আমরা বেশ কিছু লক্ষ্য করেছি এবং আমোষ পুস্তকের ঐতিহাসিক পরিস্থিতির বিষয়েও চিন্তা করেছি। এখন আমরা আমোষ পুস্তকের কয়েকটি প্রধান বিষয় দেখব। আমরা ১ম ও ২য় অধ্যায় নিয়ে শুরু করব:
চারিদিকে জাতিগুলোর বিরুদ্ধে আমোষের বাণী
বাণীর বা জাতির ধারাবাহিকতা
নির্দেশনা
লক্ষ্য করুন আমোষ ১-২ অধ্যায়ে জাতিগুলোর ধারাবাহিকতা, অর্থাৎ কোন জাতির পরে কোন জাতিকে নিয়ে আমোষ কথা বলেন। জাতিগুলো ডানের মানচিত্রতে খুঁজুন। ধারাবিহাকতার উদ্দেশ্য কি? – এই প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করুন।
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়
জাতিগুলোদের এই ধারাবাহিকতা অনুসারে আমোষ বাণী বলেন: অরাম (সিরিয়া) > পলেষ্টীয়া > ফৈনীকীয়া > ইদোম > অম্মোন > মোয়াব > যিহূদা > ইস্রায়েল। হতে পারে আমোষ চারিদিকে জাতিদের ধমক দিতে দিতে শেষে তার আসল উদ্দেশ্যে পৌঁছান: ইস্রায়েলের দোষ ধরা।


এই জাতিগুলোর সাথে ইস্রায়েলের ইতিহাস
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়
প্রথম ৩টি জাতি (অরাম, পলেষ্টীয়া, ফৈনিকীয়া) ইস্রায়েল জাতির কাছের আত্মীয় জাতি নয়। পরবর্তী ৩টি জাতি হল অব্রাহাম দ্বারা ইস্রায়েলের আত্মীয়: অম্মোন ও মোয়াব অব্রাহামের ভাইপো লোট থেকে আসে, ইদোম যাকোবের ভাই এষৌ থেকে আসে এবং যিহূদা জাতি হল ইস্রায়েলের ‘বোন’ (১৫০ বছর আগে, অর্থাৎ ৯৩১ খ্রীষ্টপূর্বে বিভক্ত)।
উল্লিখিত প্রত্যেকটি দেশের সাথে ইস্রায়েলের কোনো না কোনো সময়ে দ্বন্দ্ব এবং এমন কি যুদ্ধ হয়েছিল।
জাতিগুলোর ধারাবাহিকতা
নির্দেশনা
মনে রাখুন যে, আমোষ এই বাণী এমন ‘ধার্মিক’ ইস্রায়েলীয়দের কাছে বলেন যারা কোনো পর্বের জন্য বৈথেলে এসেছে। নিজের প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করুন:
- আমোষ যখন এমন জাতির বিরুদ্ধে বিচার বাণী দেন যার সাথে ইস্রায়েল যুদ্ধ করেছিল তখন বিচার বাণী শুনে ইস্রায়েলীয়দের কেমন লাগবে?
- আপনি এই বিষয় এবং আমোষ ৫:১৮ পদে উল্লিখিত কথার কোনো মিল খুঁজে পান? “ধিক্ তোমাদের! তোমরা তো আকুল হয়ে সদাপ্রভুর দিন দেখতে চাইছ! কেন তোমরা সেই দিনের আকাংক্ষা করছ? তোমাদের কাছে সেই দিন আলো নয় কিন্তু অন্ধকার হবে।?”
- জাতিগুলোর ধারাবাহিকতা লোকদের কিভাবে প্রভাবিত করবে?
- যখন সর্বশেষে ইস্রায়েলেরও দোষ ধরা হয় তখন শ্রোতাদের কেমন লাগবে?
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়
ধরুন আপনি সেই দিনে পর্ব পালন করার জন্য বৈথেলে আসলেন। হঠাৎ করে একজন দাঁড়িয়ে অধিকারের সঙ্গে কথা ঘোষণা করতে শুরু করেন। তিনি কি বলছেন? ভক্তা অরাম জাতির বিরুদ্ধে একটি বিচার বাণী দেন। আপনার হৃদয় লাফ দেয়। অবশেষে? মনে আছে তো অরামের সাথে যুদ্ধে ইস্রায়েল কত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অরামকে বিচার? তারা আসলে মন্দ। আপনার আনন্দ লাগে, বিজয়োল্লাস। অবশেষে প্রতিশোধ নেওয়া হবে! অবশেষে “সদাপ্রভুর দিন” উপস্থিতি! অবশেষে ঈশ্বর তাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে অন্যদের বিরুদ্ধে ন্যায় বিচার করবেন।
ভক্তার কণ্ঠস্বর চলে থাকে, তিনি পলেষ্টিীয়দের বিরুদ্ধে বিচার বাণী দেন, ফৈনীকীয়দের বিরুদ্ধে বাণী দেন, ইদোমের বিরুদ্ধে বাণী দেন, অম্মোনের বিরুদ্ধে, মোয়াবের বিরুদ্ধে … । আপনি ও চারিদিকে সব শ্রোতারা ঈশ্বরের এই বিচারে সমর্থন প্রকাশ করেন, সবাই আনন্দ করেন, জয়োল্লাস করেন, প্রত্যেক জাতির পরে “আমেন” ছিল্লিয়ে বলবেন। জায়গাটি উত্তেজনা ভরা, সবার মনোযোগ ভক্তার উপর … । বক্তা যিহূদার বিরুদ্ধে বিচার বাণী দিতে শুরু করছেন। আপনি আরো খুশি। যিহূদা সব সময়ে নিজেকে ইস্রায়েলের চেয়ে ধার্মিক মনে করে, ইস্রায়েলকে তুচ্ছ করে, এখন ওদেরও খবর হয়ে যাবে। কণ্ঠস্বর এখনও চলতেই আছে। হঠাৎ করে তিনি ইস্রায়েলের বিরুদ্ধেও বিচার বাণী দিতে শুরু করেন। আপনি হতভম্ব হয়ে চুপ করে বসে আছেন, কেউ শ্বাস নিচ্ছে না। হঠাৎ করে নিরব ভেঙ্গে যায় এবং সবাই রাগে চিৎকার করে: এই লোকের কত দুসাহস! লোকটি কে? এবং কেন কেউ তাকে থামায় না?
সম্ভাবনা বেশি যে আমোষ পরিকল্পিতভাবে শ্রোতাদের ফাঁদে ফেলার জন্যই জাতিদের এই ধারাবাহিকতা অনুসারে উল্লেখ করেন। তিনি তাদের হৃদয় আটকানোর জন্য এবং তাদের চেতনা জাগানোর জন্যই তা করেন। আমোষের এই প্রথম বক্তৃতা বোমা ফাটার মত। তিনি শ্রোতাদের দেখান ঈশ্বর তাদেরকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন।
ঈশ্বর জাতিদেরকে কোন কারণে বিচার করেন?
যদিও আমোষের প্রধান উদ্দেশ্য হল ইস্রায়েলকে তার পাপের বিষয়ে চেতনা দেওয়া তবুও ঈশ্বর চারিদিকে জাতিদের ঠিক কি সের জন্য বিচার করেন, তা লক্ষ্য করা দরকার। আমোষ একটি পুনরুক্তি বাক্য ব্যবহার করে প্রত্যেকটি জাতির কাছে কথা শুরু করেন:
“সদাপ্রভু বলছেন (অধিকার), “(জাতি বা প্রধান শহরের নাম)-এর তিনটা পাপ, এমন কি, চারটা পাপের দুরু আমি নিশ্চয়ই তাকে শাস্তি দেব, কারণ (বিচারের কারণ) … । সেজন্যই আমি (বিচারের বার্ণনা) …।”
নির্দেশনা
ঈশ্বর ঠিক কোন কারণে জাতিদেরকে বিচার করেন, তার একটি তালিকা বানান। চেষ্টা করুন বুঝতে কি নীতি তারা ভেঙ্গে দিয়েছে। চিন্তা করুন যিহূদা ও ইস্রায়েলের ক্ষেত্রে যা বলা হয়েছে, তা মোশির আইন-কানুনের সাথে কিভাবে সম্পর্কিত।
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

- চারিদিকে জাতেদর বিচারের কারণ হল দাস ক্রয়-বিক্রয় (শান্তির সময়ে ব্যবসা হিসাবে), যুদ্ধের সময়ে অতিরিক্ত হিংস্রতা ও প্রতিশোধ (সামিক ও বেসামরিক লোকদের প্রতি), মরা মানুষকে অসম্মান, গণহত্যা।
- এগুলো সব এমন আচরন যা সবাই রাজি যে কারও এগুলো করা ঠিক হবে না। তাই বলা যায় যে ঈশ্বর তাদেরকে ‘সবার মতে নৈতিক আইন’ অনুসারে বিচার করেন। এর অর্থ এই: এমন ব্যবহার যা যদি কেউ আমার বিরুদ্ধে করে তবে তা আমি অন্যায় বলি, সেই ব্যবহার যদি আমি আর একজনের বিরুদ্ধে করি, তবে আমি দোষী। অথবা ভিন্নভাবে একই নীতির প্রকাশ: যে মানদণ্ড অনুসারে আমি অন্যদের বিচার করি সেই মনদণ্ড অনুসারে ঈশ্বর আমাকে বিচার করেন। একই নীতি ইতিবাচকভাবে প্রকাশ করলে তবে তা আমরা যীশুর ‘শ্রেষ্ঠ নিয়ম’ (golden rule) বলি: “অন্য লোকদের কাছ থেকে যে রকম ব্যবহার পেতে চাও তোমরাও তাদের সংগে সেই রকম ব্যবহার কোরো” (মথি ৭:১২)।
- লক্ষ্য করুন যে ঈশ্বর যিহূদা ও ইস্রায়েল এর চেয়ে উঁচু মানদণ্ডে দায়বদ্ধ করেন: তাদেরকে তিনি মোশির আইন-কানুন অনুসারে বিচার করেন, যেহেতু তাদের কাছে মোশির আইন-কানুন ছিল। তাদের এই আরো উঁচু প্রকাশ ছিল কিন্তু তারা তা অনুসারে আচরণ করে নি। চারিদিকে জাতিদের কাছে এই প্রকাশ দেওয়া হয নি।
- এখানে ঈশ্বরের ন্যায্যতা প্রকাশ পায়: যা লোকেরা না জানে, তার জন্য ঈশ্বর তাদেরকে দোষী হিসাবে ধরেন না, কিন্তু যে মানদণ্ড তারা নিজেই বুঝে (এবং অন্যদের তার জন্য দায়বদ্ধ করত), সেই মানদণ্ড অনুসারে ঈশ্বর তাদেরকে বিচার করেন। নতুন নিয়মের পৌল এই একই চিন্তা রোমীয় ১:২০ পদে প্রকাশ করেন “ঈশ্বরের যে সব গুণ চোখে দেখতে পাওয়া যায় না, অর্থাৎ তাঁর চিরস্থায়ী ক্ষমতা ও তাঁর ঈশ্বরীয় স্বভাব সৃষ্টির আরম্ভ থেকেই পরিষ্কার হয়ে ফুটে উঠেছে। তাঁর সৃষ্টি থেকেই মানুষ তা বেশ বুঝতে পারে। এর পরে মানুষের আর কোন অজুহাত নেই।”
অন্য জাতিদের সঙ্গে ঈশ্বরের সম্পর্ক ঠিক কি?
নির্দেশনা
এখানে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে: আমাদের মোটামুটি চিন্তা আছে ইস্রায়েলের সঙ্গে ঈশ্বরের সম্পর্ক কি, কিন্তু অন্য জাতিদের সঙ্গে ঈশ্বরের সম্পর্ক ঠিক কি?
এই প্রশ্ন সম্বন্ধে চিন্তা করুন। এমন বাইবেল পদ যা আপনি মনে করেন এই বিষয়ে সম্পর্কিত, সেগুলোর তালিকা করুন।
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়
- আদি ১:২৮ মানব জাতির কাছে ফলবান হওয়ার, নিজের সংখ্যা বাড়িয়ে তোলার এবং পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ার আদেশ। তাই যদি মানুষ করে তবে ধীরে ধীরে আলাদা দল, সংস্কৃতি ও জাতি তৈরি হবে। ঈশ্বর চান যেন বিভিন্ন জাতি তৈরি।
- আদি ১০ ঈশ্বর বিভিন্ন জাতিগুলো তৈরি হতে দেন এবং তা গুরুত্বের ও উৎযাপন করার বিষয় মনে করেন।
- যাত্রা ৯:২৪ আমাদের যদিও জ্ঞান নেই তবুও ঈশ্বর প্রত্যেক জাতির ইতিহাস জানেন।
- দ্বিতীয় বিবরণ ২:৯-১৫ ঈশ্বর বিভিন্ন জাতিদের বাস করার জায়গা দেন, জাতিদের আবার সরিয়েও দেন।
- আমেষ ৯:৭ ঈশ্বর বিভিন্ন জাতিদের আহ্বান করেন এবং সরিয়ে দেন।
- প্রেরিত ১৭:২৬ ঈশ্বর জাতিদের সীমানা এবং সময় ঠিক করে দেন। জাতিদের সাথে তাঁর চুক্তি আছে।
- লেবীয় ১৮:১-৩ ঈশ্বর জাতিদের আচরণ জানেন এবং তাদেরকে দায়বদ্ধ করে রাখেন।
- আদি ১৫:১৬ ঈশ্বর জাতিদের ‘পাপের মাপ’ জানেন। যদি একটি জাতি এমন মন্দ হয়ে যায় যে তাকে আর উদ্ধার করা সম্ভব না তবে ঈশ্বর এই জাতির অস্থিত্ব বন্ধ করে দেন।
- লেবীয় ১৮:২৪-৩১ অতিরিক্ত পাপ করলে তবে জাতিটি জমির উপর তার অধিকার হারায়।
- অনেক পদ ঈশ্বর জাতিদের বিচার করেন।
- অনেক পদ, হব ১ ঈশ্বর এক জাতিকে বিচার করার জন্য আর এক জাতিকে ব্যবহার করেন।
আমাদের বুঝা দরকার ইস্রায়েল জাতির আহ্বান এবং অন্য জাতিদের জন্য ঈশ্বরের হৃদয়, এই দু’টি বিষয় কিভাবে সম্পর্কিত। ঈশ্বর অব্রাহামকে আহ্বান দিলেন যেন তার মধ্য দিয়ে প্রথিবীর সব জাতিগুলো আশীর্বাদ পায় (আদি ১২:৩)। যখন ঈশ্বর অব্রাহাম পরিবার তেকে সৃষ্টি ইস্রায়েল জাতিকে বেছে নেন তবে তিনি তাদেরকে একটি “পুরোহিতদের রাজ্য” হওয়ার জন্য আহ্বান দেন (যাত্রা ১৯:৪-৬)। সারা ইস্রায়েল “পরুহিতদের রাজ্য”, তার মানে কি? পুরোহিত মানে ঈশ্বর এবং লোকদের মধ্যে মধ্যস্থকারী একজন। যদি সারা ইস্রায়েল মধ্যস্থকারী তবে ঈশ্বর এবং কার মধ্যে মধ্যস্থকারী? ইস্রায়েল হবে ঈশ্বর এবং অন্য জাতিদের মধ্যে মধ্যস্থকারী। ইস্রায়েলের আহ্বান হল এমন আকর্ষনীয়, ঈশ্বরীয়, আদর্শ দেশ হওয়া যেন অন্যান্য জাতি ঈশ্বরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ইস্রায়েলের আহ্বান এই নয় যেন তারা ‘বিশেষ’ হবে বরং যেন তারা অন্য জাতিদের জন্যই উদাহরণ ও প্রকাশ হবে (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৫-৬)। ইস্রায়েল জাতির আহ্বান হল অন্য জাতিদের দেখানো ঈশ্বর যা প্রত্যেক জাতির জন্য করতে চান। নতুন নিয়মের আমরা ঈশ্বরের এই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন হতে দেখি: পরিত্রান ও উদ্ধার সব জাতিদের জন্য।
ঈশ্বরের চোখে জাতিদের গুরুত্ব আমোষের শ্রোতাদের বেশি পছন্দ হবে না। ইস্রায়েল নিজেকে বিশেষ জাতি এবং ঈশ্বরের দয়ার পাত্র মনে করে। বিষয়টি আর এক দিকে কাটে: ইস্রায়েল পাপ দিয়ে ভরা এবং তারা অন্য জাতিদের চেয়ে ঈশ্বরীয় জাতি আর নয়। এর জন্য ঈশ্বর ইস্রায়েলের বিরুদ্ধেও কঠোর বিচার বাণী ঘোষণা করেন এবং ইস্রায়েলকে জরুরীভাবে অনুতপ্ত হতে বলেন।
আসুন আমরা আর একবার দেখি ঈশ্বর ঠিক কি কি কারণে জাতিদের বিরুদ্ধে বিচার বাণী দেন: চুক্তি ভাঙ্গা, লোকদের দাস হিসাবে বিক্রি (শান্তির সময়ে, ব্যবসা হিসাবে), যুদ্ধের সময়ে অতিরিক্ত হিংস্রতা ও প্রতিশোধ (সামরিক এবং অসামরিক লোকদের), মরা মানুষকে অসম্মান, গণহত্যা।
আন্তর্জাতিক আইন
নির্দেশনা
এই বিচারের কারণগুলো আমাদের আধুনিক জাতিগোরোর সম্পর্কের জন্য কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ?
শিক্ষা
জাতিদের মধ্যে সম্পর্ক এবং ন্যায় ব্যবহার মানে কি, এই বিষয়ে বাইবেলীয় নীতি আমোষ ১-২ অধ্যায় এবং দ্বিতীয় বিবরণ ১৯-২১ অধ্যায় অধ্যয়ন করে উত্তর পাওয়া যায়। হেন্রি দুনান্ট (Henri Dunant, Red Cross সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা) তার পরিচর্যা এই বাইবেল পদেরচিন্তার ভিত্তিতে তৈরি করেছিলেন। তার প্রচেষ্টার ফল হল জিনিভা কন্ভেন্সন (Geneva Convention) একটি চুক্তি যা পৃথিবীর অধিকাংশ জাতিগুলো স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছে। জিনিভা কন্ভেন্সনে বিভিন্ন বিষয়ে নীতি পাওয়া যায়, যেমন যুদ্ধে বন্দীদের অধিকার, বেসামরিক ও সামরিক লোকদের মধ্যে পার্থক্য করা, সরণার্থীদের অধিকার ইত্যাদি।


পুনরুক্তি বিষয়: আমোষ পুস্তকে ঈশ্বর সম্বন্ধীয় বর্ণনা বা গান
নির্দেশনা
আমোষ পুস্তকে বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ করে ঈশ্বর সম্বন্ধীয় বর্ণনা বা গান পাওয়া যায়, যেমন নিচে দেওয়া পদগুলোতে। এই পদগুলো পড়ুন এবং ঈশ্বরের চরিত্র সম্বন্ধে কি বলা হয়েছে, তা লিখে রাখুন। চিন্তা করুন এই সুন্দর পদগুলো কোন উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে? আমোষ পুস্তকে উল্লিখিত অন্যান্য পুনরুক্তি বিষয় (যেমন গরীবদের বিরুদ্ধে অন্যায় বা নকর ধার্মিকতা), তার সঙ্গে এই গানগুলোর সম্পর্ক কি?
আমোষ ১:২ “সদাপ্রভু সিয়োন থেকে গর্জন করছেন এবং যিরূশালেম থেকে জোরে কথা বলছেন। তাতে রাখালদের চারণ ভূমি সব শুকিয়ে যাচ্ছে ও কর্মিল পাহাড়ের চূড়ার গাছপালা মরে যাচ্ছে।”
আমোষ ৪:১৩ “মনে রেখ, যিনি পাহাড়-পর্বত গড়েন, বাতাস সৃষ্টি করেন এবং মানুষের কাছে নিজের চিন্তা প্রকাশ করেন, যিনি আলোকে অন্ধকার করেন এবং পৃথিবীর পাহাড়-পর্বতের উপর দিয়ে চলেন তাঁর নাম সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর সদাপ্রভু!”
আমোষ ৫:৮-৯ “যিনি কৃত্তিকা ও মৃগশীর্ষ নামে তারাগুলো তৈরী করেছেন, যিনি অন্ধকারকে আলো করেন এবং দিনকে রাতের আঁধার করেন, যিনি সাগরের জলকে ডাক দিয়ে ভূমির উপর ঢেলে দেন, তাঁর নাম সদাপ্রভু। তিনি শক্তিশালীদের উপর এবং তাদের দুর্গের উপর হঠাৎ সর্বনাশ এনে ধ্বংস করে দেন।”
আমোষ ৯:৫-৬ “সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু দেশটাকে ছুঁলে তা গলে যায় আর তার মধ্যে বাসকারী সবাই শোক করে। তাঁর ছোঁয়ায় গোটা দেশটা মিসরের নীল নদীর মত ফুলে ওঠে, তারপর নেমে যায়।তিনি আকাশে তাঁর উঁচু ঘর তৈরী করেছেন এবং পৃথিবীর উপরে চাঁদোয়ার মত আকাশকে স্থাপন করেছেন; তিনি সাগরের জলকে ডেকে ভূমির উপরে ঢেলে দেন। যিনি এই সব করেন তাঁর নাম সদাপ্রভু।”
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়
এই পদগুলোতে ঈশ্বরকে বর্ণনা করা হয় পৃথিবীর ও মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ও শক্তিশালী পরিচালক। তিনি সব কিছু জানেন এবং এই পৃথিবীকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করেন। তিনি লক্ষ্য করেন, প্রয়োজন হলে তিনি বিচার করেন এবং কারও তাঁকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নেই।
এই পদগুলো দ্বারা আমোষ শ্রোতাদের সরণ করিয়ে দেন ঈশ্বর কি হন। আমাদের ঈশ্বরকে নিয়ে ভুল চিন্তা যখন আছে মাত্র তখনই মিথ্যা ধার্মিকতা তৈরি হয়। যদি আমি মনে করি ঈশ্বর গরীবদের প্রতি আমার অন্যায় দেখেন না, যদি আমি মনে করি ঈশ্বর গরীবদের গুরুত্ব দেন না, যদি আমি মনে করি ঈশ্বরকে কেনা যায় তবে আমি চিন্তা করব যে ধর্মিকর্ম ও বড় উৎসর্গ দিলে ঈশ্বর খুশি হবেন। তারা মনে করি তাদের ধার্মিক অনুশীলন নিয়ে ঈশ্বর সন্তুষ্ট। তারা মনে করে গরীবদের প্রতি ব্যবহার এবং ধর্ম আলাদা বিষয়। এইসব ভুল চিন্তা ভাঙ্গার জন্যই আমোষ ঈশ্বরের চরিত্র বর্ণনা করেন।
আমোষ পুস্তকে পুনরুক্তি বিষয়: সামাজিক অন্যায়

নির্দেশনা
নিচে দেওয়া পদগুলোতে গরীবদের প্রতি অন্যায়ের বিষয়ে আমোষ ইস্রায়েলের দোষ ধরেন। পদগুলো পড়ুন এবং পদগুলোর গুরুত্ব নিয়ে চিন্তা করুন।
- আমোষ ২:৬-৭ “ইস্রায়েলের তিনটা পাপ, এমন কি, চারটা পাপের দরুন আমি নিশ্চয়ই তাকে শাস্তি দেব। তার লোকেরা টাকা-পয়সার জন্য সৎ লোকদের এবং পায়ের এক জোড়া জুতার জন্য অভাবীদের বিক্রি করে। ধুলা মাড়াবার মত করে তারা গরীবদের মাড়ায় এবং পথ থেকে অভাবীদের ঠেলে সরিয়ে দেয়। বাবা ও ছেলে একই মেয়ের সংগে ব্যভিচার করে এবং এইভাবে আমার পবিত্র নামের অসম্মান করে।”
- আমোষ ২:৮ “তারা প্রত্যেকটি বেদীর কাছে বন্ধক নেওয়া পোশাকের উপরে ঘুমায়। তাদের উপাসনা-ঘরে তারা জরিমানার টাকা দিয়ে কেনা আংগুর-রস খায়।”
- আমোষ ৩:৯-১১ “তোমরা অস্দোদ ও মিসরের সব দুর্গের লোকদের কাছে বল, “তোমরা শমরিয়ার পাহাড়গুলোর উপরে জড়ো হও; দেখ, তার মধ্যে কত গোলমাল! তার লোকদের মধ্যে কত অত্যাচার!” প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, “তারা ঠিক কাজ করতে জানে না; তাদের দুর্গগুলোর মধ্যে তারা অত্যাচারের ও লুটের মাল জমিয়ে রেখেছে। কাজেই একজন শত্রু তাদের দেশ ঘেরাও করবে; সে তাদের শক্ত প্রতিরক্ষার উপায়গুলো ধ্বংস করবে এবং দুর্গগুলো লুট করবে।”
- আমোষ ৪:১ “হে শমরিয়ার পাহাড়ের উপরকার বাশনের গাভীগুলোর মত স্ত্রীলোকেরা, তোমরা শোন। তোমরা গরীবদের অত্যাচার কর এবং অভাবীদের চুরমার কর আর তোমাদের স্বামীদের বল, “আমাদের জন্য মদ এনে দাও।”
- আমোষ ৫:১০-১২ “যে লোক শহরের ফটকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তোমরা তো তাকে ঘৃণা কর এবং যে সত্যি কথা বলে তাকে তুচ্ছ কর। তোমরা গরীবকে অত্যাচার কর এবং জোর করে তার কাছ থেকে শস্য আদায় কর। কাজেই তোমরা যদিও পাথরের বড় বড় ঘর তৈরী করে থাক তবুও তোমরা তাতে বাস করতে পারবে না। … আমি জানি তোমাদের অন্যায় কত বেশী এবং তোমাদের পাপ কি ভীষণ! তোমরা তো সৎ লোকদের উপর অত্যাচার কর ও ঘুষ খাও; শহরের ফটকে তোমরা গরীবদের ন্যায়বিচার পেতে দাও না।”
- আমোষ ৫:২৩-২৪ “তোমাদের গানের আওয়াজ দূর কর। তোমাদের বীণার বাজনা আমি শুনব না। তার চেয়ে বরং ন্যায়বিচার নদীর মত আর সততা চিরকাল বয়ে যাওয়া স্রোতের মত বয়ে যাক।”
- আমোষ ৬:১ “ধিক্ তোমাদের! তোমরা তো সিয়োনে আরামে বাস করছ আর শমরিয়ার পাহাড়ে নিজেদের নিরাপদ মনে করছ। তোমরা সবচেয়ে প্রধান জাতি ইস্রায়েলের নাম-করা লোক আর তোমাদের কাছেই ইস্রায়েলের লোকেরা আসে।”
- আমোষ ৬:৪-৬ “তোমরা হাতীর দাঁতের কাজ করা খাটে শোও আর তোমাদের বিছানায় অলসভাবে গা টান কর। তোমাদের পাল থেকে তোমরা বাছাই করা ভেড়ার বাচ্চা ও বাছুরের মাংস খাও। তোমরা বীণা বাজিয়ে গান গাও এবং দায়ূদের মত নানা রকম বাজনা তৈরী করে থাক। তোমরা বাটি ভরে আংগুর-রস খাও আর সবচেয়ে ভাল সুগন্ধি তেল গায়ে মাখ, কিন্তু তোমরা যোষেফের, অর্থাৎ ইস্রায়েলের ধ্বংসের জন্য দুঃখিত হও না।”
- আমোষ ৮:৪ “তোমরা যারা অভাবীদের পায়ে মাড়াচ্ছ আর গরীবদের শেষ করে দিচ্ছ, তোমরা শোন।5তোমরা বলছ, “কখন অমাবস্যা চলে যাবে যাতে আমরা শস্য বিক্রি করতে পারি? কখন বিশ্রাম দিন শেষ হবে যাতে আমরা বাজারে গম বেচতে পারি? আমরা মাপের টুকরি ছোট করব, দাম বাড়াব, ঠকামির দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করব, রূপা দিয়ে গরীবকে এবং এক জোড়া জুতা দিয়ে অভাবীকে কিনে নেব আর ঝাড়ু দিয়ে ফেলে দেওয়া গম তাদের কাছে বিক্রি করব।”
বিবেচনা করুন
ইস্রায়েলের সামাজিক অন্যায় নিয়ে দোষ ধরের ক্ষেত্রে আমোষের কথা আবেগপূর্ণ, নির্দিষ্ট, বাস্ত ও শক্তিশালী। ধনী হওয়া যে পাপ, আমোষ তা আসলে বলে না, যেমন মোশির আইন-কানুনও তা বলে না। বড় ও ধনীদের দেখে আমোষ যে হিংসা করেন, আত্ম-দয়ামায়া যে করেন বা নিজেকে বেচারা মনে করেন, এমন নয়। আমোষ পরে ইস্রায়েলের বাকি লোকদেরকে একটি চমৎকার উদ্ধার বাণী দেবেন যাতে ঈশ্বরের অর্থনৈতিক আশীর্বাদের সুন্দর একটি বর্ণনা পাওয়া যায় (আমোষ ৯:১১-১৫)। মোশির আইন-কানুনেও বাধ্যতার ফল হল অর্থনৈতিক সুঅবস্থা, প্রাচুর্য ও আশীর্বাদ।
আমোষ দোষ ধরেন যে অল্প লোকেরা অতিরিক্ত ধনী এবং অধিকাংশ লোকেরা গরীব। তিনি অন্যায় লাভ, দুর্বলদের ভুল ব্যবহার, গরীবদের অধিকার অস্বীকার করা, করুণাহীনতা এবং যত্নহীনতা নিয়ে দোষ ধরেন। একদিকে অতিরিক্ত বিলাসিতা, অন্যদিকে লোক যারা কঠোর অভাবে। সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা আছে কিন্তু কেউ কিছু করে না।
এইসব সামাজিক অন্যায়ের পরেও ইস্রায়েলে অহংকার, আত্ম-বিশ্বাস, আত্ম-ধার্মিকতা এবং মিথ্যা নিরাপত্তা দেখা যায়। ধনীরা নিজের ধার্মিকতা বড় উৎসর্গে এবং অন্যান্য ধর্মকর্মে উপস্থাপনা করে দেয়। ইস্রায়েল নিজেকে ঈশ্বরের আশীর্বাদের পাত্র মনে করে। অহংকারী আত্ম-ধার্মিকতার সাথে সাথে দুর্বলদের অত্যাচার, তা হল গরীবদের মুকে – এবং ঈশ্বরের মুকে – থুথু ফেলার মত।
আমোষের পাশাপাশি আরো ভাববাদী আছে যারা একইভাবে ইস্রায়েলের বা যিহূদার সামাজিক অন্যায় নিয়ে দোষারোপ করেন। গরীবদের বিষয় ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই বাইবেলের বিভিন্ন জায়গায় আমরা এই একই সংবাদ শুনি। কিছু উদাহরণ:
- মীখা ৩:১-৩ পদে আমোষের ২০ বছর পরে মীখা যিহূদার বিষয়ে বলেন: “আমি মীখা বলছি, হে যাকোবের নেতারা, অর্থাৎ ইস্রায়েলের বংশের শাসনকর্তারা, আপনারা শুনুন। আপনাদের কি ন্যায়বিচার সম্বন্ধে জানা উচিত নয়? আপনারা তো ভাল কাজকে ঘৃণা করে মন্দ কাজকে ভালবাসেন; আপনারা আমার লোকদের গা থেকে চামড়া আর হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে নিচ্ছেন, আপনারা আমার লোকদের মাংস খাচ্ছেন, তাদের চামড়া তুলে ফেলে হাড়গুলো টুকরা টুকরা করে ভাঙ্গছেন; আপনারা হাঁড়ির মধ্যেকার মাংসের মত করে তাদের টুকরা টুকরা করে কাটছেন।”
- যিশাইয় ৫:৮ প্রায় একই সময়ে যিশাইয় যিহূদার কাছে এই বাণী দেন: “ধিক্ তোমাদের, যারা ঘরের সংগে ঘর আর ক্ষেতের সংগে ক্ষেত যোগ করছ; শেষে অন্যদের জন্য কোন জায়গা থাকবে না, আর তোমরা একাই দেশে বাস করবে।”
- যিহিষ্কেল ১৬:৪৯ “তোমার বোন সদোমের পাপ ছিল এই- সে ও তার মেয়েরা ছিল অহংকারী, কারণ তাদের প্রচুর খাবার ছিল ও তারা নিশ্চিন্তে বাস করত, কিন্তু তারা গরীব ও অভাবীদের সাহায্য করত না।” সোদম এখানে যিহূদাকে বুঝায় যার প্রচুর কাবার ছিল কিন্তু অভাবীদের সাহায্য করে নি।”
- মথি ২৫ অধ্যায়ে যীশু ভেড়া ও ছাগলের দৃষ্টান্ত বলেন যেখানে ঈশ্বরের রাজ্য প্রবেশ করার শর্ত হল গরীব, অভাবী, অসুস্থ বা বন্দী মানুষদেরই প্রতি আমাদের ব্যবহার।


আমোষ সরাসরিভাবে গরীবদের সাহায্য করার বা দান দেওয়ার আদেশ দেন না, কিন্তু সর্বনিম্ন তাদেরকে শান্তিতে কাজ ও বাস করে দিতে হবে: যেন তাদের বিরুদ্ধে অন্যায় করা না হয়, যেন তাদের ঠকানো না হয়, যেন আদালতে তাদের অধিকার উল্টানো না হয়, যেন তাদের উপরে অন্যায় লাভ করা না হয়, যেন তাদের শ্রম ও প্রচেষ্টায় বাধা দেওয়া না হয়, যেন তাদের ছেপে ধরে রাখা না হয়।
আমোষ পরিষ্কারভাবে দেখান যে গরীবদের কাছে ভাল ব্যবহার না করলে কোনো মতেই ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা না যায়। ঈশ্বর যখন একটি সমাজকে মূল্যায়ন করেন তিনি গর সম্পত্তির পরিমাণ বা জি.ডি.পি দেখেন না বরং তিনি দেখেন এই সমাজে গরীবদের প্রতি কি ব্যবহার করা হয়। আত্ম-ধার্মিকতার সাথে গরীবদের অত্যাচার, এইটি ঈশ্বরের চোখে জঘন্য। নতুন নিয়মের ভাষায় একই বিষয় এভাবে প্রকাশিত: ঈশ্বরকে ভালবাসা মানেই প্রতিবেশীকে ভালবাসা। যিনি প্রতিবেশীকে ভালবাসেন না তিনি ঈশ্বরকে ভালবাসেন না – মুখে যা বলুক না কেন। আত্মিক বিষয় এবং বাস্তবিক বিষয় আলাদা করা যায় না। ধর্ম এবং ব্যবহারিক আচরণ আলাদা করা যায় না। ঈশ্বরীয় হওয়া মানে গরীবদের সেবা। যীশু বলেন যদি কোনো প্রতিবেশী আমার বিরুদ্ধে কিছু বলার আছে তবে উৎসর্গ বেদীর কাছে রেখে আগেই প্রতিবেশীর সাথে বিষয়টি সমাধান করতে হয় (মথি ৫:২৩-২৪)। যদি আমরা আলাদা করি যা ঈশ্বর একসাথে রাকে, যদি আমরা অন্যায় করে নিজের ধার্মিকতা উপস্থাপন করি, তবে আমরা বলি যে ঈশ্বরকে এভাবে ভুলানো যায়। প্রকৃতপক্ষে আমরা নিজেকে ছাড়া কাউকে ভুলাই না।