ষেত্রে অনৈতিকতা এবং দেবতাপূজা কিভাবে সম্পর্কিত?
- যৌন ক্ষেত্রে অনৈতিকতা এবং গরীবদের প্রতি অন্যায় কিভাবে সম্পর্কিত?
- যৌন ক্ষেত্রে অনৈতিকতা এবং মিথ্যা ধার্মিকতা কিভাবে সম্পর্কিত?
বিবেচনা করুন
আমোষ ২:৭-৮ “বাবা ও ছেলে একই মেয়ের সংগে ব্যভিচার করে এবং এইভাবে আমার পবিত্র নামের অসম্মান করে। তারা প্রত্যেকটি বেদীর কাছে বন্ধক নেওয়া পোশাকের উপরে ঘুমায়। তাদের উপাসনা-ঘরে তারা জরিমানার টাকা দিয়ে কেনা আংগুর-রস খায়।”
- কি ধরণের অনৈতিকতা এখানে বর্ণনা করা হয়? এখানে যৌন সম্পর্ক রাখা হয় একটি পতিতার সাথে, অথবা একটি সুরক্ষাহীন অবস্থার মহিলার সাথে, সম্ভাবনা বেশি যে তা একটি মেয়ে মানুষ (অল্প বয়স), যেমন একটি কাজের লোক। বিষয়টি আরো বিশ্রী কারণ উবয় বাবা ও ছেলে একই মেয়েকে ব্যবহার করে, তাই তা এক প্রকার খোলামোলাভাবে করা হয়, তা অনুমোদিত, তা পারিবারিক বিষয় হয়ে গেছে, লজ্জা আর কাজ করে না।
- যৌন ক্ষেত্রে অনৈতিকতা এবং দেবতাপূজা কিভাবে সম্পর্কিত? আসলে দেবতাপূজা, বিশেষভাবে উর্বরতার দেব-দেবীর পূজাতে মন্দিরের পতিতার সাথে যৌন সম্পর্ক প্রায়ই ছিল ধর্মীয় অনুশীলনের অংশ। “তারা প্রত্যেকটি বেদীর কাছে বন্ধক নেওয়া পোশাকের উপরে ঘুমায়” এই কথা দেখায় যে তা প্রায়ই দেবতাপূজার সাথে সম্পর্কিত ছিল। কনানীয় বাল ও অষ্টারোৎ পূজায় এটা প্রচলিত চিল। চিন্তা করা হত যে মন্দিরের পতিতার সাথে যৌন সম্পর্ক মানু দেবতার সাথে মিলন মানে উর্বরতার আশীর্বাদ চাওয়া। মেয়েদের বা মহিলাদের এই ধরণের পূজায় বাধ্য করা হত। লেবীয় ১৯:২৯ পদে একটি কন্যাকে পতিতা কাজে বাধ্য করানো যাবে না, তা পূজার উদ্দেশ্য বা সাধারণ পতিতা কাজে হোক। আমরা এই নিষেধাজ্ঞা মোশির আইন-কানুনে পায়, তার মানে এই যে এধরণের কাজ প্রচলিত ছিল। অবশ্যই এধরণের কাজে বাধ্য করানোর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গরীব বা ভাঙ্গা পরিবারের মেয়েদের ঝুঁকি বেশি ছিল।
- যৌন ক্ষেত্রে অনৈতিকতা এবং গরীবদের প্রতি অন্যায় কিভাবে সম্পর্কিত? দেবতাপূজার সাথে সম্পর্কিত হোক, সাধারণ পতিতা কাজ হোক, পরিবারের মধ্যে মেয়েদের যৌন ক্ষেত্রে ব্যবহার হোক (লেবীয় ১৮:৫-২১ পদে তার নিষেধাজ্ঞা দেখুন), কাজের মেয়েদের ভুল ব্যবহার হোক বা অন্য ক্ষেত্রে ধর্ষণ হকো, অবশ্যই গরীব, দুর্বল বা ভাঙ্গা পরিবারের মেয়েদের বা মহিলাদের ঝুঁকি অনেক বেশি। বেশির্ভাগ সময়ে গরীবেরা তাদের মেয়েদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে, নিজের অধিকার বিস্তার করতে অথবা দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা চালাতে পারে না। তাদের টাকা-পয়সা, জ্ঞান ও সম্পর্ক কম বা নেই বলে তাদের জন্য এই উপায় নেই। এভাবে তাদের মেয়েরা ও মহিলারা সুরক্ষাহীন হয়ে পড়ে এবং যারা তাদেরকে অত্যাচার করে তাদের দুসাহস ও যত্নহীনতা বাড়ে।
- যৌন ক্ষেত্রে অনৈতিকতা এবং মিথ্যা ধার্মিকতা কিভাবে সম্পর্কিত? যদি ধার্মিকতার অর্থ এই যে, আমি বাহ্যিকভাবে ধর্মকর্ম অনুশীলন করি (উৎসর্গ, পর্ব) তবে আমার হৃদয়কে চ্যালেঞ্জ করা হয় না, পাপের জন্য চেতনা উৎসাহিত করা হয় না, প্রকৃতপক্ষে চেতনা বা সৎজ্ঞান ধর্মকর্ম দিয়ে ছাপানো হয়। ফলে আত্ম-ধার্মিকতা তৈরি হয় (অনেক কিছু করি, তো!) এবং এমন মনোভাব, যা বলে “দেব-দেবতাদের কেনা যায়। যদি বাহ্যিক ধর্মীয় অনুশীলন থেকে ব্যক্তিগত নৈতিকতার দাবি আলাদা করা হয়, তবে ধর্ম দিয়ে অনুমোদিত মন্দতা আর বেশি দূরে নয়।
আমোষ পুস্তকে পুনরুক্তি বিষয়: ঈশ্বরের আইনের ভুল ব্যাখ্যা এবং ঈশ্বরকে ভুলভাবে উপস্থাপনা
নির্দেশনা
নিচে দেওয়া পদগুরো পড়ুন এবং প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করুন।
- ঠিক কে সের জন্য আমোষ ইস্রায়েলের দোষ ধরেন?
- এই পদে ইস্রায়েলের মিথ্যা ধার্মিকতা কিভাবে প্রকাশিত?
- আমোষ কিভাবে টিটকারী এবং জোরালো উক্তিগুলো ব্যবহার করেন?
আমোষ ২:৮ “তারা প্রত্যেকটি বেদীর কাছে বন্ধক নেওয়া পোশাকের উপরে ঘুমায়। তাদের উপাসনা-ঘরে তারা জরিমানার টাকা দিয়ে কেনা আংগুর-রস খায়।”
আমোষ ২:১২ “কিন্তু তোমরা সেই নাসরীয়দের আংগুর-রস খাইয়েছিলে এবং নবী হিসাবে কথা না বলবার জন্য নবীদের আদেশ দিয়েছিলে।”
আমোষ ৪:৪-৫ “তোমরা যখন বৈথেলে গিয়ে পাপ করতে চাইছ তখন যাও, পাপ কর; গিল্গলে গিয়ে আরও বেশী করে কর। প্রতিদিন সকালে তোমাদের উৎসর্গের জিনিস এবং প্রতি তিন দিনের দিন তোমাদের দশ ভাগের এক ভাগ জিনিস নিয়ে যাও। তোমরা ধন্যবাদের উৎসর্গ হিসাবে খামি দেওয়া রুটি দাও ও তোমাদের নিজের ইচ্ছায় দেওয়া উৎসর্গের জিনিস নিয়ে বড়াই কর, কারণ হে ইস্রায়েলীয়েরা, তোমরা তো তা করতে ভালবাস।”
আমোষ ৫:৫ “তোমরা বৈথেলে কিম্বা গিল্গলে কিম্বা বের্-শেবায় যেয়ো না …।”
আমোষ ৫:২১-২৪ “সদাপ্রভু বলছেন, “আমি তোমাদের পর্বগুলো ঘৃণা করি, অগ্রাহ্য করি; তোমাদের সভাগুলো আমি সহ্য করতে পারি না। তোমরা আমার উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গ ও শস্য-উৎসর্গ করলেও আমি সেগুলো গ্রহণ করব না। যদিও তোমরা মোটাসোটা পশু দিয়ে যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান কর তবুও সেই দিকে আমি চেয়েও দেখব না। তোমাদের গানের আওয়াজ দূর কর। তোমাদের বীণার বাজনা আমি শুনব না। তার চেয়ে বরং ন্যায়বিচার নদীর মত আর সততা চিরকাল বয়ে যাওয়া স্রোতের মত বয়ে যাক।”

খুঁজে কি কি পাওয়া যায়
- আমোষ ২:৮-৯ এখানে দেবতাপূজা, যৌন ক্ষেত্রে অনৈতিকতা, মন্দিরের পতিতাদের সাথে ব্যভিচার এবং একই সাথে গরীবদের প্রতি কঠোরতা, যাদের থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস বন্ধক নেওয়া হয়েছে কারণ তারা টাকা পরিশোধ করতে পারে না (দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:১০-১৩)।
- আমোষ ২:১২ মোশির আইন-কানুন অনুসারে যে কোনো ইচ্ছুক লোক নাসরীয় শপথ করতে পারত, স্বেচ্ছায় নিজেকে ঈশ্বরের কাছে সমর্পিত করার একটি সময় যাতে আঙ্গুর, আঙ্গুর-রস বা মদ খাওয়া নিষেধ ছিল (গণনা ৬:১-৪)। নাসরীয়দের আঙ্গুর-রস খাওয়নো মানে অন্য একজনের ভক্তি বা বাধ্যতাকে অসম্মান করা, মানে এমন লোকদেরকে তুচ্ছ করা এবং জোর করে তাদের মনে-প্রাণে সমর্পণ নষ্ট করা, হতে পারে হিংসার কারণে।
- আমোষ ৪:৪-৫, ৫:৫ এই পদগুলো টিট্রকারী ভরা, আমোষ ইস্রায়েলের মিথ্যা ধার্মিকতা ধ্বংস করেন। কিন্তু এই পদগুলোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদও আছে: বৈথেলের বাছুর-পূজা হল পাপ, হল ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যদিও দাবি করা হত যে বৈথেলে উৎসর্গ হল “সদাপ্রভুর কাছে”। বৈথেলে যত যা চলে, সব ঈশ্বরের বিরুদ্ধে। গিলগল ও বের-শেবায় কি চলছিল? বাইবেলে এবিষয়ে আর কোনো ব্যাখ্যা নেই, কিন্তু ধারণা করা যায় যে এই জায়গাগুলো কোনো পূজার স্থাপনে পরিণত হয়েছে। আসলে গিলগলে কিছু বছর ধরে মিলন তাম্বু অস্তিত ছিল (যিহোশূয় ৫:১০)। হয়তো লোকেরা জায়গাটিকে একটি আত্মিক গুরত্ব দিয়েছিল এবং ধীরে ধীরে তা একটি পূজার স্থানে পরিণত হয়েছিল।
- আমোষ ৫:২১-২৪ এই অতি আবেগপূর্ণ ও শক্তিশালী পদগুলোতে আমোষের মুখ দ্বারা ইস্রায়েলের মিথ্যা ধার্মিকতা নিয়ে ঈশ্বরের চরম রাগ ও হতাশা প্রাকাশ পায়। যত ধর্মকর্ম, উৎসর্গ বা পর্বের অনুশীলন হোক, তা কখনও গরীবদের প্রতি অন্যায় এবং দুর্বলদের তুচ্ছ করা ভারসাম্য রাখতে পারে। এই শক্তিশালী কথা দিয়ে যা মিথ্যা ও নকল, যা বাহ্যিক কিন্তু অন্তরে চেতনা নেই, যা খুশি করার জন্য করা হয় কিন্তু অনুপ্রেরণাই মন্দ, এসব আমোষ কেটে দেন। ঈশ্বরের নাম এবং অন্যায়, এই দু’টা কখনও একসাথে যাবে না। “তার চেয়ে বরং ন্যায়বিচার নদীর মত আর সততা চিরকাল বয়ে যাওয়া স্রোতের মত বয়ে যাক” (আমোষ ৫:২৪)। ঈশ্বরের কথা হল সতেজ বায়ূর মত।
- এই বিষয় আমাদের আধুনিক বিশ্বাসীদের জন্য একই শক্তিশালী একটি চ্যালেঞ্জ, যেন আমরা আজও অন্যায়ের সাথে কোনো রকম আপোষ না করি।
আমোষ পুস্তকে পুনরুক্তি বিষয়: আত্ম-নির্ভরতা ও মিথ্যা নিরাপত্তা
নির্দেশনা
নিচে দেওয়া পদগুলো পড়ুন এবং চিন্তা করোন ঠিক কি মনোভাব বা আচরণ ঈশ্বরের রাগ উষ্কিয়ে তোলে:
- আমোষ ২:১৩-১৬ “যারা তাড়াতাড়ি দৌড়াতে পারে তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারবে না, বলবানেরা তাদের শক্তি দেখাতে পারবে না এবং যোদ্ধারা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে পারবে না। ধনুকধারীরা স্থিরভাবে দাঁড়াতে পারবে না, তাড়াতাড়ি দৌড়ে যাওয়া লোকেরা পালাতে পারবে না; এমন কি, ঘোড়সওয়ারও নিজের প্রাণ রক্ষা করতে পারবে না। যোদ্ধাদের মধ্যে যে সবচেয়ে সাহসী সেও সেই দিন উলংগ হয়ে পালিয়ে যাবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।”
- আমোষ ৬:১৩ “তোমরা লো-দবার (যার মানে “কিছুই না”) জয় করেছ বলে আনন্দ করে থাক, আবার বলে থাক, “আমরা কি নিজের শক্তিতে কর্ণয়িম অধিকার করি নি?”
- আমোষ ৬:৮ “আমি যাকোবের অহংকার এবং তার দুর্গগুলো ভীষণ ঘৃণা করি; সেইজন্য আমি তোমাদের শহর ও তার মধ্যেকার সব কিছু অন্যের হাতে দিয়ে দেব।”
- আমোষ ৯:১০ “আমার সব পাপী লোকদের মধ্যে যারা বলে, ‘অমংগল আমাদের নাগাল পাবে না কিম্বা আমাদের কাছে আসবে না,’ তারা সবাই যুদ্ধে মারা পড়বে।”

বিবেচনা করুন
- ইস্রায়েল জাতি নিজের সামরিক ক্ষমতা, দুর্গগুলো ও শক্তি নিয়ে অহংকার করছে। যারবিয়াম-২এর রাজনৈতিক সাফল্যের কারণে এই মিথ্যা নিশ্চয়তা বা নিরাপদ-ভাব তৈরি হয়েছে। আমোষ তার শক্তিশালী কথা দ্বারা এসব মুর্কতা বা ‘ফুচকা’ হিসাবে প্রমান করেন এবং কড়া সাবধানবাণী দেন যে এতে প্রকৃতপক্ষে কোনো স্থিরতা নেই।
- তাদের এই মনোভাব এবং ঈশ্বর যা চান, তা একদম বিপরীত। ঈশ্বর চান যেন ইস্রায়েল তাঁর ভক্তিপূর্ণ ভয়ে চলে, যেন তারা ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে, যেন তারা তার সংশোধন মেনে নেয় এবং তার পবিত্রতা বুঝে চলে।
- আমরাও ভুল জিনিসের উপর আস্থা রাখি, মিথ্যা আত্ম-নির্ভরতায় চলি, ভুল দিকে তাকিয়ে নিরাপত্তা আশা করি।
আমোষ পুস্তকে পুনরুক্তি বিষয়: ইস্রায়েল অন্যান্য জাতিগুলোর চেয়ে আর বিন্ন নয়
নির্দেশনা
নিচে দেওয়া পদগুলো পড়ুন এবং চিন্তা করোন ঠিক কি মনোভাব বা আচরণ ঈশ্বরের রাগ উষ্কিয়ে তোলে। জাতি হিসাবে ইস্রায়েলের আহ্বান (যাত্রা ১৯:৪-৬) এবং এই পদগুলোতে বর্ণিত ইস্রায়েলের বর্তমান অবস্থা তুলনা করুন। দ্বিতীয় পদে আমোষ কিভাবে ইস্রায়েলের অহংকার ও আত্ম-কেন্দ্রিক চিন্তা ভেঙ্গে দেন?
- আমোষ ৩:৯ “তোমরা অস্দোদ ও মিসরের সব দুর্গের লোকদের কাছে বল, “তোমরা শমরিয়ার পাহাড়গুলোর উপরে জড়ো হও; দেখ, তার মধ্যে কত গোলমাল! তার লোকদের মধ্যে কত অত্যাচার!”
- আমোষ ৯:৭ “হে ইস্রায়েলের লোকেরা, তোমরা কি আমার কাছে কূশীয়দের মত নও? আমি কি মিসর থেকে ইস্রায়েলীয়দের, ক্রীট থেকে পলেষ্টীয়দের এবং কীর থেকে অরামীয়দের নিয়ে আসি নি?”
বিবেচনা করুন
- আমোষ ৩:৯ এই পদে ঈশ্বর চারিদিকে প্রতিমাপূজারী জাতিদের ডেকে এনে ইস্রায়েল দেশের মধ্যে কত অন্যায় চলে, তা দেখতে বলেন। কত লজ্জাদায়ক একটি কথা! যদি আমরা সরণ করি যে ঈশ্বর ইস্রায়েন জাতিকে একটি আকর্ষণীয় আদর্শ দেশ এবং পরজাতিদের জন্য আলো হতে আহ্বান করেছেন (যাত্র ১৯:৪-৬, দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৫-৬), বিষয়টি আরো হতভম্ব হওয়ার মত। ইস্রায়েল চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং তার চমৎকার আহ্বান একদম হাতছাড়া করেছে।
- আমোষ ৯:৭ এই পদে আমোষ ইস্রায়েলের মিথ্যা অহংকার ও নিরাপত্তা ভেঙ্গে দেন: তারা নিজেকে মনোনিত জাতি এবং অন্যদের চেয়ে ভিন্ন মনে করে, কিন্তু আসলে তারা আর ভিন্ন নয়। তাদের এবং দূরের কূশীয়দের মত আর পার্থক্য নয়। ঈশ্বর যা ইস্রায়েলের জন্য করেছেন (তাদের মিসর দেশ থেকে আনা) তা তিনি প্রতিমাপূজারী পলেষ্টীয় ও অরামীয়দের জন্যও করেছেন, এমন দু’টি দেশ যা বহুবছর ধরে ইস্রায়েলের শত্রু। মনোনিত জাতি হওয়ার ইস্রায়েলের সেই অহংকার আমোষ একদম ধ্বংস করেন।
- এই পুনরুক্তি বিষয় একটি কঠোর সাবধানবাণীও বটে। আমরা আহ্বান পাওয়া পরে আহ্বানটি আবার হারাতেও পারি, ঈশ্বর কিছু প্রতিজ্ঞা ফেরত নেন, বড় সুযোগ হাতছাড়া করা যায়। ভক্তিপূর্ণ ভয়, নম্রতা ও কৃতজ্ঞতা অত্যন্ত প্রয়োজন। বাধ্যতা, ঈশ্বরের দয়া ভাল কাজে লাগানো এবং দায়িত্ব গুরুত্বের সাথে পূর্ণ করা আবশ্যক।
আমোষ পুস্তকে পুনরুক্তি বিষয়: সত্যকে অগ্রাহ্য করা
নির্দেশনা
আমরা সহজে চিন্তা করতে পারি “হয়তো ইস্রায়েলীয়েরা বিষয়টি তেমন বুঝতে পারে নি”। আমোষ অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে দেখায় যে এই চিন্তা ভুল। ইস্রায়েল ঠিকই জানে। ইস্রায়েল জেনে বুঝে ইচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বরের সত্যকে অগ্রাহ্য করেছে। নিচের পদগুলো পড়ুন এবং চিন্তা করুন, সত্য এবং মানুষের ইচ্ছার মধ্যে সম্পর্ক কি?
- আমোষ ৫:১০ “যে লোক শহরের ফটকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তোমরা তো তাকে ঘৃণা কর এবং যে সত্যি কথা বলে তাকে তুচ্ছ কর।”
- আমোষ ২:১২ “কিন্তু তোমরা সেই নাসরীয়দের আংগুর-রস খাইয়েছিলে এবং নবী হিসাবে কথা না বলবার জন্য নবীদের আদেশ দিয়েছিলে।”
- আমোষ ৭:১২-১৩ “ওহে দর্শক, দূর হয়ে যাও। তুমি যিহূদা দেশেই চলে যাও। সেখানে নবী হিসাবে কথা বলে তোমার খাবার যোগাড় কর। বৈথেলে আর নবী হিসাবে কথা বোলো না, কারণ এটা রাজার উপাসনার জায়গা ও রাজবাড়ী।”
- আমোষ ৮:১১-১৪ “এমন সব দিন আসছে যখন আমি দেশের মধ্যে দুর্ভিক্ষ পাঠাব। তা খাবারের দুর্ভিক্ষ কিম্বা জলের পিপাসা নয় কিন্তু সদাপ্রভুর বাক্য শুনবার দুর্ভিক্ষ। লোকে সদাপ্রভুর বাক্যের খোঁজে পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে টলতে টলতে ঘুরে বেড়াবে, কিন্তু তা পাবে না। সেই দিন সুন্দরী যুবতীরা এবং শক্তিশালী যুবকেরা সেই বাক্যের পিপাসায় জ্ঞান হারাবে। যারা শমরিয়ার প্রতিমার নাম নিয়ে শপথ করে বলে, ‘হে দান, তোমার জীবন্ত দেবতার দিব্য,’ কিম্বা বলে, ‘বের্-শেবার জীবন্ত দেবতার দিব্য,’ তারা পড়ে যাবে, আর কখনও উঠবে না।”
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়
ইস্রায়েল জাতি – এবং বিশেষভাবে আত্মিক নেতারা – আমোষের বাণী অগ্রহ্য করে। যা তারা শুন্তে চায় না তা তারা শুনবেই না। তারা সত্যকে অগ্রাহ্য করে যেন তাদের অন্যায় ভরা আচরণ এবং তাদের প্রতিমাপূজাকে চ্যালেঞ্জ করা না হয়। অমৎসিয়, যিনি বৈথেলের ‘মহাপুরোহিত’ আমোষকে হুমকিও দেন, তুচ্ছও করেন (আমোষ ৭:১২-১৩)।
সত্যকে অগ্রাহ্য করতে করতে হৃদয় কঠিন হয়ে যায় এবং অবশেষে আমরা এমন পর্যায়ে পৌঁছাই যা থেকে ফিরে আসা যায় না, যেমন মোশির সময়ে ফরৌণ। শেষে মানুষ চাইলেও ঈশ্বরের বাক্য আর শুনতে পারে না, ঈশ্বরের বাক্যের একটি দুর্ভিক্ষ ঘটে।
নিরাপত্তার মাত্র একটি পথ আছে: প্রত্যেক মুহূর্তে ঈশ্বরের রব শুনে বা হৃদয়ের চেতনা পেয়ে সাড়া দেওয়া। চেতনার রব অগ্রহ্য করবেন না! সাড়া দিতে দেরি করবেন না! ঈশ্বরের আত্মাকে নিবিয়ে ফেলবেন না (১ থিষ ৫:১৯)!
আমোষ পুস্তকে পুনরুক্তি বিষয়: ইস্রায়েলকে ধ্বংস করা হবে এবং বাকি লোকসংখ্যাকে নির্বাসিত করা হবে
নির্দেশনা
নিচে দেওয়া পদগুলো পড়ুন। চিন্তা করুন যারবিয়াম-২এর পরে ইস্রায়েলের ইতিহাসে কি কি ঘটে। কেন মনে করেন এই বিষয় এতবার পুনরুক্তি করা দরকার ছিল? ধ্বংস বাণী বলতে বলতে ঈশ্বরের দয়া কোথাও দেখা যায়?
- আমোষ ৪:২-৩ “প্রভু সদাপ্রভু নিজের পবিত্রতায় শপথ করে বলেছেন, “সেই সময় নিশ্চয়ই আসবে যখন কড়া লাগিয়ে তোমাদের টেনে নিয়ে যাওয়া হবে; তোমাদের সবাইকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে বড়শী দিয়ে। তোমরা প্রত্যেকে দেয়ালের ভাংগা জায়গা দিয়ে সোজা বের হয়ে যাবে এবং হার্মোনের দিকে তোমাদের ফেলে দেওয়া হবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।”
- আমোষ ৫:৫ “গিল্গলের লোকেরা নিশ্চয়ই বন্দী হয়ে অন্য দেশে যাবে এবং বৈথেলের সর্বনাশ হবে।”
- আমোষ ৫:৬ “তিনি আগুনের মত করে যোষেফের, অর্থাৎ ইস্রায়েলের লোকদের মধ্যে জ্বলে উঠবেন। সেই আগুন গ্রাস করবে এবং বৈথেলের কেউ তা নিভাতে পারবে না।”
- আমোষ ৫:১৬-১৭ “শহরের প্রত্যেকটি খোলা জায়গায় লোকে বিলাপ করবে এবং প্রত্যেকটি রাস্তায় হায় হায় করবে। … সমস্ত আংগুর ক্ষেতগুলোতে বিলাপ হবে, কারণ আমি তোমাদের মধ্য দিয়ে যাব। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।”
- আমোষ ৫:২৭ “কাজেই আমি দামেস্কের ওপাশে বন্দী হিসাবে তোমাদের পাঠিয়ে দেব। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা বলছি।”
- আমোষ ৬:৭ “কাজেই যারা বন্দী হয়ে অন্য দেশে যাবে তাদের মধ্যে তোমরাই হবে প্রথম।”
- আমোষ ৬:১৪ “হে ইস্রায়েলের লোকেরা, আমি তোমাদের বিরুদ্ধে একটা জাতিকে পাঠাব। সেই জাতি উত্তর দিকের হমাৎ এলাকা থেকে দক্ষিণ দিকের অরাবা উপত্যকা পর্যন্ত সমস্ত জায়গায় তোমাদের উপর অত্যাচার করবে।”
- আমোষ ৯:১-৪ “থামগুলোর মাথায় আঘাত কর যাতে সেগুলো কেঁপে উঠে সেখানকার সমস্ত লোকদের মাথার উপর ভেংগে পড়ে। যারা বেঁচে থাকবে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমি তাদের মেরে ফেলব। কেউ চলে যেতে কিম্বা পালাতে পারবে না। … শত্রুদের দ্বারা বন্দী হয়ে তারা অন্য দেশে গেলেও সেখানে তাদের মেরে ফেলবার জন্য আমি তলোয়ারকে আদেশ দেব। মংগলের জন্য নয় কিন্তু অমংগলের জন্যই আমি তাদের উপর আমার চোখ স্থির রাখব।”
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়
ইস্রায়েলের বর্তমান মনোভাব ও আচরণের শেষ ফল কি হবে, তা ঈশ্বর জোরের সঙ্গে ঘোষণা করেন: ইস্রায়েল ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তার বেঁচে থাকা লোকেরা নির্বাসিত হয়ে যাবে। ভাববাদী হোশেয়ের সঙ্গে আমোষের বাণী হল ইস্রায়েলের জন্য ঈশ্বরের শেষ ডাক। ৩০ বছরের মধ্যে উত্তরের ইস্রায়েল দেশ বলতে আর কিছু থাকবেন না। ভাববাদী হোশেয় ইস্রায়েলকে ঈশ্বরের ভালবাসার একটি অতি আবেগীয় বর্ণনা নিয়ে ডাকেন, ভাববাদী আমোষ তাদেরকে ধারালো ভাষা ও টিট্রকারী উক্তি দিয়ে চেতনা দেন এবং সব মিথ্যা বিশ্বাস ও মিথ্যা নিরাপত্তা ভেঙ্গে দেন। সম্ভবত ইস্রায়েলের হৃদয় এমন কঠিন হয়ে গেছে যে তাদের মনোযোগ আকৃষ্ট করার জন্য ধ্বংস বাণীটি বার বার বলতে হয়।
আমোষের এই ভবিষ্যদ্বাণী ইতিহাসে কিভাবে পূর্ণ হয়?
- ৭৪০-৭৩২ খ্রীঃপূঃ ইস্রায়েলের রাজা পেকহের রাজত্বের সময়ে আসিরিয়া সম্রাট তিগ্লৎ-পিলেষর (Tiglath-Pileser) গালীলের অনেক শহরগুলো এবং নপ্তালী গোষ্ঠির সমপূর্ণ এলাকা দখল করেন। এলাকার ইস্রায়েলীয় বাসিন্দাদের তিনি নির্বাসিত করেন (২ রাজা ১৫:২৯-৩১)। পরবর্তীতে হোশেয় আসিরিয়ার অধীনে ইস্রায়েলের রাজা হয়ে যান।
- ৭২৫ খ্রীঃপূঃ আসিরিয়ার সম্রাট শলমনেষর (Shalmanezer) ইস্রায়েলের রাজধানী শমরিয়া ঘেড়াও করেন।
- ৭২২ খ্রীঃপূঃ আসিরিয়া সম্রাট সোর্গন-২ ইস্রায়েলের রাজধানী শমিরয় দখল ও ধ্বংস করেন। বেঁচে থাকা লোকসংখ্যাকে তিনি বিভিন্ন জায়গায় নির্বাসিত করেন (২ রাজা ১৭:৫-৬)। ইস্রায়েল জাতি আর কখনও নিজের এলাকায় ফিরে যায় না। লোকেরা অন্যান্য জাতির সাথে মিশে যায় এবং জাতি হিসাবে তাদের পরিচয় হারায়।
আমোষ পুস্তকে পুনরুক্তি বিষয়: অনুতপ্ত হও! অথবা: এখনও আশা আছে
নির্দেশনা
নিচে দেওয়া পদগুলো পড়ুন এবং নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন: ঈশ্বর ইস্রায়েলকে অনুতপ্ত হতে বলেন, তার গুরুত্ব কি?
- আমোষ ৫:৪ “ইস্রায়েলের লোকদের সদাপ্রভু বলছেন, “তোমরা আমার কাছে এস, তাতে বাঁচবে।”
- আমোষ ৫:৬ “তোমরা সদাপ্রভুর কাছে যাও তাতে বাঁচবে; তা না হলে তিনি আগুনের মত করে যোষেফের, অর্থাৎ ইস্রায়েলের লোকদের মধ্যে জ্বলে উঠবেন। সেই আগুন গ্রাস করবে এবং বৈথেলের কেউ তা নিভাতে পারবে না।”
- আমোষ ৫:১৪ “তোমরা যাতে বাঁচতে পার সেইজন্য ভালোর পিছনে যাও, মন্দের পিছনে নয়; তাহলে যেমন তোমরা বলে থাক তেমনি সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর সদাপ্রভু সত্যিসত্যিই তোমাদের সংগে থাকবেন।”
- আমোষ ৫:২৪ “তার চেয়ে বরং ন্যায়বিচার নদীর মত আর সততা চিরকাল বয়ে যাওয়া স্রোতের মত বয়ে যাক।”
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়
আমোষ জরুরীভাবে এবং অনেক গুরত্বের সঙ্গে ইস্রায়েলকে অনুতপ্ত হতে বলেন। মাত্র একজন সত্যিকারের ভাববাদী এই ধরণের কথা বলতে সাহস করেন। অথবা পাগল একজন – যা একই, ইস্রায়েলের ধনীদের চোখে।
অনুতপ্ত হওয়ার আদেশ মানে যে ঈশ্বর এখনও মন ফিরানোর সুযোগ দেন, তিনি এখনও ক্ষমা করতে এবং লোকদের পুনরায় গ্রহণ করতে চান। অনুতাপের ডাক মানে অনুতাপ এখনও সম্ভব। ৭৩২ খ্রীষ্টপূর্বে যখন আসিরিয়া প্রথম বার ইস্রায়েলের একটি অংশ দখল করেন তখন হয়তো কিছু ইস্রায়েলীয়রা বুঝতে পারে যে ধ্বংস বাণীগুলো বাস্তবায়ন হতে শুরু হয়েছে। হয়তো এই ঘটনা দেকে কিছু লোক অনুতপ্ত হয়। আমোষের এই কথা আমোষ ৯:৯-১০ “সমস্ত জাতির মধ্যে আমি ইস্রায়েলের বংশকে চালব … আমার সব পাপী লোকদের মধ্যে যারা বলে, ‘অমংগল আমাদের নাগাল পাবে না কিম্বা আমাদের কাছে আসবে না,’ তারা সবাই যুদ্ধে মারা পড়বে” হয়তো ইস্রায়েলীয় শ্রোতাদের মধ্যে আশা তৈরি করে – এমন লোকদের জন্য যাদের এই মিথ্যা আশা নেই বরং যারা ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে।
আর একটি বিষয়: যখন আমোষ বলেন “সদাপ্রভু বলছেন, “সেই দিন আমি দায়ূদের পড়ে যাওয়া ঘর আবার উঠাব” (আমোষ ৯:১১) হয়তো কিছু মনোযোগী শ্রোতারা বুঝতে পারে যে, যদিও দেশ হিসাবে ইস্রায়েলের জন্য আর ভবিষ্যৎ নেই তবুও যিহূদার জন্য ঈশ্বর একটি উদ্ধার বাণী দিয়েছেন। হয়তো ৭৩২ খ্রীষ্টপূর্বে আসিরিয়ার আক্রমণ এবং আমোষের এই বাণী দেখে কিছু ইস্রায়েলীয়দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বেঁচে থাকতে চাইলে তাদের যিহূদা দেশে আশ্রয় নিতে হবে। আমরা জানি না এভাবে ইস্রায়েলের ধ্বংসের আগে বিশ্বস্তরা যিহূদায় আশ্রয় নিয়েছে কিনা, কিন্তু আমরা জানি যে এই ধরণের ঘটনা ইতিমধ্যে দু’বার বাস্তবে হয়েছিল: রাজা রহবিয়ামের রাজত্বের প্রথম ৩ বছরের মধ্যে (২ বংশা ১১:১৩) এবং রাজা আসার রাজত্বের সময়ে (২ বংশা ১৫:৮)। তা ছাড়া আমরা পরে দেখি যে যিহূদা রাজা হিষ্কিয় ইস্রায়েল এলাকার লোকদের নিমন্ত্রন দেন (২ বংশা ৩০:১১)। এজন্য বলা যায় যে হয়তো কিছু ইস্রায়েলীয়রা আমোষের বাণীতে গুরুত্ব দেওয়ার কারণে রক্ষা পেয়েছিল।
আমোষের ধ্বংস বাণী প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে পূর্ণ হয়: ৭২২ খ্রীষ্টপূর্বে আসিরিয়া ইস্রায়েলকে দখল ও নির্বাসিত করে।
আমোষ পুস্তকে পুনরুক্তি বিষয়: সদাপ্রভুর দিন
নির্দেশনা
নিচে দেওয়া পদগুলো পড়ুন এবং তুলনা করুন ইস্রায়েল “সদাপ্রভুর দিন” কিভাবে দেখে এবং তার চেয়ে আমোষ তাদেরকে “সদাপ্রভুর দিন” কিভাবে দেখতে বলেন।
- আমোষ ৫:১৮-২০ “ধিক্ তোমাদের! তোমরা তো আকুল হয়ে সদাপ্রভুর দিন দেখতে চাইছ! কেন তোমরা সেই দিনের আকাংক্ষা করছ? তোমাদের কাছে সেই দিন আলো নয় কিন্তু অন্ধকার হবে। সেটা হবে যেন কোন মানুষ সিংহের হাত থেকে পালিয়ে ভাল্লুকের সামনে পড়ল, যেন নিজের বাড়ীতে ঢুকে দেয়ালে হাত রেখে সাপের কামড় খেল। সদাপ্রভুর দিন আলো না হয়ে কি অন্ধকার হবে না? উজ্জ্বলতার কণামাত্র না থেকে তা কি গাঢ় অন্ধকার হবে না?”
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়
ধারণা করা যায় যে ইস্রায়েল আগ্রহের সঙ্গে সদাপ্রবুর দিনের জন্য অপেক্ষা করেছিল মনে করে যে, সেই দিনে ঈশ্বর তাদের শক্রুদের বিচার করেব এবং ইস্রায়েলকে সবার উপর রাজত্ব করতে দেনেন। আমোষ সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টি দেন: যতজন পাপ করে, যতজন অন্যায় বা অত্যাচার করে, যতজন এসব হালকা মনে দেখে ততজনের সদাপ্রভুর ভয় নিয়ে ভয় লাগা উচিত। আবারও দেখা যায় লোকদের মধ্যে কত মিথ্যা বিশ্বাস ও ভুল নির্ভরতা ছিল।
আমোষ পুস্তকে পুনরুক্তি বিষয়: বিনতি
নির্দেশনা
আমোষ ৭:১-৯ পদ পড়ুন এবং নিচে দেওয়া প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করুন:
- আমোষ ঠিক কি দর্শন দেখেন? দর্শনগুলো দেখে তার সাড়া কি কি?
- কি মনে করেন ইস্রায়েলের কেমন লাগত আমোষের এই কথা শুনে “হে প্রভু সদাপ্রভু, ক্ষমা কর। যাকোব কি করে বেঁচে থাকবে? সে তো খুবই ছোট” ?
- কেন মনে করেন আমোষ তৃতীয় দর্শন দেখে আর বিনতি করেন না? তার কি বিনতি করতে থাকা উচিত ছিল?

খুঁজে কি কি পাওয়া যায়
- আমোষ প্রথম দর্শনে দেখেন ঈশ্বর ঝাঁক ঝাঁক পঙ্গপাল ঠিক করেন, দ্বিতীয় দর্শনে ঈশ্বর শাস্তি দেওয়ার জন্য আগুন ডেকে আনেন এবং তৃতীয় দর্শনে একটি দেওয়ালে (যা ইস্রায়েলকে বুঝায়) ওলনদড়ি রাখেন।
- ৩টি দর্শনই বিচারের দর্শন। পঙ্গপাল হল পঞ্চপুস্তকে উল্লিখিত ভয়ংকর একটি বিচার (মিসরের ৮ম আঘাত, দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:৩৮)। আগুন অনেক ক্ষেত্রে ধ্বংসের একটি ছবি এবং দেওয়ালে ওলনদড়ি হল মুল্যায়ন বা পরিক্ষা করার একটি ছবি, দেওয়াল বাঁকা হলে তা বিচারের বা ধ্বংসেরও ছবি বটে।
- আমোষের আবেগপূর্ণ “হে প্রভু সদাপ্রভু, ক্ষমা কর। যাকোব কি করে বেঁচে থাকবে? সে তো খুবই ছোট” এমন কিছু নয় যা ইস্রায়েলীয়দের শুনতে ভাল লাগবে। তারা নিজদেরকে শক্তিশালী ও অজেয় মনে করে।
- আমোষ প্রথম দু’টি দর্শনের পরে বিনতি করেন এবং ঈশ্বর তার বিনতি শুনে বিচারটি বাদ দেন। কিন্তু যকন আমোষ ওলনদড়ি দেখেন তিনি চুপ হয়ে যান। কেউ কেউ বলে যে, তার বিনতি করতে থাকা উচিত ছিল। হয়তো তাই। অথবা তিনি ইস্রায়েলের বিষয়ে ঈশ্বরের ন্যায় মূল্যাযন ও বিচার দেখে আর কিছু বলার খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি বুঝতে পারেন যে ইস্রায়েলের উপরে ঈশ্বরের বিচার শুধুমাত্র ন্যায্য, তা না। বিচার আসলে প্রয়োজন। যদি একটি দেশ এমন মন্দতা, অন্যায় ও অত্যাচার ভরা হয়ে গেছে তবে দেশটি চলতে দিতে থাকা হল দেশকে শেষ করার চেয়ে খারাপ। বাস্তবতা দেখে আমোষ ঈশ্বরের সঙ্গে একমত হন যে বিচারই উপযুক্ত।
- আধুনিক বিশ্বাসী হিসাবে আমাদের বিনতি মাঝের মধ্যে প্রায় ‘ঈশ্বরকে দোষ দেওয়ার মত’ হয়ে যায় ‘কেন তুমি আমাদের জন্য কিছু কর না?’ এইটি প্রকৃত বিনতি নয় বরং তাতে প্রকাশ পায় যে আমরা ঈশ্বরের মঙ্গলহয়তা এখনও বুঝি নি। ঈশ্বরকে জোর করে কন্ভিন্স করতে হয় না দয়া করতে, তিনিই দয়ালু। যদি তিনি কোনো ক্ষেত্রে দয়ার করার কোনো কারণ খুঁজে পান তবে তিনি অবশ্যই দয়া দান করেন। আত্ম-মায়াদয়া বা ‘বেচারা ভাব’ যেন আমাদের বিনতির ভিত্তি না হয় বরং ঈশ্বরের মঙ্গলময়তার গভীর জ্ঞান।
আমোষের আশা বাণী
নির্দেশনা
আমোষ ৯:১১-১৫ পদ পড়ুন এবং নিচে দেওয়া প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করুন:
- পুনরুদ্ধারের এই প্রতিজ্ঞা ঠিক কার জন্য?
- আমোষ যখন ঈশ্বেরে ভবিষ্যৎ আশীর্বাদের বর্ণনা দেন তখন তিনি তা খুব ব্যবহারিক এবং অর্থনৈতিক রূপক দিয়ে করেন। আমোষ ধনীদের ধমক দিতে দিতে এসেছেন – আশার বাণীর এই কথাগুলো কি অবাক লাগে?
- অর্থনৈতিক সুঅবস্থা কি ভাল বিষয়? যদি তা নিয়ে সমস্য আছে, ঠিক কি কি নিয়েই সমস্যা হতে পারে?
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়
- তার পুস্তকের শেষে আমোষ একটি চমৎকার আশা বাণী ঘোষণা করেন (এবং পরে লিখিত রাখেন)। এই আশা বাণী কিন্তু ইস্রায়েল দেশের জন্য নয় (ইতিহাসে ইস্রায়েল দেশ হিসাবে আর কখনও পুনরুদ্ধার করা হবে না), তবে কার জন্য? পুনরুদ্ধারের প্রতিজ্ঞা “দায়ূদের পড়ে যাওয়া ঘর” নিয়ে (আমোষ ৯:১১), যার অর্থ যিহূদা দেশের জন্য, ইস্রায়েলের দেশের জন্য না। যিহূদা আমোষের দেশ, যিহূদা আমোষের ভাববাণী পরবর্তী প্রজন্মগুলোর জন্য সংরক্ষণ করবে। যিহূদাও ধ্বংস ও নির্বাসের মধ্য দিয়ে যাবে (৫৮৬ খ্রীঃপূঃ), কিন্তু পরবর্তীতে ঈশ্বর সেই “পড়ে যাওয়া ঘর” পুনরায় স্থাপন করেবন। আশা করা যায় যে ইস্রায়েল দেশে যাদের মধ্যে ঈশ্বরের ভক্তি ছিল, তারা আমোষের বাণীতে গুরুত্ব দিয়ে ইস্রায়েলের ধ্বংসের আগেই যিহূদা দেশে আশ্রয় নিয়েছে।
- অবশ্যই উদ্ধার বাণীটি মশীহ সম্বন্ধীয় একটি প্রতিজ্ঞাও বটে। যীশুই দ্বারা “দায়ূদের পড়ে যাওয়া ঘর” চূড়ান্তবাবে উঠানো হবে এবং ঈশ্বরের লোকেরা আবার তাদের প্রকৃত আহ্বান পূর্ণ করে সব জাতিদের জন্য আশীর্বাদ হবে।
- এই পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ আমোষ ৯:১২ পদে এভাবে প্রকাশ পায়: “যাতে ইস্রায়েলীয়েরা ইদোমের বাকী অংশ এবং আমার অন্য সব জাতিদের দেশ অধিকার করতে পারে।” এই কথাটি কিভাবে বুঝব? এর অর্থ কি এই যে, পরবর্তীতে কোনো সময়ে ইস্রায়েল ইদোম দেশের উপর জয়লাভ করে তাদেরকে দমন করবে বা দখল করবে?
- প্রকৃতপক্ষে এখানে কেরী অনুবাদ আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সুন্দরভাবে প্রকাশ করে: “যেন তাহারা ইদোমের অবশিষ্ট লোকদের এবং যত জাতির উপরে আমার নাম কীর্ত্তিত হইয়াছে, সকলের অধিকারী হয়।” এখানে বুঝা যায় যে, অন্যান্য জাতির লোকও ‘ঈশ্বরেরই নাম ডাকা লোক’ হয়ে যাবে, অর্থাৎ যে সাব জাতি থেকে লোকেরা ঈশ্বরের নাম ডেকে ‘ঈশ্বরেরই লোক’ হয়ে যাবে এবং এই পুনরুদ্ধারে অংশ পাবে। তাই এই পদ মানে না যে রক্ত-মাংস যিহূদীরা একদিন ইদোম দেশকে দখল করবে, বরং এর অর্থ এই যে, অন্যান্য জাতিগুলোর মধ্য থেকে অনেকে ঈশ্বরের নাম ডেকে তাঁরই জাতির (এবং সঙ্গে তাঁর উদ্ধারের) অশ হয়ে যাবে।
- এই ব্যাখ্যা যে ঠিক, তা আরো প্রমান পায় যখন আমরা লক্ষ্য করি এই পদগুলো নিতুন নিয়মের কিভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। প্রেরিতেরা যখন যিরূশালেমে একটি সভার জন্য একত্রিত হয় যাকোব আমোষের এই পদগুলো উদ্ধৃতি করেন (প্রেরিত ১৫:১৬-১৭)। প্রেরিতেরা আমোষের এই পদগুলো থেকে বুঝতে পারে যে ঈশ্বর সব সময় চেয়েছেন যেন অন্যান্য জাতিরা ঈশ্বরেরই লোক হয়ে যাবে, মশীহের রাজ্যে প্রত্যেক জাতি থেকে যারা বিশ্বাস করে, তারা ইশ্বরের সন্তান, উত্তরাধিকারী ও ঈশ্বরের রাজ্যের নাগরিক হয়ে যাবে। অযিহূদীও থাকবে যারা ঈশ্বরের নাম ডাকবে, এবং তাদেরও গ্রহণ করা হবে।
- আমোষ ৯:১৩-১৫ আমরা ঈশ্বরের পুনরুদ্ধারের ও আশীর্বাদের একটি খুব ব্যবহারিক ও অর্থনৈতিক বর্ণনা পায়। আমোষ সুন্দরভাবে প্রকাশ করেন কিভাবে লোকদের চাষ ও আশীর্বাদের উপরে ঈশ্বরের আশীর্বাদ থাকে: উর্বরতা, ভাল ফসল, প্রাচুর্য।
- আমোষ ধনীদের ধমক দিতে দিতে এসেছেন – আশার বাণীর এই কথাগুলো কি একটু অবাক লাগে না? আমোষ কি ধনের বিরুদ্ধে না?
- না, আমোষ (এবং ঈশ্বর) কখনও ধনের বিরুদ্ধে ছিল না। তিনি অন্যায় লাভ, ঠকানো, গরিবদের ভুলভাবে ব্যবহার করা, দুর্বলদের অধিকার নষ্ট করার এবং যত্নহীনতা ও স্বার্থপরতার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। যদি একটি সমাজ আইন-শৃঙ্খল ও ঈশ্বরের আইনে বাধ্য হয় তবে সেই সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত হবে, তা মোশির আইন-কানুনে একটি মূল কথা। আত্মিক সুঅবস্থার একটি ফলাফল অর্থনৈতিক সুঅবস্থা। ধন যে সব সময় অন্যায়ের বিষয়, এমন নয়। ধন উপযুক্তভাবে, ন্যায্যভাবে, প্রজ্ঞাপূর্ণবাবে অর্জন করা যায়। যা ঈশ্বর বিচার করেন হল অন্যায় দ্বারাই ধন।
- লক্ষ্য করুন যে ঈশ্বেরের আশীর্বাদ ও প্রাচুর্যের মাঝে লোকেরা কিন্তু পরিশ্রম করে (লাঙ্গল টানা, বীজ বপন, ফসল কাটা ইত্যাদি)। তারা ‘হাতীর দাঁতের কাজ করা খাটে শোও আর তোমাদের বিছানায় অলসভাবে গা টান” করে না, তা অলসতা, বিলাসিতা বা স্বার্থপরতার কোনো ছবি নয় (আমোষ ৬:১-৬)। ঈশ্বরের উদ্ধার সৃষ্টি করে এমন একটি সমাজ যেখানে সবাই কাজ করে, সপর হয়, যেখানো সাবর অধিকার সুরক্ষিত এবং সেখানে শান্তি রাজত্ব করে।
- আধুনিক বিশ্বাসী হিসাবে আমাদেরও বুঝা প্রয়োজন ঈশ্বর ঠিক কিতে আশীর্বাদ দিতে পারেন।