ব্যাখ্যা

আমাদের প্রথম ইউনিট “আমোষ ০১ – লক্ষ্য করা” আমরা আমোষ পুস্তকে অনেক বিষয় লক্ষ্য করেছি। আমোষের বাণী আরো ভালভাবে বুঝতে গেলে তবে আমাদের ঐতিহাসিক পরিস্থিতি নিয়ে অধ্যয়ন করা লাগবে: আমোষ কে ছিলেন? তার জীবন সম্বন্ধে আমরা কি জানি? তিনি কাদের কাছে বাণী দেন? সেই সময়ে ইস্রায়েলের অবস্থা কেমন? আমোষ কি কি বিষয় তোলেন? তিনি কি ভবিষ্যদ্বাণী দেন? তার ভবিষ্যদ্বাণী ইতিহাসে কিভাবে পূর্ণ হয়?

০১ ব্যাখ্যা প্রশ্ন পুস্তকের লেখক কে? তার জীবন সম্বন্ধে আমরা কি জানি

নির্দেশনা

আমোষ পুস্তকে এমন পদ খুঁজে বের করুন যাতে আমরা লেখক সম্বন্ধে কোনো তথ্য পাই। লেখকের নাম, তিনি নিজের বর্ণনায় কি বলেন, তাকে নিয়ে কোনো উল্লিখিত ঘটনা, এইসব লক্ষ্য করুন।

উদাহরণ

আমোষ ১:১ “তকোয়ের রাখালদের মধ্যে আমোষ ছিলেন একজন। …ইস্রায়েল সম্বন্ধে ঈশ্বর আমোষকে যা দেখিয়েছিলেন তা তিনি বলেছিলেন।” পুস্তকের লেখক হলেন আমোষ। তিনি পেশায় রাখাল। তার জন্মস্থান হল তোকয়। তিনি নিজের বর্ণনায় কোনো কিছু বলেন না, তার বাবার নাম উল্লেখ করেন না, নিজেকে কোনো টাইটেলও দেন না (যেমন ‘ভাববাদী’ বা ‘পুরোহিত’)।

খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

  • পুস্তকের লেখক হলেন আমোষ। তার নামের অর্থ হল “বোঝা”। তিনি পেশায় রাখাল। তার জন্মস্থান হল তোকয়। তিনি নিজের বর্ণনায় কোনো কিছু বলেন না, তার বাবার নাম উল্লেখ করেন না, নিজেকে কোনো টাইটেলও দেন না (যেমন ‘ভাববাদী’ বা ‘পুরোহিত’)। তার গ্রাম হল তোকয়। এই বিষয়ে কিছু তথ্য: তোকয় ছিল যিরূশালেম থেকে ১৬ কিঃমিঃ দক্ষীণের একটি ছোট শহর, একটি বেশ উচু পাহাড়ের এলাকায় অবস্থিত। পশ্চিম দিক থেকে যে বাতাস ও বৃষ্টি আসে, তা তোকয়ে বেশি পৌঁছায় না যেহেতু তোকয় পাহাড়গুলোর পূর্ব পাশে অবস্থিত। তোকয় তাই বেশ শুকনা জায়গা এবং রাখালদের জন্য অতি সুবিধার নয়।
  • আমোষ নিজের বিষয়ে পেশা ছাড়া কোনো তথ্য, বর্ণনা বা টাইটেল দেন না (যেমন ‘ভাববাদী’ বা ‘পুরোহিত’), কোনো বাবার নামও দেন না।

আমোষ ৭:১৪ “উত্তরে আমোষ অমৎসিয়কে বললেন, “আমি নবীও ছিলাম না, নবীর শিষ্যও ছিলাম না; আসলে আমি ছিলাম একজন রাখাল, আর আমি ডুমুর গাছের দেখাশোনাও করতাম। “

  • যখন আমোষকে চ্যালেঞ্জ করা হয় তিনি দাবি করেন যে তিনি ঈশ্বর থেকে আহ্বান পেয়েছেন কিন্তু তিনি নিজেকে ‘ভাববাদীদের একজন’ বলেন না। তার চেয়ে তিনি একজন শ্রমিক হিসাবে তার সাধারণ জীবন নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে কথা বলেন: তিনি রাখাল ও ডুমুর গাছ কাটার লোক।
  • ডুমুর গাছের উল্লেখ থেকে আমরা আরো তথ্য পেতে পারি: উল্লিখিত ডুমুর গাছ (“Ficus sycamorus”) তোকয় এলাকায় হয় না। ডুমুর গাছ পশ্চিমদিকে পলেষ্টীয়দের এলাকার কাছাকাছি নিচু পাহাড়ের এলাকায় হত। সেই ডুমুর গাছের ফল বেশিরভাগ গরীবরা খেত। এটা থেকে বুঝা যায় যে , আমোষ মৌশমী শ্রমিক হিসাবে ডুমুর গাছ কাটার কাজ করত, বাকি সময় তোকয়ে রাখাল কাজও করত। সম্ভবত যে আমোষ গরীবদের ও গরীব শ্রমিকদের অবস্থা ভালভাবে জানেনে, যেমন তার ভাববাণীতেও প্রকাশ পায়।

আমোষ ৭:১২ যখন বৈথেলের পুরোহিত অমাৎসিয় তাকে তুচ্ছ করে বলেন “ওহে দর্শক, দূর হয়ে যাও। তুমি যিহূদা দেশেই চলে যাও। সেখানে নবী হিসাবে কথা বলে তোমার খাবার যোগাড় কর”, আমোষ কথাটি অস্বীকার করে বলেন যে, তিনি লাভের জন্য বাণী দেওয়ার মত ভাববাদী নন।

আমোষ ৩:৮ একটি লম্বা প্রশ্নের তালিকার শীর্ষ হিসাবে আমোষ এই প্রশ্ন রাখেন: “সিংহ গর্জন করলে কে না ভয় করবে? প্রভু সদাপ্রভু বলতে বললে কে নবী হিসাবে কথা না বলে পারবে?”

  • আমোষ এখানে ‘ভাববাণী বলা’ প্রয়োজনীয়তা বা জরুরী হিসাবে বর্ণনা করেন, ঈশ্বরের সম্মুখে একজন মানুষ হিসাবে এবং ইস্রায়েলের দুরাবস্থার কারণে।

আমোষ ৪:৬-১২ এই পদগুলোতে ঈশ্বরের ৫টি আংশেক বিচারের বর্ণনা করা হয়, যার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর ইস্রায়েলকে ঝাকাতে এবং তাদের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে চেয়েছেন। কিন্তু ইস্রায়েল গুরুত্ব দেয় না, অনুতপ্ত হয় না: আমোষ ৪:৬ তোমাদের খালি পেটে রাখলাম … রুটির অভাব … ৪:৭-৮ বৃষ্টি পড়া বন্ধ করে দিলাম … ৪:৯ শুকিয়ে যাওয়া রোগ ও ছাৎলা-পড়া রোগ দিয়ে আঘাত করলাম পংগপালে৪:১০ মড়ক পাঠালাম … যুবকদের মেরে ফেললাম ৪:১১ অনেককে ধ্বংস করলাম … তবুও তোমরা আমার কাছে ফিরে আসলে না।”

  • ঈশ্বরের এই ৫টি আংশিক বিচারের বর্ণনা ‘অতীত’ হিসাবে দেওয়া আছে। মনে করা যায় যে আমোষ – যদিও তিনি সরল রাখাল মাত্র – তিনি দূর থেকে দেখেন ইস্রায়েল দেশে কি কি ঘটে। তিনি দেখেন যে যারবিয়াম-২এর রাজত্বে ইস্রায়েল উভয় রাজনৈতিকদিকে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী হয়ে উঠলেও (২ রাজা ১৪:২৩-২৭) তা হল চোখ ভুলানোর বিষয় মাত্র। তিনি সেই বিভিন্ন ঘটনাগুলো (খরা, পরাজয়, রোগ ইত্যাদি) ঠিকমত ঈশ্বরের আংশিক বিচার হিসাবে বুঝেন (যেমন লেবীয় ২৬ ও দ্বিতীয় বিবরণ ২৮)। ইস্রায়েল যে গুরুত্ব দিচ্ছে না, অনুতপ্তও হয় না, তাও তিনি দেখেন। এই আংশিক বিচারগুলো কবে ঘটে? আমরা জানি না কিন্তু আসিরিয়ার ইতিহাস লেখা অনুসারে ৭৬৫ খ্রীষ্টপূর্বে মধ্যপ্রাচ্য দেশে একটি মহামারী ঘটে।
  • আমোষের এই লক্ষ্য করা, মূল্যায়ন করা এবং ঘটনার পিছনে ঈশ্বরের হাত বোঝা, একজন শিল্পী চমৎকারভাবে তার খোদাই করা ছবিতে দেখিয়েছেন: Gustave Dore “Amos”। ছবি দেখুন।
  • আমোষের চরিত্রের বিষয় আমরা বুঝতে পারি যে তিনি ইচ্ছুক, বাধ্য, সাহসী। মানুষের চেয়ে তিনি ঈশ্বরকে ভয় করেন।

০২ ব্যাখ্যা প্রশ্ন আমোষ কাদের কাছে কথা বলেন?

নির্দেশনা

আমোষ পুস্তকে এমন পদ খুঁজে বের করেন যেখানে বুঝা যায়, তিনি কাদের কাছে কথা বলেন।

খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

আমোষ ১:১ “ইস্রায়েল সম্বন্ধে ঈশ্বর আমোষকে যা দেখিয়েছিলেন তা তিনি বলেছিলেন।”.
• আমোষ পরিষ্কারভাবে বলেন যে তার ভাববাণী ইস্রায়েল সম্বন্ধীয়। আমোষের সময় “ইস্রায়েল” মানে ১০ গোষ্ঠি দ্বারা তৈরি উত্তরের রাজ্য ইস্রায়েল রাজ্য (রাজধানী শমরিয়া)। আমোষের গ্রাম তোকয় কিন্তু যিহূদা, অর্থাৎ ২ গোষ্ঠি দ্বারা (যিহূদা, শিমিয়োন) তৈরি দক্ষিণের যিহূদা রাজা শলোমনের মৃত্যুর পরে ইস্রায়েল জাতি কিভাবে দু’ভাগ হয়ে যায়, তার ইতিহাস ১ রাজাবলি ১১-১২ অধ্যায়ে পড়তে পারেন।

আমোষ ৭:১০-১৭ আমোষ বৈথেলে ইস্রায়েলের কাছে কথা বলেন।

  • এই পদগুলো দেখায় যে, আমোষ নিজের দেশ ছেড়ে উত্তর দিকে ইস্রায়েল দেশের বৈথেলে গিয়ে তার বাণী ঘোষণা করেন (মানচিত্র দেখুন)। বৈথেল ছিল ইস্রায়েল দেশের আত্মিক কেন্দ্র, রাষ্ট্রীয় বাছুর পূজার স্থান। বৈথেলের মন্দিরের পুরোহিত অমাৎসিয় ইস্রায়েল রাজা যারবিয়ামকে জানান যে আমোষ নামে একজন বৈথেলে ধ্বংসবাণী ঘোষনা করছেন। একই সময়ে তিনি আমোষকে তুচ্ছ করে তাকে পালাতে বলেন। সম্ভবত আমোষ তার বাণী বৈথেলের বাছুরিক একটি বড় পর্বে ঘোষণা করেছিলেন, যখন অনেক লোক সারা দেশ থেকে বৈথেলের আসে।

০৩ ব্যাখ্যা প্রশ্ন আমোষ কাদের কাছে পুস্তকটি লেখেন?

বিবেচনা করুন

আমরা ইতিহাস থেকে জানি যে আমোষের ধ্বংসবাণী ৩০ বছরের মধ্যে, অর্থাৎ ৭২২ খ্রীষ্টপূর্বে পূর্ণ হয় যখন আসিরিয়া সাম্রাজ্য ইস্রায়েলকে দখল ও ধ্বংস করে এবং বেঁচে থাকা লোকসংখ্যাকে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাসিত করেন (২ রাজা ১৭)। এই ইস্রায়েলীয়রা ইতিমধ্যে ২০০ বছর ধরে বিভিন্ন ধরণের প্রতিমাপূজা পালান করে এসেছে এবং তারা নির্বাসিত হয়ে চারিদিকে জাতিদের সাথে মিশে যায়। তারা কখনও নিজের দেশে ফিরে আসে না, দেশ হিসাবে ইস্রায়েলের পরিচয় বা আহ্বান আর কখনও গ্রহণ করে না। এই ১০ গোষ্ঠি এভাবে ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়।
কিন্তু কে তাহলে আমোষের পুস্তক সংক্ষিত করে রাখে? আমোষের যিহূা হল সেই জাতি যা আমোষের পুস্তক সংরক্ষিত রাখে। সম্ভবত ইস্রায়েল আমোষের বাণীতে সারা দেয় না, কিন্তু যখন ৭২২ খ্রীষ্টপূর্বে আমোষের ধ্বংসবাণী পূর্ণ হয়, তবে তার বাণী পূর্ব হয় বলে যিহূদার লোকেরা জানতে পারে যে, আমোষ সত্যিকারের ভাববদী (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:২২)। সম্ভবত যিহূা দেশে যারা ঈশ্বর ভক্ত ছিল, তারা আমোষের বাণী প্রমাণিত হিসাবে মূল্য দেয় এবং তা ঈশ্বরের বাক্য হিসাবে সংরক্ষিত রাখে। তাই আমোষের বাণী ইস্রায়েলের কাছে, কিন্তু তার পুস্তক সম্ভবত যিহূদার জন্য লিখিত (ছবি দেখুন)।

০৪ ব্যাখ্যা প্রশ্ন আমোষ কখন কথা বলেছিলেন বা লিখেছিলেন?

নির্দেশনা

আমোষ পুস্তকে এমন পদগুলো খুঁজে বের করুন যাতে আমোষের কথা বলার তারিখ বা কোনো ঐতিহাসেক ঘটনার সাথে সংযোগ বুঝা যায়।

খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

আমোষ ১:১ “তকোয়ের রাখালদের মধ্যে আমোষ ছিলেন একজন। তখন যিহূদার রাজা ছিলেন উষিয় এবং ইস্রায়েলের রাজা ছিলেন যিহোয়াশের ছেলে যারবিয়াম। ভূমিকমেপর দুই বছর আগে ইস্রায়েল সম্বন্ধে ঈশ্বর আমোষকে যা দেখিয়েছিলেন তা তিনি বলেছিলেন।”
আমোষ ৭:১০ “পরে বৈথেলের পুরোহিত অমৎসিয় ইস্রায়েলের রাজা যারবিয়ামের কাছে এই খবর পাঠালেন, “আমোষ ইস্রায়েলের মধ্যেই আপনার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র করছে। দেশের লোকেরা তার কোন কথা সহ্য করতে পারছে না।”

  • আমোষ ইস্রায়েল ও যিহূদা রাজাদের উল্লেখ করে তার বাণীর তারিখ দেন।
         ইস্রায়েলের রাজা যারবিয়াম-২   বাবার সাথে সহ-রাজত্ব ৭৯৩-৭৮২ খ্রীঃপূঃ    একা ৭৮২-৭৫৩ খ্রীঃপূঃ
         যিহূদার রাজা উষিয়            বাবার সাথে সহ-রাজত্ব ৭৯০-৭৬৭ খ্রীঃপূঃ     একা ৭৬৭-৭৫০ খ্রীঃপূঃ    ছেলের সাথে রাজত্ব ৭৫০-৭৩৯ খ্রীঃপূঃ
  • এমন সময় যখন উভয় যারবিয়াম এবং উষিয় রাজত্ব করেছিলেন হল ৭৯০-৭৫৩ খ্রীষ্টপূর্ব
  • আমোষ ৪:১০ পদে একটি মহামারী অতীতের ঘটনা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে (“মিসরে যেমন পাঠিয়েছিলাম তেমনি করে আমি তোমাদের মধ্যে মড়ক পাঠালাম”)। সম্ভবত আমোষ সেই মহামারী বুঝিয়েছেন যা আসিরিয়দের নথি অনুসারে ৭৬৫ খ্রীষ্টপূর্বে ঘটেছিল।
  • আমোষ ১:১ পদ বলে “ভূমিকমেপর দুই বছর আগে”। এই ভূমিকম্প এমন শক্তিশালী ছিল যে ২৫০ বছর পরে ভাববাদী সখরিয় তা উল্লেখ করেন (সখরিয় ১৪:৫) “যিহূদার রাজা উষিয়ের রাজত্বকালে ভূমিকমেপর সময়ে যেভাবে তোমরা পালিয়ে গিয়েছিলে সেইভাবেই পালিয়ে যাবে” নতুন নিয়মের সময়ের যিহূদী ইতিহাসবিদ যোষিফাস্ ফ্লাভিয়াস যিহূদীদের ইতিহাস তার পুস্তকে বর্ণনা করেন (“Antiquities of the Jews”, Book IX, Ch.10) তিনিও এই একই ভূমিকম্প উল্লেখ করেন। তবুও ভূমিকম্পের নির্দিষ্ট তারিখ জানা নেই।
  • হয়তো আমোষ এই ভূমিকম্পটি ভবিষ্যদ্বাণী হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন: “এর জন্য কি দেশ কাঁপবে না? তার মধ্যে বাসকারী সবাই কি বিলাপ করবে না?” (আমোষ ৮:৮) এবং “সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু দেশটাকে ছুঁলে তা গলে যায়” (আমোষ ৯:৫)। যখন ভূমিকম্প প্রকিতভাবে ঘটে তখন সম্ভবত লোকেরা আমোষের বাণীতে আরো গুরুত্ব দেয়। হয়তো একারণে লোকেরা আমোষের বাণী লিখিত আকারে চাইত অথবা আমোষ বিষয়টি উল্লেখ করেন দেখানোর জন্য যে তার বাণী পূর্ণ হয়েছে।
  • সারাংশ হিসাবে বলা যায় যে আমোষ ৭৯০ থেকে ৭৫৩ খ্রীষ্টপূর্বের মধ্যে তার পুস্তক লেখেন। অনেকে ৭৬০ খ্রীষ্টপূর্ব লেখার তারিখ হিসাবে ধরে নেয়।

০৫ ব্যাখ্যা প্রশ্ন আমোষের বাণী বলার সময়ে ইস্রায়েলের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল?

নির্দেশনা

আমোষ তার বাণীর তারিখ হিসাবে রাজা রহবিয়াম উল্লেখ করেন বলে আমরা ইস্রায়েলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহজে বুঝতে পারি। ২ রাজা ১৪:২৩-২৭ পদ পড়ুন যেখানে রাজা যারবিয়াম-২এর রাজত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা থেকে আমরা কি বুঝতে পারি, তা নিয়ে চিন্তা করুন।
ডানে ইস্রায়েলের রাজাদের তালিকায় যারবিয়াম-২কে খুঁজে বের করেন। লক্ষ্য করুন যে ইস্রায়েলের ২০৭ বছরের ইতিহাসে এমন কি ৯টি রাজপরিবার রাজত্ব করেন, ইস্রায়েলের নেতৃত্বের অস্থিরতার একটি চিহ্ন।

খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

রাজা যারবিয়াম-২কে আরো ভালভাবে বুঝার জন্য আমাদের এই রাজপরিবারের ইতিহাস দেখতে হবে। দেখা যায় যে একজন ব্যক্তি ইস্রায়েলের রাজা হওয়ার পরে হয়তো তার পুত্র সিংহাসনে উঠে কিন্তু প্রায়ই সেই পুত্রকে মেরে ফেলে আর একজন ক্ষমতা দখল করে। ইস্রায়েলের এই অস্থির ইতিহাসে যে রাজপরিবার সবচেয়ে দীর্ঘদিন রাজত্ব করে, হা হল যারবিয়ামের রাজপরিবার: ৫টি পুরুষ রাজা হয়ে ওঠে।
তাছাড়া লক্ষ্য করুন যে ইস্রায়েলের রাজাদের একজন বাদি সবাইকে “মন্দ” বলে হয়। সেই একজন যাকে মন্দ বলা হয় না হল যেহূ, এই ৫পুরুষের রাজবংশের স্থাপক। এই রাজপরিবারের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:

উপসংহারে বলা যায় যে যদিও যারবিয়ামের রাজত্বের সময়ে ইস্রায়েলের রাজনৈতিকদিক ও অর্থনৈতিক অবস্থায় ভাল দেখা যায় তবুও তা চোখ ভুলা ছাড়া আর কিছুই নয়।

০৫ ব্যাখ্যা প্রশ্ন আমোষের সময়ে ইস্রায়েলের আত্মিক পরিস্থিতি কেমন ছিল?

নির্দেশনা

ইস্রায়েলের আত্মিক অবস্থা এবং বৈথেলের গুরুত্ব আরো ভালভাবে বুঝার জন্য আমাদের ইতিহাসে ফিরে গিয়ে ৯৩১ খ্রীষ্টপূর্বের অর্থাৎ শলোমনের রাজত্বের শেষের দিকে ঘটনাগুলো দেখতে হবে। ১ রাজা ১১:২৬-৪০ পদে ইস্রায়েলের প্রথম রাজা যারবিয়াম-১-এর গল্প পড়ে নিচে দেওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর দেন:

  • ইস্রায়েল যে দুই দেশে বিভক্ত হয়ে পড়ে, কে প্রাথমিকভাবে তা ঘটান?
  • ঈশ্বর যারবিয়াম-১কে কি প্রতিজ্ঞা দিয়েছিলেন?
  • প্রতিজ্ঞার শর্ত কি ছিল?
  • রাজা দায়ূদ যে প্রতিজ্ঞা পেয়েছিলেন (২ শমূয়েল ৭:১৬) এবং রাজা যারবিয়াম-১ যে প্রতিজ্ঞা পান, তার মধ্যে পার্থক্য আছে কি?
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

রাজা শলোমন একটি দীর্ঘ দিনের আশীর্বাদ ভরা জীবনের শেষে ঈশ্বরকে ত্যাগ করে দেবতাপূজা শুরু করেন। একারণে ঈশ্বর ইস্রায়েলকে দুই দেশে বিভক্ত করে ফেলেন: উত্তরের ইস্রায়েল দেশ (১০ বংশ) এবং দক্ষিণের যিহূদা দেশ (১ অথবা ২ বংশ)। ঈশ্বর যারবিয়ামকে প্রতিজ্ঞা দেন যে তার রাজত্ব স্থায়ী হবে (যেমন ঈশ্বর দায়ূদকেও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন) যদি – এবং শুধুমাত্র যদি তিনি শলোমনের মত না করেন, অর্থাৎ দেবতাপূজা গ্রহণ না করেন। যারবিয়ামের কাছে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা আসলে অদ্ভূৎ: তাকে আহ্বান করা হয়, দায়ূদের মত একজন মহান রাজা হতে!

নির্দেশনা

এই অদ্বিতীয় সুযোগ পেয়ে যারবিয়াম কি করেন, তা বুঝার জন্য ১ রাজা ১২;২৫-৩৩ পড়ুন এবং নিচের প্রশ্নের উত্তর দেন:

  • যারবিয়ামের ভয় কি? এটা কি বাস্তব কোনো ভয়?
  • ঈশ্বরের বাধ্য হওয়ার জন্য যারবিয়ামের কি করা দরকার ছিল?
  • অভিষিক্তি হওয়ার পরে দায়ূদ বছর পর বছর রাজা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন। সেই সময়ে দায়ূদের ব্যবহার বর্তমানে রাজা যারবিয়ামের ব্যবহারের সাথে তুলনা করুন।
  • কেন যারবিয়াম বৈথেল ও দান শহর পছন্দ করেন। আরো ভালভাবে বুঝার জন্য মানচিত্রটি দেখুন।
  • বৈথেলে এবং দানে যারবিয়াম প্রকৃতপক্ষে কি স্থাপন করেন?
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

অত্যন্ত দুঃখের একটি গল্প! যারবিয়াম একটি অদ্বিতীয় প্রতিজ্ঞা বা সুযোগ নষ্ট করেন এবং সাথে তিনি নতুন স্থাপিত ইস্রায়েল একটি ধ্বংসের পথে পাঠান। যারবিয়াম ভয় করেন যে তার নাগরিকেরা যদি বছরে তিন বার অনুষ্ঠানের জন্য যিরূশালেমে যাবে তবে তারা শেষে রহবিয়ামের পক্ষ নেবে এবং তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। হয়তো এই চিন্তা সম্পূর্ণ ভুল না, কিন্তু এখানে তার ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতে হত। যে ঈশ্বর তাঁর কথা অনুসারে অল্পক্ষণের মধ্যে যারবিয়ামকে ইস্রায়েলের উপরে ক্ষমতা দান করেছেন (২ রাজা ১২:২০), সেই ঈশ্বরের উপর এখন নির্ভর করতে হবে যেন তিনি তার রাজত্ব স্থায়ী হতে দেন। কিন্তু দেখা যায় যে যারবিয়াম এই বিশ্বাস আনতে এবং ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতে সক্ষম হন না। ঈশ্বর তাকে সিংহাসন দান করার পরেও যারবিয়ামের বিশ্বাস নেই যে ঈশ্বর তার সিংহাসন স্থির করব।

বরং তিনি খুই মারাত্মক একটি কৌশল অনুসারে কাজ করেন: তিনি ইস্রায়েলের উত্তর সীমানায় (দান) এবং দক্ষিণের সীমানায় (বৈথেল) পরিকল্পিতভাবে একটি বাছুর-পূজা স্থাপন করেন। কেন বাছুরের পূজা? প্রকৃতপক্ষে মিসরীয়রা এবং অনেক চাষভিত্তিক জাতিরা ষাঁড়কে উর্বরতা, সফলতা, ফসল ও প্রাচুর্যের একটি প্রতীক হিসাবে পূজা করত (স্মরণ করুন: যাত্রা ৩২ অধ‍্যায়ে ইস্রায়েল পূজার উদ্দেশ্যে একটি সোনার বাছুর তৈরি করে)। সম্ভবত যারবিয়াম তার এই মিথ্যা পূজার সাথে কিছু সত্য মিশিয়ে দেওয়া দ্বারা মিথ্যাটি আরো শক্তিশালী বানান: আমোষ পুস্তকে প্রকাশ পায় যে ইস্রায়েল জাতি মনে করে যে বৈথেলে এসে গান করা এবং উৎসর্গ করা হল ‘সদাপ্রভুর’ উদ্দেশ্যে। হতে পারে তাদের চিন্তা ছিল যে বাছুর বা ষাঁড় হল সদাপ্রভুর আসন বা সিংহাসন?

যারবিয়াম খুব পরিকল্পিতভাবে বৈথেলের পূজা যিরূশালেমে সদাপ্রভুর আরাধনা নকল করেই স্থাপন করেন: তিনি একটি যাজকত্ব, উৎসর্গ পদ্ধতি ও বাছুরিক পর্বগুলো চালিয়ে যান। পরিষ্কারভাবে প্রকাশ পায় যে তিনি বিশেষভাবে বৈথেলকে যিরূশালেমের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসাবে রাখেন। উত্তরে দান শহর অস্থিত বাছুর পূজার স্থান বেশ তাড়াতাড়ি চারিদিকে জাতিদের দ্বারা দখল করে বাতিল করা হয়, কিন্তু বৈথেল হয়ে যায় ইস্রায়েলের রাষ্ট্রিয় ধর্মের কেন্দ্র, অর্থাৎ “ইস্রায়েলের কুলের মধ‍্যে” বা “রাজার উপাসনার জায়গা” (আমোষ ৭:১০,১৩)। যারবিয়াম এভাবে ইস্রায়েল দেশ শুরু থেকে ভ্রান্ত ধর্মের উপর স্থাপন করেন।
২০০ বছর পরে যখন যারবিয়াম-২ রাজত্ব করেন তখন এই রাষ্ট্রীয় বাছুর-পূজার সাথে বিভিন্ন অন্য দেতাপূজাও যোগ দেওয়া হয়েছে, যেমন আমোষ ৫:২৬ পদে পাওয়া যায়: “না, বরং তোমরা তোমাদের নিজেদের তৈরী রাজা-দেবতা সিক্কুতের মূর্তি ও তারা-দেবতা কীয়ূনের মূর্তি বয়ে নিয়ে গিয়েছিলে।” কীয়ূন এবং সিক্কুত নাম শনি গ্রহের দেবতা হিসাবে আসিরিয়া সাম্রাজ্যের লেখাগুলোতেও পাওয়া যায়। আমেষ ৮:১৪ পদ বলে: ‘যারা শমরিয়ার প্রতিমার নাম নিয়ে শপথ করে বলে, ‘হে দান, তোমার জীবন্ত দেবতার দিব্য,’ কিম্বা বলে, ‘বের্‌-শেবার জীবন্ত দেবতার দিব্য”। এখানে আমরা আরো পূজা ও পূজার স্থানের উল্লেখ পাই।
সারাংশে বলা যায় যে আমোষের সময়ে ইস্রায়েলের আত্মিক অবস্থা খুব খারাপ: মিথ্যা রাষ্ট্রীয় বাছুর-পূজা এবং অন্যান্য দেবতা পূজার সাথে সাথে ইস্রায়েলে অনেক সামাজিক অন্যায়, অর্থাৎ গরীবদের অত্যাচার চলে। তা মাত্র নয়, ইস্রাপয়েলের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি দেখে ইস্রায়েলীয়রা (এবং ধনীরা বিশেষভাবে) মনে করে যে ঈশ্বর তাদের নিয়ে খুশি। বাহ্যিক, নকল ধার্মিকতা এবং সাথে অতিরিক্ত আত্ম-বিশ্বাস, এর বিরুদ্ধে আমোষ কথা বলেন। এই ভূল চিন্তা ভাঙ্গার জন্য তিনি তার ‘কামড় দেওয়ার মত বাণী’ বলেন। তিনি বৈথেলে, অর্থাৎ ইস্রায়েলের পূজার কেন্দ্রে গিয়ে তা ঘষণা করেন – কি সাহস!

৬ম ব্যাখ্যা প্রশ্ন আমোষের সময়ে আর কোনো ভাববাদীরা কথা বলেন?

২ রাজা ১৪:২৫ পদ উল্লেখ করে যে ভাববাদী যোনাও যারবিয়াম-২য়ের সময়ে কথা বলতেন (প্রায় ৭৯৫-৭৭৫ খ্রীঃপূঃ)। প্রকৃতপক্ষে যোনা রাজা যারবিয়ামকে একটি ইতিবাচক বাণী দেন, যে তিনি ইস্রায়েলকে আবার শক্তিশালী বানাতে সক্ষম হবেন। হতে পারে যোনার এই ইতিবাচক বাণীর কারণে রাজা এবং দুর্নীতি গ্রস্ত উঁচু শ্রেণীর লোকেরা মনে করে যে ঈশ্বরের আশীর্বাদ ঠিকই তাদের উপরে রইল। যোনার অন্য বাণী ছিল আসিরিয়ার রাজধানী নীনবীর কাছে।
হোশেয়ও (প্রায় ৭৫৫-৭২২ খ্রীঃপূঃ) হলেন আমোষের সমসাময়িক একজন ভাববাদী। একটু পরে যিশাইয় (প্রায় ৭৩৫-৭০০ খ্রীঃপূঃ) এবং মীখা (প্রায় ৭৩০-৭০০ খ্রীঃপূঃ) যিহূদার কাছে ভাববাণী বলেন।
৭২২ খ্রীষ্টপূর্বে আসিরিয়ার রাজা তিগ্লৎ-পিলেষর ইস্রায়েলকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করবে। আমোষ এবং হোশেয় তাই ইস্রায়েলের কাছে ঈশ্বরের শেষ ডাক। উভয় ভাববাদী খুব গুরুত্বের সঙ্গে ইস্রায়েলকে সাবধানবাণী দেন। হোশেয় তা করেন একটি অতি আবেগীয় হৃদয়-স্পর্শকারী প্রেম গল্প দেখানো দ্বারা এবং আমোষ তা করেন ইস্রায়েলের নকল ধার্মিকতা ও সামাজিক অন্যায়ের বিষয়ে একটি অতি শক্তিশালী ও উষ্কিয়ে তোলার মত সমালোচনার করা দ্বারা।