প্রার্ম্ভিকা হিসাবে আমরা ইন্ডাক্টিভ মেথডের ৩টি ধাপ পুনরালোচনা করব:

  • লক্ষ্য করা, অর্থাৎ লেখাটি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা এবং খেয়াল করা লেখায় কি কি বিষয় দেওয়া হয়েছে। দেখো! দেখো! দেখো! আমরা একটার পর একটা লক্ষ্য প্রশ্ন দিয়ে লক্ষ্য কিভাবে করতে হয়, তা দেখানো হবে।
  • ব্যাখ্যা করা, অর্থাৎ যারা এই ভাববাদীর বাণী প্রথম শুনেছিল (প্রথম শ্রোতা) এবং যারা ভাববাদীর পুস্তকে প্রথম পড়েছিল (প্রথম পাঠক), তারা কি বুঝেছিল, তা বুঝতে চেষ্টা করা।
  • প্রয়োগ করা, অর্থাৎ নিজেকে জিজ্ঞাসা করা: এই বর্তমান যুগের পাঠক হিসাবে আমার জন্য এই পুস্তকের অর্থ কি? আমার এই পুস্তকের আলোতে কি চিন্তা, মনোভাব ও আচার-ব্যবহার পরিবর্তন করা দরকার? এই পুস্তকের সাড়ায় আমার কি ব্যবহারিক ধাপ নেওয়া দরকার?
নির্দেশনা

আমোষের ভাববাণী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে ফেলুন। জোরে পড়ে ফেলুন, কারণ জোরে পড়লে তবে চোখ দিয়ে দেখা, মুখ দিয়ে বলা ও কান দিয়ে শোনা সব একসাথে চলে এবং একারণে আপনার বেশি মনে থাকবে।
পুস্তকের প্রথম পড়ার উদ্দেশ্য এই নয় যেআপনি প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি বিষয় ধরেন। বরং উদ্দেশ্য হল পুস্তকের বড় ছবি দেখা, একটি প্রথম স্বাদ নেওয়া এবং কিছু প্রধান বিষয় খেয়াল করা।

লক্ষ্য করা

আমরা এখন একটার পর একটা লক্ষ্য প্রশ্ন দিয়ে লক্ষ্য শুরু করব। এখানে সীমিত জায়গার কারণে আমোষের প্রথম দু’টি অধ্যায় মাত্র উপস্থাপনা করা হবে । তবুও আমোষ পুস্তকের শেষ পর্যন্ত, অর্থাৎ ৯ অধ্যায় ধরে লক্ষ্য করুন!

০১ লক্ষ্য প্রশ্ন কে? > ঈশ্বর

নির্দেশনা

আমোষ পুস্তক আর একবার পড়ুন এবং প্রত্যেক অধ্যায়ে যতটা শব্দ ঈশ্বরকে বুঝায় ততটাতে হাল্কা হলুদ রং দেন।

উদাহরণ
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

আপনার প্রথম অধ্যায় দেখতে মোটামুটি এমন হওয়া উচিত:

০২ লক্ষ্য প্রশ্ন কে? > মানুষ

নির্দেশনা

আমোষ পুস্তক আর একবার পড়ুন এবং প্রত্যেক অধ্যায়ে যতটা শব্দ ব্যক্তি বা মানুষের দল বুঝায় ততটাতে হলুদ রং দেন।

উদাহরণ

খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

আপনার প্রথম অধ্যায় এখন দেখতে মোটামুটি এমন হওয়া উচিত:

০৩ লক্ষ্য প্রশ্ন কে? > জাতি

নির্দেশনা

আমোষ পুস্তক আর একবার পড়ুন এবং প্রত্যেক অধ্যায়ে যতটা জাতির নাম উল্লেখ করা হয়েছে, ততটাতে গাঢ় হলুদ রং দেন।

উদাহরণ

খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

আপনার প্রথম অধ্যায় এখন দেখতে মোটামুটি এমন হওয়া উচিত:

০৪ লক্ষ্য প্রশ্ন কোথায়? > জায়গা

নির্দেশনা

আমোষ পুস্তক আর একবার পড়ুন এবং প্রত্যেক অধ্যায়ে যতটা শহরের, এলাকার বা স্থানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, ততটাতে আকাশী রং দেন।

উদাহরণ

খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

আপনার প্রথম অধ্যায় এখন দেখতে মোটামুটি এমন হওয়া উচিত:

০৫ লক্ষ্য প্রশ্ন কখন? > সময় সম্বন্ধীয় শব্দ

নির্দেশনা

আমোষ পুস্তক আর একবার পড়ুন এবং প্রত্যেক অধ্যায়ে যতটা শব্দ সময় বুঝায় (যেমন “এখন”, “পরে”, “চিরকাল”, “যখন”) এলাকার বা স্থানের নাম উল্লেখ, ততটাতে আকাশী রং দেন।

উদাহরণ

খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

আপনার প্রথম অধ্যায় এখন দেখতে মোটামুটি এমন হওয়া উচিত:

০৬ লক্ষ্য প্রশ্ন কারণ? > “একারণে”, “সেইজন্য”, “তাতে”, “যেন”

নির্দেশনা

আমোষ পুস্তক আর একবার পড়ুন এবং প্রত্যেক অধ্যায়ে যতটা শব্দ কোনো কারণ দেখায় বা কোনো উদ্দেশ্য দেয়ায় (যেমন “একারণে”, “জন্য”, “সেইজন্য”, “ফলে”, “তাই”, “তাতে”, “যাতে”, “যোন” ইত্যাদি) ততটাতে খৈরি রং দেন।

উদাহরন
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

আপনার প্রথম অধ্যায় এখন দেখতে মোটামুটি এমন হওয়া উচিত:

দেখা যায় যে আমোষ ১ ও ২ অধ্যায়ে আমরা অনেক পদ পাই যেখানে কারণ দেখানো হচ্ছে। সেগুলো ছড়ার মত একই কথা দিয়ে শুরু হয়: “তিনটা পাপ, এমন কি, চারটা পাপের দরুন আমি নিশ্চয়ই তাকে শাস্তি দেব, কারণ …” কিনারায় এই কারণগুলো চিহ্নিত রাখেন যেমন নিচে দেখানো হয়েছে:

উদাহরণ
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

আপনার প্রথম অধ্যায় এখন দেখতে মোটামুটি এমন হওয়া উচিত:

০৭ লক্ষ্য প্রশ্ন পুনরুক্তি বিষয়: পাপ / বিচারের কারণ

“কারণ” বা “উদ্দেশ্য” জাতীয় শব্দগুলো লক্ষ্য করতে করতে আমরা আমোষ পুস্তকে একটি বড় পুনরুক্তি বিষয় পেয়েছি: ঈশ্বর মানুষদের জানান, কি ধরণের আচার-ব্যবহার তাঁর চোখে কখনও গ্রহণযোগ্য হবে না, তিনি ইস্রায়েলের – এবং অন্যান্য জাতিদের – দোষ ধরে তাদের পাপ, অন্যায় ও মন্দতা উল্লেখ করেন।
যদি একটি বিষয় বার বার উল্লেখ করা হয়েছে (পুনরুক্তি বিষয়) তবে তা অবশ্যই গুুত্বপূর্ণ। এজন্য আমরা লক্ষ্য করি একটি পুস্তকে কি বিষয় বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে আমরা পাপ, অন্যায়, মন্দতা পুনরুক্তি বিষয় হিসাবে পেয়েছি: ঈশ্বর লোকদের জানান, তার বিচারের কারণ কি কি।

নির্দেশনা

আমোষ পুস্তক আর একবার পড়ুন (বিশেষভাবে ২ অধ্যায় থেকে) এবং কিনারায় খৈরি রং দেন, যেখানে ঈশ্বর পাপের দোষ ধরেন বা বিচার করার জন্য কারণ দেখান।

খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

আমোষ পুস্তকে এই ধরণের পদের কোনো অভাব নেই। অনেক বার এই পদগুলো আবেগপূর্ণ ও জোরালো উক্তি দিয়ে ভরা:

  • আমোষ ২:১ (মোয়াব), ২:৪ (যিহূদা) … এর পরের সব উল্লিখিত পাপ হল ইস্রায়েলেরই পাপ:
  • আমোষ ২:৬-৮
  • আমোষ ২:১২
  • আমোষ ৩:৯-১০, ১৪
  • আমোষ ৪:১, ৪-৫
  • আমোষ ৫:৭, ১০-১৩, ১৮-২৩
  • আমোষ ৬:১, ৪-৬, ১৩
  • আমোষ ৭:৪-৬
  • আমোষ ৯:৮

০৮ লক্ষ্য প্রশ্ন পুনরুক্তি বিষয়: বিচারের বর্ণনা

নির্দেশনা

আমোষ পুস্তক আর একবার পড়ুন এবং কিনারায় এমন পদগুলো ছায় রং দিয়ে চিহ্নিত রাখেন যেখানে ঈশ্বর তাঁর বিচারের ঘোষণা অথবা বর্ণনা করেন।

উদাহরণ

খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

আপনার প্রথম অধ্যায় এখন দেখতে মোটামুটি এমন হওয়া উচিত:

আসলে আমোষ পুস্তকে অনেক পদ পাওয়া যায় যেখানে ঈশ্বর তাঁর বিচারের বর্ণনা দেন:

  • আমোষ ৩:১১-১৫
  • আমোষ ৪:১-৩
  • আমোষ ৪:৬-১২          ইস্রায়েল আংশিক বিবারে সাড়া দেয় নি, অনুতপ্ত হয় নি।
  • আমোষ ৫:১-৪            বিচার এখানে “অতীতে ঘটনা” হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বিচার দেখতে কেমন হবে, তা আরো শক্তিশালীভাবে প্রকাশ করার জন্য।
  • আমোষ ৫:১৬-২০
  • আমোষ ৬:৮-১৪
  • আমোষ ৭:২, ৪, ৮-৯
  • আমোষ ৮:২-৩
  • আমোষ ৮:৯-১৪
  • আমোষ ৯:১-৪
  • আমোষ ৯:৯-১০

০৯ লক্ষ্য প্রশ্ন পুনরুক্তি বিষয়: ঈশ্বরের চরিত্রের ও বৈশিষ্টের বর্ণনা

নির্দেশনা

আমোষ পুস্তক আর একবার পড়ুন এবং কিনারায় এমন পদগুলো বাদামী রং দিয়ে চিহ্নিত রাখুন যেখানে ঈশ্বরের চরিত্রের বা বৈশিষ্টের বর্ণনা করা হয়েছে। পদগুলোতে ঈশ্বর সম্বন্ধে কি প্রকাশ করা হয়েছে?

উদাহরণ

আমোষ ১:২ “আমোষ বললেন, “সদাপ্রভু সিয়োন থেকে গর্জন করছেন এবং যিরূশালেম থেকে জোরে কথা বলছেন। তাতে রাখালদের চারণ ভূমি সব শুকিয়ে যাচ্ছে ও কর্মিল পাহাড়ের চূড়ার গাছপালা মরে যাচ্ছে।”

  • ঈশ্বরকে এখানে সিংহ হিসাবে দেখানো হয়, অর্থাৎ শক্তিশালী ও ভয়ংকর হিসাবে। তিনি পৃথিবীতে প্রভাব ফেলেন এবং বিচার করেন।
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

আমোষ ১:২ “আমোষ বললেন, “সদাপ্রভু সিয়োন থেকে গর্জন করছেন এবং যিরূশালেম থেকে জোরে কথা বলছেন। তাতে রাখালদের চারণ ভূমি সব শুকিয়ে যাচ্ছে ও কর্মিল পাহাড়ের চূড়ার গাছপালা মরে যাচ্ছে।”

  • ঈশ্বরকে এখানে সিংহ হিসাবে দেখানো হয়, অর্থাৎ শক্তিশালী ও ভয়ংকর হিসাবে। তিনি পৃথিবীতে প্রভাব ফেলেন এবং বিচার করেন।

আমোষ ৪:১৩ “মনে রেখ, যিনি পাহাড়-পর্বত গড়েন, বাতাস সৃষ্টি করেন এবং মানুষের কাছে নিজের চিন্তা প্রকাশ করেন, যিনি আলোকে অন্ধকার করেন এবং পৃথিবীর পাহাড়-পর্বতের উপর দিয়ে চলেন তাঁর নাম সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর সদাপ্রভু।”

  • ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, এই মহাবিশ্বের, পৃথিবীর ও মানব জাতির সৃষ্টিকর্তা। ঈশ্বর এই পৃথিবী হাত দেন, তিনি পৃথিবীকে চালান, তিনি প্রথিবীকে প্রকাশ দান করেন।

আমোষ ৫:৮-৯ “যিনি কৃত্তিকা ও মৃগশীর্ষ নামে তারাগুলো তৈরী করেছেন, যিনি অন্ধকারকে আলো করেন এবং দিনকে রাতের আঁধার করেন, যিনি সাগরের জলকে ডাক দিয়ে ভূমির উপর ঢেলে দেন, তাঁর নাম সদাপ্রভু। 9তিনি শক্তিশালীদের উপর এবং তাদের দুর্গের উপর হঠাৎ সর্বনাশ এনে ধ্বংস করে দেন। ”

  • আবারও ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, এই মহাবিশ্বের, পৃথিবীর ও মানব জাতির সৃষ্টিকর্তা। তিনি খেয়াল করেন, জানেন, বিচার করেন। তিনি মানুষের মিথ্যা নিরাপত্তার ব্যবস্থাকে সরিয়ে ফেলেন।

আমোষ ৯:৫-৬ “সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু দেশটাকে ছুঁলে তা গলে যায় আর তার মধ্যে বাসকারী সবাই শোক করে। তাঁর ছোঁয়ায় গোটা দেশটা মিসরের নীল নদীর মত ফুলে ওঠে, তারপর নেমে যায়। 6তিনি আকাশে তাঁর উঁচু ঘর তৈরী করেছেন এবং পৃথিবীর উপরে চাঁদোয়ার মত আকাশকে স্থাপন করেছেন; তিনি সাগরের জলকে ডেকে ভূমির উপরে ঢেলে দেন। যিনি এই সব করেন তাঁর নাম সদাপ্রভু। ”
আগের মত।

  • ঈশ্বরের এই বর্ণনাগুলো পুস্তকে কেন পাওয়া যায়? তার মূল সংবাদ বা উদ্দেশ্য কি? প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা তৃতীয় অংশে “আমোষ ০৩ – পুস্তকের মূল বিষয়ের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ” দেওয়া হবে।

০৯ লক্ষ্য প্রশ্ন পুনরুক্তি বিষয়: যারা ধনী, যত্নহীন বা অত্যাচারী বনাম যারা গরীব, দুর্বল, অসহায়

নির্দেশনা

আমোষ পুস্তক আর একবার পড়ুন এবং একটি খৈরি তারা দিয়ে এমন পদ চিহ্নিত রাখেন যেখানে সামাজিক অন্যায় বা ধনীদের দ্বারা গরীবদের অত্যাচার বর্ণনা করা হয়। এক পাশে দাঁড়াবে যারা ধনী, বিলাসিতার জীবনে অভ্যস্ত, আত্ম-নির্ভরশীল, যত্নহীন, অত্যাচারী, যারা অন্যায় লাভ করে। অন্য পাশে দাড়াবে যারা গরীব, দুর্বল, অসহায়, অত্যাচারিত, এমন লোক যাদের বিরুদ্ধে অন্যায় করা হয়। এই বিষয় অবশ্যই অনেক বার “পুনরুক্তি বিষয়: বিচারের কারণ”-এর সাথে পাওয়া যাবে, তাই আমরা একই খৈরি রং ব্যবহার করব।

উদাহরণ
খুঁজে কি কি পাওয়া যায়
  • আমোষ ৩:৯-১১  “তোমরা অস্‌দোদ ও মিসরের সব দুর্গের লোকদের কাছে বল, “তোমরা শমরিয়ার পাহাড়গুলোর উপরে জড়ো হও; দেখ, তার মধ্যে কত গোলমাল! তার লোকদের মধ্যে কত অত্যাচার! প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, “তারা ঠিক কাজ করতে জানে না; তাদের দুর্গগুলোর মধ্যে তারা অত্যাচারের ও লুটের মাল জমিয়ে রেখেছে।”
  • আমোষ ৪:১      “হে শমরিয়ার পাহাড়ের উপরকার বাশনের গাভীগুলোর মত স্ত্রীলোকেরা, তোমরা শোন। তোমরা গরীবদের অত্যাচার কর এবং অভাবীদের চুরমার কর আর তোমাদের স্বামীদের বল, “আমাদের জন্য মদ এনে দাও।”
  • আমোষ ৫:১০-১২ “যে লোক শহরের ফটকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তোমরা তো তাকে ঘৃণা কর এবং যে সত্যি কথা বলে তাকে তুচ্ছ কর। তোমরা গরীবকে অত্যাচার কর এবং জোর করে তার কাছ থেকে শস্য আদায় কর। কাজেই তোমরা যদিও পাথরের বড় বড় ঘর তৈরী করে থাক তবুও তোমরা তাতে বাস করতে পারবে না। … আমি জানি তোমাদের অন্যায় কত বেশী এবং তোমাদের পাপ কি ভীষণ! তোমরা তো সৎ লোকদের উপর অত্যাচার কর ও ঘুষ খাও; শহরের ফটকে তোমরা গরীবদের ন্যায়বিচার পেতে দাও না।”
  • আমোষ ৫:২৩-২৪ “তোমাদের গানের আওয়াজ দূর কর। তোমাদের বীণার বাজনা আমি শুনব না। তার চেয়ে বরং ন্যায়বিচার নদীর মত আর সততা চিরকাল বয়ে যাওয়া স্রোতের মত বয়ে যাক।”
  • আমোষ ৬:১       “ধিক্‌ তোমাদের! তোমরা তো সিয়োনে আরামে বাস করছ আর শমরিয়ার পাহাড়ে নিজেদের নিরাপদ মনে করছ।”
  • আমোষ ৬:৪-৬    “তোমরা হাতীর দাঁতের কাজ করা খাটে শোও আর তোমাদের বিছানায় অলসভাবে গা টান কর। তোমাদের পাল থেকে তোমরা বাছাই করা ভেড়ার বাচ্চা ও বাছুরের মাংস খাও। তোমরা বীণা বাজিয়ে গান গাও এবং দায়ূদের মত নানা রকম বাজনা তৈরী করে থাক। তোমরা বাটি ভরে আংগুর-রস খাও আর সবচেয়ে ভাল সুগন্ধি তেল গায়ে মাখ, কিন্তু তোমরা যোষেফের, অর্থাৎ ইস্রায়েলের ধ্বংসের জন্য দুঃখিত হও না।”
  • আমোষ ৮:৪-৬    “তোমরা যারা অভাবীদের পায়ে মাড়াচ্ছ আর গরীবদের শেষ করে দিচ্ছ, তোমরা শোন। তোমরা বলছ, “কখন অমাবস্যা চলে যাবে যাতে আমরা শস্য বিক্রি করতে পারি? কখন বিশ্রাম দিন শেষ হবে যাতে আমরা বাজারে গম বেচতে পারি? আমরা মাপের টুকরি ছোট করব, দাম বাড়াব, ঠকামির দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করব, রূপা দিয়ে গরীবকে এবং এক জোড়া জুতা দিয়ে অভাবীকে কিনে নেব আর ঝাড়ু দিয়ে ফেলে দেওয়া গম তাদের কাছে বিক্রি করব।”

পুনরুক্তি বিষয়টি আমোষ পুস্তকে খুব গুরুত্ব ও ভার পায়। প্রকৃতপক্ষে ইস্রায়েলের সমস্ত পাপের মধ্যে এই পাপটি নিয়ে ঈশ্বর সবচেয়ে বেশি করে তাদের দোষ ধরেন।

০৯ লক্ষ্য প্রশ্ন পুনরুক্তি বিষয়: মিথ্যা ধার্মিকতা, মিথ্যা আত্ম-বিশ্বাস

নির্দেশনা

আমোষ পুস্তক আর একবার পড়ুন এবং খেরি রং দিয়ে একটি চিহ্ন কিনারায় রাখেন যেখানে আপনি নকল ধার্মিকতা, অর্থহীন ধর্মকর্ম, মিথ্যা আত্ম-বিশ্বাস বা আত্ম-নির্ভরতার বর্ণনা পাওয়া যায়। এই পুনরুক্তি বিষয় অনেক বার “পুনরুক্তি বিষয়: ইস্রায়েলের পাপ / বিচারের কারণ”-এর সাথে পাওয়া যায়, তাই একই খৈরি রং দিয়ে চিহ্ন রাখুন।

খুঁজে কি কি পাওয়া যায়
  • আমোষ ২:৮    ”তারা প্রত্যেকটি বেদীর কাছে বন্ধক নেওয়া পোশাকের উপরে ঘুমায়। তাদের উপাসনা-ঘরে তারা জরিমানার টাকা দিয়ে কেনা আংগুর-রস খায়।” এই পদে ধর্মকর্ম কিন্তু সাথে সাথে অনৈতিকতা এবং দুর্বলদের উপরে অত্যাচার পাওয়া যায়।
  • আমোষ ২:১২    “কিন্তু তোমরা সেই নাসরীয়দের আংগুর-রস খাইয়েছিলে এবং নবী হিসাবে কথা না বলবার জন্য নবীদের আদেশ দিয়েছিলে।” এখানে এমন লোকদের তুচ্চ করা হয় যারা ঈশ্বর ভক্ত, সত্যকে বা সংশোধন অগ্রাহ্য করা হয়। ভক্তিপূর্ণ ভয় নেই।
  • আমোষ ৪:৪-৫   “তোমরা যখন বৈথেলে গিয়ে পাপ করতে চাইছ তখন যাও, পাপ কর; গিল্‌গলে গিয়ে আরও বেশী করে কর। প্রতিদিন সকালে তোমাদের উৎসর্গের জিনিস এবং প্রতি তিন দিনের দিন তোমাদের দশ ভাগের এক ভাগ জিনিস নিয়ে যাও। তোমরা ধন্যবাদের উৎসর্গ হিসাবে খামি দেওয়া রুটি দাও ও তোমাদের নিজের ইচ্ছায় দেওয়া উৎসর্গের জিনিস নিয়ে বড়াই কর, কারণ হে ইস্রায়েলীয়েরা, তোমরা তো তা করতে ভালবাস। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” উপাসনা-ঘরে যাওয়া, বড় উৎসর্গ দেওয়া, দশমাংশ ও দান দেওয়া, এই সব ধর্মকর্ম এবং সবার সামনে নিজের ধার্মিকতার প্রকাশের অভাব নেই। অনুতাপের পরিবর্তে দেখা যায় আত্ম-ধার্মিকতা, নকল ধর্মকর্ম ও আত্ম-নির্ভরতা।
  • আমোষ ৫:৫     “তোমরা বৈথেলে কিম্বা গিল্‌গলে কিম্বা বের্‌-শেবায় যেয়ো না, কারণ গিল্‌গলের লোকেরা নিশ্চয়ই বন্দী হয়ে অন্য দেশে যাবে এবং বৈথেলের সর্বনাশ হবে।” বৈথেল, গিলগল ও বের-শেবা সেই সময় উঁচু স্থান বা পূজার কেন্দ্র পরিণত হয়েছিল।
  • আমোষ ৫:২১-২৪ “আমি তোমাদের পর্বগুলো ঘৃণা করি, অগ্রাহ্য করি; তোমাদের সভাগুলো আমি সহ্য করতে পারি না। তোমরা আমার উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গ ও শস্য-উৎসর্গ করলেও আমি সেগুলো গ্রহণ করব না। যদিও তোমরা মোটাসোটা পশু দিয়ে যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান কর তবুও সেই দিকে আমি চেয়েও দেখব না। তোমাদের গানের আওয়াজ দূর কর। তোমাদের বীণার বাজনা আমি শুনব না। 24তার চেয়ে বরং ন্যায়বিচার নদীর মত আর সততা চিরকাল বয়ে যাওয়া স্রোতের মত বয়ে যাক।”

এই পুনরুক্তি বিষয়টিও আমোষ পুস্তকে অনেক গুরত্ব ও ভার পায়। আমোষ কামড় দেওয়ার মত কথা দ্বারা তাদের চেতনা জাগাতে চেষ্টা করেন, তাদের নকল ধার্মিতা ফুছকার মত বিধতে চেষ্টা করেন, সবার সামনে নিজের ধর্মকর্ম উপস্থাপনা করার অহংকারকে তিনি চ্যালেঞ্জ করেন। সাথে আর একটি বিষয় দেখা যায়: তাদের অতিরিক্ত আত্ম-বিশ্বাস, আত্ম-নির্ভরাতা ও মিথ্যা নিরাপত্তা – এমন একটি মনোভাবে যা নম্রতা, কৃতজ্ঞতা, ঈশ্বরকে ভয় করা বা তাঁর উপর নির্ভরতার একদম বিপরীত।

  • আমোষ ৬:১৩     “তোমরা লো-দবার … জয় করেছ বলে আনন্দ করে থাক, আবার বলে থাক, “আমরা কি নিজের শক্তিতে কর্ণয়িম (যার মানে ‘শক্তিশালী শিং’) অধিকার করি নি?”
  • আমোষ ৬:৮      “সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর প্রভু সদাপ্রভু নিজের নামেই শপথ করে বলেছেন, “আমি যাকোবের অহংকার এবং তার দুর্গগুলো ভীষণ ঘৃণা করি।”
  • আমোষ ৯:১০     “আমার সব পাপী লোকদের মধ্যে যারা বলে, ‘অমংগল আমাদের নাগাল পাবে না কিম্বা আমাদের কাছে আসবে না,’ তারা সবাই যুদ্ধে মারা পড়বে।”
  • আমোষ ২:১৩-১৬  ঈশ্বর তাদের এই মনোভাবে ভাঙ্গবেন: “যারা তাড়াতাড়ি দৌড়াতে পারে তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারবে না, বলবানেরা তাদের শক্তি দেখাতে পারবে না এবং যোদ্ধারা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে পারবে না। ধনুকধারীরা স্থিরভাবে দাঁড়াতে পারবে না, তাড়াতাড়ি দৌড়ে যাওয়া লোকেরা পালাতে পারবে না; এমন কি, ঘোড়সওয়ারও নিজের প্রাণ রক্ষা করতে পারবে না। যোদ্ধাদের মধ্যে যে সবচেয়ে সাহসী সেও সেই দিন উলংগ হয়ে পালিয়ে যাবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।”

১২ লক্ষ্য প্রশ্ন পুনরুক্তি বিষয়: আশা বাণী / অনুতপ্ত হওয়ার ডাক

নির্দেশনা

আমোষ পুস্তক আর একবার পড়ুন এবং এমন পদগুলোতে সবুজ তারা দিয়ে চিহ্নিত রাখেন যেখানে ঈশ্বর লোকদেরকে অনুতপ্ত হওয়ার আদেশ দেন, যা দ্বারা বুঝা যায় যে এখনও আশা আছে। যে কোনো আশা বাণীতেও সবুজ তারা রাখুন।

খুঁজে কি কি পাওয়া যায়

অনেক আবেগ, গুরুত্ব ও জরুরী ভাবে আমোষ ইস্রায়েলকে অনুতপ্ত হতে বলেন:

  • আমোষ ৫:৪ “ইস্রায়েলের লোকদের সদাপ্রভু বলছেন, “তোমরা আমার কাছে এস, তাতে বাঁচবে।”
  • আমোষ ৫:৬ “তোমরা সদাপ্রভুর কাছে যাও তাতে বাঁচবে; তা না হলে তিনি আগুনের মত করে যোষেফের, অর্থাৎ ইস্রায়েলের লোকদের মধ্যে জ্বলে উঠবেন। সেই আগুন গ্রাস করবে এবং বৈথেলের কেউ তা নিভাতে পারবে না।”
  • আমোষ ৫:১৪ “তোমরা যাতে বাঁচতে পার সেইজন্য ভালোর পিছনে যাও, মন্দের পিছনে নয়; তাহলে যেমন তোমরা বলে থাক তেমনি সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর সদাপ্রভু সত্যিসত্যিই তোমাদের সংগে থাকবেন।”
  • আমোষ ৫:২৪ “তার চেয়ে বরং ন্যায়বিচার নদীর মত আর সততা চিরকাল বয়ে যাওয়া স্রোতের মত বয়ে যাক।”

অনুতপ্ত হওয়ার এই আদেশগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ একজন ভাববাদী ডাকলে তার অর্থ এই যে, এখনও আশা আছে। কিন্তু মনে-প্রাণে অনুতপ্ত হওয়া দরকার। তাছাড়া আমোষ তার পুস্তকের শেষে ইস্রায়েলের ধ্বংসের ওপারে একটি আরো বড় আশা নিয়ে কথা বলেন:

  • আমোষ ৯:১১-১৫ “সদাপ্রভু বলছেন, “সেই দিন আমি দায়ূদের পড়ে যাওয়া ঘর আবার উঠাব। আমি তার ভাংগা জায়গাগুলো মেরামত করব, ধ্বংসস্থানগুলো ঠিক করব এবং আগে যেমন ছিল তেমনি করে তা তৈরী করব, 12যাতে ইস্রায়েলীয়েরা ইদোমের বাকী অংশ এবং আমার অন্য সব জাতিদের দেশ অধিকার করতে পারে।” সদাপ্রভু, যিনি এই সব কাজ করেন, তিনি এই কথা বলছেন। 13সদাপ্রভু আরও বলছেন, “সেই দিনগুলো আসছে যখন এত শস্য জন্মাবে যে, তা সব কাটবার আগে আবার চাষ করবার সময় আসবে এবং এত আংগুর হবে যে, তা সব মাড়াই করবার আগে আবার ফসল লাগাবার সময় আসবে। বড় বড় পাহাড়গুলো থেকে প্রচুর নতুন আংগুর-রস পাওয়া যাবে এবং তা সমস্ত ছোট ছোট পাহাড়গুলোকে যেন ধুয়ে নিয়ে যাবে। 14বন্দীদশায় থাকা আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের আমি ফিরিয়ে আনব; তারা ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরগুলো আবার তৈরী করবে এবং সেগুলোতে বাস করবে। তারা আংগুর ক্ষেত করে আংগুর-রস খাবে; তারা বাগান করে তার ফল খাবে। 15আমি ইস্রায়েলীয়দের তাদের নিজের দেশে গাছের মত লাগিয়ে দেব; যে দেশ আমি তাদের দিয়েছি সেখান থেকে আর তাদের কখনও উপ্‌ড়ে ফেলা হবে না।” এই কথা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন।”

যদিও এই পুস্তকে আর অনেক বিষয় লক্ষ্য করা যেত তবুও আমরা এখানে লক্ষ্য শেষ করে দ্বিতীয় শিক্ষায় আগাব, যেখানে আমোষ পুস্তকের ঐতিহাসিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হবে “আমোষ ০২ – ঐতিহাসিক পরিস্থিতি”।